সরকারকে বাদ দিয়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করবে কেয়ার্ন। ম্যাগনামা এবং হাতিয়ায় গ্যাস পেলে কেয়ার্ন তার লাভের গ্যাস আর সরকারের কাছে বিক্রি করবে না।
উৎপাদন বন্টন চুক্তি(psc)-র আওতায় বাংলাদেশ সরকার স্কটিশ তেল কোম্পানি কেয়ার্ন এনার্জির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। উল্লেখ্য, পিএসসি চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদীত গ্যাসের সর্ব্বোচ্চ ২১% ভাগের মালিকানা সরকারের এবং বাকি ৭৯% ভাগের মালিকানা থাকে চুক্তিবদ্ধ কোম্পানির হাতে (আহ!!! কি লাভজনক চুক্তি)। এই ৭৯% গ্যাস চুক্তিবদ্ধ কোম্পানিটি সরকারের কাছে আর্ন্তজাতিক মূল্যে বিক্রি করে থাকে। যা কিনা আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত অলাভজনক , কারণ আমাদের দেশের গ্যাসই আমরা বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে কিনছি আর্ন্তজাতিক মূল্যে। কিন্তু আমদের দেশের সরকারগুলো এই সকল অসম চুক্তি করছে, গ্যাস উৎপাদন করার মত আমাদের কোন প্রযুক্তি নেই এই অজুহাত দিয়ে। যেহেতু আমদের দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্যাসের উল্লেখ্যযোগ্য ব্যবহার রয়েছে তাই সরকার এই প্রয়োজনীয়তাকে ইস্যু করে আমাদের দেশের খনিজ সম্পদগুলো বিদেশী কোম্পানীগুলির হাতে তুলে দিচ্ছে।যার ফলে, বাপেক্স যা কিনা আমাদের মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৯০ ভাগ উৎপাদন করতো তা এখন ৫৬ ভাগে নেমে এসেছে। আমাদের পেট্রোবাংলার এক্সপ্লোরেশন সাফল্যের হার খুবই ভাল থাকলেও পেট্রোবাংলাকে বাদ দিয়ে গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিদেশী কোম্পানীগুলিকে। অর্থাৎ আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ ব্যবহার করার জন্য ক্রমেই বিদেশী কোম্পানীগুলির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ছি। উল্লেখ্য, পিএসসি চুক্তি অনুযায়ী, বিদেশী কোম্পানিগুলো সরকারকে কোন কর্পোরেট ট্যাক্স, এমনকি কোন যন্ত্রপাতির আমদানি শুল্কও দেয়না। (তবুও তো ভাল এই গ্যাস আমাদের দেশেই থাকছে!!!)।
কিন্তু সাম্প্রতিক জালানি মন্ত্রনালয়ের চুক্তি অনুযায়ী , কেয়ার্ন তার লাভের গ্যাস অপর কোন পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে। যা কিনা পিএসসি চুক্তির সুস্পস্ট লংঘন। সারা পৃথিবী ব্যাপী জ্বালানী সংকটের প্রেক্ষাপটে এই চুক্তি আমাদের দেশের জন্য হবে আত্মঘাতী। কারণ, বর্তমান জ্বালানী সংকটের ফলে বিদেশী কোম্পানিগুলো তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির জন্য উঠেপড়ে লাগবে, যেহেতু তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রি করলে সরকারের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ দাম বেশী পাওয়া যাবে। এ জন্যই গত এক বছর ধরে কেয়ার্ন সরকারকে শর্ত দিয়ে বলেছে, তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির অনুমতি ছাড়া তারা ম্যাগনামা এলাকায় নতুন করে অনুসন্ধানের কাজ করবে না। যার ফলশ্রুতিতে সরকারের সাম্প্রতিক এই বিতর্কিত চুক্তি স্বাক্ষর এবং এর মাধ্যমেই সরকারের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচিত হল। যদি দেশের প্রয়োজনে গ্যাস উত্তোলন সরকারের মূখ্য উদ্দেশ্য হত তাহলে সরকার কখনই এই চুক্তি করতো না। কারণ এই চুক্তির মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদীত গ্যাসের পুরোটাই তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিবে আর আমাদের থাকবে লাউ-নেংটি-ক্ষেতা। আর এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতিসহ সামগ্রিক ক্ষেত্রেই পড়বে নেতিবাচক প্রভাব।
আমাদের দেশে যে সকল ইউরিয়া সারকারখানা রয়েছে তাদের প্রধান কাঁচামাল হল প্রাকৃতিক গ্যাস। কাজেই এর ফলে এ সকল সারকারখানার উৎপাদন কমে যাবে, যার প্রভাব পড়বে আমাদের দেশের কৃষিতে। কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাবে বহুলাংশে। আবার যে সকল দেশীয় শিল্প গ্যাসের উপর নির্ভরশীল সে সকল শিল্পেও ধ্বস নামবে। অর্থাৎ সামগ্রিক অর্থনীতিই হুমকির সম্মুখীন হবে। শুধু তাই নয় আমাদের দেশের ২৬ টি বিদুৎ প্লান্টের মধ্যে ১৬ টি প্লান্টেই গ্যাসের সাহায্যে বিদুৎ উৎপাদন করা হয়। কাজেই এই চুক্তির ফলে ১৬ টি বিদুৎ প্লান্টের উৎপাদন গ্যাসের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। অর্থাৎ সমগ্র বিদুৎ ব্যাবস্থাই হুমকির সম্মুখীন হবে। আর অচিরেই ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিণত হবে এনালগ বাংলাদেশে। বেড়ে যাবে হারিকেনের চাহিদা, সেই সাথে বাড়বে দাম। কাজেই দাম বেড়ে যাবার আগেই হারিকেন কিনে ফেলুন, প্রস্তুত হউন হারিকেন নিয়ে...
দিনবদলের (পালাবদলের) মিছিল আসছে।
আসছে কল্পনার ভিশন ২০২১ ডিজিটাল(?) বাংলাদেশ, আর বাস্তবের এনালগ বাংলাদেশ।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১০ রাত ১:২৮