এমন বেরসিক খুব কমই আছে যে বাথরুমে ঢুকে কখনই গুনগুন করেনি। যাদের গান শুনে কখনই হাসি বা কান্না আলাদা করা যায় না, তাদের গলা সাধার একমাত্র স্থানই হল বাথরুম। এটা যেমন নিভৃতে কান্না হাসির একটা উপযুক্ত স্থান তেমনি স্বীয় মহিষীর চন্ডকীর্তির ভয়ে যারা গলাটা ষষ্ঠ থেকে সপ্তমে চড়াতে পারেন না, তাদেরও শেষ ভরসা। শুধু গানই নয়, কবিতার ত্রিপুরান্তক ত্রৈলিঙ রসের যোগানও দিয়েছে বাথরুম। ভাবের বড় অভাব? চন্দ্রকে মনে হচ্ছে চিবিয়ে খাওয়ার বস্তু? সমাধান- বাথরুম। কবি সাহিত্যিকরা যখনই রাইটার্স ব্লকে ভুগতেন তখনই বাথরুমে অধিক সময় লাগাতেন।
সাহিত্যপাড়ার নির্বাচিত স্লোগানই হল
“যদি রাইটার্স ব্লক কাটাতে চান, বাথরুমে অধিক সময় লাগান”।
একজন অখ্যাত কবি সংসার জীবনের অশান্তি থেকে বাচাঁর উপায়টি বাতলেছেন এভাবে
“বাছা অশান্তির দাবানল বহে যবে ভূমে
শান্তি পেতে চাও যদি যাও বাথরুমে”
পদার্থবিজ্ঞানের বহু সুত্র আবিষ্কারের পিছনেও রয়েছে বাথরুমের ইতিহাস। আকির্মেডিস তার বিখ্যাত সুত্রটি আবিষ্কার করেন বাথরুমে। নিউটনের মাথায় আপেল পড়েছিল বলেই কিনা মধ্যাকর্ষণ সুত্রের আবষ্কার এবং বোদ্ধা মহলের ধারনা প্রতিবেশিকে শায়েস্তা করতে তার আপেল বাগানে নিউটন গিয়েছিলেন মূলতঃ বাথরুম সারতে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অতীত ইতিহাস খুঁজলেও পাওয়া যাবে বাথরুমের অবদান। নুহ আঃ যখন তার বৃহৎ কিস্তিটি তৈরি করেন তখন জনগন এটাকে তাদের জীবনের সবচেয়ে আরামদায়ক বাথরুম হিসেবে নির্বাচিত করে। ফলে দলে দলে লোক আসতে লাগল তাদের প্রয়োজনীয় কর্মটি সারতে। এরিমধ্যে এক অন্ধ হঠাৎ পা পিছলে গিয়ে পড়ল একেবারে গাদস্তুপের মধ্যিখানে, দু তিন ডুব দিয়ে সে যখন উঠল তখন তার চারিদিক ফকফকা- কানা হল পদ্মলোচক এবং সূচিত হল চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন অধ্যায়ের।
বর্তমান বিশ্বে জাপানিরা বাথরুমের ব্যাবহারকে মোটামুটি একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এতে গাত্র মার্জনের জন্য রয়েছে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি। এছাড়াও রয়েছে লেখালেখি করার ও বই পড়ার সুব্যাবস্থা। সবচেয়ে আনন্দদায়ক বিষয় হল এতে রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। ফলে বাথরুমে বসেই আপনি আপনার তাৎক্ষণিক অনুভুতি ছড়িয়ে দিতে পারবেন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে। দিতে পারেন তাৎক্ষণিক স্ট্যাটাস।
সুখের বিষয় বাংলাদেশও বাথরুম সাহিত্য চর্চায় পিছিয়ে নেই। পরীক্ষার সময়তো আমাদের স্কুলের বাথরুমগুলি একেকটা লাইব্রেরি হয়ে যায়। আমাদের বাথরুমগুলিতে গণিতের চর্চাটা হয় বেশি। “কুদ্দুস - মর্জিনা = ছ্যাকা”, “বাদশা + জরিনা = ওঁয়াওঁয়া” ইত্যাদি বহুবিধ যোগ ও বিয়োগ অঙ্কের জন্মস্থল বাথরুম। আবার “ত্যাগেই সুখ” এই জাতীয় উচ্চমার্গীয় দর্শনতত্বও আমাদেরকে শেখচ্ছে বাথরুমগুলি। এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দরকার সকলের সার্বিক সহযোগিতা। অধিক বাথরুম স্থাপন এবং সাহিত্য চর্চার পর্যাপ্ত ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য সরকারের উপর প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করা আশু প্রয়োজন।
পরিশেষে এক শতবর্ষী বৃদ্ধার সাক্ষাৎকার দিয়ে শেষ করছি
সাংবাদিকঃ “আপনার মতে ১০৪ বছর বয়সে সবচেয়ে উপভোগ্য বস্তুটি কি?”
বৃদ্ধাঃ “ওফ, বাথরুমের কোন চাপই সহ্য করতে হয় না”
*লেখাটি গুরুচন্ডালি দোষে দুষ্ট