কিছু আশার গল্প,হতাশা ভুলার প্রচেষ্টা!
আমি আতিউর কিংবা সুশান্ত পাল নই যে বড় বড় উপদেশমূলক কথা শুনাবো।বাস্তবতাটা ই লিখছে যার সম্মুখে দাড়িয়ে আছি আমরা।
সন্তানকে নামি দামি স্কুল আর বইয়ের বোঝা ধরিয়ে দিতে পারলে ই সন্তান সব জান্তা হয়ে যাবে এমন টা নয়।
সন্তানের মেধা কিসের উপর নির্ভর,সন্তান কি চায় আমরা কি তার খবর রাখি?
পরিবার,আত্মীয়স্বজন অনেকেই বলে সাইন্স নিয়ে পড়লে আমার একটা হাল করতে পারতেন তারা।আর যা ই হোক এখন কার মত বেহাল দশা হতো না আমার।
কিন্তু আমি বলি কি এসব আজে-বাজে সান্তনা না দিয়ে বলে ই দিন না আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।
সাইন্সে পড়লে ই আমার সব হাল যদি হতো তবে দেশে একটা বিরাট যুব সমাজ বেকারত্বের গ্লানি মাথায় নিয়ে ঘুরতে হতো না।
সাইন্স,আর্স,কমার্স কিংবা সার্টিফিকেট এর পাতার লেখাগুলো আপনার যোগ্যতা নয়।
যোগ্যতা সেটা যেটা আপনি বাহ্যিকভাবে করে দেখিয়েছেন।
ছোটবেলায় আমরা আদর্শলিপি পড়েছি।
সেখানে অ - থেকে ঁ বিন্দু পর্যন্ত শিখেছি।
শিখেছি উপদেশ মূলক বাক্য অ -তে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো।আ- তে আলস্য দোষের আকর।
উ - তে উর্ধমুখে পথ চলিও না।
এটা হলো আসল শিক্ষার স্তর, যেখান থেকে শিশু শিখছে, জানছে,বলছে।
তখন সবাই শখের বসে বলতো ছেলে ডাঃ হবে,ইঞ্জেঃ হবে।আসলে কজন ই তা হতে পারে।
আবার সবার মেধায় এসব ধরে ও না। যার যেমন মেধা সে সেই কাজটার প্রতি ই আগ্রহী।
আমি অনেক মানবিক এর ছাত্রকে দেখেছি ব্যাংকিং খাত যেমন ব্রাক,গ্রামীন ব্যংকে চাকরি করতে।
কিন্তু অনেকের ধারনা এসব চাকরি করতে অবস্যই ব্যবসায়ের ছাত্র হতে হয়।
আমি অনেক মানবিক এর ছাত্রকে দেখিছি ঔষধ কোম্পানীর রি-প্রেজেন্টিভ এর চাকরি করছে।অতচ অনেকের ধারনা ইহা করতে সাইন্সের ছাত্র হতে হয়।
মূল কথা হলো আপনি কোনটা পারেন আর পারেন না সেটার উপর যোগ্যতা নির্ভর নয়।
আপনার যোগ্যতা তখন প্রকাশ পায় যখন আপনি সেটা করে দেখান।
সভ্যতা আর আধুনিকায়নের প্রভাবে অনেক কিছু বদলে গেছে।এখন আর চাইলে ই আপনি আপনার সন্তান নিজের ইচ্ছে মত গড়ে তুলতে পারবেন না।
আর এই খামখেয়ালিপনার কারনে শিক্ষাক্ষেত্রে বাড়ছে প্রতিযোগিতা।
ধরুন আপনার সন্তান কি পারে সেটা আপনি জানতে চাইবেন না।আপনি জানতে চান আমার ছেলে এটাই পড়তে হবে।আর তাই প্রতিযোগিতার বাজারে আপনার সন্তানকে হিমশিম খেতে হয়।এক পর্যায় টিকে যায় নয়তো ছিটকে পরতে হয়।
কিন্তু যদি এমন হতো আপনার ছেলে ক্রিকেটে আগ্রহী আপনি তাকে ক্রিকেটের পিছনে শ্রম দেয়ান।আপনার সন্তান ভাল লিখতে পারে তাকে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখান।
অর্থ শুধু শিক্ষিতো হলে ই কামায় এটা ভুল।যদি সমাজে তাকান বেশীরভাগ ধনিরা ই অশিক্ষিত।টাকার জোরে আজ তারা সমাজপতি।এখন শিক্ষিতদের নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে।
টাকা কামানোর ধান্দায় মগ্ন থাকলে ছেলেকে দিয়ে শুধু টাকা ই কামিয়ে নিতে পারবেন। সম্মান কিনে দিতে পারবেনন না!
আব্রহাম লিংকন তার ছেলেকে গুরুগৃহে পাঠিয়ে চিঠিতে লিখেছিলেন তার সন্তান কে জেনো ন্যায়পরায়ণতা শেখান।
পরীক্ষায় নকল করে পাশ করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়াটা সম্মানের।
আপনি কি আপনার সন্তানকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করে এই উপদেশ দেন?
না আপনি গুরুকে বলেন জেনো আপনার ছেলে বেশী নাম্বার কি করে পায় সে ব্যবস্থা করে দিতে।
কি করে সন্তান জিপিএ ৫ পায় সেটার প্রতি গুরুত্ব দিতে।
হ্যা এখনো সমাজে কিছু লোক খুঁজে পাওয়া যায় যেমন কিছুদিন আগে পত্রিকার পাতায় দেখলাম একজন লোক তার ছেলের স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি ক্ষিপ্ত।
কারন হিসেবে তিনি বলেছেন কেনো তার সন্তান কে বেশী নাম্বার দেয়া হলো।সে যদি ফেল করে তবে তাকে ফেল নাম্বার দিবেন।এমন পাশ আমি চাই না ছেলের কাছে।ওকে যোগ্য হতে দিন।
ছোটবেলা থেকে ই আমরা মানুষিক যন্ত্রনায় ভূগি পরীক্ষায় ভাল করতে হবে।
এতে করে আমরা বিভিন্ন অসুদউপায় অবলম্ভন করি।ভাল পাশ করতে হবে যে।
কেউ একটা বিষয় অজ্ঞ তার মানে সে খারাপ ছাত্র নয়! সে কোনটার প্রতি আগ্রহ সেটার দিকে নজর দিন।
বাঘ যতই হিংস্র আর চালাক হোক না কেনো, তাকে যদি সাগরে নামতে বলে, তবে সে নিজেকে আজীবন মূর্খ ই ভাববে।
এবার যদি কর্মজীবনের কথা বলি তবে বলবো কেউ একজন আপনার খুঁটি হিসেবে কাজ করতে হবে,তবে ই আপনি সফলতার চুড়ায় উঠতে পারবেন।
কেউ যদি আপনাকে কোন একটা কর্মের সন্ধান দেয় তবে লেগে থাকুন।একদিন ভাল কিছু পাবেন ই ইনশাল্লাহ্।
আমি কখনোই বেকার থাকিনি।টিউশনি আগে ও করেছি এখন ও করি।
সুযোগ পেলে আড্ডা ও দেই।
সাহায্য বলতে কয়েকটা মাসের জন্য নিজের গ্রামের স্কুলে পাঠদানের সুযোগ হয়েছিলো।যদিও এলাকার মানুষের বাড়াবাড়ির অযুহাতে সেখানে বেশিদিন পার্ট-টাইম চাকরিটা করতে পারি নি।
তবে যতদিন ছিলাম সম্মানের সহিত ছিলাম।বাইরের ভ্রান্ত অভিযোগ কিন্তু কোমলমতী শিক্ষার্থীদের অকৃতিম শ্রদ্ধা আর সম্মানে আমি সত্যি এখনো আবেগে আপ্লুত।
এখনো ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের একটা অংশ আমাকে দেখলে খুব আবেগ নিয়ে বলে স্যার যাবেন না আমাদের মাঝে!
তখন খুব ভারাক্রান্ত হৃদয়ে, অশ্রুশিক্ত নয়নে জবাব দিতে হয় সময় হলে ই যাবো রে।
অথচ আমার বয়সি অনেকেই এখন কোন না কোন চাকরির সাথে সম্পর্ক রেখে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
সুযোগ সবাই পায় না,তাই যোগ্যতা ও মুখ থুবড়ে পরে।আর যোগ্যতা প্রস্ফুটিত করতে কেউ না কেউ তো সাহায্যের হাত বাড়াতে হয়।
ধরুন আপনি সাতার শিখবেন,ধরেই আপনি সাতার শিখতে পারবেন না কারো সাহায্যের প্রয়োজন।
সাইকেল চালানো শিখবেন,ঠিক কেউ আপনাকে ধরে সাইকেলে উঠিয়ে মাজা সোজা করে ঠেলে দিলে ই সাইকেলের পেডেল ঘুরাতে পারবেন।
কেউ গর্তে পড়লে সে যত শক্তিশালীই হোক তাকে তো টেনে তুলতে ই হয়।
এমন অনেক গল্পই আছে যা আপনার, আমার সাথে মিলে যেতে পারে।
বেকার বসে হুমড়ি খাওয়ার চাইতে আমার মত কিছু লিখে ফেলুন।সেখানে ও সাহায্যের প্রয়োজন।কারন লিখলে তো হবে না সেটা তো ছাপতে হবে।
আসলে যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি নিজে কিছু খুঁজে নিচ্ছেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনাকে সাহায্য করার লোক খুঁজে পাবেন না হোক সেটা আপন আত্মীয়।
আমি আমার এলাকাবাসী তথা আপন আত্মীয়দের কাছে চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।আর যা ই হোক সমলোচনায় তারা সবাই এস্কপার্ট।সম্ভাবনার গল্প নয়,সবাই নিজের পকেট নিয়ে ব্যস্থ।
একটা ছেলে যখন বেকার থেকে রাস্তায় ঘুরে তখন ইভটেজার বলে গাল দিতে দ্বিধা করে না,তেমনি আবার সে কর্মে গেলেও কৃতিম দোষ খোঁজার প্রচেষ্টার অন্ত থাকে না।
এমন নানা অযুহাতে অনেকেই ছিটকে পরে।আবার কেউ কেউ সাহায্য পেয়ে চুড়ায় উঠে।
কিছু মানুষ স্বার্থের জন্য পাশে আসে,আবার স্বার্থ শেষ পগাঢ় পার।
কষ্টটা তখন হয় যখন কাছের মানুষগুলো যোগ্যতার অবমূল্যয়ন করে ছিটকে দেয়।
আমারর স্পস্ট মনে আছে কয়েক বছর আগে একটি অফিস থেকে আমায় চেয়ার থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো এক অজুহাতে।তখন আমি পাশের কাঠের টেবিলে গিয়ে বসি।
ঠিক কিছুক্ষন পর আমারই জুনিয়র এসে সেই চেয়ারে বসে হাসি মুখে কথা বলছে।
এটা ই হলো যোগ্যতার মূল্যায়ন।সে যোগ্যছিলো কারন সে কিছু একটা আনতে পেরেছিলো,আমি অযোগ্য ছিলাম খালি হাতেই বসেছিলাম চেয়ারে।
এগুলো মটিভেশন,আপনার জীবনে ও ঘটতে পারে।হাল ছাড়বেন না।উপরে একজন আছেন তিনি ঠিকই আপনার কর্ম ঠিক করে রেখেছেন।শুধু অপেক্ষা আর চেষ্টা করুন।যতবার বিফল হবেন ততবার সম্ভাবনার দ্বার দেখতে পাবেন।
লেখকঃ
রিফাত কান্তি সেন।
দৈনিক সুদিপ্ত চাঁদপুর,
এইবেলা.কম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩