সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নির্বাচন প্রশ্নে কোনো সমঝোতা না হওয়াটা খেলা চোখে দেখলে মনে হবে দেশ আজ যে চরম রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখোমুখি দাড়িয়ে আছে তার থেকে উত্তরনের একমাত্র পথ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করাই সঙ্কট সমাধানের মূল চাবি কাঠি। বিষয়টি কি আদৌ তা?
কিন্তু একটু গভীর ভাবে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করলে ফুটে উঠবে ভিন্ন চিত্র।
স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে আমাদের দেশে বিগত ২৩ বছর যাবত যে গনতন্ত্র চালু হয়েছে, ১/১১ এ তিন উদ্দিনের শাসনের ২ বছর ছাড়া বাকী সময় অর্থাৎ ২১ বছর ধরে দেশের বৃহত্তর দুটি রাজনৈতিক দলই দেশ শাসন করে আসছে। এবং দুই দলের শাসন আমলেই দেখা যায় তারা নিজ নিজ পছন্দের ব্যক্তিকে নির্দলীয় সরকারের প্রধান করে নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরী করে ক্ষমতা ত্যাগ করেছেন। এবং নিজেদের প্রয়োজনে সাংবিধানিক ভাবে উভয়েই সংবিধানকে কাঁটা-ছেড়া করে সুবিধা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। তর্কের খাতিরে ধরে নেই শেখ হাসিনা বিরোধী দলের দাবী মেনে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষনা দিলেন। এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থাও নিলেন। তাতে করে কি স্বৈরাচারের পতনের পর থেকে আজ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন যে সমস্যা বারবার সৃষ্টি হচ্ছে তার চিরস্থায়ী সমাধান হবে?
আমাদের দেশের সংবিধান ও শাসন কাঠামো এমন ভাবে সাজানো যে, এক ব্যক্তির হাতে এত ক্ষমতা দেয়া আছে যা স্বৈর-শাসক এরশাদের ক্ষমতাকেও হারমানিয়েছে। “কিছু দিন আগেও আমাদের সংবিধানের প্রনয়নকারীদের অন্যতম ডাঃ কামাল হোসেন স্বীকার করেছেন। আমাদের সংবিধান স্বাধীন দেশের উপযোগী কোন সংবিধান নয়।“ ডাঃ কামাল হোসেনের বক্তব্য ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এ কথাই প্রমান করছে, গত ৪২ বছর যে সংবিধান দিয়ে দেশ পরিচালিত হচ্ছে, তা কেবল অকার্যকরই নয়, অপ্রয়োজনীয়ও বটে।“
স্বাধীন দেশের উপযোগী নতুন সংবিধান ও শাসন কাঠামো তৈরী করে জনকল্যান মুলক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সৃষ্টি না করে চলমান রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা ও সংবিধান মেনে নির্দলীয় সরকার ও যদি দেশের শাসন ভার গ্রহন করে তবুও আমরা রাজনৈতিক সঙ্কটের কারনে নাগরিক জীবনে নেমে আসা নিরাপত্তাহীন অনিশ্চিতার হাত থেকে পরিত্রান পাবো না। এর উদাহরন ১/১১ তে তিন উদ্দিনের সরকার।
সমস্যার মূলে যাবেন নাকি শুধু মলম দিবেন?