নাটোরের বনপাড়ায় মিছিলে হামলায় বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিএনপির নেতা সানাউল্লাহ নূর নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সেখানে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন বিএনপির ৪০ জন নেতা-কর্মী। ছবি তুলতে গেলে চারজন সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করা হয়, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
এই হামলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি কাল রোববার নাটোরে পূর্ণদিবস হরতাল ডেকেছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বনপাড়া পৌর বিএনপি মাসব্যাপী আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের এতে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে তাঁর বনপাড়ার কাছাকাছি পৌঁছার খবর এলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর বিএনপির সভাপতি সানাউল্লাহ নূরের নেতৃত্বে মিছিল বের করেন। মিছিলটি উপজেলা চত্বর থেকে শুরু হয়ে বনপাড়া বাজারে এলে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা চালান।
এ ঘটনায় আহত বিএনপির কর্মী জামাল উদ্দিন ও আলী হোসেন অভিযোগ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাকির হোসেন, ছাত্রলীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের কর্মী রাকিব, জামিল ও বাবলুর নেতৃত্বে লাঠিসোঁটাসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করা হয়। হামলাকারীরা উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূরকে কুপিয়ে ও লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নাটোর-পাবনা মহাসড়কে ফেলে রাখেন। তাঁকে রক্ষা করতে গেলে হামলাকারীদের আঘাতে বিএনপির কর্মী জামাল উদ্দিন, উপজেলা যুবদলের সভাপতি রফিক সরদার, নাজিম উদ্দিন, আবদুল আলিম, মোজাম্মেল হকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জাকির হোসেন এ ঘটনায় জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
হামলায় ডেসটিনির নাটোর জেলা প্রতিনিধি শেখ তোফাজ্জল হোসেন, বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর জেলা প্রতিনিধি নাসিম উদ্দিন, এটিএন বাংলার ক্যামেরাম্যান রানা আহমেদ ও দিগন্ত টেলিভিশনের ক্যামেরাম্যান লিমন হোসেন গুরুতর আহত হন। তোফাজ্জল হোসেনের ডান পা ভেঙে গেছে, বাঁ হাতে গুরুতর জখম হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাসিম উদ্দিন ও রানা আহমেদের মাথা ফেটে যায়। লিমন হোসেনকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। চারজন সাংবাদিকসহ অন্যদের নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনার সময় বড়াইগ্রাম পৌরসভার মেয়র ও বিএনপির নেতা ইসাহাক আলীকে বহনকারী মাইক্রোবাসটি ভাঙচুর এবং তাঁকে মারধর করা হয়। গুরুতর আহত উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ সময় ঢাকা-রাজশাহী ও নাটোর-পাবনা মহাসড়কে যান চলাচল এবং বনপাড়া বাজারের সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ভয়ে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। হামলাকারীরা রাস্তায় চলাচলকারী তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি প্রাইভেট কার ও সাতটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন।
বিএনপি অভিযোগ করেছে, হামলার সময় পুলিশ নীরব ছিল। দুপুরের দিকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। হামলার প্রতিবাদে দুপুরে বড়াইগ্রাম পৌরসভা বিএনপি বিক্ষোভ-সমাবেশ করে। বিকেলে নাটোর জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী ও নাটোর জেলা বিএনপির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস তালুকদার এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই আজকের এই হামলা সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। হামলার প্রতিবাদে কাল রোববার নাটোরে পূর্ণদিবস হরতাল আহ্বান করেন তিনি। আজ বেলা ১১টায় বনপাড়া স্কুল মাঠে নিহত উপজেলা চেয়ারম্যানের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিক্ষোভ মিছিল বের হবে।
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তবে পুলিশের নীরব থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বনপাড়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।
খালেদা জিয়ার বিবৃতি: বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এই হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে বলেন, সরকারের প্রশ্রয়ে যুবলীগ-ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মনে হচ্ছে, বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে তারা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সানাউল্লাহ নূরকে হত্যা করা হয়েছে।
বিবৃতিতে খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখল, নিয়োগ-বাণিজ্য, দলীয়করণের কারণে রাজনীতি দুর্বৃত্তপীড়িত হয়েছে।
অপর এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না করলে বিএনপি কেন্দ্রীয়ভাবে এমন কর্মসূচি দেবে, যার জন্য সরকার প্রস্তুত নয়।
বাংলাদেশ উপজেলা চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল মজিদ, কো-আহ্বায়ক মুহিবুর রহমান ও সদস্যসচিব মোহাম্মদ হোসেন এক বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দুষ্কৃতকারীদের শাস্তির দাবি করেন।
নাটোরের বনপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যা করলো আ'লীগ
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=হিংসা যে পুষো মনে=

হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।
কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন
গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
রিকশাওয়ালাদের দেশে রাজনীতি
সবাই যখন ওসমান হাদিকে নিয়ে রিকশাওয়ালাদের মহাকাব্য শেয়ার করছে, তখন ভাবলাম—আমার অভিজ্ঞতাটাও দলিল হিসেবে রেখে যাই। ভবিষ্যতে কেউ যদি জানতে চায়, এই দেশটা কীভাবে চলে—তখন কাজে লাগবে।
রিকশায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।