ইয়র্ক শহরটি ইংল্যান্ড এর শহর ইয়র্কাশায়ার এর উত্তরদিকে অবস্থিত। এই শহরটি পৃথিবীর অত্যান্ত পুরনো শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম। শহরটি প্রথম গোরাপত্তন করেন রোমানরা খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৭১ বছর পরে। মানে আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে। রোমানরা মুলত এখানে Ouse নদীর তিরে তাদের সেনাবাহিনির জন্য একটি ফোর্ট বা ব্যারাক টাইপের স্থাপনা বসাতে চেয়েছিলেন। তো তাদের সেই সামরিক স্থাপনাটির নিরাপত্তার জন্য তারা সেটিকে ঘিরে একটি দেয়াল নির্মান করেন। আর এভাবেই গোরাপত্তন হয় এই শহরটির।
পরবর্তিতে শহরটির বসবাসকারির সংখ্যা যতই বারতে থাকে সেই দেয়ালটির দৈর্ঘ্যও আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। মুলত পরবর্তিতে রোমানরা বাধ্যহয়ে শহরটিতে বসবাসকারিদের সংখ্যা লিমিটেড করে দেন। মুলত দেয়ালের কারনে নিরাপত্তা থাকায় মানুষ বেশি এই শহরমুখি হয়েছিল। কিন্তু ৮৫৭ সালে মানে নির্মানের প্রায় ৭০০ বছর পরে ড্যানিশরা শহরটিতে আক্রমন করে। তখন দির্ঘদিনের অপরিচর্যার ফলে শহরটির রামকি স্থাপনাগুলো খুব সহজেই ড্যানিশদের হাতে চলে যায়। ড্যানিশরা পুরো শহরটির উচু উচু সামরিক ওয়াচ টাওয়ারগুলো ধংস্ব করে দেয়। সাথে ফোর্টগুলোও ধংস্ব করে দেয়। শুধু একটা ফোর্ট রাখে তাদের নিজেদের জন্য।
পুরো শহরটাতে প্রবেশ করতে এখনো মুল চারটা গেটহাউস বা স্থানিয়দের ভাষায় "বার" রয়েছে। এই গেটগুলো দিয়েই মুলত শহরে প্রবেশ বা বাহির হওয়া যাবে। রোমানরা যখন নির্মান করেছিল তখন তারা গেটগুলোকে সামরিক কায়দায় নির্মান করেছিল। কিন্তু ড্যানিশদের হাতে ধংস্বপ্রাপ্ত হবার পরে ইংলিশরা সেকানে দ্বিতিয়বার নতুন করে অসাধারন ডিজাইনে গেট তৈরি করে।
প্রত্যেকটির আবার আলাদা আলাদা নামও আছে। যেমন
Bootham Bar
Monk Bar,
Walmgate Bar,
Micklegate Bar
১১) Harar
হারার শহরটি ইথওপিয়াতে মুসলিমদের জন্য একটি অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন এবং ঐতিহাসিক শহর। বিশাল একটা ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই শহরটির পেছনে। শহরটি প্রথম স্থাপন করেন সুলতান সুলতান আবু বকর ইবনে মুহাম্মদ। অত্যান্ত বিচিক্ষন রাজনিতিবিদ এবং সামরিক জ্ঞানসম্পন্ন এই ভদ্রলোক হারার কে তার দেশের রাজধানি হিসাবে নির্মান করেন। এখান থেকে তিনি মুলত পুরো আফ্রিকাতে ইসলাম ধর্ম প্রচার করার চেস্টা চালান।
মুলত সুলতান এই শহরটিকে তৎকালিন ইথিওপিয়ার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের হামলার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই পুরো শহরটিকে ঘিরে দেয়াল নির্মান করার সিদ্ধান্ত নেন। দেয়ালটি কমপক্ষে ২০ টার উপরে ছোট বড় যুদ্ধে পুরো শহরটিকে সম্পুর্ন ধংস্ব প্রাপ্ত হওয়ার হাত থেকে বাচিয়েছে। প্রায় ১০০ টির মসজিদ এবং প্রচুর মাজার সম্বলিত এই শহরটিকে এখনো পরম যত্নে ঘিরে রেখেছে দেয়ালটি।
খুব আহামরি কোন নির্মানশৈলি না থাকলেও মুলত প্রায় ৫০০ বছর ধরে এই দেয়ালটিই এই শহরটিকে বিভিন্ন যুদ্ধের ভয়াভহতা থেকে শহরবাসিকে রক্ষা করে এসেছে। এছারাও এই দেয়ালিটি পুরোশহরটিকে এখনপর্যন্ত মুসলিম বসবাসকারিদেরকে একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ জাতি হিসাবে এই অঞ্চলে স্বতন্ত্র ভাবে বসবাস করার সুবিধা দিয়েছে।
১০) Taroudant
এই শহরটি মরোক্কতে অবস্থিত। অসাধারন এই শহরটি স্থাপিত হয় আজ থেকে আরো এক হাজার বছর আগে ১০৫৬ সালে। মুলত পর্তুগালের সমুদ্রের পারে হওয়াতে এটিতে পর্তুগিজ শাষন জারি ছিল। কিন্তু ১৫০০ সালের দিকে এটি মুসলমানরা দখল করে নেয়। ব্যাপক যুদ্ধের পরে সাদিয়ান রাজবংশের হাত ধরে এটি উন্নতি শুরু হয়। তৎকালি শাষক মোহাম্মদ আশ শেখ এর আমরে মুলত এই শহরটিকে তিনি তার রাজধানি হিসাবে মর্যাদা দেন।
তিনি শহরটিকে বহির্শক্তির হাত থেকে বাচানোর জন্য শহরটিকে ঘিরে এই দেয়াল নির্মান করেন। অসাধারন এই দেয়ালটি একই সাথে শহরের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অংশ হয়ে উঠে। কিন্তু ১৬৮৭ সালে মৌলি ইসমাইল ইবনে শরিফের আক্রমনের সময় দেয়ালটি ব্যাপক ধংস্বপ্রাপ্ত হয়। ইসমাইল পুরো শহরের এক তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করেন।
যদিও ইসমাইল আবার পুরো দেয়ালটি পুননির্মান করেন। তিনি এটি থেকে রাজধানি সরিয়ে নেন। তবে তারপরও এটি খুবই গুরুত্বপুর্ন হিসাবে এজও বিবেচিত হয় এর দেয়ালের কারনে। অসাধারন এই দেয়ালটি বর্তমানে দেশটির প্রধান টুরিস্ট আকর্ষনের একটি।
৯) Toledo
এই শহরটি হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র শহর যেখানে একই সাথে খ্রিস্টান, মুসলিম এবং ঈহুদিরা বসবাস করে থাকে। আত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং এতিহ্যের সহর স্পেনের মাদ্রিদ থেকে ৭০ কিলোমিটার থেকে দুরে অস্থিত এই দেয়াল ঘেরা শহরটি। মুলত শহরটিকে বলা হয়ে থাকে "দ্যা সিটি অব থ্রি কালচার" কারন তিনটা ধর্মের মানুষ তাদের নিজস্ব কৃস্টি এবং কালচার নিয়ে খুবই স্বতন্ত্র ভাবে কিন্তু একত্রে বসবাস করে থাকে।
ধারনা করা হয় শহরটি প্রথম স্থাপিত হয় ব্রোঞ্জ যুগে। প্রথমত স্থাপনের পরে এটি গিয়ে পরে রোমানদের হাতে। প্রায় ৮০০ বছর পরে মুসলমানরা পুরো স্পেন জয় করে নিয়ে এটি গিয়ে পরে মুসলিমদের হাতে। পরে ক্রুসেড এর পরে খ্রিস্টানরা পুনরায় এটির দখল করে নেয়। রোমান সম্রাট Charles V এই শহরে তার বিখ্যাত কোর্ট স্থাপন করেছিলেন। এই শহরটি তৎকালিন সময়ে একটি সার্বভৌম শহর হিসাবে স্বকৃত ছিল। মানে এখানকার নিজস্ব শাষন ব্যাবস্থা ছিল। যার কারনে এটি এতটা উন্নতি লাভ করে। পরে যখন যাদের হাতেই ছিল তারাই এটিকে সার্বভৌম হিসাবে শাষন করে।
দেয়ালটি প্রথম নির্মান করে রোমানরা তাদের আর্কিটেকচার সিস্টেমে। কিন্তু মুসলমানরা হামলা করে পুরো দেয়ালটি ধংস্ব করে দিয়ে তারাই আবার নতুন করে আগের ধ্বংসাবশেষের উপরে নতুন দেয়াল নির্মান করেন। পুনরায় খ্রিস্টানদের সাথে যুদ্ধের সময় দেয়ালটি আবার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হলে আবার তারা নির্মান করে। ফলে এই দেয়ালটির বয়স ধারা হচ্ছে প্রায় দুই হাজার বছরের কাছাকাছি। যদিও ইতিহাসবিদরা বিষয়টাতে ভিন্নমত পোষন করেন। কারন প্রতিবার ধংস্ব হবার পরে নতুন দেয়ালের নির্মান শৈলি এবং লেআউট একেবারে আলাদা আলাদা ভাবে নির্মান করা হয়।
৮) Pingyao
এটি চায়নাতে অবস্থিত। অত্যান্ত প্রাচিন এবং চাইনিজ ইতিহসা সমৃদ্ধ এই শহরটি স্থাপিত হয় আজ থেকে আরো ২৭০০ বছর আগে। Qing রাজবংশের শাষনামলে এই শহরটি মুলত সমগ্র চায়নার প্রধান ফাইনেন্সিয়াল কেন্দ্র ছিল। স্থাপিত হওয়ার পরে আজ প্রায় ২৭০০ বছর পরে এই শহরটিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ বাস করে। শহরটির মুল আকর্ষন হচ্ছে এর দেয়ালটি। এই দেয়ালটি নির্মান করেন মিং রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা Hongwu Emperor । তিনি মুলত তার দেশের অর্থনিতি নিয়ে খুবই সমস্যাতে ছিলেন। তাই যাতে এই শহরটিকে আক্রমন করে কেউ তাকে আর্থিক ভাবে বিপদে ফেলতে না পারে তাই তিনি এই পুরো শহরটিকে ঘিরে অসাধারন এই দেয়ালটি নির্মান করেন।
দেয়ালটি প্রায় ৪০ ফিট উচু এবং উপরে প্রায় ১০ থেকে ১২ ফিট পর্যন্ত প্রসস্ত। লম্বায় প্রায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রসস্ত। দেয়ালটিতে সর্বমোট ৬ টি প্রধান গেট আছে যেগুলো একএকটা নিজেই ফোর্ট এর মতন করে নির্মিত। তাছারা আছে চার কোনায় চারটি বিশাল টাওয়ার যা দিয়ে গার্ডরা পুরো শহরটিকে চোখের আওতায় রাখতে পারতো। এই চারটা ছারাও আরো ছোট বড় ৭২ টা ওয়াচটাওয়ার আছে। আছে প্রায় ৩০০০ টি battlements যেগুলোতে দারিয়ে যুদ্ধের সময় সৈন্যরা তীর এবং বর্শা ছুরতে পারতো।
পুরো দেয়ালটির লেআউট এমন ভাবে দেয়া হয়েছে যে উপর থেকে দেখলে মনে হয়ে একটা কচ্ছপ। ঠিক কচ্ছপের মতন মাথা, চারটি পা এবং একটা লেজের মতন অংশ। যার জন্য প্রচীন চাইনিজরা এই সহরটিকে কচ্ছপ শহর বা "Turtle City." বলে ডাকতো। আরো মারাত্মক বিষয় হচ্ছে পুরো দেয়ালটিরে বাইরের অংশে একটি খালের মতন নির্মান করা হয়েছে যেটি প্রস্থছি ১৫ ফিট এবং গভিরতা ছিল ১৫ ফিট। বলা হয়ে থাকে যুদ্ধের সময় এই খালে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়া হত যাতে শত্রপক্ষ কিছুতেই দেয়াল পর্যন্ত পৌছতে না পারে।
দেয়ালটি ২০০৪ সালে এক পাশদিয়ে ধ্বসে পরে। কিন্তু বর্তমান চাইনিজ সরকার এই দেয়ালটিকে তার দেশের সামরিক ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের প্রতিক মনে করে। তাই তারা দেয়ালটিকে আবার একই ডিজাইনে পুননির্মান করে। পুরো দেয়ালটিকে তারা আগে স্টাইলে সংস্কার করে এবং আগের যে যন্ত্রাংশ যেমন কামান, বর্শর তিরন্দাজ ছিল সবকিছুকেই পুনর্স্থাপিত করে। খালটিকেও পুনর্নখনন করে নতুনের মতন করে এনেছে। এখন যদি আপনি ওখানে ঘুরতে যান আপনার কাছে মনে হবে আপনি হাজার খানে বছর পেছনে প্রাচিন চায়নাতে চলে গিয়েছেন। তাছারা শহরের ভিতরের বাড়ি ঘরগুলোও সেভাবেই রাখা হয়েছে যেভাবে শত শত বছর আগে ছিল। কোন কিছুকেই ভাঙতে বা ধংস্ব করে শপিং মল বা আধুনিক কিছুই করতে দেয়া হয়নি।
৭) Obidos
এই শহরটি পর্তগালে অবস্থিত। সাগরের তীরবর্তি হওয়াতে এটিতে ঠিক কবে প্রথম সেটলমেন্ট বা বসতি গরে ওঠে সেটা ঠিক করা না গেলেও ধরা হয়ে থাকে এটি কমপক্ষে হাজার পাচেক বছর পুরনো শহরগুলো অন্যতম। এত পুরানো এবং এতটাই ঐতিহাসিক যে পুরো পর্তগালের ইতিহাসের একটা অংশ হয়ে আছে ছোট্ট এই সমুদ্র তীরবর্তি শহরটি।
মুলত এটি প্রথমে ছিল রোমানদের দখলে। মুরত রোমানরাই এই শহরটির দেয়াল নির্মান করে এবং এখানে একটি সামরিক স্থাপনা নির্মান করে। পরবর্তিতে রোমানদের পতনের পরে বিভিন্ন চরাই উৎরাই পেরিয়ে শহরটি মুসলমান মুরদের হাতে চলে যায়। মুররা দেয়ালটিনিয়ে মাথা না ঘামালেও ১২০০ শতকের দিকে পর্তুগালের তৎকালিন খ্রিস্টান সম্রাট এই শহরটি আক্রমন করে দখল করে নেন। এবং মুরদের বিতারিত করেন।
মুরদের বিতারনের পরে পুরো শহরটি পুননির্মান করা হয়। দেয়ালগুলোকে আরো প্রচন্ড শক্তিশালি করা হয়। বর্তমানে যে দেয়ালটি দেখাে যায় সেটি নির্মিত হয়েছে ১৪০০ শতকের দিকে যা এখন থেকে আরো ৬০০ বছর আগে। তৎকালিন সময়ে নির্মানের জন্য চুনাপাথর ব্যাবহৃত হত। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে এই দেয়ালের বেইজ বা ভিত্তি হচ্ছে প্রায় ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো। অনেক আর্কিওলজিস্ট এই দেয়ালটিকে খনন করে দেখার অনুমুতি চাইলেও পর্তুগাল সরকার রাজনৈতিক এবং জতিগত সমস্যার কারনে অনুমুতি দেয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭