দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দিনের লেনদেনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। গতকাল চাঙাভাবের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেয় হয়েছে। এর ফলে ডিএসইতে পাঁচটি রেকর্ড হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সাধারণ মূল্যসূচক, সার্বিক মূল্যসূচক, বাজারমূলধন, আর্থিক লেনদেন ও মোট শেয়ারের লেনদেন। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস গতকাল ডিএসইতে ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকার শেয়ার। যা আগের যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি। এটি একদিনে সর্বোচ্চ লেনদেন এবং আগের রেকর্ড লেনদেন থেকে প্রায় ৪১ কোটি টাকা বেশি। এর আগে গত ৩১ অক্টোবর ডিএসইতে ৩ হাজার ২০৮ কোটি টাকার লেনদেন হয়। এদিন সাধারণ মূল্য সূচকেও রেকর্ড হয়েছে। গত দিনের চেয়ে সূচক ৮০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দিন শেষে দাঁড়ায় ৮৯১৮ দশমিক ৫১। এতো রের্কডের পরেও বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে।
বিশেষ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সিমেন্ট, প্রকৌশল, খাদ্য ও অনুসাঙ্গিক, টেক্সটাইল, রসায়ন ও সিরামিকস খাতের শেয়ারে বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। একই সাথে এসব খাতের কোম্পানিতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। তবে বীমা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কোম্পানি শেয়ারের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকিং খাতের শেয়ারের দাম ছিল মিশ্র। তবে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক সংশোধন ছাড়াই অব্যাহত ঊর্ধ্বমুখীতে হতাশা প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। পুঁজিবাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের দিনের ধারাবাহিকতায় গতকালের লেনদেনের শুরুতেই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমা কোম্পানির শেয়ারের দরবৃদ্ধি পেতে থাকে, যা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল। ডিএসইর মোট লেনদেনের প্রায় সিংহভাগ লেনদেন হয়েছে এ তিন সেক্টরে। গতকাল ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের এবি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, শাহাজালাল ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের বড় ধরনের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে পুঁজিবাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে এসইসির বাজার পর্যালোচনা কমিটির বৈঠক হয়েছে গতকাল। বৈঠকে পুঁজিবাজারের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বৈঠকে শেয়ার ক্রয়ে আর্থিক সমন্বয় সুবিধার (নেটিং সুবিধা) বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নেটিং সুবিধা বন্ধ করা হলেও তা বাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লাগাম টানতে পারবে না বলে সভায় অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে মোট ২৪৪টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ১৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টি কোম্পানির শেয়ার। গতকাল লেনদেনে শীর্ষ ১০টি প্রতিষ্ঠান হলো- এবি ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, প্রিমিয়ার ব্যাংক, বেক্সিমকো, ইউসিবিএল, সিটি ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও এসপি সিরামিক। গতকাল সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দাম। এ ছাড়া কেয়া ডিটারজেন্ট, সিটি ব্যাংক, এইচআর টেক্সটাইল, ইসলামী ইনস্যুরেন্স, প্রিমিয়ার লিজিং, সায়হাম টেক্সটাইল, ন্যাশনাল টিউবস, এবি ব্যাংক ও প্রভাতী ইনস্যুরেন্স। এদিকে অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির প্রোপটে সায়হাম টেক্সটাইল ও এইচ আর টেক্সটাইলের লেনদেন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে ডিএসই। আর সবচেয়ে বেশি কমেছে ফার্মা এইডের শেয়ারের দাম। এ ছাড়া মিথুন নিটিং, তাল্লু স্পিনিং, বঙ্গজ লিমিটেড, সিএমসি কামাল, আজিজ পাইপ, দেশ গার্মেন্টস, স্ট্যান্ডার্ড সিমেন্ট, সাফকো স্পিনিং ও এম্বি ফার্মা দাম কমে যাওয়া শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে।
দিনশেষে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমলেও ব্যাংক ও বীমা খাতের শেয়ারের দাম বাড়ায় সাধারণ সূচক আগের দিনের চেয়ে ৮০ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৮ হাজার ৯১৮ দশমিক ৫১ পয়েন্টে উন্নীত হয়। বাজারের এই অবস্থাকে স্বাভাবিক হিসেবে মনে করছেন না বাজার বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে শেয়ারের দাম বাড়ছে এটি বিনিয়োগবারীদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এ ব্যাপারে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ব্যাংক ও বীমা যেভাবে বাড়ছে এটি টেকসই হবে না। বিনিয়োগকারীরা যেভাবে এই খাতের দিকে ঝুকছে এটি তাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।’ বাজারে কিছু বিনিয়োগকারী গেইমলিং করার কারণেই শেয়ারের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বাজারে বড় ধরনের বিপর্যয় না হলেও বাজার শিগগিরই কারেকশন হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সাবধান না হলে বিপদে পড়তে হবে।