মাওলানা ভাসানীকে আমরা একজন রাজনীতিবিদ হিসেবেই জানি। মজলুম মানুষের দুর্দশা মুক্তির জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। এর বাইরেও তার আরেকটি পরিচয় ছিল। একজন আধ্যাত্মিক মানুষ। গ্রামের সহজ সরল মানুষজন তাকে পীর হিসেবেই মানতেন। তার অনেক অনুসারী বিশ্বাস করতেন- তিনি পানির উপর দিয়ে হেটে যেতে পারেন। যেহেতু তথ্য উপাত্ত দিয়ে কোনো প্রমাণ নেই, তাই যুক্তিশীল কেউ একথা বিশ্বাস করবে না। সে প্রসঙ্গে আমরা গেলাম না। তবে তিনি তার জীবদ্দশায় এমন কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যা পরবর্তীকালে সত্য হয়েছিল। তিনটি ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো-
এক. ১৯৫৭ সালের কাগমারী সম্মেলনে লোকসঙ্গীত শিল্পী শাহ আবদুল করিম গান গেয়েছিলেন। আবদুল করিমের গান মাওলানা ভাসানীর খুব ভালো লেগেছিল। গান শেষ মাওলানা শাহ আবদুল করিমের মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- “একাগ্রতা ধরে রাখতে পারলে তুই একদিন অনেক বড় পল্লীগানের শিল্পী হবি। আমি তোরে দোয়া করলাম।“
দুই. মুসলিম লীগ নেতা মোনায়েম খাঁ মাওলানা ভাসানীকে মোটেই সহ্য করতে পারতেন না। বিশেষ করে ময়মনসিংহ অঞ্চলে মাওলানার জনসভার আশেপাশে মাইক বাজিয়ে বিরক্ত করত। চুয়ান্নর নির্বাচনের সময় মাইক বাজিয়ে মাওলানার জনসভাকে পন্ড করা হয়। ভাসানী তখন হাসি দিয়ে বলেছিলেন- আগামী দশ বছরের মধ্যে পাকিস্তানে মোনায়েম খাঁয়ের ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল। কিছুদিনের মধ্যেই মোনায়েম খাঁ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর হয়ে গেল। ভাসানী সম্মদ্ধে নানা জায়গায় আজে বাজে কথা বলতে শুরু করলেন। অনেকটা ক্ষুদ্ধ হয়েই ভাসানী বলেছিলেন- মোনায়েম বাংলার মানুষের সাথে বিট্রে করছে, বাংলার মাটিতে তার কবর হবে না। ক্ষোভ থেকে বললেও মাওলানার এই কথাটি সত্য হয়েছিল। একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধারা মোনায়েম খাঁ কে হত্যা করেছিল। শুধু তাই নয়, কিছুদিন পরে তার লাশ কবর থেকে তুলে ফেলা হয়।
তিন. ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকা থেকে কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিক ভাসানীর সাথে দেখা করতে টাঙ্গাইলের সন্তোষে যান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে রাশিয়ার প্রসঙ্গ আসলে মাওলানা ক্ষেপে যান। তিনি বলেন- আমলাতন্ত্রের খপ্পরে পড়ে তাদের নিজেদের সমাজতন্ত্রই যায় যায় অবস্থা। অনেকক্ষণ বক্তৃতার পর তিনি একটি ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেন- “তোমরা জানিয়া রাখ, আমি বেঁচে থাকি আর নাই থাকি, আগামী পনের-ষোল বছরের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙিয়া যাইবে। সেখানে অনেকগুলো রাষ্ট্র হবে। শুধু সামরিক শক্তি দ্বারা কোন দেশ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না।“ পরবর্তীতে রাশিয়ার ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা আমরা সবাই জানি।
মাওলানা ভাসানীর জীবনে এরকম অনেক ঘটনা আছে। অনেক নামকরা ব্যাক্তিবর্গ সম্পর্কে তিনি কিছু কথা বলে ছিলেন, যা পরবর্তীতে সত্য হয়েছিল। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়া কথা তিনি বহু আগেই বলে ছিলেন। তখনকার অধিকাংশ রাজনীতিবিদের চিন্তার মধ্যেও এই বিষয়টি ছিল না, তারা শুধু অধিকার আদায় নিয়ে কথা বলেছিলেন। যারা তাকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন তাদের অধিকাংশেরই ভাষ্য- মাওলানা ভাসানী অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন।
তথ্য সূত্রঃ ভাসানী কাহিনী, লেখক- সৈয়দ আবুল মকসুদ

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



