somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন ও তার পটভূমি

০৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মানেই আওয়ামী মহলের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জেবিত “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” অংশটুকুর পক্ষে কোমর বেঁধে এটাইকেই স্বাধীনতার ঘোষনা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ব্যর্থ চেষ্টা এদেশের মানুষ দীর্ঘকাল যাবত দেখে আসছে। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেই ৭ই মার্চের এই ঘোষনাই ছিল স্বাধীনতার তাহলে ৭ই মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষনের পর বঙ্গবন্ধু কেন আলোচনার টেবিলে? এটা জগত স্বীকৃত যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন মুক্তিকামী জনতাকে উজ্জীবিত করেছে কিন্তু তার সাথে সাথে তাদের দৃষ্টি আলোচনার টেবিলেও ছিলো। মুক্তিকামী মানুষ এটাও কামনা করছিলেন যে আলোচনার মাধ্যমে একটি সুস্থ সমাধান আসুক।

এবার ফিরে আসি মূল আলোচনায়ঃ

বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে ঘাটলে দেখা যায় ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষনের মুক্তির মন্ত্রে উজ্জীবিত বাক্য “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” অংশটুকু সংযোজন করেছে গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াস বা স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ। মূলত এই অংশটুকুর কারনেই ৭ই মার্চের ভাষন এতটা জগত বিখ্যাত হতে পেরেছে। এবং এই অংশটুকুর কারনেই বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী শাসকদের উপর একটি রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পেরেছেন।

৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয় লাভ করার পর ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে পাকিস্তানীদের যে টালবানা শুরু করে, সেদিন থেকে ৭ই মার্চের ভাষনের পূর্ব পর্যন্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ বা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানীদের আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করার মত চাপ সৃষ্টি করতে কি সক্ষম হয়েছিলেন? উত্তর না। ৭ই মার্চের ভাষনে এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” অংশটুকু সংযোজিত হবার পরই পাকিস্তানীদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তারা ছুটে আসে আলোচনার টেবিলে। তাহলে নিঃসন্দেহে একথা বলা যায় যারা বঙ্গবন্ধুর ভাষনে এই অংশটুকু সংযোজন করেছেন তারা তৎকালীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ থেকেও রাজনৈতিক ভাবে বেশি প্রজ্ঞাবান ও রাজনৈতিক ভাবে বিচক্ষন ছিলেন।

বর্তমানে আওয়ামী লীগ করেন যারা তাদের মাঝে তরুন প্রজন্ম তো জানেই না। এমন কি অনেক প্রবীন আওয়ামী লীগারও জানেন না ৭ই মার্চ রেসকোর্স সহ আশেপাশের সম্পূর্ণ এরিয়াতে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। তাহলে স্বভাবই প্রশ্ন এসে যায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলে তা উপেক্ষা করে কি ভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নামলো?

এখানোও রয়েছে একটি ইতিহাস, যে ইতিহাস সামনে নিয়ে আসলে আবারো নাম চলে আসে সেই গোপন সংগঠন নিউক্লিয়াসের।

৩রা মার্চ নিউক্লিয়াসের তৈরী ও নির্দেশনায় স্বাধীনতার যে ইশতেহার পাঠ করা হয় তার পূর্বেই ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে তাঁর ভাষনে এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম কথা গুলো বাংলার মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু এটা নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্ত তাই তারা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে সাধারন মানুষ যেন খুব সহজেই কোন প্রকার আইনি ঝামেলায় না পড়ে রোসকোর্সের মাঠে আসতে পারে সেই পদক্ষেপ নেন। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার জন্য নিউক্লিয়াসের একটি গ্রুপকে নির্দেশ দেয়া হয় পুরান ঢাকা থেকে ঠেলা ভরে চটের বস্তা এনে তা ইকবাল হলের মাঠে রাত দশটার আগেই পৌছে দিতে। আরেক গ্রুপের উপর দায়িত্ব থাকে চটের বস্তা আসার সাথে সাথে তা নির্দিষ্ট একটি সাইজে কেটে ফেলার। এই দুই গ্রুপ নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে চলে যাবে যার যার নির্দিষ্ট স্থানে। তারপর তৃতীয় আরেকটি গ্রুপের উপর দায়িত্ব ছিলো রাত ৬মার্চ রাত বারটার পরে (অর্থাৎ ৭ই মার্চ) কাটা চটের বস্তাগুলোতে কেরোসিন তৈল দিয়ে ভিজিয়ে বাবুপুরা বস্তিতে (আজকে আমরা যেটাকে নীলক্ষেত বইয়ের মার্কেট হিসেবে চিনি) নিয়ে যাওয়া। চতুর্থ একটি গ্রুপের উপর দায়িত্ব ছিলো বাবুপুরা বস্তির সকল বাসিন্দাদের তৃতীয় গ্রুপ সেখানে পৌছানোর পূর্বে বস্তিবাসীকে বের করে বস্তি খালি করে ফেলা। প্রতিটি কাজ ঠিক ঠিক পরিকল্পনা মোতাবেক হয় তৃতীয় গ্রুপ কেরোসিনে ভেজা চটের বস্তা নিয়ে আসে এবং তাতে আগুন ধরিয়ে বস্তিতে নিক্ষেপ করে পরিকল্পিতভাবে বাবুপুরা বস্তিতে আগুন দেয়া হয়। আর সেটা দেয়া হয় ৬ মার্চ রাত বারোটার পরে। আইন অনুযায়ী কোন থানর আওতাধীন এরিয়ায় যদি ১৪৪ ধারা জারি থাকে এবং সেই এরিয়াতে আগুন লাগে তবে কোন আদেশ ছাড়াই জারিকৃত ১৪৪ ধারার বিলুপ্তি ঘটে। এই আইনের ফাঁক দিয়েই নিউক্লিয়াস ৭ই মার্চের জারিকৃত ১৪৪ ধারাকে ভেঙ্গে রেসকোর্সের মাঠে জারিকৃত ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে ৭ই মার্চের সম্মেলন সফল করে। যা অনেক প্রবীন আওয়ামী লীগারও জানেন না।

৭ই মার্চের ভাষনের “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম” অংশটুকুকে অনেক ভাবেই চিত্রায়িত করা যায়। তবে এর বাস্তব যে চিত্রটি তখন প্রমানিত হয়েছে, তাহলো এই ভাষনএর এই অংশটুকু মুক্তকামী মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছে ও সাথে সাথে পাকিস্তানী শাসক শ্রেনীকে ফেলেছে প্রচন্ড রাজনৈতিক চাপের মুখে। এবং বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিক ভাবে চালকের আসেন বসিয়েছে। কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে, যাদের অক্লান্ত শ্রম আর মেধা দিয়ে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করেছেন, সৃষ্টি করেছেন মুক্তকামী মানুষকে উজ্জীবিত করার এই যাদু মন্ত্র বাক্য তাদের অবদান ছাড়া কি আদৌ ৭ই মার্চের ভাষন জগত বিখ্যাত হতে পারতো?
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×