somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুই বছর (১)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০০৫ সালের ৪ঠা এপ্রিল। সারা রাত ঘুমাইনি। লাগেজ গুছালাম। নতুন পিসি রেডি করলাম। কোন সুখে যে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের টিকিট কিনেছিলাম, জানি না। ব্যাটারা মাত্র 21 কেজি লাগেজ অ্যালাও করে। ছাত্র ইত্যাদি বলে 30 কেজি ম্যানেজ করা গেল। প্রায় পুরোটাই কাপড়; শীতের কাপড় আর জিন্স মেরে দিয়েছে লাগেজের বার আনা। কিন্তু এক গাদা বই নিতে হবে। যাচ্ছি জ্ঞান অর্জনে, আর গাদা গাদা বই নিবো না, তা তো হবে না। লাগেজে বই নেয়া অসম্ভব। রুকসাকে ভরলাম প্রায় 20 কেজি বই। বহুত কষ্টে কাঁধে তুলে হাঁটা দিলাম।


বাসা থেকে বিদায় নিলাম। যে ছেলে ঘর থেকে একশ মিটার দূরে গেলে বাপমার টেনশন শুরু হয়ে যায়, তারে বিদেশ যেতে বিদায় দিবে কিভাবে মা? আঁচলে চোখের পানি লুকাচ্ছেন তিনি। আমি সারা রাত ব্যস্ততায় কিছু ভাবার সময় পাই নাই। কিন্তু ভোরে মার থেকে বিদায় নিতে গিয়ে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল, দুনিয়ার সবাইকে বিদায় দিতে পারব, কিন্তু এই মানুষটারে বিদায় দিতে গেলে বুকের ভিতরটা ছিঁড়ে যাবে। খোদা, আমারে তুমি শক্তি দাও। দুই চোখের জল সামলে রাখতে আর পারলাম না। সিঁড়ি বেঁয়ে লাগেজ নিয়া নিচে নামলাম। কারো মুখে কথা নাই। সব কথা বুকের মাঝে বরফ জমাট হইয়া গেছে। আর চোখে বইছে বন্যা।

গাড়িটা ছাড়ার মুহুর্তে ইচ্ছা হল, মাকে একটা বার স্পর্শ করি.....আবার কবে ছুঁতে পারব তাঁরে! হায়রে, পারলাম না। জানালা খুলে তাঁকে ছুঁতে পারার আগেই গাড়ি ছেড়ে দিল। সেই স্পর্শ করতে না পারার স্মৃতি বার বার ভেসে ওঠে মনে।
আবার কবে ছুঁতে পারব মাকে। খুব ভাল করে জানি, এই কথাগুলোই মাও ভাবে, আর আঁচলে চোখ মুছে।

কি জানি। বিদায় বেলায় এতোটা খারাপ লাগবে, তা তো আগে মনে হয় নাই। আসলে এত কাছে থেকেও সব কিছু বুঝি নাই। এজন্যই হয়তো মাঝে মাঝে দূরেও যাওয়া লাগে। এতগুলা বছর মায়ের যত্ন, আদর, স্নেহ, এগুলা নিজের প্রাপ্য আর মায়ের দায়িত্ব বলে ভাবতাম। কখনও বুঝি নাই ভালবাসার মূল্য। হায়রে, যখন বুঝলাম, ঐ ভালবাসা অনুভব করারও সময় পেলাম না....প্রতিদান তো দিতে পারার প্রশ্নই উঠে না।

এয়ারপোর্ট পর্যন্ত মাকে আনা গেল না সাথে, কারণ ছোট ভাইর এস,এস,সি পরীক্ষা সকালে। তার সাথে একজন যেতে হয়। আমি বাপ আর দাদাকে সাথে করে চলে এলাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। দাদা বললেন, তুই ফিরা আসতে আসতে আর বাঁচি কিনা কে জানে, তোর সাথে এইটাই হয়তো শেষ দেখা। পা ছুঁয়ে সালাম করে বিদায় নিলাম তাঁর থেকে। বাবা বরাবরের মতই বেশী কিছু বললেন না। গম্ভীর হয়ে রইলেন।


সময় হয়ে এলো প্লেনের। দুঘন্টার মত বাকি আর। লাগেজ ওজন করা হলো। ৩৩ কেজি, বলে কয়ে ওটা পার করা গেল। হ্যান্ডব্যাগ প্রায় ২০ কেজি। ওটা কোনভাবেই এ্যালাও করা হলো না। "সর্বোচ্চ ৫ কেজি এ্যালওড", এরকম একটা ট্যাগ লাগিয়ে আমার ব্যাগ আমার হাতে ফেরত দেয়া হলো। প্রায় সবগুলো বই আমি ফেলে যেতে বাধ্য হলাম। পরে অবশ্য মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম এয়ারলাইনকে।


তারপর বিমানে আরোহন, প্লেন ডিলে হওয়া, পাশের লন্ডন এবং যুক্তরাষ্ট্রগামী দুই সহযাত্রীর সাথে টুকটাক কথা, খাওয়া, দেখা, ডিস্প্লেতে সিনেমা আর ম্যাপ দেখা এসব করতে করতে পৌঁছে গেলাম হিথ্রো। প্লেন ছাড়তে দেরী হয়েছিল প্রায় দু ঘন্টা, পাইলট জোরসে টেনে এক ঘন্টা কাভার দিতে পেড়েছে। হিথরোতে দু ঘন্টার ট্রানজিট টাইম কমে হয়ে গেছে এক ঘন্টা। বিমানবালা প্লেনে থাকতেই আমাকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বললেন, কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে চাইলে আমাকে স্প্রিন্টারের মত দৌড়াতে হবে। আমি মনে মনে বিমল চন্দ্রের অবস্থানে নিজেকে বসালাম।


এক ঘন্টারও কম সময়ের ভেতর আমার হিথ্রোর আরেক টার্মিনালে যেতে হবে। কিছুই চিনি না, বুঝি না। তারপরও খুব সহজেই বাসে করে চলে গেলাম অন্য টারমিনালে, নাম্বার দেখে দৌড়াতে দৌড়াতে পৌছে গেলাম আমার কাঙ্খিত বিমান পর্যন্ত। তবে ততক্ষণে আমি আধ ঘন্টার মত লেট। কিন্তু আমাকে ছেড়ে যায়নি কানেক্টিং প্লেন।


ওমা! এতো দেখি বাংলাদেশ বিমান টাইপ পুচকি একটা প্লেন। ভেতরে আধুনিক তেমন কিচ্ছু নাই। আগের প্লেনটারে ভলভো ভাবলে এটা মতিঝিল-বনানী রুটের ৬ নাম্বার বাস। খুব মজা লাগল, যখন জানতে পারলাম শুধু আমার জন্যই বিমানখানা বেশ কিছুক্ষণ দেরী করে ছাড়লো। বিমানবালাকে ডেকে একগ্লাস পানি খেলাম, প্রায় আধাঘন্টা রুকসাক নিয়ে দৌড়ে আমি তখন তৃষ্ণার্ত। ভাবছিলাম, আমার রুকসাকের ২০ কেজি বই কমিয়ে না আসলে কি অবস্থাই না হতো। প্রায় দুঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম স্টুটগার্ট এয়ারপোর্ট।


(ছবিটি আমার তোলা, হাইডেলবার্গ শহরের)

(চলবে)।

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৭ রাত ৮:১৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×