somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোপ নির্বচনের ১০ টি ধাপ

১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খ্রিস্টান ধর্ম মতে পোপ হচ্ছে সর্বোচ্চ ধর্মগুরু। তিনি একই সাথে ভাটিকানের রাস্ট্রপ্রধান, পৃথিবীর সকল চার্চের প্রধান এবং ধর্মিয় নেতা। এই ভদ্রলোককে নির্বচিত হয়ে আসতে হয়। এটা সবারই জানা কিন্তু কিভাবে নির্বাচিত হন একজন পোপ সেটা কিন্তু অনেকেরই অজানা। আসুন দেখি কিভাবে নির্বাচিত হন একজন পোপ

১০) The Death of the Previous Pope(প্রাক্তন পোপের মৃত্যু)


প্রথমেতো আগের জনকে মৃত্যুবরন করতে হবে। না হলে নতুন কারো জন্য ভেকেন্সি হবে না। তবে এইটা কোন নিয়ম না যে মৃত্যুবরন করতেই হবে। যে কোন সময় আগের পোপ রিজাইন করলেই পদ শুন্য বলে বিবেচিত হবে। তবে এটা খুব কমই ঘটেছে যেমন বর্তমানে সাবেক পোপ এখনও জিবিত আছেন। তিনি তার অধস্তন ফাদারদের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় পদত্যাগ করেন। পোপ মারা যাওয়ার পরে প্রথম কাজ হচ্ছে Cardinal Camelengo (যার অবস্থান পোপের পরেই) তার সামনে একজন ডাক্তার পোপের পালস চেক করে তাকে মৃত ঘোষনা করবেন। এরপর Cardinal Camerlengo পোপের নাম ধরে তিন বার উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে অপেক্ষা করবেন পোপের প্রতিউত্তরের জন্য। আগে এই ভদ্রলোক একটা ছোট হাতুরি দিয়ে পোপের কপালে তিনটা বারি দিতেন মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য।

০৯) Declaration of the Death(পোপকে মৃত ঘোষনা)


আর একটা মজার কাজ। Cardinal Camerlengo যখন নিশ্চিত হবেন যে পোপ মৃত, তিনি সাথে সাথে তার পোপের আঙুল থেকে ফিশারম্যান রিং টা খুলে নেন এবং অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে সেটি নস্টকরে দেন। ফিশারম্যান রিং টা হচ্ছে একজন পোপের মুল আইডেন্টিটি। প্রত্যেক পোপের জন্য একটা একটা আলদা আলাদা রিং তৈরি হয় এবং তার মৃত্যুর সাথে সাথে তা ধংস করা হয়। মুলত প্রথম পোপ পিটার একজন ফিশারম্যান ছিলেন তাই সেখানথেকেই এই নিয়মটি চালু হয়েছে। এর পরই Cardinal Camerlengo পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা সকল কার্ডিনালদের কাছে পোপের মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে একটি চিঠি লিখেন। ফলে সকল কার্ডিনালরা যাতে পরবর্তি পোপ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন। যদিও এই আধুনি যুগে চিঠি পাঠানোর প্রয়োজনিয়তা নিয়ে যথেস্ট তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে।

০৮)Sede Vacante( সিট খালি) :D


প্রাক্তন পোপের মৃত্যু এবং নতুন পোপ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সময় কালকে বলাহয় Sede vacante বা সিট খালি। ইতিহাসে এই সময় টা ১৩ দিন থেকে ২ মাস ১০ দিন পর্যন্ত ছিল। তবে সর্বনিম্ন ১৩ দিনের মধ্যেই এই কাজটা শেষ করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে তিনজন ব্যাক্তি ছারা চার্চের সকল উচ্চপর্যায়ের ব্যাক্তিগন পদত্যাগ করেন। এই তিন জন হলেন the Camerlengo, the Cardinal Vicar of Rome and the head of the Apostolic Penitentiary মুলত এরা প্রধান নির্বচকের ভুমিকায় অবতির্ন হন এবং তারা কোনভাবেই পোপ নির্বাচনের জন্য প্রতিযোগি হিসাবে বিবেচিকত হবেননা। যেহেতু ভ্যাটিক্যান একটি আলাদা দেশ তাই Camerlengo এই সময়ে সর্বময় কর্তাব্যাক্তি হিসাবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।

০৭) Burial of the Pope(পোপকে সমাহিত করন)


এরপর পোপের মৃত শরিরকে সুন্দর ভাবে পরিস্কার করে পাপাল ড্রেস পরিয়ে পিটার এর চার্চ অথবা সেইন্ট জন এর চার্চে রাখা হয় যাতে সবাই শেষ বারের মত তাকে দর্শন করতে পারে। এর পরই শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের সব আচার-অনুষ্ঠান। যেমন মৃতের চারপাশে ধুপ জ্বালিয়ে চক্কর মারা, পবিত্র জল ছিটানো সহ আরো অনেক কিছু যার অনেক কিছুই সাধারনদের অজানা। এখানে একটা গান গাওয়া হয় যেটা এরকম " তার জন্য দোয়া কর"। এর পর মৃত পোপের লাশটা নিয়ে রাখা হয় একটা কাঠের কফিনে। এবং সেই কফিনটি রাখা হয় আর একটি সিসা অথবা জিংক এর এর বিশাল বক্সের ভিতরে। এর পর সেই বক্সটির উপরিভাগ সিল করা হয় স্বর্নের তৈরি ক্লিপ দ্বারা।

০৬)Novemdiales ( শোকপালন)


পোপের মৃত্যুর পর ঠিক নয় দিন পর্যন্ত চলে এই অনুস্ঠানটি। মুলত শব্দটির অর্থ হচ্ছে মৃত পোপের জন্য শোকপালন করা। এই নয়দিনের প্রতিদিন একজন করে কার্ডিনাল মৃত পোপের জন্য প্রার্থনায় নের্তৃত্ব দেন এবং সকল কার্ডিনাল এবং পাদ্রিরা সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন। এখানে মুলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কার্ডিনালরা একত্রিত হন এবং একে অন্যের সাথে পরিচিত হন কারন অনেক কার্ডিনাল আছেন যারা একে অন্যকে একেবারেই চেনেননা। মুলত এই নয়দিনে কনক্লেভের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়।

০৫) Conclave (নির্বাচন)


নতুন পোপ নির্বাচন একটা বিশাল সময় সাপেক্ষ বিষয়। সব কার্ডিনালরা একমত হইতে পারেননা প্রায়ই। কার্ডিনালদের একটা বিশেষ রুমের ভিতরে প্রবেশ করতে হয় যার দরজা বাহির থেকে তালা বন্ধ থাকে। এই প্রথাটা প্রথমে ছিল না। এটা শুরু হয় ১২৭১ সালে পোপ নির্বাচনের সময় কিছুতেই সকল কার্ডিনালরা একমত হতে পারছিলেন না। ফলে প্রায় ২ বছর ৯ মাস সময় পার হয়ে যায় কিন্তু কোন পোপ নির্বাচিত হয় না। পরে স্থানিয় অধিবাসিরা রুমের দরজা বন্ধ করে খুব অল্প পরিমানে খাবার দিয়ে বাহির থেকে তালা মেরে দেয়। ফলাফল এক দিনের মাথা নতুন পোপ পাওয়া যায়।
মজার বিষয় হচ্ছে ৮০ বছরের উপরে কার্ডিনালরা পোপ নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহন করতে পারবেন না।

০৪) Voting( ভোটাভুটি)


পোপ নির্বাচিত হতে হলে উক্ত কার্ডিনালকে সকল ভোটের দুই তৃতীয়াংশ ভোট পেতে হবে। প্রত্যেক কার্ডিনালকে তার হাতে একটা ছোট কাগজের টুকরো দেয়া থাকে যেখানে লেখা থাকে " আমি পোপ হিসাবে নির্বাচিত করলাম"। প্রত্যেক কার্ডিনাল এর ঠিক নিচেই তার পছন্দের কার্ডিনালের নাম লিখে সবার সামনে রাখা একটি বাক্সে ফেলেন। প্রথমে তিন জন্য ব্যাক্তির নাম বলেছিলাম যারা প্রধান নির্বাচক হিসাবে কাজ করেন। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহন এবং নির্বাচনে প্রার্থি হতে পারেন না। নির্বাচকরা এর পরে প্রত্যেকটি ভোট সজোরে সবাইকে পাঠ করেন। যদি কেউ সংখাগরিষ্ঠতা না পায় তবে সবগুলো কাগজ একটি নির্দিস্ট চুল্লির মধ্যে ফেলে পুরিয়ে ফেলা হয়। চুল্লিটির চিমনি দিয়ে তখন কালো ধোয় বের হয় এবং বাহিরে থাকা সবাই বুঝতে পারে কেউ নির্বাচিত হয় নি। ফলে আবার একই প্রক্রিয়া শুরু হয়। পোপ নির্বাচিত হবার সাথে সাথে চিমনি দিয়ে সাদা ধোয়া ছারা হয় যাতে সবাই বুঝতে পারে কেউ একজন নির্বচিত হয়েছেন।

০৩) Acceptance (কবুল করা)


নির্বাচিত কার্ডিনালকে এর পরে Dean of the College of Cardinals পোপ হবার জন্য আহ্বান করেন। তিনি যদি কবুল বলেন তবে তিনি পোপ হিসাবে পরিপুর্ন ভাবে নির্বাচিত হয়ে যাবেন। এর পরে নতুন পোপ তার জন্য একটি নতুন নাম নির্বাচন করবেন। এই প্রথটা শুরু হয়েছিল পোপ জন ২ এর সময়। তার আসল নাম ছিল মার্কারিয়াস যেটি একটি পেগান দেবতার নাম। ফলে তিনি বাধ্য হন একটি নতুন নাম গ্রহন করার জন্য। এরপরই সকল কার্ডিনালরা নতুন পোপের সাথে থাকার অঙ্গিকার ব্যাক্ত করেন।

০২) Announcement ( ঘোষনা)


এতক্ষনে সেন্ট পিটার্সবার্গ স্কয়ারের সামনে প্রচুর মানুষ জমতে থাকে নতুন পোপকে দর্শন করার জন্য। পোপ তার জন্য নির্ধারিত কাপর পরিধান করেন। তবে মজার বিষয় হল চার্চ কর্তৃপক্ষ আগেথেকেই সম্ভাব্য সকল কার্ডিনালদের মাপ অনুযায়ি কাপর বানিয়ে রাখে ফলে সাথেসাথেই নতুন পোপ তার জন্য বানানো কাপর খুব দ্রুত পরিধান করতে পারেন। এছারা এসময় তিনি তার ফিসারম্যান রিং পরিধান করেন। এবং শেষ পর্যন্ত ব্যালকনিতে গিয়ে পোপ হিসাবে প্রথম ভাষন দেন।

০১) Coronation / Inauguration(অভিষেক)


আগে সমগ্র রোম এবং ইতালির অনেকাংশ সরাসরি চার্চের দ্বারা শাষিত হত। এবং পোপ এই পুরো প্রসাশনের প্রধান হিসাবে একরকম রাজার মর্যাদায় শাষন করতেন। ফলে নতুন নির্বাচিত পোপ একজন রাজার মতই একটা অভিষেক অনুষ্ঠান উদযাপন করতেন। তবে বর্তমানে আর সেইটা হয়না তবে খুব বড়ধরনের একটা প্রার্থনার আয়োজন হয়।



যদি কোন খ্রিস্টান ভাই/বোন আমার লেখাটি হার্ট হয়ে থাকেন তবে আমি মন থেকে ক্ষমা প্রার্থি। এটা শুধুই একটা তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। এখানে বিদ্বেশমুলক কিছু লিখি নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×