মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে গ্রামে গিয়েছিলাম। দুই দিনেই পদ্মা নদীতে এমন পানি বেড়েছে যে, লঞ্চে পার হতে গিয়েই তা উপলব্ধি করলাম। কিন্তু রাজবাড়ী পেঁৗছে দেখি পানির নাম-গন্ধ নেই। বাংলার সোনালি অাঁশ পাটের দুর্গতি দেখতে দেখতে গ্রামের বাড়িতে গেলাম। আমাদের ছোট্ট জেলার চারদিকে এমনভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দিয়ে ঘেরাও করা যে, অনেক বছর ধরেই বন্যার পানির দেখা মেলে না জেলাটিতে। ফলে এ বছর কৃষকরা যে বিপুল পরিমাণে পাট বুনেছিল তা পানির অভাবে জাগ দিতে না পেরে তাদের এখন মাথায় হাত। তার ওপর যথার্থ বৃষ্টির দেখা নেই। মূলত কৃষকদের বৃষ্টির পানিই ছিল ভরসা। সে ভরসাও এ বছর ফিকে হয়ে গেছে। ৪-৫ দিন জেলার যেখানেই গিয়েছি সেখানেই একই হতাশার কথা। পাটের দৈন্যদশায় কৃষকরা দিশেহারা। জিজ্ঞেস করেছি, কেন আপনারা এবার এত বেশি পাট বুনলেন? পানির অভাবের কথা তো আগে থেকেই জানেন? উত্তর পেয়েছি, গত কয়েক বছর পাটের ভালো দাম দেখে এবার কৃষকরা নগদ অর্থের আশায় ধান ও অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে মাঠের পর মাঠ শুধু পাটই বুনেছে। আশানুরূপ বৃষ্টি হবে না, পাট জাগ দিতে পারবে না_ এসব কথা তারা একবারও ভাবেনি। নিজের পরিচিত দু'একজনের বাড়ির পুকুর যা এতকাল ছিল গোসল, গৃহস্থালির কাজে পানির ব্যবহার ও মাছের চাষ করার জন্য নির্দিষ্ট তাতেই এবার পাট জাগ দিতে বাধ্য হয়েছে তারা। সরকারের পক্ষ থেকে পাট ভেজানো ও পাট ছড়ানোর জন্য নতুন যে রিবন পদ্ধতির কথা ঘোষণা করেছে কৃষকদের সে কথা বলায় তারা সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ওটা ছেলে খেলা একটা ব্যাপার। এক-দুই মণ পাটের ক্ষেত্রে হয়তো সম্ভব; কিন্তু ৫০, ১০০, ২০০ মণ পাটের বেলায় তা কি সম্ভব? পাট ছড়ানো ও ভেজানো খাতে তাহলে কত সময় ও টাকা ব্যয় হবে? কৃষকদের মুখে এসব কথা শুনে আমিও নতুন পদ্ধতির বিষয়ে হতাশ হয়ে আর কথা বাড়াইনি।
মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর কাজ সেরে নিজ থানার আরও কয়েকটি এলাকায় গিয়েছি পারিবারিক প্রয়োজনেই। যেখানেই গিয়েছি সেখানেই নানা সমস্যায় জর্জরিত মানুষের কথাবার্তা শুনতে হয়েছে। গ্রামগঞ্জে সালিসের পরিমাণ মারাত্মক আকারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, ছোটখাটো অপরাধ, মারামারি, দখল-বেদখলের ঘটনা এতটাই বেড়েছে যে, থানা কর্তৃপক্ষ জনগণকে সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করায় উৎসাহ জোগাচ্ছে। এমন বেশ কিছু সালিসের কথা শুনলাম। দু'একজন পরিচিত ব্যক্তি সালিস করতে করতে বেশ সুনামও অর্জন করে গোটা থানা এমনকি পার্শ্ববর্তী থানাতেও পরিচিতি পেয়েছেন। দেশে ন্যায়সঙ্গত সালিসের কদর সর্বকালেই ছিল, এখনো রয়েছে। কথায় কথায় মামলা-মোকর্দমা করায় নিরুৎসাহিত করতে আইন প্রয়োগের সঙ্গে যারা জড়িত তারাও চান, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা তো চানই। তবু দেশে আগের তুলনায় মামলার পরিমাণ অনেক বেড়েছে। মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। বিপুল পরিমাণ অনিষ্পন্ন মামলার জটিলতা দেখে সরকার ও বিচার বিভাগও উদ্বিগ্ন। কিছুদিন আগে এ সম্পর্কে একটি সংবাদও প্রকাশ পেয়েছিল, যাতে কয়েক লাখ মামলার জটের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। গ্রামাঞ্চলে তুলনামূলকভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত হয়েছে। সাধারণ মানুষের কৃষি ও ছোট ছোট ব্যবসা-বাণিজ্যের জ্ঞানও বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে আশঙ্কাজনক হারে। মানুষের মনের অসহিষ্ণুতাও বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। এ অবস্থায় মারামারি-হানাহানি, দখল প্রভৃতি অপরাধ অনেক গুণ বেড়েছে। এজন্য যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকারি ক্ষমতার প্রয়োজন তা অনেকদিন ধরেই দেশে অনুপস্থিত। গত ২৫ বছর ধরেই বিভিন্ন মহল বিশেষ করে সংবাদপত্রের পক্ষ থেকে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও জনবল বাড়ানোর জন্য; কিন্তু তা আজ পর্যন্ত ১৬ কোটি মানুষের দেশে চাহিদার পরিমাণ বাড়ানো হয়নি। বিভিন্ন সময় যেসব সরকার ক্ষমতায় এসেছে তারা দলীয় দৃষ্টিকোণে কিছু সংখ্যা বাড়ালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিল অপ্রতুল। তাই বর্তমান সরকারের কাছে গ্রামের সাধারণ মানুষেরও দাবি যে যাই বলুক_ এ সরকারকে অবশ্যই পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীতে জনবল বৃদ্ধির ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। দেশে যদি শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হয় তাহলে পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
বর্তমান সরকার সম্প্রতি চন্দনা-বারাশিয়া নদী খননের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছিলেন স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তারই সরকার তৎকালে চন্দনা-বারাশিয়া নদী খনন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজও শুরু করেছিল; কিন্তু '৭৫-এর আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে ওই নদী দুটি শুকিয়ে নামমাত্র টিকে রয়েছে। যদি নদী দুটিতে আবার পানি সংরক্ষণ ও প্রবাহের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে যেমন পানির সংকট অনেকখানি দূর হবে তেমনি নদী পারের বিপুলসংখ্যক মানুষও তাদের জমিজমায় নতুন জীবন ফিরিয়ে আনবে। এবার গ্রামে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলাপ প্রসঙ্গে যখন এ প্রকল্পের কথা বলেছি তখন তারা দারুণভাবে উৎফুল্ল হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু করার আবেদন জানিয়েছেন তারা। আগেই উল্লেখ করেছি গ্রামগঞ্জে ছোট ছোট বহু সমস্যা রয়েছে। নির্বাচিত প্রতিনিধি বা সরকারের দপ্তরগুলো একটু নজর দিলেই সেসব সমস্যার সমাধান সম্ভব। কিন্তু তারা সেদিকে নজরও দেয় না। নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা গালভরা বহু আশ্বাস দেন, ওয়াদা করেন; কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর তারা বেমালুম ভুলে যান সেসব ওয়াদার কথা। যেমন এবার আশপাশের দুটি রাস্তা পাকা করা হয়েছে অনেক আগে; কিন্তু মাঝখানে কোয়ার্টার মাইল, আধা মাইল বা এক মাইল রাস্তা দীর্ঘকাল ধরে কাঁচা পড়ে আছে। বহু আবেদন-নিবেদন করেও সমস্যার সুরাহা করা হয়নি। নির্বাচনের সময় সবাই ওয়াদা করেছিলেন এবার নির্বাচিত হলেই এ সামান্য কাজ সম্পন্ন করা হবে। কিন্তু প্রায় দুই বছরে ওইসব রাস্তার ধারে-কাছে ওয়াদাকারীরা আর আসেননি। শুধু আমাদের এলাকাতে নয়, অনুমান করা যায় গোটা দেশেই এ ধরনের অসংখ্য রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে। সরকারি অফিসগুলো একটু দায়িত্বশীল হলেই জনপ্রতিনিধিদের অপেক্ষা না করেই অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে দ্রুত নজর দেয়া উচিত। বালিয়াকান্দি উপজেলা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র একটি জনপদ। সেদিন উপজেলা শহরে কিছুক্ষণ কাটিয়ে মামাবাড়ি ভীমনগর গ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে নতুন-পুরনো বহু লোকের সঙ্গে দেখা হতেই তাদের গ্রামে বিদ্যুৎ-রাস্তা নেই কেন তার ফিরিস্তিত্দ বিবরণ দিয়ে বলল, নির্বাচনের সময় এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান উভয়ই ভোট নেওয়ার জন্য ওয়াদা করেছিলেন, নির্বাচিত হলেই প্রথমে এ গ্রামের এসব সমস্যা দূর করা হবে। প্রায় দুই বছর হলো কেউই আর ওই গ্রামের ধারে-কাছে যাননি। গ্রামীণ বিদ্যুতের এলাকা নয়_ পিডিবির এলাকা বিধায় গ্রামীণ বিদ্যুৎ কাজ করতে রাজি নয়। পিডিবির খাম্বা কয়েক বছর আগে পুঁতে রাখলেও তারা অজ্ঞাত কারণে এখনো কাজ করেনি। আর রাস্তার কাজ মাত্র আধা মাইলের। বছরের পর বছর আশ্বাসের ওপরই পড়ে রয়েছে। গ্রামটির লোকজন আমাকে কাছে পেয়ে সমস্বরে জানিয়ে দিয়েছে, কোন দল নয় রাজনীতি নয়_ এবার এমপি-চেয়ারম্যান যারা হয়েছেন তাদের আর ভোট দেওয়া হবে না। এটা এখন আমাদের ৫০০ ভোটারের শপথ। আমার ধারণা, দেশের বহু অঞ্চলেই সাধারণ মানুষ নিতান্তই আত্মসম্মানের কারণে এ ধরনের শপথ নিতে পারে, যা আগামীতে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
কেন্দ্র থেকে একেবারে মফস্বল এলাকা পর্যন্ত রাজনৈতিক নেতাদের ওপর থেকে দ্রুত আস্থা ও বিশ্বাস কমে যাচ্ছে। জাতীয় রাজনীতির জন্য এ অবস্থা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। সবাই ধরে নিয়েছে কথা দিয়ে কেউ কথা রাখে না। নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক নেতারা যেসব কথা দেয় তার এক পয়সা মূল্য নেই। সাধারণ মানুষের এ ধরনের মনোভাবের পরিবর্তন করতে পারে একমাত্র রাজনৈতিক নেতারাই। তারাই যদি তাদের চরিত্র পরিবর্তন করে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করেন তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। যা করা যাবে না বা করতে পারায় সন্দেহ রয়েছে তেমন বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার প্রবণতা রোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের 'প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের' জন্য একটি কমিটিও রয়েছে বলে জানি। তারা যদি যথার্থ ভূমিকা পালন করতেন তাহলেও এহেন রাজনীতিকদের ওপর আস্থাহীনতা অনেকখানি কমে আসত। আমাদের মতো দরিদ্র ও সীমাবদ্ধতা কবলিত আর্থ-সামাজিক অবস্থার দেশে ইচ্ছে থাকলেও অনেক কিছুই করা যায় না। সেসব ব্যাপারে যদি দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা হিসেব করে কথা বলেন বা প্রতিশ্রুতি দেন তাহলে তাদের ওপর থেকে জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা হ্রাস পেত না। রাজনীতিকদের এখন একটা সংস্কৃতিই হয়ে দাঁড়িয়েছে যে কেবল ক্ষমতার লোভে যেমন ইচ্ছে তেমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া।
এবার নিজ উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা পাংশা এবং জেলা শহরে গিয়ে যাদের সঙ্গেই দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে তারাই জানতে চেয়েছে রাজনীতির সর্বশেষ খবর। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কি এ সরকার সম্পন্ন করতে পারবে? বিএনপির আন্দোলন কি তারা বেগবান করতে সক্ষম হবে? গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি-দাওয়ার আন্দোলন কি সরকার ন্যায়সঙ্গতভাবে স্তিমিত করতে পারবে? এ ধরনের নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে নিজের বিশ্বাস থেকে নিজের মতো করে তাদের উত্তর দিয়েছি। যখন ঢাকা থেকে গ্রামে যাই তখনই গার্মেন্ট শ্রমিকরা নূ্যনতম ৫ হাজার টাকা বেতনের দাবি তুলে আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছিল। সরকার যেহেতু মঞ্জুরি কমিশন গঠন করে তাদের বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সেহেতু শ্রমিকরাও তাদের দাবি সমুন্নত করার সুযোগ নিয়েছিল। গার্মেন্ট মালিকরা এ শিল্পের যাত্রা শুরুর কালে সাধারণ একজন শ্রমিকের বেতন দিতেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। ২৫ বছরে তা বাড়িয়ে তারাই করেছিলেন ক্রমে ১৫০০-১৬০০ টাকা। এ দীর্ঘ সময়ে শ্রমিকদের ন্যায্য বেতন না দেওয়ার খাত থেকে কত টাকা লুট করে নিতে তারা সক্ষম হয়েছেন তার একটা হিসাব দেশবাসীর জানার অধিকার ছিল। দেশের সব বিবেকবান মানুষ ও সংবাদপত্রের দাবি ছিল_ বিপুল এ সম্ভাবনাময় শিল্প খাতকে একটি নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার। অতীতের কোন সরকারই তাতে কান দেয়নি। এবার শেখ হাসিনার সরকার ঝুঁকি নিয়ে হলেও শ্রমিক-মালিক সবার স্বার্থ বিবেচনায় রেখে মজুরি কমিশনের মাধ্যমে গার্মেন্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবারই প্রথম তাদের একটি নিয়মশৃঙ্খলার মাধ্যমে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন নূ্যনতম ৩ হাজার টাকা বেতন নির্দিষ্ট করে। নিশ্চয়ই শ্রমিকদের ভবিষ্যতের পথ এর দ্বারা উন্মুক্ত হয়েছে এবং আগামীতে তাদের সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়বে। গার্মেন্ট মালিকদের একটি অংশ এতে খুশ হয়নি, তাদের সমর্থক রাজনৈতিকমহলকেও তারা কাজে লাগিয়ে গার্মেন্ট শিল্পে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিল। অবশ্য সরকার সাফল্যের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। ক্রমে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এসেছে।
গ্রামে গিয়ে লোকজনের প্রশ্নের মুখে বলেছি_ এ সরকারের সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পন্ন হবে কি-না জানি না। তবে কোন কোন মন্ত্রীর কথাবার্তায় তো মনে হচ্ছে বিচার তারা সম্পন্ন করেই তবে ক্ষমতা ছাড়বেন। তবে একটা কথা সত্য, এ সরকার তার প্রতিশ্রুতি মতো যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্দেশে একটা যৌক্তিক পর্যায়ে উপনীত হতে পেরেছে এবং সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েও বিচার কার্যক্রম শুরু করতে সক্ষম হয়েছে। জনগণ আশা করে, বিচার কার্যক্রমে যেন শৈথিল্য না আসে এবং ভুল-ত্রুটির ঊধর্ে্ব থাকতে পারে বিচার কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নইলে ভুল-ত্রুটির কারণে একটি ভালো উদ্যোগও বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। অ্যাডভোকেট আনিসুল ইসলাম সম্প্রতি যে প্রশ্ন তুলেছেন তা কি একেবারেই অসত্য? তাহলে কি বিচার কাজ শুরুর প্রথম ধাপেই ভুল হয়ে গেছে? সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্ব সামনে আরও বেশি যত্নশীল হলে জনগণ আশাবাদী হতে পারবে। মানুষের আর একটি প্রশ্ন ছিল, বিএনপি যে আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে তা কি তারা সরকারকে বিপদগ্রস্ত করতে সক্ষম হবে। গ্রামের একজন সচেতন মানুষও মনে করে বিএনপির পক্ষে তেমন আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তারা গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত এত বেশি কোন্দলে জর্জরিত এবং ক্ষমতার আমলে এত বেশি সুযোগ-সুবিধা বাগিয়েছে যে তাদের পক্ষে সরকার পতনের মতো তীব্র কোন আন্দোলন করা আদৌ সম্ভব নয়। কেউই নিঃস্বার্থভাবে প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা হারিয়ে ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলনে নামবে না।
সাম্প্রতিক কালে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির সভায় দলের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা চেয়ারপারসনের সামনেই যেভাবে দলীয় নীতি-কাজকর্মের ব্যাপারে সমালোচনা করে নিজেদের অনৈক্য তুলে ধরেছেন তাতে একাট্টা হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামা অসম্ভব ব্যাপার।
গ্রাম-গঞ্জের লোকও তাদের দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কথা সব জানে। তারা বিরোধীদল নিয়ে ভয় পায় না, ভয় পাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও যদি বিএনপির মতো একই ভুল-ভ্রান্তি করে তাহলে ভবিষ্যতে চরম মূল্য দিতে হবে। তাদের আকুল আবেদন, কেন্দ্রীয় নেতারা যেন এ বিষয়টি গভীরভাবে নজরে নিয়ে প্রতিকারের উপায় খুঁজে বের করেন। জনগণ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আলাদা কিছু আশা করে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



