২৭-১০-৩০
আমি একটা মুক্তিযুদ্ধের ছবি এঁকেছি। আম্মু ২০০ টাকা দিয়ে ওইটা কিনে নিছে। আমি ঐ টাকা নিয়ে আজকে মেলায় গেছি সফিউদ্দিন মামার সাথে। আমি একটা মনোপলি কিনেছি। এইটা বাংলায় লেখা। এইখানে টাকা অনেক বেশি। ১০০, ২০০, ৫০০ টাকা আছে। কিন্তু ইংলিশ যে মনোপলি ওইটা তে টাকা কম। ১,২,৫ ডলার। আমার ভালো লাগে না। সন্ধ্যায় মেলায় গিয়েছিলাম। অনীক মামার হোমওয়ার্ক করি নাই একটাও।
আজকে অনীক মামা আমাকে পড়ায় নাই। আমি অনীক মামার কাছে অংক আর ইংরেজি সেকেন্ড পেপার পড়ি। এইবার আমি ক্লাস টেস্টে অনেক ভালো করেছি। ২০ এর মাঝে ১৯ পেয়েছি। এটাই আমার অংকে বেস্ট নাম্বার। আগে আমি মৌসুমি আন্টির কাছে খালি মাইর খেতাম। ভয়ে আমি সব অংক ভুলে যেতাম। কিন্তু আমি অনীক মামাকে ভয় পাই না।
এই যে মুক্তিযুদ্ধের ছবি এটা --
২৮-১০-৩০
আজকে অনীক মামার সাথে মেলায় গিয়েছিলাম। একটা শটগান কিনেছি। সবুজ, গোলাপি আর লাল লাইট জ্বলে। এইটা হলো লেজারের আলো। আবার এখানে প্লাস্টিকের গুলি ভরা যায়। এক প্যাকেট গুলির দাম ১০ টাকা, গোল গোল গুলি। এইম করে মারলে ব্যথা লাগে অনেক। মেলায় সব কিছুর দাম অনেক বেশি। এই শটগানটার দাম দোকানদার বলছে ২৫০ টাকা, আমার অনীক মামা অনেক দামাদামি করে সেটা ২৩০ টাকায় আমাকে কিনে দিয়েছে। আর এক প্যাকেট গুলি।
আমি রাতের বেলা লাইট অফ করে লেজারের আলো ফেলি সামনের বিল্ডিংগুলোতে। বাসার সামনে কতো গুলি কুকুর ঘুরে। একটার গায়ে লেজার মেরে আমি গুলি করেছিলাম। কুকুরটা মনে হয় ব্যথা পেয়েছিল, অনেকক্ষণ কুই কুই করে আওয়াজ করেছে।
আম্মু অফিস থেকে আসলে এই শটগান টা আম্মুকে দেখাবো। আমি এক জোড়া জুতাও কিনেছি। প্লাস্টিকের জুতা। Nike এর জুতা। হলুদ আর কালো রঙের। আম্মুর পছন্দ হবে না জানি। আম্মু হলুদ রঙ পছন্দ করে না। লাল আর ব্লু কালারেরও ছিল কিন্তু হলুদটাই আমার পছন্দ। আর এই জুতা পড়ে আমি আজ খেলায় অনেক ভালো করেছি। আগে প্লাস্টিকের দুই বেল্টের স্যান্ডেল পড়ে খেলতে গিয়ে আমি খেলায় খালি আউট হয়ে যেতাম তাড়াতাড়ি, দৌড়াতে পারতাম না। কিন্তু আজকে আমি অনেক রান নিতে পেরেছি, একটা ৪ মেরেছি। কিন্তু এই সাদাতটার জন্য খেলে শান্তি পাই না। আমাকে ছোট ছোট ইটের টুকরা দিয়ে ঢিল মারে। আমিও চাইছিলাম ওকে একটা কিল মারতে কিন্তু আম্মু বলেছে ও আমাদের সবার ছোট। ওকে যাতে আমরা কেউ না মারি। আর খালি বানিয়ে বানিয়ে মামীর কাছে সাদাত আমার নামে মিথ্যা কথা বলে বিচার দেয়। সাদাত খালি মিথ্যা মিথ্যা কথা বলে। ওকে আমি আবার লাইট অফ করে ভয় দেখাবো। বেশি বাড়ছে ও।
আজকে সিয়ামের সাথে সন্ধ্যায় আমি আমার শটগান আর ও ওরটা দিয়ে খেলছি অনেকক্ষণ। ওরটার দামও ২৩০ টাকা কিন্তু আমারটার চেয়ে ছোট। সিয়াম বারবার বলে ওরটা তেজি শটগান। কিন্তু ওরটায় লেজার নাই। তাই ওকে বলছিলাম সিয়াম তুমি ঠকছ। এটা শুনে ও রেগে গেছে। আমাকে বলছে – তুমি বেশি জানো? সবসময় এই সিয়ামটা আমাকে ধমকিয়ে কথা বলে। আম্মু আসুক, ওর নামে আমি বিচার দিবো।
এটা আমি আর সাদাত --
২৯-১০-১৩
আজকে আমার অনেক কষ্টের দিন। আমার শট গান টা নষ্ট হয়ে গেছে। মানে লেজার নষ্ট হয়ে গেছে। একবার জ্বলে আবার জ্বলে না। অনীক মামা একবার ঠিক করে দিয়েছিলো। এখন আবার নষ্ট হয়েছে। কিন্তু গুলি ভরে সেটা দিয়ে গুলি করে যায়। আমি জানি আম্মু এটা শুনে অনেক খুশী হবে কারণ আম্মু বলেছিল – বাচ্চাদের এইসব পিস্তল দিয়ে খেলা করা ঠিক না। কিন্তু আমরা তো পুলিশ পুলিশ, সিআইডি খেলি। চোর-ডাকাত তো হই না।
আমি আমার শট গান টা আজকে বিকেলে মাঠে নিয়ে গিয়ে কবর দিয়ে আসবো। এইটা দিয়ে তো আর কিছু করার নাই। এইটা মরছে। সিয়ামের টা ও জানি নষ্ট হয়। তাহলে আমি অনেক খুশী হবো। আল্লাহ ওর শটগান টা নষ্ট করে দিও। সাদাতেরটাও নষ্ট করে দিও।
আম্মু তো আর টাকা দিবে না, নানীও দিবে না। কই টাকা পাবো। মাত্র ২৩০ টাকা হলেই আমি আরেক টা শট গান কিনতে পারতাম! এইগুলি মেলায় নতুন আসছিলো ! আম্মু বলছে ডায়েরি লিখলে আর ছবি আঁকলে আমাকে টাকা দিবে। আমার লিখতে আঙুল অনেক ব্যথা করে। কিন্তু না লিখলে টাকা নাই।
আজকে আম্মুর সাথে খেলা দেখতে বসে শান্তি পাই নাই। আমাকে আম্মু অনেক জ্বালাইছে। এমনেই তো বুঝা যায় এইটা জিতা খেলা, বাংলাদেশ জিতবে। তবুও যতবার বাংলাদেশ বোলিং করে আম্মু খালি বলে ‘ আউট আউট’। আম্মু চায় ১ ওভার ৪ বলে নিউজিল্যান্ডের সব প্লেয়ার আউট হয়ে যাক। আমি রাগ করে তাই অনীক মামাদের ঘরে চলে গেছি খেলা দেখতে। রুবেল আর মাশরাফিকে আমার অনেক ভালো লাগে। আমার স্পিন বল ভালো লাগে না। পেসারই ভালো। তামিম আর মুশফি কের ব্যাটিং ভালো লাগে। এই ম্যাচে সাকিব আল হাসান কে কেন নিলো না?
এই যে আমার শটগান, সাথে লেজার --