somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের তিন নক্ষত্র

০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা সময় ছিল- যখন বই পড়েই তরুণদের অবসর সময় কাটতো। গত শতাব্দীর ষাটের দশকে, কোন তরুণের হাতে বই মানেই এ এক দুর্দান্ত ফ্যাশন। কিন্তু বই পড়ার এই সংস্কৃতি বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে প্রকাশনীর সংখ্যা বাড়লেও, পাঠকের সংখ্যা বাড়েনি সেই তুলনায়। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ দিনে দিনে কমতে থাকে। কম্পিউটার ল্যাপটপ মোবাইল সহ নানা ধরনের প্রযুক্তিপণ্য এর অন্যতম কারণ। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বই পাঠকের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমতে থাকে। সাহিত্যের বই প্রকাশ করে বাজারে টিকে থাকা- এ এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। প্রকাশকরাও অনেকটা দিশেহারা হয়ে যায়। বাধ্য হয়েই প্রকাশকদের একটি অংশ একাডেমিক গাইড ও নোট বই ছাপাতে শুরু করে। আবার সাহিত্যের বই বলতে আমরা যা বুঝতাম, তাও ছিল পশ্চিমবাংলার লেখক ও প্রকাশকদের দখলে।

একদিকে বই পড়ার অভ্যাস হ্রাস পাওয়া, অন্যদিকে অলাভজনক প্রকাশনা জগত। ঠিক এই সময়েই বাংলাদেশে আবির্ভাব ঘটলো তিন জন কিংবদন্তীর- কাজী আনোয়ার হোসেন, হুমায়ূন আহমেদ এবং অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। প্রকাশনা জগতকে টিকিয়ে রাখতে এবং তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় উদ্ধুদ্ধ করতে, তাদের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। কাজী আনোয়ার হোসেন এই কাজটি করেছেন- বইকে খুবই কম মূল্যে অর্থাৎ সস্তায় পাঠকের মাঝে সহজল্ভ্য করার মাধ্যমে। হুমায়ূন আহমেদ এই কাজটি করেছেন সহজ লেখনীর মাধ্যমে। আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ করেছেন- বই পড়াকে সামাজিক আন্দোলনে রূপান্তরের মাধ্যমে।

প্রথমেই যার কথা বলতে হয়, তিনি হচ্ছেন কাজী আনোয়ার হোসেন। সবাই তাকে কাজীদা নামেই চিনি। কখনো বিদ্যুৎ মিত্র, আবার কখনো শামসুদ্দীন নওয়াব নামে লিখেছেন। ছিলেন গায়ক। গান গাওয়া বাদ দিয়ে, তিনি ক্যারিয়ার গড়লেন প্রকাশনা জগতে। তার প্রতিষ্ঠিত সেবা প্রকাশনী ও প্রজাপ্রতি প্রকাশনী আজ স্ব-মহিমায় ভাস্বর। সারা পৃথিবীর রহস্য উপন্যাস, গোয়েন্দা কাহিনী এবং এডভেঞ্চার গল্পের অনুবাদ করে তিনি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়াও মাসুদ রানা নামে গুপ্তচর চরিত্রের স্রষ্টাও তিনি। মাসুদ রানা চরিত্রটিকে জেমস বন্ড চরিত্রের বাংলা সংস্করণ বললে- খুব বেশি অত্যুক্তি হবে না। তার সবচেয়ে বড় অবদান হলো- তিনি পাঠকদের মাঝে খুবই কম মূল্যে বই তুলে দিতে পেরেছেন। পেপারব্যাক মুদ্রণের মধ্য দিয়ে তিনি এই কাজটিকে সম্ভবপর করেছেন। সুল্ভ মূল্য পাঠকের হাতে বই তুলে দেয়া এবং রহস্য ও এডভেঞ্চার কাহিনী লেখার মাধ্যমে- তিনি একটি বিশাল পাঠক শ্রেণী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

দ্বিতীয় জন হচ্ছেন- জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। পশ্চিমবাংলার প্রভাব বলয় ভেঙ্গে বাংলাদেশে নতুন পাঠক শ্রেণী তৈরিতে হুমায়ূন আহমেদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সহজ ও প্রাঞ্জল লেখনীর কারণে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। অতিবাস্তব ও অলৌকিক ঘটনাকে তিনি প্রকাশ করতেন খুব সহজভাবে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাকে বাংলাদেশের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি হলেন একজন লেখক। হিমু ও মিসির আলী চরিত্র সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি তরুণ প্রজন্মেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছেন। এ দেশে প্রকাশনা শিল্পের মধ্যেও তিনি কিছুটা প্রাণ সঞ্চার করার চেষ্টা করেছেন। তার বই প্রকাশ করে বহু প্রকাশক ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছেন।

আরেকজন হচ্ছেন- অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। আমরা তাকে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই জানি। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, আলোচক, উপস্থাপক, সাহিত্যিক, লেখক এবং সমাজসংস্কারক। কিন্তু তার গুনাবলীর সবগুলো দিক সমন্বিত হয়েছে- তারই প্রতিষ্ঠিত “বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের” সংগঠক সত্ত্বায়। তিনি অনুভব করেছেন যে- একটি সমৃদ্ধ জাতির জন্য প্রয়োজন উচ্চ মূল্যবোধ সম্পন্ন আলোকিত মানুষ। এজন্য তিনি বেছে নিলেন তরুণ প্রজন্মকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তিনি শুরু করলেন- পাঠচক্র, যেখানে বিশ্বের মহান সাহিত্যকর্মগুলো পড়া হতো এবং তার উপর আলোচনা হতো। এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন-“বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র“। আলোকিত মানুষ চাই- স্লোগান নিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ শুরু করেছেন বই পড়া আন্দোলন। এদেশে ভ্রাম্যমান লাইব্রেরির প্রবর্তক তিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস তৈরির লক্ষ্যে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর প্রয়াস।

এই তিন গুনী মানুষ তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছেন, তা জাতি চিরদিন ভরে স্মরণ করবে। তাদের মৃত্যুর পরেও তারা বেচেঁ থাকবেন অগণিত পাঠকের হৃদয়ে। আলো ছড়াবেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×