somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্তিক-নাস্তিক মহাসমরের গল্প! (এই লেখায় কোন নাস্তিক চুকবেন না দয়া করে)

১৪ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
বন্ধুদের আড্ডায় এই সামুর মতই প্রায়শই আস্তিক-নাস্তিকে কথার মহারণ শুরু হয়ে যায়। সেটা মাঝে মাঝে ফুলে ফেপে চতুর্থ-পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধের পর্যায়ে প্রাযই চলে যায়। আমি তখন শন মাইকেলের মত রেফারী হয়ে মাঝে পরে তা থামানোর চেষ্টা করি। তাতেও কাজ নাহলে রেফারীগিরী ছেড়ে দুই পক্ষকেই কষে কয়েকটা লাগিয়ে দেই। বেশির ভাগ সময় তাতেও কাজ দেয় না। তখন দূর্বলের হয়ে সবলের বিপক্ষে লড়া শুরু করি। যাহোক, সেদিন হলো এক মজার কান্ড! আমার এক সহপাঠি নাস্তিক প্রকৃতির। কি মনে করে যেন হঠাৎ তিনটি প্রশ্ন করে বসে ঐদিন আমার এক আস্তিক বন্ধুকে-

১. সব কাজ যদি আল্লাহর নির্দেশে হয়ে থাকে, তাহলে খারাপ বা পাপ কাজ করলে মানুষের দোষ হবে কেন? কেনইবা তাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে এর জন্যে?

২. শয়তান তো আগুনের সৃষ্টি। তাহলে, জাহান্নামের আগুন তাকে কিভাবে স্পর্শ করবে? আগুন আবার আগুনকে কিভাবে পোড়ায়?

৩. আল্লাহকে তো দেখা যায় না। তাহলে, তাকে মানেন কেন?

আমি অপেক্ষা করছি আমার আস্তিক বন্ধু কি বলে তা জানার জন্যে। অন্যরাও চুপচাপ, কেউবা মিটিমিটি হাসছে এখনই বুঝি প্রলয়কান্ড ঘটে যায়। ওকি! আমার আস্তিক বন্ধুটি কোন কথা না বলেই পিছু ফিরে হাঁটা শুরু করলো। আমি কিছুটা হতভম্ভ! এ যে এক্কেবারে রণভঙ্গ যাকে বলে! এ আমি মোটেই আশা করিনি। এর মাঝেই দেখি আমার কিছু বন্ধু রণভঙ্গ দেওয়া আস্তিক বন্ধুটিকে পিছন থেকে টিটকারী মারছে। নাস্তিক সহপাঠিটিও দেখি তাদে সাথে গলা মিলিয়ে বলছে, ''এই হলো তোদের আস্তিক গোত্রের অবস্থা। মহাশয়দের একটু যুক্তি দিলেই গাল ফুলিয়ে ভাগা মারেন।''

আমরা বসেছিলাম ক্যাফেটারিয়ায়। আমাদের গল্প যখন বিভিন্ন বিষয় ঘুরে নারী বিষয়ক জটিলতার দিকে ধাবিত হচ্ছিলো, হঠাৎ দেখি আমার সেই আস্তিক বন্ধুটি ফিরে এসেছে। হাতের মুষ্ঠিতে মাটির ঢেলার মতো কি যেন একটা ধরা। আমি তার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে কি যেন একটা বলতে যাব, আমাকে কিছু বুঝে উটার সুযোগ না দিয়েই হাতে ধরা মাটির ঢিলটা দেখি আমার সেই নাস্তিক বন্ধুটির গায়ে ছুড়ে মেরেছে সে।

আমার নাস্তিক বন্ধুটি গলার জোরে সবার চেয়ে এক ডিগ্রী উপরে হলেও, গায়ে গোতরে ছুইতে মরা গোছের। মাটির ঢেলার বাড়ি খেয়ে সে 'বাবা গো, গেছি গো, মরে গেলুম গো' বলে দিক-বিদিক এক করা চিৎকারে মূর্ছা যাওয়ার মত অবস্থা। আমরা তো যাকে বলে থ! কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। এর মাঝেই দেখি আস্তিক বন্ধুটি মাটিতে পড়ে যাওয়া সহপাঠিকে চেয়ারে উঠে বসিয়ে সেবা-শ্রুশুষা করছে। কিনতু, তআর কি আর ককানি থামে। নাক-মুখ কুচকিয়ে একদম শহীদ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তার।

এবারে বেশ বিরক্ত হয় আমার অন্যান্য বন্ধুরা। তারা বলে, ''এতো চেচানোর কি হলো রে আহাম্মক! একটা মাটির ঢেলার বাড়ি খেয়েই এই অবস্থা!''

তা শুনেশুনে তেলে-বেগুণে জ্বলে উঠে আমার ঢিলা খাওয়া সহপাঠি, ''ইস! নিজেরা খাইলে বুঝতি! বাপ রে বাপ! মাটির ঢিলা তো নয় যেন পাথর! আমি ঐ ব্যাটার নামে কেইস করবো। ওকে যদি তোরা এর জন্যে শাস্তি না দিস তাহলে আমি আর এমুখো হচ্ছিনা এই বলে রাখছি।''

এবারে আমাদের অবাক করে দিয়ে জোর গলায় হেসে উঠে আমার সেই আস্তিক বন্ধুটি। একটা হাত নাস্তিক বন্ধুটির কাধে রেখে স্নেহের সুরে বলে,

''ওরে পাগলা! আমার শাস্তি হবে কেন রে!!! তুই-ই তো এই একটু আগে জিগ্যাসা করেছিলি যে আল্লাহর মর্জিতে আমরা পাপ করে থাকলে আমাদের জাহান্নামে পাঠানো হবে কেন, তাই না? তোর কথা মত তাহলে বলতে হয়, আমি তো তোকে ঢিল মারিনি, মেরেছি তো আল্লাহর ইচ্ছায়। তাহলে আমার কি দোষ? আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে?''

আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে ওদিকে সে বলে চলেছে, ''আর আগুন দিয়ে শয়তানের শাস্তির ব্যবস্থা সম্পর্কে তুই যে প্রশ্ন করেছিলি, তার উত্তরে বলবো, তুই কি আমার এই মাটির ঢেলার বাড়ি খেয়ে ব্যথা পাসনি? মানুষ তো মাটির তৈরী। এই মাটির মানুষই যখন মাটির ঢেলার বাড়ি খেয়ে ব্যথা পেতে পারে, আল্লাহ কেন আগুনের শয়তানকে আগুন দিয়ে ব্যথা দিতে পারবেন না!?''

এক নাগারে কথা বলে আমার বন্ধুবরটি মনে হয় একটু হাপিয়ে গিয়েছিলো। এবারে সে নাস্তিক সহপাঠির পাশে বসে পড়ে। তার আঘাতের জায়গায় হাত বুলিয়ে বলে, ''তোকে যখন আমি মেরেছিলাম তুই তো ব্যথা পেয়েছিলি, তাই না? একটা কথা বলবি আমাকে? তুই যখন ব্যথা পেয়েছিলি, সেই 'ব্যথা'-টাকে কি চোখে দেখেছিলো? চোখে দেখিসনি বলে কি তাহলে ঐ ব্যথার অস্তিত্বটাকেও তুই অস্বীকার করতে পারবি? পারবি না, ঠিক না?''

আমার নাস্তিক বন্ধুটা এবারে আস্তে আস্তে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।

আস্তিক বন্ধুটি এবারে চেয়ারে হেলান দিয়ে বাইরে বৃ্ষ্টি নামা বিকালের দিকে উদাস নয়নে তাকিয়ে তার শেষ কথাটি বলে, ''শরীরের ব্যথা দৃষ্টিগোচর না হলেও যেমন এর অনুভুতি অস্বিকার করা যায় না, তেমনি আল্লাহকে না দেখা গেলেও তাঁর মহান অস্তিত্ব অস্বীকার করা যায় না, এটা কেন আমরা বুঝি না একটু বলবি আমাকে?''

আমরা তার কোন উত্তর দিতে পারি না। আমাদের নতমুখ বাইরে চলা বৃষ্টির ছটায় ভিজে উঠে আমাদের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রুফোটাগুলোকে লুকিয়ে দিয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৪
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×