somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকাশিত হচ্ছে সঞ্জীব চৌধুরীর প্রতিস্পর্ধী গদ্য 'রাশপ্রিন্ট'

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাশপ্রিন্ট আমাদের তথাগত এক সময়ের নথিকৃত দৃশ্যগাঁথা। এমন এক সময় যখন মোরগের ডাকে ভোর হলে নির্বিচারে নমুনায়িত মানুষেরা স্বাস্থ্যসম্মত সতর্কতায় বুট-বুলেট-লাথি-খাকি-জলপাইময়্ ক্ষমতা আর হরতাল-মিছিল-পিকেটিং-দিপালী- তাজুলদের মধ্যবর্তী ভারসাম্য-সাঁকো বেয়ে নির্বিকার হেঁটে বা হামাগুড়ি দিয়ে চলে যায়। মন্ময় এক নথিকারের গদ্য-ক্যামেরায় তখন গাঁথা হতে থাকে আপাত-বিচ্ছিন্ন দৃশ্যাবলির এক প্রতিস্পর্ধী মন্তাজ। আশির দশকীয় স্বৈরাচারী রাষ্ট্র-ক্ষমতা আমাদের সমাজ, শরীর আর মগজে যে পৈশাচিক দখলদারিত্ব কায়েম করেছিল রাশপ্রিন্ট তারই গদ্য-কল্প। কিন্তু এই গদ্য-কল্প আজকের নিছক গণতন্ত্রসেবীদের কোনো মনোরঞ্জন না, বরং তাদের সংবেদনহীন অস্তিত্বকে ভীষণভাবে ডিস্টার্ব করে। ক্ষমতার দগদগে ঘা যাদের নাড়া দেয় না, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাকের চাকার নিচে ফেটে যাওয়া দিপালী সাহার হৃদপিন্ডকে যারা ভ্যালেন্টাইন-বেলুন বানিয়ে বেচে দ্যায়, অথবা যাদের শুধুমাত্র শরৎবাবুই কাঁদাতে পারেন, একমাত্র গোপাল ভাঁড়ই হাসাতে পারে- সেই নিথর স্বাভাবিকতায় মৃত মানুষদের ব্যবচ্ছেদ ঘটে এক নীল ক্লিনিকে। ব্যবচ্ছেদ ঘটে মর্গে আটকে পড়া ইতিহাসের। আর রাশপ্রিন্ট এ কারণেই আমাদের আবার পড়তে হয় যে... এই সময়, এই পাত্র-পাত্রীরা কখনো অতিক্রান্ত অতীত হয়ে যায় না, জাস্ট ঘাপটি মেরে ঘর করে আমাদের নিরবিচ্ছিন্ন কর্মতন্দ্রার আনাচে-কানাচেই।

রাশপ্রিন্ট প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯০ সালে। শিল্পী অশোক কর্মকারের প্রচ্ছদ আর জাহিদ মুস্তাফা ও আদিব সাইদের এর অলংকরণে লোকালয় প্রকাশনী হতে এটি প্রকাশ করেন শিমুল মোস্তফা। বইটির প্রকাশ সঞ্জীব চৌধুরীকে সেইসব বিরল লেখকদের একজনে পরিণত করে যারা ‘জীবনে একটিমাত্র বহি লিখিয়াছেন’। তারপরে সঞ্জীব চৌধুরী গায়ক-গীতিকার-সুরকার হিসেবে, গানের দল দলছুট নিয়ে খ্যাতিমান হয়েছেন। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায় যায় দিন-এ দীর্ঘদিনের সাংবাদিকতার সূত্রে গণ-মাধ্যমে তার স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখেছেন। সংগীত তারকা বা মেধাবী সাংবাদিক হিসেবে খ্যাতি, অথবা উম্মাতাল জীবন-যাপনের জন্য ব্যাপক সামাজিক ভ্রুকুটি সঞ্জীব চৌধুরীর যে অবিচ্ছেদ্য স্বত্তাটিকে আড়াল করেছে তা হচ্ছে তার প্রবল রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা। জীবনের শেষ দশকে যারা সঞ্জীবকে জেনেছেন, ভালবেসেছেন, তাদেরও অনেকের কাছে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে গলায় হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে মিছিলে মিছিলে মুক্তির গান গাওয়া সঞ্জীব প্রায় অজানা এক মানুষ। বিনোদনসেবী শ্রোতা বা মুনাফা ও ক্ষমতালোভী সম্পাদকদের কখনো জানা হয়নি ক্ষমতার প্রাত্যহিক চাবুক তাকে প্রতিদিন কিভাবে খুন করেছে।

রাশপ্রিন্ট- এ আমরা সেই সঞ্জীবকে খুঁজে পাই। খুঁজে পাই আশি ও নব্বই দশকের ছোট-কাগজগুলোতে ছড়ানো-ছিটানো তার কবিতাগুলোতে। আমরা মনে করেছি রাশপ্রিন্ট সঞ্জীবের খন্ডিত পাবলিক ইমেজকে পূর্ণতা দিতে পারে। আর একারণেই রাশপ্রিন্ট-এর পুনঃপ্রকাশ। এই পুনঃপ্রকাশ অনুমতির জন্য আমরা কৃতজ্ঞ বইটির বর্তমান স্বত্তাধিকারী খন্দকার আলেমা নাছরীনের কাছে। আরো কৃতজ্ঞ শিল্পী আব্দুল হালিম চঞ্চল ও ইরফান বাবুনের কাছে যারা সঞ্জীবের এই প্রতিস্পর্ধী স্বত্তাটিকে ধারণ করে এগিয়ে এসেছেন বইটি প্রকাশের কাজে। কৃতজ্ঞ তাদের প্রতি যারা সঞ্জীবকে ভালবেসেছেন, তার সমাজ-সংবেদনকে ভালবেসেছেন, তার তারকা-খ্যাতির চেয়েও বেশি।

প্রকাশক

কাঠপেন্সিল, ১৭৯/৩, ফকিরেরপুল, ঢাকা।

মূল্য : ১৫০

পরিবেশক

জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী

ভাষাচিত্র

আদর্শ

সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:৩৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×