somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুর আবেগ-অনুভূতির সঙ্গী হতেই হলো কাফন-দাফনকে

০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনু, কৃষ্ণ অনু আজ এসেছিলেন তার কর্মস্থলে। কিন্তু অতিসম্প্রতি মাস্টার্স পাশ করা অনুকে আসতে হয়েছে তার শক্তিমান একটি আবেগ, তার একটি অনুভূতি ছিনতাই হয়ে যাবার বুকফাটা কষ্ট নিয়ে। আবেগ-অনুভূতির গুচ্ছ একটি স্বর্ণের চেইন। এটি স্রেফ তিরিশ বা পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পেছনে জড়িয়ে আছে পরিণামহীন আবেগ আর অনুভূতির সাহারা ও এভারেস্ট।
কিন্তু কীভাবে? অনু আজ আসছিলেন, তার অফিসে। সকালে বাসা মিরপুর থানা এলাকা থেকে রওয়ানা দেন বাসে চড়ে। বাস থেকে নামার পরপরই তিনি টের পান কেউ একজন তার গলা থেকে সেই আবেগকে খুন করছে এবং টের পেলেন খুন করা হয়েই গেছে। পাশে নাকি ৮/১০জন ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়ানো ছিলেন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া অনুর পাশে তখন একজন আইনজীবী নাকি এগিয়ে আসেন একটি ভিজিটিং কার্ডসহ। তিনি নাকি পরামর্শ দেন- যদি মামলা-টামলা করেন, আমার কাছে আইসেন, ভালভাবে কাজ করে দেব।
তাৎক্ষণিকভাবে অনুর ভাগ্যে এছাড়া আর কিছুই জোটেনি। অনুর সঙ্গে কথা বলার সময় জানলাম, সেসময় তার খুব কাছে পুলিশ ছিল, ট্রাফিক বিভাগের। অনু দুঃখ করে বলেন, একজন পুলিশও এলো না?
অনু তার বাস্তব মেধা স্বল্পতা থেকে কথাটি বলে ফেলেছেন। দুর্ঘটনার জন্য কেউ-ই প্রস্তুত নয়, যেমন অনু নয়, তেমনি ট্রাফিক পুলিশও নয়। যে ঘটনা ঘটিয়েছে এতোগুলো মানুষের ভীড়ে, এতো কোলাহলে, তার মতিগতি বোঝার সাধ্য কার আছে? ধরা পড়লে সেটাও দুর্ঘটনাজনক ধরাই হতো। আর দুঃখ করে অনু পুলিশের উপর কেনইবা দোষ দেবেন না? তার বলাটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। আবেগে কুঠারাঘাত পড়লে, তখন কারও হুঁশ থাকে না। আবেগে কুঠারাঘাতে নিসৃত রক্ত প্রবাহ কমাতে মানুষ তো আত্মহননের পথেও হাঁটে! তা-ই নয় কী? অনুর আবেগ থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, সেই রক্ত তো পাওয়া যায় না, যাবে না কোথাও-ই। স্বর্ণ, স্বর্ণের চেইন- বেঁচে থাকলে অনু স্বর্ণের বিছানাতেও ঘুমাতে পারবেন, এমন সুযোগ আসবেই জীবনে।
কিন্তু অনুর আবেগী স্বর্ণ-স্বর্ণের চেইন ফেরার সম্ভবনা একেবারেই ক্ষীণ। কিন্তু কেন এতো আবেগ সেই স্বর্ণের উপর? এটা নাকি অনুকে দিয়েছিলেন তার নানা। তিনি নাকি তার নানার বড় নাতনি। খুব আদুরে ছিলেন নানার কাছে। এসব বলতে বলতে তিনি চলে যান, নানার মৃতদেহের কাছে। বলতে থাকেন, যখন মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার প্রথমদিন, তখন নানার মৃত্যু সংবাদ পাই। পরীক্ষা শেষ করে গ্রামে যাই, এমন অবস্থায় লাশ পাই, আর ১০মিনিট লেট হলেই শেষ দেখা মিলতই না। মৃত্যুর বেশ কয়েকমাস আগে নানা এটা দিয়েছিলেন। নানা মারা গেলেন গত মে মাসে।
বলতে বলতে অনুর স্বর ভেঙে আসে। বুঝলাম কেঁদে দেবে হয়তো।কথা না বাড়িয়ে অন্যদিকে চলে যাই। এরপর অনু আরও কয়েক ঘণ্টা কাজ করেন মন্থর গতিতে, চঞ্চলহীনভাবে। যাবার সময় বিদায় নেন, ''গেলাম'' বলে। চমকে উঠি স্বর শুনে। গেলাম মানে- প্রশ্ন করলাম। ঠোঁটফাটা, শুষ্ক হাসিতে অনু বলেন, ''কেন''?
''না, কীভাবে যেন বললেন, মনে হচ্ছে, চিরবিদায় নিচ্ছেন''
কথা না বাড়িয়ে অনু চলে যান। আমিও আর কিছু জিজ্ঞাস করিনি ইচ্ছে করেই।
চিরবিদায়ের সুরে কেন অনু বলবেন না? অনু, যা গেছে, সেটা তো কাফন পরিধান করেই ফেলেছে চিরদিনের মতো, চিরবিদায় নিয়ে ফেলেছে। আর অনুর কণ্ঠে সেই চিরবিদায়ের বলে পাওয়া চিরবিদায়ী বাচনের সুর।
এরকম কত অনুর আবেগে কুঠারাঘাত পড়ছে, হিসাব-কিতাব নেই। যে আবেগে কুঠার চালালো- তার কাছে তো অনুদের আবেগ মূল্যহীন, সেই আবেগ বুঝতে গেলে তো, কুঠার চালানো যাবে না। আর সেই আবেগ বোঝার টাইম কই? অনুর মধ্যেও আবেগে কুঠারাঘাতের কষ্ট ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে, একসময় অনু হাসবে এ ঘটনা মনে করে। স্মৃতিভ্রষ্ট না হলে ভুলবে না কখনও।
অনুর আবেগে আঘাত পড়ল, রক্তাক্ত হলো, কাফন পরিধান করে দাফন হলো। আসলে আবেগের পরিণতি এমনই হয়। আবেগে আঘাত পড়ে মনটা হু হু করে উঠে। রক্তক্ষরণ হয়, কাফন-দাফন হয়, কেউ দেখে না, কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। আবেগের গায়ে সুঁই ফোটানো, হুঁল ফোটানো বলতে কিছুই নেই। আবেগের গায়ে যে আঘাত পড়ে, সেটা কুঠারাঘাতই হয়
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×