somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাম দুলাল

০৭ ই আগস্ট, ২০১০ সকাল ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দেশ মাতৃকার জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যে বীর সূর্য সন্তানরা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন তারা শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা। বাঙালি জাতির শত বছরের পরাধীনতার শিকল ভেঙে শত আকাঙ্ক্ষার স্বাধীনতা এনে দিল বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে বসবাস করছি বাংলাদেশে। যাদের রক্তের ধারায় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি পেয়েছি, তারা তাদের স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে কেমন আছেন, কীভাবে দিন যাপন করছেন, আমরা তাদের কতটুকু খোঁজ খবর রেখেছি, একটু কি ভেবে দেখেছি? যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের মায়া-মমতা ভুলে দেশ ও জাতির জন্য জীবনকে উৎসর্গ করে মৃত্যুর ভয়কে পিছু ঠেলে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এমনকি দেশের তরে ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ হলো, আর ভাগ্যক্রমে যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে বেঁচে আছেন। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কি আমরা সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছি, স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর আজও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে দেখা যায় অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্ধাহারে অনাহারে দিন যাপন করছেন, কোথাও কোথাও দেখা যায় অসুস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধারা অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাম দুলাল চৌধুরী একাত্তরে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দেশ স্বাধীন করলেও তিনি আজ জীবন যুদ্ধে হার মানছেন প্রতিনিয়ত। পাঁচ বছর ধরে তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী হয়ে বিছানায় পরে আছেন, মাঝে মাঝে হুইল চেয়ারে বসিয়ে শিশুদের মতো মুখে তুলে ভাত খাইয়ে দেন, অর্থের অভাবে সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না, এমনকি এখন পর্যন্ত ভাতা পাননি। যে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশ ও জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে ভাগ্যক্রমে বেঁচে এলেন, সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে কেন এত অবহেলিত, মুক্তিযোদ্ধারা নিজের স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে জীবনের শেষ লগ্নে যদি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেন, তবে একদিন আমাদেরকে ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা রাম দুলাল চৌধুরীর দিকে সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা চাই না কোনো মুক্তিযোদ্ধা তার স্বাধীন করা রাষ্ট্রের বুকে অর্ধাহরে-অনাহারে থেকে জীবনের শেষ লগ্নে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করুক, বেঁচে থাকতেই মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। যুদ্ধের পূর্বে রাম দুলাল চৌধুরী এসএসসি পাস করে ডিপ্লোমা ইন কমার্সের ছাত্র। দেশে যখন শুরু হলো রাজাকার, আলবদর, আলশামসের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনীর তা-ব। মন সায় দেয় মা-মাটি মানুষের জন্য যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ২৮ দিনের ট্রেনিং শেষ করে দেশকে স্বাধীন করার ব্রত নিয়ে সেক্টর কমান্ডার সিআর দত্তের অধীনে ৪নং সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে সম্পৃক্ত করেন নিজেকে। সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মোত্তালেব। যুদ্ধের অস্ত্র এসএমজি, এলএমজি, থ্রি নট, থ্রি রাইফেল আর গ্রেনেড। প্রতিদিন পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নিয়ে শপথ পরাধীন দেশকে শত্রুমুক্ত করতে হবে। তাহিরপুর, সাচনা, টেকের ঘাট, শাল্লা ও আজমিরীগঞ্জ ছিল তার যুদ্ধক্ষেত্র। স্মরণীয় যুদ্ধের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কাঁপা গলায় বলে উঠলেন টেকের ঘাটের যুদ্ধের কথা। সেই যুদ্ধে অনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, প্রাণ হারায় অনেক পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী, প্রায় ৫০-৬০ জনের দল ছিল তাদের, বিভিন্ন যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন দলের বেশ কয়েকজন সদস্য। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অসুস্থতার কারণে রাম দুলাল ভুলে গেছেন অনেক সহযোদ্ধার নাম। অনেক কষ্টে চিন্তা করে বলতে চেষ্টা করেন কয়েকজনের নাম_ কাশেম, প্রিয়লাল, বীরেন্দ্র, দেবেন্দ্র। প্রিয় বন্ধু ছিলেন কাশেম, ৪-৫ বছর আগ পর্যন্ত যোগাযোগ ছিল বলেই আবার কান্নায় ভেঙে পড়েন। বাম হাতে কান্না জড়িত চোখ মুছেন। তারপর নীরব হয়ে যান। কি যেন মনে করতে চান, মস্তিষ্কে রক্ত ক্ষরণের জন্য স্ট্রোক হয়েছে, স্মৃতিশক্তির বেশির ভাগই হারিয়ে গেছে। অতীত স্মৃতিগুলো অতীতের মতোই আবছা হতে হতে বিলিন হয়ে গেছে। তবুও যেন ভেতর থেকে কিছু একটা বলার জন্য প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। কিন্তু নিরুপায় তার বাকশক্তি আর আগের মতো সাড়া দেয় না। হাঁটতে পারেন না অন্যের সহায়তা ছাড়া বিছানায় প্রসাব-পায়খানা করছেন। টানা ৫ বছর বিছানায় শয্যাশায়ী থেকে শুধুই কাঁদেন অঝোর ধারায়। পরিবারের সদস্যদের দিকে তাকিয়ে প্রায়ই কেঁদে উঠেন হু হু করে। কান্না থামাতে স্ত্রী সন্তানদের চলে প্রাণান্ত প্রচেষ্টা। 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি শুনেই চোখের ইশারায় দেখিয়ে দেন একটি বড় ডেকচি, রাম দুলাল চৌধুরী'র স্ত্রী শান্তা চৌধুরী জানালেন এত বছর পরও তার স্বামী যুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে ডেকচিটিকে আগলে রেখেছেন পরম মমতা ভরে। এই ডেকচিটিতে রাম দুলাল ও তার সহযোদ্ধা মুক্তিবাহিনীর দল খিচুড়ি রেঁধে খেতেন।
পুরো পরিবারের যুদ্ধের আবেগ যেন এই ডেকচিটির সঙ্গে মিশে আছে। শান্তা চৌধুরী বলেন, আমার স্বামী সঠিক মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এখন পর্যন্ত ভাতা পাচ্ছেন না, তা খুব কষ্টদায়ক, খুব কষ্টে সংসার চলে। ছেলেরা চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও চাকরি হয় না।
রাম দুলাল চৌধুরী, পিতা- হেমচন্দ্র চৌধুরী, পৈতৃক বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার সাউদেরশ্রী গ্রামে। স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক আগ থেকেই সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালস্থ মণিপুরী রাজবাড়ীর ৫নং বাসায় বসবাস করছেন। পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগী হিসেবের্ দীঘ ৫ বছর ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। ছেলের স্বল্প আয়ের ওপর চলছে তার চিকিৎসা, ওষুধপত্র, পরিবারের ভরণ-পোষণ। মুক্তিযোদ্ধার ভাতার ব্যবস্থা তার এখন পর্যন্ত হয়ে উঠেনি। অর্থাভাবে সুচিকিৎসা করাতে না পেরে দিনে দিনে বিভিন্ন রোগ তাকে জেঁকে বসেছে। রাম দুলাল চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং- ২৯৫৯ (সুনামগঞ্জ), মুক্তিবার্তা নং- ০৫০২০৫০১৭৮। জেনারেল এমএজি ওসমানী স্বাক্ষরিত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট পেয়েছেন তিনি, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সনদপত্র- ম-১৩৫৬৮৯।
জীবন সায়াহ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা রাম দুলাল চৌধুরীর '৭১-এর সাহস আর অসীম বীরত্বের প্রতি যেন আমাদের কারো দায় নেই। অর্থাভাবে সুচিকিৎসা বঞ্চিত এ বীর যোদ্ধার পাশে ব্যক্তিগত পর্যায়ে না পারলেও সরকারি পর্যায়ে দাঁড়ানো উচিত মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় বিশ্বাসী বর্তমান সরকারের।
দেশ, রাজনীতির নতুন প্রজন্মের প্রতি রাম দুলাল চৌধুরীর কিছুই বলার নেই, কিন্তু যা বলার ছিল বলেছে কি বাংলাদেশে? সীমাহীন আক্ষেপ আর চাপা কষ্টে মৃত্যু পথযাত্রী রাম দুলাল চৌধুরীর সান্ত্বনা দেশ তাকে কিছু দিক বা না দিক সংগ্রাম মুখর মুক্তিযুদ্ধে আমি দেশকে কিছু একটা দিতে পেরেছি।
দুই ছেলে_ দেবব্রত চৌধুরী লিটন, বিএ পাস করে বেকার, সরকারী চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছে। ২য় ছেলে_ দিবাকর চৌধুরী জয়, অষ্টম শ্রেণী পাস করে আর লেখাপড়া করতে পারেনি এমএলএসএস চাকরির জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করেছেন কিন্তু ঘুষের জন্য কোথাও চাকরি নিতে পারেননি।
এক মেয়ে সোমা চৌধুরী, এসএসসি পরীক্ষায় রেজাল্ট খারাপ হলে অর্থাভাবে আর পড়ালেখা করতে পারেননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রাম দুলাল চৌধুরী, ৫নং মণিপুরী রাজবাড়ী, মির্জাজাঙ্গাল, সদর সিলেট।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×