somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফেইস বুক জ্বর

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যালো,শুনছো?
-হুম…
-শুনছো তো?
-আরে বাবা বলো না…।
-আমি তোমার কে?
এতো ক্ষণ আজম সাহেবের স্ত্রী মোবাইলে ফেবুকে মগ্ন থাকায় খুব ব্যাস্ত ছিলেন স্বামীর কথায় তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি।এবার স্বামীর এমন অপ্রস্তুত প্রশ্নে অবাক হন,আপাতত ফেবুক হতে চোখ ফিরিয়ে স্বামীর প্রশ্নের উত্তরটা একটু রাগ নিয়েই দিলেন।
-মানে!হঠাৎ এতো বছর পর এ কথা কেনো?
-না মানে আমিতো আর সেই ভেবে কথাটা বলিনি,তুমি আমার কথা শুনছো কি না তাই তোমার ঐ উচ্চাআধুনিক স্যোসাইল সাইট থেকে মনযোগটা সরাতে চেয়েছিলাম মাত্র।
-ও তাই…
আবারো ম্যাডাম ফেবুকে টিপাটিপি শুরু করলেন।তা দেখে সাদা সিদে স্বামী বেচারার মনে বিরক্ত এসে যায়।কি সব সারা দিন রাত জেগে ইউজ করে তার মাথায় যেন তা আসতেই চায় না।সে এক প্রকার বাধ্য হয়েই সোফায় স্ত্রীর মুখো মুখি বসলেন।তার এমন বসার ভঙ্গিটা আড় চোখে দেখলেন তার স্ত্রী তবুও সে মোবাইলের ফেবুর স্কিন থেকে চোখ সরালেন না।মনে হচ্ছে বিশ্ব জয়ের দিকে ধাপিত হচ্ছেন তাইতো সে চ্যাটিংয়ে অভ্র কি বোর্ডে আঙ্গুল চালাচ্ছেন খুব দ্রুত।ভাগ্যিস বাংলায় অভ্র কি বোর্ডটা আবিষ্কার হয়েছিলো নতুবা ইংরেজী চ্যাটিং টাইপিনে খবর আছিলো।এই কৃতিত্ব অর্জন কারী হলেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহের মেহেদী হাসান।
-কি কিছু বলবে?
-তুমি কি খুব ব্যাস্ত?
-দেখতে পাচ্ছো না!
-হ্যা তাতো দেখছিই মনে হচ্ছে সকালে দাত ব্রাসও করোনি
-কি বললে?
-না মানে…কিছু বলতে চাইছিলাম।
-বলো,
-না মানে তোমরা যে অবস্থায় সময় অপচয় করছো তাতে যদি টাকা আসতো তবে কোন কথাই ছিল না,তাই বলছিলাম কাজের বুয়ারে ছাটাই করলে কেমন হয়!
-তাহলে বাড়ীর এতো কাজ কে করবে?তুমি?
-দূর!আমার কি আর এতো সময় আছে?…আমি বলছিলাম কি তুমিই যদি ঘরের কাজে একটু মনযোগ দিতে,,,না মানে তোমারতো অফুরন্ত সময়।সারা দিন কেবল ফেবুক আর জলসা টিভিতে সিরিয়াল দেখে দেখে অযথা সময় কাটাও।
-কি বললে?তুমি জানো এতে কত জ্ঞান অর্জন হয়!…তুমি জানবে কি করে তুমিতো আবার অসামাজিক গেয়ো।
-হ্যা,ঠিকই বলছো তবে টাকা রোজগার যদি করতে তবে বুঝতে…।
-তুমি কিন্তু আমার রাগ তুলে দিচ্ছো…।
-না না কি যে কও জীবনের বিশটি বছর গত হলো এক সাথে আর জীবনের এ অবেলায় সঙ্গী করলে ফেবুককে!এই দুঃখটাই একটু বললাম আর কি।
কর্তৃর যেনো সে দিকে কান নেই আবারো অনবরত সে চ্যাটিং করেই যাচ্ছেন আর মিটমিট করে হাসছেন।মনে হচ্ছে খুব মজার একটা চ্যাটিং চলছে।স্বামী বেচারা একটু উকি মেরে চ্যাটিং দেখার ভান করলেন তাতে কর্তৃর এক দিকে রাগ আসলেও চ্যাটিং আপাতত শেষ হওয়াতে মোবাইলের ফেবুক বন্ধ করে চ্যাটিংয়ের কাহিনী শুনালেন।
-কি কার সাথে দীর্ঘ ক্ষণ চ্যাটিং না ফেটিং করলে?মনে হচ্ছে আজকাল খুব মজে আজো।
-আরে না,,,,আহা!বেচারা।ঐ যে আমার বান্ধুবী রাহেলা…তার চ্যাচিং বক্সে তারই মেয়ের প্রেম ঘটিত ম্যাসেজ এসে পড়ে।
-বলো কি?আর তাতে তুমি খুশি হচ্ছো কেনো?এ ভাবে পরিবারের হাতে ধরা পড়া এটাতো রীতিমত বিষ্ময় কর।আমাদের আগের দিনই ভাল ছিলো যখন একটি চিঠির জন্য অপেক্ষায় থাকতাম দিনকে দিন।অতি গোপনে ডাক পিয়নের সাথে যোগা যোগ রাখতাম।আর এখন কি কলি কাল এলোরে বাবা!।
-আরে রাখতো তোমার সেইকাল।কি মজা তাই না?ভালোই হলো এখন আর ছেলে মেয়েরা কোন কিছু লুকাতে পারবে না আমরা গার্ডিয়ানরা সহজেই ধরতে পারব।জুকারবার্গকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
-তুমি গেছো!ফেবুক জ্বরে তোমাকে পেয়ে বসেছে।এটাকে তুমি ভাল বলছো,তবে তো প্রাইভেসি বলে আর কিছুই থাকছে না।
-আগে শুনবেতো কি হয়েছিলো?
-বলো!
-রাহেলার মেয়ে তার প্রেমিককে চ্যাটিংয়ে এত্তো এত্তো কিস মানে চুমো দিছে সব রাহেলা জেনে গেছে,আগেতো সরা সরি যা হবার হতো আর এখন হচ্ছে ভার্চুয়ালে অদেখা স্পর্শহীন।খুব ভালো তাই না?জীবনের নিরাপত্তায় আর কোন টেনসন থাকলো না।
-হ ঠিকই কইছো,তুমি থাকো তোমার ফেবুক জ্বরে আমি চল্লাম আমার অফিসে।
স্বামী বেচারা স্ত্রীর ফেবুক নেশায় নিজেই যেন কাইত হয়ে না যায় সেই ভয়ে অফিস শুরুর অনেক আগেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লেন।মৌচাক মোড়ে এসে জেব্রা ক্রসিং পার হবেন,অপেক্ষায় সিগনাল পরার।সে এ দিক ঐ দিক তাকিয়ে দেখেন তার সাথে সব বয়সের আরো লোক জন তারই মতো অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছেন,কম বেশী সবার হাতেই এড্রুয়েড মোবাইল প্রায় সবাই যেনো মহা ব্যাস্ত।একটু কাৎ হয়ে অন্য একজনের মোবাইলের বিষয় দেখার চেষ্টা করলেন।হুম!এখানেও ফেবুক।এর মধ্যে সিগনাল ছেড়ে দিলে যে যার মত রাস্তা পার হচ্ছেন শুধু এদের মধ্যে এক জন যুবককে সে দেখলেন,যুবকটি খুব ধীর গতিতে রাস্তা পার হচ্ছেন,হাটার সাথে চোখ তার মোবাইলে,আঙ্গুল তার মোবাইল স্কিনে সাতরাচ্চে।হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার তাকে একটু হালকা বায়ু স্পর্শ দিয়ে চলে গেলেন স্পিডে,সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলটি তার হাত হতে ছিটকে রাস্তায় পড়ে যায় তৎক্ষনাৎ তার চোখের সামনে আরেকটি গাড়ীর চাকায় তা ভেঙ্গে চুড়মাচুড় হয়ে গেল।যুবক অবাক হয়ে গাড়ীর দিকে চেয়ে সেখানেই দাড়িয়ে রইলেন।এরই মধ্যে আজম সাহেব তাকে পাজা কোলের মতো আলগিয়ে দ্রুত রাস্তা পারা পার করালেন।যুবক রীতি মত আজম সাহেবের উপর ক্ষ্যাপে গেলে।
-কি ব্যাপার আপনি আমাকে এ ভাবে তুলে আনলেন কেনো?
-আর একটু হলে তুমিও গাড়ীর তলে চাপা পড়তে…বুঝলে।
যুবক পরিস্থিতি বুঝতে পেরে তাকে ধন্যবাদ দিলেন।
-আসলে ঐ আমার সাধের মোবাইটা গাড়ী চাপা দিলো তাই আমার মাথা কি যেনো কি হয়ে গেল,,,,আপনাকে ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ না দিয়ে একটু চিন্তা করো,,, এভাবে চলন্তবস্থায় কখনো মোবাইল টিপবে না বুঝলে।
যুবকটিকে আচ্ছা মত উপদেশ দিয়ে সে অফিসের সামনে গিয়ে এক চা স্টলে চায়ের অর্ডার দিলো।চা স্টলেও বেশ কয়েকজন যুবক চা পান করছেন আর মোবাইল টিপছেন।নাহ্ এখানেও দেখছি সেই ফেবুক জ্বর। অবাক হলে যখন রাস্তার এক ভিখারী ফোনে তার পার্টনারকে বলছেন।
-পার্টনার তুমি আজ কোন কোন জায়গায় যাইবা?
-কেন,তুমি আমার ফেবুক স্টেটাসটা দেখো নাই?
-ওমা আমার কি আর ফেবুক আছেনি।আমিতো ওয়া চালাইবার পারি না।
-ঠিক আছে,,,ঠিক আছে আজ রাহি তুমি তাড়া তাড়ি ফেবুক অ্যাকাউন্ট খোল।ওকে,,,!!
ফকির বেচারা কি বিপদেই না পড়ল।এখন কাকে দিয়ে এই ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুলবে।ওটা না বানালে তো সাথীদের খোজঁও পাবে না সে,কে কোথায় আছেন।ফকিরের চোখ পড়ল চা স্টলে দাড়িয়ে চা পান অবস্থায় আজম সাহেবের উপর।সে নিজে এক হাত পঙ্গু অন্য হাতে এন্ডুয়েট মোবাইলটা আজম সাহেবের মুখের সামনে নিয়ে একটি ফেবুক খোলে দেবার অনুরোধ করেন।
-স্যার আমার একটা ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুইল্লা দিবেন।
কি জ্বালা আজম সাহেব এমনিতেই ফেবুক ইউজ কারীদের উপর ক্ষ্যাপা তার উপর সে বলছে তাকে একটা এ্যাকাউন্ট খুলে দিতে।তাও আবার ফেবুক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে একজন ফকিরের ।দুঃখে জীবন তার যায় যায়!!এটা কি হচ্ছে যেখানে যাচ্ছি সেখানেই ফেবুক।ফকির বেটারে এক দমক দিলেন।
-যা বেটা খাইয়া লইয়া আর কাম নাইহে…
-কেন স্যার আমিতো আর ভিক্ষা চাই নাই….।
আজম সাহেবের মেজাজটা আরো খারাপ হলো।রাগে চা কাপের চা গুলোকে দূরে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে সে দ্রুত কেটে পড়লেন।অফিসের বাহিরে আজম সাহেব যাই হন না কেনো অফিসে তার একটি গুড উইল আছে।তা হলো সবার আগে অফিসে ঢুকবেন এবং সবার পরে অফিস থেকে বের হবেন।অফিসের অন্য সব কর্মচারীদের কাজের আদান প্রদানে আছে বেশ স্বচ্ছতা।অফিসে ঢুকে সে সাধারণতঃ যে কাজটা করেন তা হলো সোজা তার কক্ষে প্রবেশ করেন।আজ সে একটু ব্যাতিক্রম করেন।অফিসে ঢুকে চলে যান তার সহকারীর টেবিলে এর মধ্যে যে যার মতো তাকে হঠাৎ দেখে সালাম দিয়ে শ্রদ্ধাবোধ জানালেন।সরকারীর টেবিলে যেতেই সরকারী কর্মকর্তা তাকে সন্মান দেখিয়ে চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন।
-বসুন বসুন,,,তা কজটা কতটুকু হলো?
-জি স্যার কমপ্লিট।অন লাইনে আশা কাল থেকেই অর্ডার পাবো।
-এটা কি ভাবে করলেন?
সহকারী তার চেয়ারে বসলেন অতপর অন লাইন চালু করেন।কম্পিউটারের মনিটর টি তার দিকে একটু বাকা করে তাদের তৈরীকৃত সাইটটি দেখালেন।
-স্যার এইতো আমাদের সাইট।ফেবুকেও এড করে দিয়েছি।
আজম সাহেব সাইটটি দেখে যতটুকু না খুশি হয়েছিলেন ফেবুকে এডের কথা শুনে ততটুকুই মুখ তার গম্ভীর হয়ে গেল।সে তার সহকারীকে ভাল মন্দ কিছু না বলেই চলে যাচ্ছেন তার কক্ষে।যাবার পথে আড় চোখে তার সহকারীর টেবিলেই রাখা এন্ড্রুয়েট ফোনের দিকে।ফেবুক ওপেন!তার পর এক এক করে আড় চোখে প্রায় অন্য সবার মোবাইল খেয়াল করলেন তারাও সম্ভবত ফেবুক জ্বরেই ভুগছেন।নিজ কক্ষে এসে চেয়ারটিতে আরাম করে হেলান দিয়ে ভাবছেন,,,একি অবস্থা দেশের সর্বত্রই কেবল ফেবুকের জয়ো গান রীতি মত চিকুনগুনিয়াকেও যেনো হার মানিয়ে দিচ্ছে
আজম সাহেব খুবই কষ্ট পাচ্ছেন।মানুষ কেমন যান্ত্রিক হয়ে গেল।ঘরে বসেই সব কিছুই অনায়াসেই পাচ্ছেন,পকেটেই থাকে দুনিয়ার সব তথ্য ভন্ডার তাই তার একটু লোভ হলো অন লাইন জগৎটাকে একটু চেখে দেখবার।পাশেই ছিলো তার একটি কম্পিউটার।ইউজ না করার কারনে ধূলো বালি পড়ে ছিলো। তা নিজেই একটু একটু ফু দিয়ে পরিষ্কার করে তা চালু করলেন।যেহেতু শিক্ষিত তাই ওটা চালাতে তার কোন সমস্যা হলো না।
পাচ বছর পর
এ পাচঁটি বছরে সে বদলেনি একটুও বদলে গেছে তার চির শত্রু ফেবুক জ্বরের প্রতি আসক্তির হাওয়া,বলা যায় স্বামী স্ত্রী সমান তালে প্রায় প্রতিযোগিতার বন্ধু বান্ধুবী সংখ্যা বাড়াতে থাকেন।এর মধ্যে তার গ্রুপিংয়ে আছে দেশের সুনাম ধন্য মাটি ও মানুষের কথা বলে তার অনলাইন জন্ম ভুমি ব্লগ সোনেলা ব্লগ, সোনেলা দিগন্তে জল সিড়িঁর ধারে” আরো আছে মানবতার হাত ছানি দিয়ে মুক্ত বিহঙ্গে স্বাধীন ভাবে উড়ে চলা এক রঙ্গা এক ঘুড়ি,জল ছবি প্রকাশন কুড়েঁঘর প্রকাশনী,আগামীর জন্য আমরা,, রঙধনু সাহিত্য গ্রুপ,দুর্জয় বাংলা,,নক্ষত্র ব্লগ,সামু,আমরা ব্লগার,দাড়িকমা প্রকাশনী। আছে কিছু প্রিয় মানুষের মুখ -{@ হেলাল৴জিসান ভাইয়া,ভুমিহীন,নীল দাদা,পাশা ভাই,নাসির আহম্মেদ কাবুল,শফিকুল ইসলাম কহিনুর,শিপু ভাই,সবুজ ভাই,ইঞ্জা ভাই,সৈয়দ আলীউল আমিন, নীল কণ্ঠ জয়,জায়েদ হোসেন লাকী,ম্যাক্স তামিম,রুদ্রা আমিন,অনিমেস রহমান,শামিম রহমান আবির,শওকাত মিথুন,মজিবর ভাই,নিতাই দাদা,দীপ মাহমুদ,সঞ্চয় কুমার,হামিদ আহসান,আহম্মেদ রব্বানী,সোহেল আহম্মেদ,,শহিদুল হক,চারু হক,আনিস,ব্লগার সজীব,তরিকুল ইসলাম,,সাইদ মিল্টন,বায়রিক শুভ্রা আবুল কালাম আজাদ,আহমেদ ইশতিয়াক,পার্থসারথি বসু –সে যদিও ভারতীয় কলকাতার বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে তার অনন্য ভালবাসা।এই পাচ বছরে আরো অনেক বন্ধুই এড হয়েছিলো তার মধ্যে যা তৎক্ষণাত মনে এসেছে তাই বলা হলো,তবে তারা প্রত্যকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।এমন সব বন্ধুদের সাথী করে প্রত্যাহ ফেবুকিং ব্যাস্ততায় কাটছে তার সময়,মাঝে মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।এর মধ্যে ছদ্ম নাম ও নকল ছবিওয়ালা আইডি সে বয়কট করে চলেন।তার বোধগম্য হয় না যদি সত্যি কথাই লিখি তবে কেনো এতো ভয়।ফেবুক তার ভাল লাগে কারন এখানে উঠে অন্যায়ের প্রতিবাদের ঝড় এবং নিত্য নতুন খবর পাওয়া যায় যা অনেক সময় অন লাইন সংবাদ পত্রের আগেই জানা যায়।খারাপ লাগে যখন একটি প্রতিষ্ঠিত অন লাইন পত্রিকায় মিথ্যে খবর প্রকাশ করেন।অফিসের কাজ শেষ করে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিলেন আজম সাহেব।

আজম সাহেবের বিশাল বাড়ী তবে দুতলা বিশিষ্ট।ড্রইং রুমের ভিতরে সিড়ি দিয়ে দুতলায় যেতে হয়।ছেলে এক জন সবে মাত্র ক্লাশ নাইনে আর দুই মেয়ে যাদের এক জন মৌ কলেজ ফাষ্ট ইয়ারে আর এক জন সুমী ল কলেজে অনার্স পড়ছেন।তার এই দুই মেয়েও মা বাবার মতো ফেবুকার।মৌ ফেবুকে পরিচয় হয়ে এক ছেলের সাথে অদেখা প্রেম করে চলছেন দীর্ঘ দিন।মা কিছুটা টের পেলেও বাবা এর কিছুই জানেন না।
বাসায় ঢুকেই আজম সাহেব তার স্ত্রী ও ছোট মেয়ে মৌকে বাসায় ড্রইং রুমে পেয়ে বেশ অবাক হলেন,যাদের সময় নেই বাসায় সময় দেবার তারাই এ অবেলায় বাসায়।তবে মা মেয়ে এমন চুপ চাপ যে দুজন দুদিকে মুখ করে বসে আছেন যা আজম সাহেবকে ভাবায়।
-কি খবর তোমরা এ সময় বাসায়।
কেউ কোন কথা বলছেন না।আজম সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার চোখে অস্পষ্ট জল।সে মেয়ের দিকে এগুলেন।
-কি মা মণি মন খারাপ।
আজম সাহেব মেয়ের পাশে বসতেই মেয়ে মুখ কালো করে উঠে চলে গেলেন দুতলায়।অবাক হলেও আজম সাহেব উঠে দাড়িয়ে কোট টাই খুলতে খুলতে তার ওয়াইফকে জিজ্ঞাসা করলেন।
-কি ব্যাপার বলোত!কিছু হয়েছে নাকি….মৌ এভাবে উঠে চলে গেল যে?
-কি আর হবে,,,মান সন্মান বুঝি সবিই গেলো।
আজম সাহেব তার ওয়াইফের পাশে চিন্তিত মনে বসলেন।
-মানে?খোলে বলো।
-আমি কিছু জানি না তুমি তোমার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করো?
-এটা কোন কথা হলো!মেয়ে তোমাকে যতটা সহজে যতটা ক্লিয়ার বলবে আমাকে কি সেই ভাবে বলবে?
-ঐ ফেবুকে একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে।দীর্ঘ দিন ধরেই.. গত পরশু ঐ ছেলেটার সাথে দেখা করতে গিয়ে ব্লাক মেইলের ধান্দায় পড়েছে।
-মানে!
-মানে আবার কি ছেলেটা এখন পাচ লাখ টাকা চাচ্ছে নতুবা…।
-নতুবা কি?
-নতুবা ছেলেটা বলছে তোমার মেয়ের কি যেনো কি ওর কাছে আছে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিবে।
আজম সাহেব বেচারা এতো কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে এতো দুর মানে সমাজের একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তিদের স্থানে এসেছেন আর তারই মেয়ে….না আজম সাহেব আর কিছু ভাবতে পারছেন না।ওয়াইফকে শাসাচ্ছেন।
-এই তোমার জন্য মেয়েটা আজ বিপদে দিকে গেছে।কত করে তোমাকে বললাম সংসারের দিকে খেয়াল দাও।ছেলে মেয়েরা কখন কি করছে তা লক্ষ্য রাখো।কৈ কে শুনে কার কথা।এবার হলোতো!তা এবার ফেবুকে স্ট্যাটাস দাও!নাকি এটাও ফেবুককে জানিয়ে দিয়েছো?
ক্ষোভ জিদে মন ভিষিয়ে উঠে।আজম তৎক্ষনাত তার রুমে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে চিন্তায় মগ্ন যে ভাবে হউক এ বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে কিন্তু কি ভাবে?ঘরের কম্পিউটারটি ওপেন করে ফেবুকে কি যেন খোজতে থাকেন।এক সময় পেয়ে গেলেন।তার বাল্যকালের এক বন্ধুর খোজ পেলেন পেশা ঘাটতে গিয়ে দেখলেন অন্য থানার বড় দারোগা।দুহাত উচু করে ইউরেকা বলে আজম সাহেব চিৎকার করে উঠেন।তার রুমে ঢুকে তা দেখে একটু ভয়ার্ত মনে তার ওয়াইফ জিজ্ঞাসা করলেন।
-কি হলো তুমি হঠাৎ এমন করলে যে….।
-বসো….আজম সাহেব সেই পুলিশ অফিসারের সাথে চ্যাটিংয়ে গেলেন।ভাগ্য ভাল বন্ধুকে অনলাইনেই পেলেন।চ্যাটিংয়ে পরিচয় হয় উভয় খুশিতে আটখানা বহু দিন পর ক্লোজ বন্ধুর খোজ পেলেন।তার পর আজম সাহেব তার সমস্যার কথা বুঝিয়ে বলাতে বন্ধুর উত্তর আসে।
-টাকা আছে?
-অবশ্যই কত লাগবে?
-আরে সালা আমার জন্য নয় যেই ছেলেটা ব্লাক মেইল করেছে তাকে দিবো।
-কি বলিস তুই,টাকা দিয়ে দিলেতো আর তোর লাগবে না।
-তাই!যদি ছেলেটা টাকা নিয়েও ঐ ভিডিওটি না দেয় তখন কি করবি?
-তাইতো! আমার মাথা ঠিক নাইরে তুই যা ভাল মনে করিস কর।
-ঠিক আছে তবে আমিতো তোর থানার না প্রথমে তোর থানার যিনি আছেন তার সাথে কথা বলে আমি সব ব্যাবস্থা করছি।তুই কেবল ঐ ছেলেটা কবে কখন কোথায় টাকগুলো নিতে আসবে তা জানাবি বাকী কাজ আমি করব ওকে।আর একটি কথা ছেলেটি যেনো জানতে না পারে আমাদের এ প্লানের কথা।প্লানটা কি জানো?আমি তোর মেয়ের বাপ হয়ে টাকা দিতে যাবো,ঠিক আছে তবে এক্ষুণি আমাকে কনফার্ম করো ছেলেটি তোমাকে চিনে কি না
তার ওয়াইফকে ডাক দিতে বলল মৌকে।মৌ তৎক্ষণাত এলে জিজ্ঞাস করে জানতে পারলেন যে না’ ছেলেটি আজম সাহেবকে চিনেন না।কারন মেয়ের সাথে দীর্ঘদিন কেবল ফেবুকেই যোগাযোগ হয়েছিলো।অঘটন যা হয়েছে তা প্রথম সাক্ষাতেই হয়েছে।
-তাহলে ঐ কথাই রইল।
-ওকে…ধন্যবাদ দোস্ত…তুই বাচাইলি আমারে।
আজম সাহেব চ্যাটিং বন্ধ করে এক বার মেয়ের দিকে তাকালেন।মেয়ে মাথা নীচু করে আছেন।
-আয় এখানে বস্।
মেয়েকে ডাক দিয়ে তার পাশের চেয়ারটিতে বসতে বললেন, সে কাদো কাদো নয়নে বাবার সামনে বসলো। বাবা দাড়িয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মেয়েকে শান্তনা দিয়ে নিজের চোখের দু’ফোটা জলও ফেললেন।এ সমাজে যাদের ঘরে মেয়ে আছে তাদের চোখে ঘুম নেই,নেই শান্তি চিত্তে;মনে হয় এ সমাজে মেয়ে হয়ে জন্মানোটাই আজন্মের পাপ।
-ভাবিস না মা,সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিন দিন পর
আজম সাহেব ছেলেটির নিকট থেকে এরই মধ্যে ঠায় ঠিকানা কালেক্ট করলেন তার মেয়ের মোবাইলে মেয়ের মাধ্যমে কথা বলে।ছেলেটির সাথে কথা হলো সাক্ষাৎ হবে কেবল টাকা’ আজম সাহেব এবং তার মেয়ে মৌ,এছাড়া অন্য কেউ যেন না জানে সে ব্যাপারে বেশ সতর্ক করে দিলেন ছেলেটি।বলা বাহুল্য এর মধ্যে আজম সাহেবের ব্যাবহৃত পুরো পরিবারে মোবাইলের লিংক সংযোগ ছিলো থানার টেলিকমিনিকেশনের সাথে।তাদের সব কথাই পুলিশ লিংক সংযোগে জানতে পারেন এবং প্লানিং মতো আজম সাহেবের বন্ধু পুলিশ অফিসার,সে মৌয়ের পিতা সেজা টাকার ব্যাগটি নিয়ে নিদিষ্ট স্থানে পৌছেন।পুলিশ অফিসার তার পরনের কোর্টের এক অংশে স্যাটেলাইট সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে যা দিয়ে থানার কন্ট্রোল রুমেও টিভিতে সহজেই ঘনটনার পরিস্থিতি বুঝতে পারবেন এবং সেই সাথে যে কোন অপরাধী ধরতে কমান্ড প্রয়োগ করতে পারবেন অপারেসনস কর্মকর্তারা।পুলিশের বিশেষ অভিযানে বন্ধু পুলিশের তত্বাবধানে ছেলেটি এক সময় ধরা পড়লো।

মেয়েকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে আজম সাহেব বন্ধুর সাথে হাসতে হাসতে চলে গেলেন কোন এক আড্ডাস্থলের দিকে।চলার পথে পুলিশ বন্ধু আজম সাহেবকে আবারো বিচলিত করলেন।
-দোস্ত এবার না হয় তোমার মেয়ে বেচে গেলো কিন্তু তুমি বাচবে কি করে?
বিষ্ময়ে হঠাৎ দাড়িয়ে পড়লেন আজম সাহেব।
-তার মানে?
-তুমি তোমার ফেবুকে রাষ্ট্র বিরোধী লেখা পোষ্ট করায় ৫৭ ধারায় তোমাকে গ্রেফতার করবেন তোমার থানার দারোগা।
-হা হা হা বন্ধু বোধ হয় জানো না আমি এখন তুখোর ফেবুকার।সব খবরই আমার জানা আছে বন্ধু।তোমরা ফেসে গেছো..হা হা হা এখন ৫৭ ধারায় কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের পূর্ব অনুমতি নিতে হবে হা হা হা বুঝলে।
-ঠিকই বলেছো বন্ধু,আমরা ফেসে গেছি ফেসে যাই;কখনো আইনের মারপ্যাচে কখনো বা রাজনৈতিক নেতাদের হুকুমে।
কথার সমুদ্রে ডুবে যায় বেলা নতুন আশায় নতুন ভাবে চলায় একটি নতুন ভোঁরের অপেক্ষায়।
ফেইসবুক অথবা ফেসবুক বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগা যোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট,যা ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি ৪ তারিখে প্রতিষ্ঠিত হয়।এটিতে নিজ খরচায় সদস্য হওয়া যায়।এর মালিক হলো ফেসবুক ইনক।
উইকিপিডিয়া
প্রতিষ্ঠিত: ফেব্রুয়ারী ২০০৪, কেমব্রিজ, ম্যাসাচুসেট্‌স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সদর দপ্তর: Menlo Park, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সিইও: মার্ক জাকারবার্গ (জুলাই ২০০৪–)স্টক মূল্য: FB (NASDAQ) ১৬৯.৬২US$ ১.০৩ (০.৬১%)
৪ আগস্ট ৪:০০ PM GMT -৪ – দাবি পরিত্যাগ জন প্রতিষ্ঠাতা: মার্ক জাকারবার্গ, দুস্তিন মোসকোভিতজ, Eduardo Saverin, অ্যান্ড্রু মযাকল্লুম, চরিস হিউগেস
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
গল্পে অনেকের নাম এসেছে।নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৯:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×