somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার দ্বারা অন্যের মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা নিরাপদ তো আপনার মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা ও নিরাপদ

০৮ ই মার্চ, ২০২২ বিকাল ৫:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যারা ঢাকা শহরে বসবাস করেন তারা ভালো করেই জানেন যে বাসে চলাচল কত টা কঠিন। দুই কোটি মানুষের ঢাকায় প্রায় এক কোটিই নারী। তাই তাদের চলাচল করা আরো কঠিন। এই বাসে আপনি চাইলেই অনায়েশে ভীড়ের অযুহাত দিয়ে একটা মেয়ের শরীরে হাত দিতেই পারেন। অনেকে তো আবার বিষয়টিকে নিজের জন্য অপরিহার্য বানিয়ে ফেলেছেন। মেয়েটার কথা নাই ভাবলেন যে তার কেমন লাগে। একবার ভাবুনতো আপনার মা-বোন বা প্রিয়তমা হয়তো বা আপনার মেয়েও বাসে চলাচল করে। তাহলে তো তাদের সঙ্গেও তো এমন হয়। তাদের কেমন লাগে? বা আপনি এইটা জানার পর আপনার কেমন লাগবে? এইটা তো ভাবতেই পারেন তাই না?

আচ্ছা ধরেন আপনি বাসে চড়েন না। আপনি একটা বড় অফিসের হেড। আপনার অধীনের ২-৪-১০ হাজার মানুষ কাজ করে। আপনার কাছে সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করা এক মেয়ে আসলো চোখে স্বপ্ন নিয়ে জীবনের প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দিতে। আপনি অনেক সময় ধরে তার সঙ্গে কথা বললেন। জানতে পারলেন তার বাবা অসুস্থ। অনেক কষ্টে গ্রাজুয়েশন শেষ করেই চাকরির চেষ্টা করছে। চাকরিটা হলেই সে হাল ধরতে পারবে সংসারের। আপনি সব বুঝে শুনেই মেয়ের বয়সী ক্যান্ডিডেটটিকে নিরিবিলে তার সঙ্গে সময় কাটানোর প্রোপজাল দিয়ে বসলেন। একবার ভাবলেনও না মেয়েটার কেমন লাগবে? সেটা আপনার ভাবার বিষয়ও না। তবে আপনি যে মেয়েটাকে ব্লাকমেইল করছেন এটাই কিন্তু আপনার ভাবনার বিষয়। হয়তো আপনার মেয়েও এইভাবে না হোক অন্যভাবেও কারো না কারো ব্লাকমেইলের শিকার। তখন আপনার কেমন লাগবে স্যার?

আচ্ছা এই গুলো অনেক বড় ব্যাপার। আসেন ছোট কয়েকটা বিষয় নিয়ে কথা বলি।

আপনি একটা রিলেশনে আছেন। রিলেশনটায় ভালোবাসা থেকেই আপনার কাছে শারিরীক চাহিদাটাই বেশি মূল্যবান। টিনেজার মেয়েটাকে রিলেশন আর বিশ্বাসের দোহাই দিয়ে ইমোশনাল ব্লাক মেইল করে হলেও নিজের চাহিদা পূরণ করলেন। মেয়েটা তো আপনাকে বিশ্বাস করেই বসেছে যে বিয়ে তো হবেই। কিন্তু ‘ফিউচার ইজ নট বি রিটেন’ এটা তো তার মাথায় নেই। আপনি এই বিশ্বাসের চরম প্রমাণ দিয়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত গুলোর ভিডিও ধারণ করলেন। যা মেয়েটা জানতেও পারলো না। বা অনেক সময় বুঝিয়ে সুজিয়েই করলেন। এরপর মাঝে মধ্যে অনলাইনেও চললো ফটো বা ভিডিও সংগ্রহ। সম্পর্কে টান পোড়ন থাকতেই পারে। আপনার ও চাহিদা বা মানসিক অত্যাচার বাড়তেই থাকলো। একটা সময় মেয়েটা হাল ছেড়ে দিয়ে নিজেকে দূরে সরাতে চাইলো। আর তখনই বের হয়ে আসলো আপনার আসল চেহারা। শুরু করলেন ব্লাকমেইল। নিজে অন্য রিলেশনে গেলেও মেয়টার জীবনটা বানিয়ে দিলেন দোযখ। খুব কম মেয়েই ফেস করতে পারে এমন পরিস্থিতি । বেশির ভাগ মেয়ে ফেসে যায়। বাকিরা আত্মহত্যা করে নিজেকে বাঁচায়। এই সময়টায় বেশির ভাগ মেয়ে পরিবারকেও পাশে পায় না। একটা বারও কি ভেবেছেন মেয়টার বা তার পরিবারের অবস্থা? আপনার বোন, ভাগ্নী বা মেয়ের সঙ্গে এমন হলে কি করতেন? আপনার অনুভূতিটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে।

আপনি একজন শিক্ষক , আপনি সমাজের উচ্চ পর্যায়ের সম্মানিত মানুষ। অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। প্রতি নিয়ত ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। সুযোগ পেলেই ছাত্রীদের ছুয়ে দেন। কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। ফাইনালে আপনার কাছে খাতা পড়া মানে আরো একটা যুদ্ধ। যাতে জয়ী হওয়া নিজের পড়াশোনার চেয়ে কঠিন। মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল প্রুফ চলছে। বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় কোন সাব্জেক্টের শেষ বর্ষ। ফেল করলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করে দিবে এমন শিচুয়েশন। আপনি খাতা দেখবেন। দেখলেন মেয়েটা পাশ করেছে কিন্তু আপনি চাইলে তাকে বিভিন্ন উছিলায় আটকাতে পারেন। আপনার লোলুপ চেহারা জেগে উঠলো। মেয়েটাকে ডাকলেন। বুঝালেন যে আপনি চাইলে তাকে পাশ করাতে পারেন আর আটকাতেও। বিনিময়ে চাইলেন মেয়েটার জীবনের থেকে দামি সম্পদ। অনেক সময় মেয়েটা আপনার পাতা ফাঁদে পা দিয়ে আপনার দাসী হয়ে গেল। একবারও কি ভেবে দেখেছনে মেয়েটার কি অবস্থা? মেয়েটা না পারবে পরিবারকে বলতে না পারে নিজের প্রিয়জনকে ? তার প্রিয় মানুষটা জানলেও তার মনের কি অবস্থা ভেবেছেন? ভাববেন কেন? আপনি তো মজা খুজতেছেন।

ধরেন আপনার একজন নারী সহকর্মীকে সুযোগ পেলেই হ্যারাস করেন। খারাপ দৃষ্টিতে তাকান। চেষ্টা করেন গায়ে হাত দিতে। এডাল্টা ফান গুলো তার সামনেই করেন সে বিব্রত হচ্ছে জেনেও। কেন জানেন? কারণ আপনি তার বিব্রত হওয়া দেখেই মজা পাচ্ছেন আপনি। অনেক সময় সুযোগ করে বিশ্বাসের দোহাই বা প্রেমের ফাঁদে ফেলে বেডে নিলেন। এরপর সেও হয়ে গেল আপনার দাসী। তার স্বামী সংসার থাকার পরেও সে হয়ে গেল আপনার পুতুল। নিজের জীবন ভালো চললেও তার জীবনে অভিশাপ হয়ে গেলেন।

তবে এটাও তো ভাবা দরকার যে আপনারও একটা মেয়ে আছে। এই সব অপরকর্ম করেও বাসায় গিয়ে যাকে মা বলে ডাকেন। স্নেহ ভালোবাসায় তার মাথায় হাত বুলিয়েদ দেন। তাকে মন ভরে দোয়া করেন।

বা আপনার আদরের বোন আছে। যাকে নিজের সব কিছু উজার কর দিয়ে বড় করছেন। চেষ্টা করছেন মানুষের মত মানুষ বানিয়ে আর একটা মানুষের হাতে তুলে দিতে।

বা আপনার স্ত্রী যাকে আপনি নিজের বাচ্চার মা জানেন। যাকে ভালো রাখতে করে যাচ্ছেন এত কিছুই। যার জন্যই ভালোবাসা কথাটা পূর্ণতা পায়। আচ্ছা তার সঙ্গে এমন হলে সহ্য হবে তো?

একবারই কি মাথায় এসেছে যে আপনি একটা মেয়ের সঙ্গে যা করলেন তা যদি আপনার মা, স্ত্রী, মেয়ে বা বোন জানতে পারে তাদের কাছে আপনার অবস্থানটা কি হবে? আপনাকে তারা কি ভাববে? কতটা কষ্ট তারা পাবেন?

একটা জিনিস মাথায় রাখবেন। যে মেয়েটার সঙ্গে আপনি এমন করলেন তারও বাবা-মা, ভাই-বোন আছে। আপনার মেয়ে বা বোনের সঙ্গে এমন হলে আপনার যেমন লাগবে তাদেরও এমনই লাগবে।

যা বলল্লাম তা আমাদের বর্তমান সমাজের অবস্থা। অহরহ ঘটতেছে। চারিদকে একটু তাকান। দেখতে পাবেন। একটু চোখ কান খোলা রেখে চলুন।

মনে রাখবেন প্রকৃতি কাউকে ক্ষমা করেনা। আপনি যা করবেন আপনিই তা ভোগ করবেন। আপনার সঙ্গে যা ঘটে তা আপনার নিজ হাতের কামাই।

নারীকে সম্মান করুন। একটা নারীই মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা।

আপনার দ্বারা অন্যের মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা নিরাপদ তো আপনার মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা ও নিরাপদ।

নারীকে সহযোদ্ধা ভাবুন, সহকর্মী ভাবুন, একজন দায়িত্বশীল মানুষ ভাবুন। তাহলেই এগিয়ে যাবে সমাজ, এগিয়ে যাবে দেশ।

যে কোন পরিস্থিতিই হোক না কেন আপনার বাড়ীর মেয়েটার সঙ্গে থাকুন। শক্ত করে হাত ধরে বলুন আপনি আছেন।

যাদের কাছে নিরাপদ অন্যের মেয়ে, বোন, স্ত্রী ও মা সেসব শ্রদ্ধাশীল পুরুষ ও সকল নারীকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।

হ্যাপি উইমেন্স ডে

পার্থ-
05:47pm
03-08-22

ছবি- গুগল
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:১১
১১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমাধ্যম আক্রমণ: হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিলেন নূরুল কবীর ও নাহিদ ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:০৫


জুলাই গণঅভ্যুত্থানের রক্তস্নাত পথ পেরিয়ে আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম, সাম্প্রতিক মব ভায়োলেন্স এবং গণমাধ্যমের ওপর আক্রমণ সেই স্বপ্নকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। নিউ এজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×