somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিএনপি’র সমাবেশ/ বিচ্ছিন্ন বরিশালে অন্য রকম দৃশ্যপট

০৫ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি’র সমাবেশের আগের দিন থেকে বন্ধ থাকবে বাস। কিন্তু বাস বন্ধ হয়ে যায় তারও একদিন আগে। গতকাল থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় লঞ্চ চলাচল। বন্ধ মাইক্রোবাস ও তিন চাকার যানবাহনও। বিএনপি’র সমাবেশের একদিন আগেই পুরো বিচ্ছিন্ন বিভাগীয় শহর বরিশাল। অবরুদ্ধ নগরীর প্রবেশ পথে পুলিশের সতর্ক টহল-চেকপোস্ট। পাশের জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক চোখ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরপাকড়। এমন অবস্থায়ও থামিয়ে রাখা যায়নি জনস্রোত। এর আগের বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের একদিন আগেই সমাবেশস্থলে অবস্থান করতে দেখা গেলেও বরিশালে দেখা গেছে অন্যরকম এক দৃশ্য।


আজকের সমাবেশে যোগ দিতে দুইদিন আগেই বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা হাজির হন বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে। রিকশায়, বাইসাইকেলে, মোটর বাইকে, ভ্যানে, ছোট নৌকায় করে মানুষজন ছুটে এসেছেন সমাবেশে যোগ দিতে। তাদের অনেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন রাত্রী যাপনের উপকরণ।
শুকনা খাবার, পানিও বহন করেন সঙ্গে। সমাবেশের একদিন আগে গতকাল বিকালেই উদ্যান পূর্ণ হয়ে যায় নেতাকর্মীতে। সেখানে তারা মিছিল-স্লোগানে নিজেদের উপস্থিতি জানান নেন। সমাবেশে যোগ দেয়া নেতাকর্মীরা জানান, পথে পথে বাধা উপেক্ষা করে তারা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন। গতকাল রাত এবং শনিবার সকালের মধ্যে লোকারণ্য হয়ে উঠবে গোটা বরিশাল শহর। কোনো বাধাই নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারেনি। দুইদিন আগেই সমাবেশে মানুষের স্রোত নামায় উজ্জীবিত নেতারা। ব্যাপক মানুষের উপস্থিতির কারণে আজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শুরু হয়ে যাবে সমাবেশের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম। বেলা ১১টার পরই সমাবেশ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ওদিকে বিএনপি’র সমাবেশে লোক ঠেকানোর উদ্দেশ্যে যে ধর্মঘট দেয়া হয়েছে এতে বিএনপি’র সমাবেশে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, বাধা দেয়ায় দ্বিগুণ উৎসাহে মানুষ ছুটে আসছে। উল্টো দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ মানুষের। অনেকে জরুরি প্রয়োজনে বিভাগীয় শহরে আসতে পারেননি। বিভিন্ন কাজে যারা বরিশালে এসেছিলেন তারা ফিরতে পারছেন না।

এরমধ্যে নিয়মিত পরীক্ষা, চাকরিপ্রার্থী, বিদেশগামী যাত্রী ও রোগীদের ভোগান্তি মাত্রা ছাড়িয়েছে। এই ভোগান্তির কারণে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, যেসব অজুহাতে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে তার কোনো ভিত্তি নেই। সরকারের নির্দেশে পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকেই এই ভোগান্তি তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ। গতকাল সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে জুমার নামাজ পড়েন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। আগেই বরিশালে আসা নেতাকর্মীদের কেউ উঠেছেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাসায়। আবার কেউ কেউ সমাবেশস্থলে কাগজ, পলিথিন, পাটি বা কাপড় বিছিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। খোলা আকাশের নিচেই তারা রাত যাপন করেন। এ ছাড়া ঘাটে রাখা লঞ্চের ডেকেও রাত কাটান অনেক নেতাকর্মী। সেখানে রান্নাবান্নার আয়োজনও করা হয়। গতকালই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বরিশালে পৌঁছেছেন। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা আগে থেকেই বরিশালে অবস্থান করে সমাবেশ আয়োজন তদারকি করছিলেন। গতকাল সমাবেশে লোক সমাবেশ দেখে কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়েছেন, আজ স্মরণকালে বৃহৎ সমাবেশ হবে বরিশালে।

বঙ্গবন্ধু উদ্যানে অন্যরকম দৃশ্য: সকাল ৬টা। শিশির ভেজা ঘাস। তখনো সূর্য ওঠেনি। হালকা কুয়াশা। কিছুটা শীত পড়ছে। বঙ্গবন্ধু উদ্যানের (বেলস পার্ক) চারপাশে কাঁথা-বালিশ মুড়িয়ে শুয়ে আছেন শত শত মানুষ। কেউ ঘুমাচ্ছেন, কেউবা আড়মোড়া দিয়ে জেগে। মাঠের চারদিকে হাঁটাহাঁটি করছেন কেউ কেউ। কোথাও আবার দলবদ্ধভাবে আড্ডা আর খোশ গল্পে মেতে উঠছেন। হকাররা চা, বিস্কুট,পান-সুপারি নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। সেখানেও ভিড় করছেন মানুষ। এই চিত্র গতকাল সকালের। আজ বরিশাল বিএনপি’র বিভাগীয় গণসমাবেশ। সেই সমাবেশে অংশ নিতে পথে পথে নানা বাধা উপেক্ষা করে ২/৩ দিন আগেই বঙ্গবন্ধু উদ্যানে উপস্থিত হয়েছেন তারা। রাতে বঙ্গবন্ধু উদ্যানের মাঠেই থেকেছেন। হোটেলে থাকার জায়গা না পেয়ে রাতে বিএনপির সমাবেশস্থলসহ মাঠ ও ফুটপাথে ঘুমিয়েছেন। তাদের বেশিভাগই ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলা থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মী। সময় বাড়ার সঙ্গে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষ। তবে সকাল ১০টার পরে পুরো চিত্র পাল্টে যায়। হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে ওঠে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যান।

বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশিরভাগ মানুষই পায়ে হেঁটে, মাছ ধরার ট্রলার, বালু টানার কার্গো ও বাইসাইকেল নিয়ে বরিশালে পৌঁছান। পরে তারা একত্র হয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। এদিকে গতকাল সকাল থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বরিশাল। বাস, লঞ্চ, স্পিডবোট, মাইক্রোবাস সবই বন্ধ। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিভাগের বিভিন্ন জেলায় অসুস্থ রোগীরা উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। দুপুর ১টার দিকে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু উদ্যান। তীব্র রোদ, আর ধুলাবালি উপেক্ষা করে মাঠেই বালির উপর কেউবা সবুজ ঘাসের উপর বিছানা করে বসে পড়েন। অনেকেই নিজেদের অবস্থান জানান দিতে মাঠের চারপাশে শোডাউন করেন। স্থানীয় নেতারা নেতাকর্মীদের মাঝে বক্তব্য রাখেন। দুপুরের পর মিছিলে মিছিলে ঢল নামে সমাবেশস্থলে ও তার চারপাশের এলাকায়। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মাঠের চারপাশ দিয়ে প্রবেশ করেন নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা নামার আগেই পুরো মাঠ ভরে প্রধান প্রধান সড়ক ও নগরীর বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেন সমাবেশে আসা মানুষ। সন্ধ্যার পর বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে হিমশিম খেয়েছেন।

ভোলার তজুমুদ্দিন থেকে আসা নোয়াব আলী বলেন, গণপরিবহন বন্ধ, লঞ্চ বন্ধ। সমাবেশে যোগ দিতে ২ দিন আগেই বরিশাল আসি। আসার পথে নানা জায়গায় বাধা দিয়েছে সরকারদলীয় লোকজন। রাতে সমাবেশস্থলের সামনে মাঠের মধ্যে ঘাসের উপর বিছানা করে ঘুমিয়েছিলাম। সারারাত শীতে কষ্ট করেছি। হাজার হাজার মানুষ আমার মতো কষ্ট করে রাত কাটিয়েছে। তবুও আমাদের প্রত্যাশা সমাবেশ সফল হোক। আমাদের দাবি দাওয়া পূরণ হোক। সরকারের পরিবর্তন হোক। সরকার বাস-লঞ্চ বন্ধ করে মানুষের কষ্ট বাড়ালেও সকল বাধা উপেক্ষা করে মানুষের স্রোত নামছে। লঞ্চ বন্ধের কারণে হাজার হাজার মানুষ ভোলার বিভিন্ন ঘাটে আটকে আছেন। তাদের কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে নদী পাড়ি দিয়ে সমাবেশে আসছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। তবুও আসছেন। পটুয়াখালীর দিনমজুর আনসার আলী। রাজনৈতিক দলের কোনো পদ-পদবীতে নেই তার নাম। তবুও ২ দিন আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আসেন। মাঠে বালির উপর বিছানা করে রাত্রিযাপন করেন। বিছানা- বালিশ কাঁধে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মিছিল করেন। কথা হলে তিনি বলেন, আমার কোনো দল নেই।

অধিকার আদায়ের জন্য বিএনপি’র সমাবেশকে সমর্থন করতে এসেছি। এখানে যারা আসেন সবাই নেতা না। বেশিরভাগ মানুষ খেতে-খামারে, নদীতে কর্ম করে জীবনযাপন করছেন। তবে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দেশের মানুষ আজ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। এখান থেকে পরিত্রাণ চায়। ভোলা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি জামিল হোসেন অদুদ বলেন, সমাবেশ সফল করতে আগেই নেতাকর্মীদের নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছি। আরও নেতাকর্মী পথে আছেন। তাদেরকে বাধা দেয়া হচ্ছে। নৌকায় উঠতে দিচ্ছে না। নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, যাতে কেউ সমাবেশে না আসে। তবে আমাদের নেতারা কোনো বাধাকেই পরোয়া করে না। যে যেভাবে পারছেন বরিশালে আসছেন। বরগুনা থেকে আসা বিএনপি নেতা টিটু বলেন, বিএনপি’র সমাবেশ বানচাল করতে গণপরিবহন ধর্মঘট দিয়েছে সরকার। তবে সরকারের কোনো বাধাই কাজে আসছে না। মানুষ সমাবেশে ছুটে আসছে। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের ঢল নামছে।

সড়কপথে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক নিয়ে, কেউ হেঁটে, কেউ নৌকায় করে চিঁড়া, মুড়ি নিয়ে সামাবেশস্থলে পৌঁছেছেন। আরও আসবে। মির্জাগঞ্জ থানা মহিলা দলের সভানেত্রী রাশেদা খান মঞ্জু বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজন আমরা যাতে সমাবেশে না আসি সেজন্য হুমকি-ধমকি দিয়েছে। তারা নাকি তালিকাও তৈরি করছে যারা যারা সমাবেশে আসবে তাদের নামে নাকি নতুন মামলা দেয়া হবে। শুধু তাই নয় গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। এজন্য আমরা সমাবেশের আগের দিন পায়ে হেঁটে, রিকশা দিয়ে সমাবেশে চলে আসছি। রাতে মাঠেই থাকবো। সমাবেশ শেষ করে বাসায় যাবো।

মাঠের মধ্যেই রান্না-খাওয়া- যাত্রিযাপন: বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগে আসা নেতাকর্মীরা গ্রুপভিত্তিক মাঠের মধ্যে সামিয়ানা টানিয়ে সেখানে পলিথিন, বস্তা ও ত্রিপল বিছিয়ে বিছানা করেছেন। সেখানেই করছেন রান্না। কেউ রান্না করেছেন সাদা ভাত, মাছ মাংস আবার কেউ রান্না করছেন খিঁচুড়ি। পরে নিজেদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে তারা। একই স্থানে রাত্রিযাপন করেন সমাবশে আসা এসব মানুষ। গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে দেখা যায়, মঞ্চের ঠিক সামনেই ত্রিপল বিছিয়ে সেখানে শুয়ে আছেন ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থেকে আসা ৩৫/৪০ জন নেতাকর্মী। সেখানে কয়েকজন পুরুষ গরুর মাংস কেটে দিচ্ছেন। কেউ মসলা প্রস্তুত করছেন। পাশে ৩ জন মহিলা রান্না করছেন।

রোদ থাকায় কিছু সময় পর পর শামিয়ানার নিচে বিশ্রাম নিচ্ছেন। তারা ঝালকাঠি জেলা কৃষক দলের সদস্য। কথা হলে তারা বলেন, সরকার সমাবেশে আসতে বাধা দিবে এমন আশঙ্কায় ২ তারিখে রাতেই সমাবেশস্থলের সামনেই তাঁবু গেড়েছি। নিজেদের ভ্যানে রান্নার ডেকচি, হাঁড়ি, গ্যাসের চুলা নিয়ে আসি রান্না করে খাওয়ার জন্য। জুমার নামাজের পর সবাই মিলে খিঁচুড়ি খেয়েছি। রাতে সাদা ভাত রান্না করে খাবো। মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে রান্না করে খেয়েছেন বরগুনা জেলার নেতাকর্মীরা। একইভাবে ডিসি লেকের পাড়ে চলে রান্নার কাজ। তবে বেশিভাগ মানুষ, নিজ নিজ এলাকা থেকে চিঁড়া, মুড়ি, কলা ও গুড় নিয়ে সমাবেশস্থলে আসেন। মাঠে কিংবা মাঠের আশপাশে ছায়ায় ঢাকা স্থানে বসে পেটের ক্ষুধা নিবারণ করছেন। মাঠের ঠিক মাঝখানে ফ্রি খাবার পানি বিতরণ করছেন আয়োজকরা। তবে যারা রান্না করেনি কিংবা খাবার নিয়ে আসেনি তারা ছোট ছোট ভ্রম্যমাণ খাবার হোটেলে ভিড় করেন।

ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে বঙ্গবন্ধু উদ্যান: সমাবেশের একদিন আগেই ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যান। এ ছাড়া নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে শোভা পাচ্ছে পোস্টার-ফেস্টুন। দীর্ঘদিন পর বিভাগীয় এই গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে উজ্জীবিত বিএনপি নেতাকর্মীরা। স্থানীয়রা বলছেন, গত এক দশকে বরিশাল নগরীতে এমন পোস্টার-ফেস্টুন শোভা পায়নি। দেয়ালে, গাছের ডালে, বিদ্যুতের খুঁটিতে, দোকানপাটে সাঁটানো হয়েছে এসব পোস্টার-ব্যানার। নেতাকর্মীরা বলছেন, শনিবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে। তবে সরকারি দলের বাধা উপেক্ষা করে বরিশালের সমাবেশস্থলে আসছেন তারা। একদিনের সমাবেশ তিনদিনের সমাবেশে পরিণত হয়েছে। আগে থেকেই নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়েছেন। ক্ষণে ক্ষণে সরকারবিরোধী স্লোগান নিয়ে মাঠে ঢুকছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। তবে তাদের অভিযোগ সমাবেশে আসতে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়েছেন তারা। পথে পথে বাধা ও হামলার শিকার হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ব্যক্তিগত যানবাহন।

গণপরিবহন বন্ধ, ভোগান্তি: ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগের মতো বরিশালেও বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শুরুর আগের দিন থেকেই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন। বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাস, স্পিডবোট, নৌযান ও ছোট-বড় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পুরো বরিশাল বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার থেকে ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেয়া হয় নৌযান চলাচল। বরিশাল নৌবন্দর (লঞ্চঘাট) ঘুরে দেখা যায়, বন্দর অনেকটাই নীরব। আগের মতো হাঁকডাক নেই বললেই চলে। অভ্যন্তরীণ লঞ্চগুলো সব ঘাটে ভেড়ানো। হঠাৎ করে নৌযান চলাচল বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। এমভি সুপার সনিক-৩-এর মাস্টার আলী আকবর সাংবাদিকদের বলেন, লঞ্চ মালিকের নির্দেশেই তারা লঞ্চ চলাচল বন্ধ রেখেছে। বরিশালের অভ্যন্তরীণ লঞ্চ মালিক সমিতির একজন সদস্য জানান, ভোলা ঘাটের ইজারাদাররা লঞ্চ বন্ধ করে দেয়ায় অভ্যন্তরীণ ৩২টি লঞ্চের অধিকাংশই চলছে না। বাস ও লঞ্চ সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, ‘ওপরের নির্দেশেই’ মালিক সমিতির ধর্মঘট চলছে। এদিকে গণপরিবহন বন্ধ হওয়ায় শুধু সমাবেশে আসা লোকজনই বিপাকে পড়েনি। হঠাৎ করে লঞ্চ বন্ধ হওয়ায় বরিশালে আটকা পড়েছে ঢাকাগামী হাজার হাজার মানুষ। লঞ্চ ও গণপরিবহন না থাকায় তারা ঢাকা ফিরতে পারছে না।

ট্রলারে করে বরিশালে আসছে মানুষ: ধর্মঘটের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাছ ধরার ট্রলারে করে বরিশাল বিএনপি’র সমাবেশে আসছে নেতাকর্মীরা। ভোলা, মনপুরা, চরফ্যাশন, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা থেকে শত শত ট্রলার ভর্তি করে সমাবেশের উদ্দেশ্যে কীর্তনখোলা নদীর পাড়ে আসেন তারা। বিভাগীয় গণসমাবেশে অংশ নেয়ার জন্য গতকাল দুপুরে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা বিএনপি’র নেতারা ৩২টি ট্রলার ও ২টি মালবাহী কার্গো ভাড়া করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে পৌঁছান। ভোলা থেকে আসা রিফাত হাওলাদার বলেন, হাজার হাজার মানুষ ট্রলারে করে সমাবেশে আসছে। ভোলা নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষ সমাবেশে আসার জন্য অপেক্ষা করছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের অধিক মানুষ বিভিন্নভাবে সমাবেশস্থলে এসেছেন। কাউখালী থেকে যুবদলকর্মী মো. ইব্রাহিম বলেন, মাছ ধরার ট্রলার নিয়ে সমাবেশে এসেছি। রাতে সামবেশস্থলে থাকবো। সমাবেশ শেষ হলে আবার ট্রলারে করে চলে যাবো। বরগুনা থেকে আসা একজন বলেন, পথে পথে দুর্ভোগ। নানা দুর্দশা সহ্য করে সমাবেশস্থলে এসেছি। এমন কষ্ট কখনো করতে হয়নি। সরকার সব বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা ট্রলার ভাড়া করে কয়েক হাজার মানুষ এসেছি। এতকষ্ট করছি শুধু ভোটাধিকার ফেরত পাওয়ার জন্য। ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারি না।


কোর্টেসিঃ মানবজমিন
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×