সংসারের অভাব মেটাতে মাসে ২৫ হাজার টাকা বেতনের প্রত্যাশায় চড়া সুদে আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মরিশাস গিয়েছিলেন আল মামুন। কিন্তু তাকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে।
স্ত্রী শবনম বেগম, ৪ বছরের মেয়ে সোমাইয়া ও ২ বছরের ছেলে মুনকে রেখে গত ৩১ ডিসেম্বর ৩ বছরের জন্য তিনি দেশ ছাড়েন। সে দেশের 'পেনডেমোনিও কোম্পানি লিমিটেড' নামে একটি গার্মেন্টস কারখানায় সেলাই অপারেটরের কাজ করতেন আল মামুন।
মরিশাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১০ বাংলাদেশির লাশ শুক্রবার রাতে ঢাকা পৌঁছার পর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন আল মামুনের বাবা এ কে এম ইউসুফ।
"মৃতদেহ দাফন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ৩৫ হাজার টাকার একটি চেক দিয়েছে। আরো দুইলাখ টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি। শুনেছি ওই দেশ থেকেও নাকি ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু আমি আমার ছেলে পাব কোথায়। ওর ছেলে মেয়েদের কী হবে," বলেন তিনি।
এরপর তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
গত বুধবার সঁত জুলিয়েঁ দ্য অতমাঁ অঞ্চলে মালবাহী ট্রাকের সঙ্গে মিনিবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে আল মামুনসহ নিহত হন ১০ জন বাংলাদেশি। এ সময় মরিশাসের নাগরিক মিনিবাসের চালকও নিহত হন। মরিশাসের স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ওই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাইদুরের চাচা লোকমান হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ছেলে বিদেশে গিয়ে কামাই করে সংসারের অভাব মেটাবে এই আশায় জমি বিক্রি করে একলাখ টাকা, জমি বন্ধক রেখে ৩০ হাজার টাকা এবং সুদে আরো একলাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তার বাবা। আর ছেলে ফিরল লাশ হয়ে। এখন আমার ভাইয়ের কি হবে আল্লাই জানে।"
রাত পৌনে নয়টায় কফিনবাহী এমিরেটস এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
মরিশাস সরকার এরই মধ্যে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (আফ্রিকা জোন) ওয়াহিদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "ওই দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ ভালো থাকায় সহজেই আমরা লাশগুলো আনতে পেরেছি। নিহতদের প্রত্যেকের বীমা করা ছিল। বীমার চুক্তি অনুযায়ী তাদের পরিবার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়ে যাবে।"
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ রাত সাড়ে ১০টায় মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে।
আখতারের মৃতদেহ তার ভাই আওয়াল, আল মামুনের মৃতদেহ তার বাবা একেএম ইউসুফ, জয় হোসেনের মৃতদেহ তার বাবা তাহের মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমানের মৃতদেহ তার ভাই মুজিবুর রহমান, মো. রাকিবুল হাসানের মৃতদেহ তার ভাই জয়নাল আবেদীন, মোহাম্মদ সাইদুরের মৃতদেহ তার ফুফা জালাল উদ্দিন, সাগরের মৃতদেহ তার চাচা বাচ্চু মিয়া, জাহিদুলের মৃতদেহ তার বাবা জালালাউদ্দিন, মোক্তারের মৃতদেহ তার ভাই আল আমীন ও সেলিমের মৃতদেহ তার বাবা রেণু মিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন- মো. ইলিয়াস গাজী, মামুন, মো. হাসান সরকার ও সুমন। প্রথম তিনজনের বাড়ি কুমিল্লায়। সুমনের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। মো. ইলিয়াস গাজীর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম (জানুয়ারি ১৪ )