somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আদিবাসীদের ধারণায় বিশ্ব সৃষ্টি রহস্যের মজার কাহিনী

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাঁওতালদের বিশ্বসৃষ্টির মজার কাহিনীটি হচ্ছে এরকম :

পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে চারদিকে কেবল পানি আর পানি ছিল । সেই পানির গহীন অতলে ছিল মাটি । ঠাকুর জিয়ো বা ঈশ্বর প্রাণ সৃষ্টির তাগিদ অনুভব করলেন । তারপর তিনি পৃথিবী সৃষ্টি করে পানির মধ্যে বিচরণের জন্য কাঁকড়া, কুমীর, রাঘব বোয়াল, কাছিম, কেঁচো ইত্যাদি জীবের জন্ম দিলেন । এসব সৃষ্টি করে ঠাকুর জিয়ো সন্তুষ্ট হতে পারলেন না । তিনি ভাবলেন এই পৃথিবী মানবজাতিবিহীন শ্রীহীন । তারপর তিনি মাটি থেকে একজোড়া মানব-মানবী সৃষ্টি করলেন, তিনি সেই মানব-মানবীদের মধ্যে জীবাত্মা দেয়ার মনস্থির করলেন । কিন্তু কি আশ্চর্য! আকাশ থেকে আজব এক ঘোড়া বা সিন্ সাদুম এসে সেই মানব-মানবীর মূর্তি খেয়ে ফেলল । ঠাকুর জিয়ো খুবই দুঃখ পেলেন । তিনি মনস্থির করলেন আর কখনও মানুষ সৃষ্টি করবেন না । তারচেয়ে তিনি পাখি সৃষ্টি করবেন । তিনি নিজের বুকের অংশ থেকে সৃষ্টি করলেন একজোড়া পাতিহাঁস, দিলেন আত্মাবস্থা । জন্মের পর থেকে তারা কেবল পানির ওপর ভেসে বেড়ায়, তাদের থাকার কোন নির্দিষ্ট জায়গা নেই । ইচ্ছে হলে তারা ঠাকুর জিয়োর হাতের তালুতে বসে বিশ্রাম নেয় ।

হঠাৎ একদিন আবার সেই ঘোড়া বা সিন সাদুম এসে তাদের খেয়ে ফেলতে চাইল । কিন্তু ঠাকুর জিয়ো এবার সতর্ক রইলেন । তাঁর কোপে আজব ঘোড়া সমুদ্রের ফেনায় পরিণত হলো । এখন পাতিহাঁস দুটি সেই ফেনার ওপর ভাসে । কিন্তু এভাবে আর কতদিন ? তারা একদিন ঠাকুর জিয়োর কাছে প্রার্থনা করল, 'আমরা আশ্রয় চাই, খাদ্য চাই।' ঠাকুর জিয়ো কাছিমকে ডেকে পানির অতল রাজ্য থেকে মাটি আনতে বললেন । কাছিম চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো, তারপর চিংড়ি মাছকে আদেশ দেয়া হলো, চিংড়িও ব্যর্থ হলো । এভাবে রাঘব বোয়াল, কাঁকড়া একে একে সবাই ব্যর্থ হলো ।

এবারে ঠাকুর জিয়ো হুকুম করলেন কেঁচোকে মাটি আনার জন্য । কেঁচো মাটি নিয়ে এল । ঠাকুর জিয়ো সেই মাটি দিয়ে স্থল ভাগ সৃষ্টি করলেন । সেই স্থলে স্থাপন করলেন পাহাড়, অরণ্য, পর্বত। পাতিহাঁস দুটো সেখানে বাসা বাঁধল, প্রকৃতির নিয়মমাফিক একদিন তারা ডিম পাড়ল । হঠাৎ একদিন সেই ডিম ফুটলে দেখা গেল সেখানে রয়েছে দুটি মানবসন্তান । একটি ছেলে আর একটি মেয়ে । ছেলেটির নাম রাখা হলো পিলচু হড়ম ও মেয়েটির নাম পিলচু বুড়ি । ক্রমে পিলচু হড়ম ও পিলচু বুড়ি বড় হলো । তারপর একদিন তারা হিহিড়ি পিহিড়ী দ্বীপে এসে বসতী স্থাপন করল । ঠাকুর জিয়ো তাদের উপর দৃষ্টি রাখলেন, একদিন জিয়ো মানুষের রূপ ধরে এসে তাদেরকে 'হাঁড়িয়া' তৈরির উপায় বলে দিলেন এবং এও নির্দেশ দিয়ে গেলেন যে হাঁড়িয়া তৈরির পর তাঁকে কিছু উৎসর্গ না করে যেন তারা তা স্পর্শও না করে । হাঁড়িয়া তৈরি হলো, তারা তা খেয়ে নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে রইল । হুঁশ ফিরে এলে তারা বুঝতে পারল তারা মানব-মানবী এবং তারা তাদের আবরণহীন শরীর দেখে হঠাৎ করেই লজ্জায় পড়ল । আবার এলেন ঠাকুর জিয়ো । তিনি তাদের কাপড় দিলেন । এই প্রথম তারা কাপড় পরতে শিখল ।

সময় পেরিয়ে যায় । তাদের ঘরে সাতটি ছেলে ও সাতটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করল । দু'ভাইবোন করে তাদের বিয়ে হলো এবং তারা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল । বংশ বৃদ্ধির ফলে জায়গা না হওয়ায় তারা চলে গেল 'খোজ কামান' রাজ্যে । এই 'খোজ কামান' রাজ্যে এসে তাদের নৈতিক চরিত্রের অবনতি দেখা দিল । ঠাকুর জিয়ো এতে রাগান্বিত হলেন এবং তাদের বিপদ আসন্ন ঘোষণা করলেন । তিনি তাদের সংশোধন হবার সুযোগ দিলেন কিন্তু তারা সংশোধিত হলো না । অবশেষে 'খোজ কামানে' নেমে এল সর্বনাশা প্লাবন । বিপথগামীরা সবাই মারা পড়ল । শুধু দুজন হরতা পর্বতের গহ্বরে ঢুকে রক্ষা পেল । প্লাবনের পর দুজন চলে এল 'সসানবেদা' নামক স্থানে । সেখানেও বেশি দিন তারা টিকতে পারেনি, তারপর তারা 'জরপী' পার্বত্য অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করল, সেইখানেও তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা জরপী পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত নিল । কিন্ত জরপী পার্বত্য পথ অতিক্রম করা তাদের পক্ষে সহজ ছিল না । তখন তারা মারাং বুরো দেবতার কাছে প্রার্থনা করল যে, হে মহামান্য মারাং বুরো, তুমি যদি আমাদের এই কষ্টসাধ্য পথ অতিক্রম করতে সাহায্য করো তাহলে আমরা নতুন জায়গায় গিয়ে বাকি জীবন তোমার পুজো করব । মারাং বুরো তাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন । তখন সূর্য এসে তার অলৌকিক জ্যোতিতে অরণ্যের মাঝখান দিয়ে পথ দেখাল । সেই পথ অতিক্রম করে তারা চলে এল চায়েচম্পা রাজ্যে ।


(কৃতজ্ঞতা : আকাশ আহমেদ আরজু)

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×