কবি আবু মকসুদ : স্নেহার্দ্যে কিছু রাগ রেখে যেতে চাই
০১.
কেন যে মলিন রাখো এই মুখ─একবার ছুঁয়ে দিলে সাতরঙ ভেসে ওঠে ঈশান কোণায়; যা কিছু পুরান ছিল তাড়িয়েছে আর্যদানব─গুহায়-গুহায়। পাহাড় মৌনতাসম আমার ভাষা, লুণ্ঠিত কথারা আজ ফিরে আসে বার বার। এখনও দানব আছে উঠে আসে দাবড়িয়ে শহর। মোটেই কম্পিত নই মলিন রেখো না আর এই মুখ─তুলে আনো বঙ্কিমরেখা সেখানে মিলবে দেখা বীরাঙ্গনা কাঁকণবিবির; তার চোখে স্মিত হাসি, বাকা-চোরা হাসি─ম্লান করেনা মুখ, হাড্ডিসার মানুষটি আজও গুহারপ্রতীক। ঘোলা ঘোলা চোখ তার পাঠ করেছে যত গতজনমের সুখ-দুখ, মেঘলা আকাশ─সাহসে রেখেছে কিছু সোনাররোদ উঠোনে উঠোনে। এই রোদ গায়েতে মেখো, কপালে রেখো─মুঠোয় ভরিয়া দিও জন্মপরম্পরা।
এমন মৌনতা জেনো ধ্যানের কথন, ধ্যানের ভাষা─সর্বনাশা আগাম বাণী, কেবল জেগেছে কিছু তড়পানি; তাতেই জেগেছে শহর দোকানপাড়া গঞ্জ আর সান্ধ্যসময়। কোনো কোনো বিটকবি ভয়েতে আড়ষ্ট আজ─এই বুঝি ছুটে যায় ছিদ্রপথে অটুটসম্মান। আর কোনো ভয় নেই─বিষন্ন রেখো না আর এই মুখ চান্দের শহর। চান্দিঘাটে নৌকাগুলো হেসে উঠে তোমারই নামে, তোমার পছিনায় জ্যোৎস্নারা শরীর মাখায়, আদরে কঁকিয়ে উঠে পাহাড়ের ঘুম। এর চে’ নির্ভিক আর কোন সে প্রহর? পরম্পরা লেগে রবে গতরে গতর। আমিও তো জেগে উঠি; তোমার নামের ধ্বনি গলায়-রক্ত-তুলে এশক হই, সোয়ারঙে বান্দিয়া পিঞ্জির।
এ কোনো কথন নয় কিংবা প্রেমের বাখান, সত্যগ্রহ হয়েছে মানুষ তাই আজ এমন বয়ান। শুনিয়া প্রীত হও গোস্বা হও রাগ ঢাকিয়া রাখো পিতলের গড়ায়, সময়ে উগলে দিও সোনালি-নারায়; তাতেই তপ্ত হবে রাজপথ সাজঘর বিলিন হবে তাপে ও দ্রোহে।
০২.
তোমাকে উজাড় করে যারা পদ্য লিখে কবি হতে চায়, আমি নই সেই প্রতারক। তোমার বিরহ লিখে চাই না হতে প্রগলভ-কবি; যদি কিছু দয়া করে করুণা করে এই নাম লিখে রাখো নখের তলায়─তূর্য হাতে হেঁটে যাবো এই পথ আরো কিছুকাল।
আজ নিভৃতে যাবো গায়ে মেখেছি কিছু আতরেরঘ্রাণ, ভাজ ভেঙে পড়েছি সফেদ আর মাড়মাড় গন্ধমাখা নতুন জামা। আমি কোনো বিপ্লবী নই কিংবা শাসক, নতুন প্রেমিক এক ভুলপথে এসেছে এই শানাই-নগরে; প্রতারক হবার আগে ফিরে যেতে উদগ্রিব তোমার গহনে, তোমার স্পর্শে কেবল প্রেমিক নই মানুষ হতে চাই─এ আমার অনন্তবাসনা।
০৩.
এতো যে রচিল কারা পথে পথে সোনার হরফ তাদের ত্যাগের কথা কহে নাই কেহ। গমকী-নৃত্যে যাহা নেমে আসে ঢালু পথে, বালির ধুলায় বাউরি কাটে হাওয়ার করাত; পথুয়া দালাল এই মাটি ও জরুর দাম বিকিয়ে দেয় জলের দামে, এইখানে তুমি এসে রুখিয়া দাঁড়াও─আমি খুব সাহস কুড়াই।
ও-মন কও একবার শুধু কও, উতল পরানখানি কোনপাত্রে রাখিবার চাও─সহসা উত্তর আর মিলে না আমার। এমন প্রশ্নবাণে আমি শুধু বোকা হই, চেয়ে রই তোমার পানে। এভাবে অনেক কথার তরজমা হয়নি আজও। বহু চিত্রলিপি পাঠোদ্ধারে ব্যর্থ আমি; কেবল ব্রোঞ্জেই তুমি নির্মিত নও, এখনও ইতিহাস পাঠে ঋদ্ধ যারা সকলেই তোমার দিকে ঝুকে রয়─মৃৎপাত্র শুকতে শুকতে কল্বের পছিনা বাড়ে।