somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার শিশু আপনার ভবিষ্যৎ: পর্ব-২ / নাসির মাহমুদ

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভোরের নরম আলোর মতো শিশুর গালে সুপ্রভাতের প্রথম আদরটি দিয়ে,বিকশমান ফুলের মতো অনাবিল হাসিটি দেখতে কার না ভালো লাগে বলুন। কিন্তু শিশুর এই নির্মল হাসিটিকে তার প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে পিতামাতার অনেক করণীয় রয়েছে। বিশেষ করে জীবনের প্রথম সাত বছরের পর্বটি হলো তার মানস বিকাশের সময়। নবীন কিশলয় অর্থাৎ গাছের সুগন্ধিময় নতুন পাতার মতো বয়স তার, নবীন পাতাটির মতোই সে নাজুক এবং স্বচ্ছ। অন্যভাবে বলা যায়, জীবনের প্রথম পর্বটি কাঁচা মাটির মতো। এ মাটি দিয়ে বাবা-মায়ের মতো জীবনশিল্পীরা যা গড়তে চান,তাই পারবেন। এ কথা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, বাবা-মা কে শিল্পী হতে হবে, জীবন গড়ার শিল্পী। আর শিল্পী হতে হলে জানতে হবে শিল্পের কলাকৌশল। ইতোপূর্বে এইসব কৌশলগত জ্ঞান নিয়ে খনিকটা আলোচনা করা হয়েছে। এবারও তা অব্যাহত রাখবো। রাসূল(সাঃ) একটি সন্তানের জীবনকে তিনটি ‘সপ্তবর্ষে’ ভাগ করেছেন। প্রথম সাত বছরকে শিশুর 'স্বাধীনতার কাল' বলে ঘোষণা করেছেন। এই স্বাধীনতার সময়ে শিশুর সাথে কী ধরনের আচরণ করা উচিত-সে সম্পর্কেই আমরা আলোচনা করছিলাম। প্রথম সাত বছর একটি শিশুর মেধা যেহেতু পর্যাপ্ত পরিমাণ বিকাশ লাভ করে না, সেহেতু এ বয়সের একটি শিশুর মেধা নিয়ে বিশ্লেষণ না করে বরং তার পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং প্রতিক্রিয়ার প্রতিই মনযোগী হওয়া উচিত। অনুভূতিগত দিক থেকে দেখলে দেখা যাবে যে, শিশুরা পঞ্চ-ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কাজে এ সময় ব্যাপক তৎপর হয়ে ওঠে। সে দৌড়াতে পছন্দ করে, খেলাধুলা পছন্দ করে ,কোন বিষয়ে কৌতূহলী হয়ে পড়লে প্রশ্ন করতে পছন্দ করে, সর্বোপরি নতুন নতুন বিষয়কে তার অভিজ্ঞতার ভান্ডারে জমাতে পছন্দ করে। আর এ কারণেই সে তার চারপাশে যা কিছুই দেখে, তা-ই ধরতে চায় এবং একাকী নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে তাকে বুঝতে চায়, শিখতে চায়, অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। শিশুর স্বাধীনতা মানে তার অনুভূতির স্বাধীনতা, তার মাংসপেশীর স্বাধীনতা। এ দুয়ের যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে শিশুর চলাফেরা তার সৃজনশীলতা এবং তার ইন্দ্রিয়ের বিকাশের ভিত্তিভূমি রচিত হয়। তাই শিশুর প্রথম সাত বছরে তার সাথে এমন কোন কাজ করা উচিত নয়, যাতে তার স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয় এবং পরিণামে তার ইন্দ্রিয় ও সৃষ্টিশীলতা বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। মনে রাখতে হবে, শিশুর মানসিক তথা সৃজনশীলতার বিকাশ যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে শিশুর মনোবিকার ঘটতে পারে। আর তা যদি একবার ঘটেই যায়, তাহলে তার ভবিষ্যত হবে বাবা-মায়ের একেবারেই অপ্রত্যাশিত। তাই বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। শিশু যখন তার সঙ্গী-সাথী এবং খেলার সাথিদের সাথে আমোদ-প্রমোদ বা খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকে, তখন তাকে কোন ব্যাপারে আদেশ দেয়া উচিত নয়। এমনও বলা উচিত নয়-এটা করো না, ওটা করো না.. ইত্যাদি। তাকে তার আনন্দের ভুবন থেকে হুট করে ফিরিয়ে নেয়াটাও ঠিক নয়। তবে হ্যাঁ, যেসব পিতামাতা আপন সন্তানের প্রশিক্ষণের জন্যে সময় দেন, তারাই সন্তান প্রতিপালনে সফল।
একইভাবে যেসব দেশ শিশুদের খেলাধূলা, আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যথোপযুক্ত জিনিসপত্র সরবরাহ করতে সক্ষম সেসব দেশই মূলত উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশ হিসেবে পরিগণিত। শিশু যদি তার বেড়ে ওঠার জন্য একটা মুক্ত পরিবেশ পায় এবং যথার্থ শক্তি বা অ্যানার্জি লাভের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও গাইড লাইন পায়, তাহলে তার মানসিক, শারীরিক এবং আচার-আচরণগত বিকাশ বিজ্ঞানসম্মতভাবেই অর্জিত হবে। বাবা-মায়ের এই বিষয়গুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়া বাঞ্চনীয়। আগেই বলেছি যে, শিশুদেরকে মুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেওয়া উচিত। তাদের এই স্বাধীনতায় সামান্যতম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলেও শিশুদের আত্মিক, মনস্তাত্ত্বিক ও আচার-আচরণগত ভারসাম্য লঙিঘত হয়। স্কুলে অধিকাংশ শিশুর মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাই তাদের পারিবারিক পরিবেশের পরিণতি। এ কথার মানে হলো সন্তান প্রতিপালনে বাবা-মায়ের যথাযথ ব্যবস্থা বা গাইডেন্সের অভাবেই ঐসব সমস্যার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নবজাতকের সাথে বাবা-মায়ের সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত। অর্থাৎ সন্তানের আরাম-আয়েশ এবং স্বাধীনতার বিষয়টি অনুভব করা উচিত। অত্যন্ত যত্নের সাথে শিশুকে ঘুম পাড়ানো উচিত। ঘুম থেকে জাগার সময় শিশুর প্রতি রুষ্ট হওয়া ঠিক নয়। শিশুকে আদরের সাথে দুধ খাওয়ানো, তার নষ্ট করে দেয়া জামা-কাপড় পরিস্কারের কাজ আন্তরিকতার সাথে আঞ্জাম দেয়া উচিত। এমনকি শিশু যদি কান্নাকাটিও করে, তবুও তার ওপর রেগে যাওয়া ঠিক হবে না বরং কান্নার একটা ইতিবাচক জবাব দিতে হবে। শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পর্যায়ে বাবা-মা যদি শিশুর সাথে যথাযথ ব্যবহার করে, তাহলে ভবিষ্যতে শিশুর চারিত্রিক বিকাশ, মানস গঠন এবং তার ব্যক্তিত্বের ওপর বাবা-মায়ের ব্যবহার ও প্রতিক্রিয়ার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর যথার্থ ব্যবহার করা না হলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়বে শিশুর ভবিষ্যত জীবনের ওপর।
শিশুর জীবন বিকাশের প্রাথমিক পর্বে তার শরীর-মন-আত্মা সব কিছুই অত্যন্ত কোমল ও নরম প্রকৃতির থাকে। তার কোমল মন তাই আদর-যত্ন , স্নেহ-ভালোবাসাই প্রত্যাশা করে। সে খেলতে চায়, দৌড়াদৌড়ি করতে চায়। প্রজাপতির মতো উড়ে বেড়াতে চায়। এ সময় তার হাসিতে যেন রংধনু ছড়ায়,পাথরের দিকে তাকালে পাথরও যেন গলে যায়। গাছের দিকে তাকালে যেন ফুল ফোটে, প্রকৃতি যেন তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে ভরিয়ে দেয় তার মন। তাই বাবা-মায়ের মতো তার আশেপাশের সবারই উচিত এমন স্নেহ,ভালোবাসা এবং আদরপূর্ণ ব্যবহার করা যাতে শিশুর মুখে সর্বদা লেগে থাকে অনাবিল হাসি, আর মন পরিপূর্ণ থাকে আদর-আপ্যায়নে। কোনোভাবেই তার সাথে এমন আচরণ করা ঠিক নয় যাতে সে মনে কষ্ট পায়। হাদীস অনুযায়ী প্রথম সাত বছর হলো শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়, আনুগত্যের পর্যায় নয়। তারপরও কোনো কোনো বাবা-মা মনে করেন যে, এ সময় শিশুর উচিত বাবা- মায়ের সকল আদেশ-নিষেধ মেনে চলা অর্থাৎ বাবা-মায়ের পূর্ণ আনুগত্য করা। তারা ভাবেন যে, সন্তানের কাজ হলো কথা শোনা, অন্য কোন কাজ করা উচিত নয়। নিজের জায়গা থেকে তাদের নড়া ঠিক নয়, লাফালাফি করা উচিত নয়, বেশী কৌতূহল দেখানো ঠিক নয়। সন্তান কেবল চুপচাপ বসে থাকবে, প্রতিবেশীকে বিরক্ত করবে না-এই হলো সন্তানের করণীয়। কিন্তু ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে শিশুর স্বাধীনতার পর্যায়ে বাবা-মায়ের এ ধরনের খবরদারী একদম অনুচিত।*
[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×