
১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ‘ইয়ম কিপুর’–এর দিন ইসরায়েলে হামলা চালায় মিসর ও সিরিয়া। এবার ৭ অক্টোবর ভোরে হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। তাই অনেকে এবারের হামলাকে সেই ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করছেন। ইসরায়েলি সরকারের আগ্রাসী নীতিই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন।
হিব্রু বর্ষপঞ্জি অনুসারে নতুন বছরের প্রথম দিনটি ‘রোশ হাশানাহ’ নামে পরিচিত। হিব্রু বর্ষের প্রথম মাস ‘তিশরেই’।
ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, এদিন মহাপ্রভু পরবর্তী এক বছরের ভাগ্যলিখনের খাতা খোলেন।
তাই এদিন থেকে ইহুদিরা বিশেষ প্রার্থনা করে। তিশরেই মাসের দশম দিনের মাথায় পালিত হয় পাপমুক্তির দিন ‘ইয়ম কিপুর’। এই দিন শেষে প্রভু ইহুদিদের ভাগ্যলিখন শেষে খাতা বন্ধ করেন। রোশ হাশানাহ থেকে ইয়ম কিপুরের মধ্যবর্তী দিনগুলোকে বলা হয় ইয়ামিম নোরায়িম বা অনুতাপের দিন।
ইয়ম কিপুরের দিনটি ইহুদিরা ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সমষ্টিগতভাবে নিবিড় প্রার্থনা, অনুশোচনা, উপবাস ও সংযমের মাধ্যমে পালন করে থাকেন। ইহুদিধর্মমতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান এই দিনটি ইসরায়েলে সরকারিভাবে ছুটি থাকে। অত্যাবশ্যকীয় সীমিত কিছু সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকে।
৫০ বছর আগে
১৯৭৩ সালের ৬ অক্টোবর ইসরায়েলে যথারীতি ইয়ম কিপুর পালিত হচ্ছিল। আর এই দিনেই ইসরায়েলে হামলা চালায় মিসর ও সিরিয়া। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ ও হারানো ভূমি ফেরত পেতে তারা এই হামলা চালায়। আকস্মিক এই হামলায় প্রথমে ইসরায়েল স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। দেশটির নেতারা ভাবতেই পারেননি, মাত্র ছয় বছর আগে শোচনীয়ভাবে পরাজয়ের পর কোনো আরব রাষ্ট্র ইসরায়েলে হামলার মতো অত বড় ঝুঁকি নেবে।
ইসরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার ভেবেছিলেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত সংঘাতে জড়ানোর মতো অযৌক্তিক পদক্ষেপ নেবেন না। ইসরায়েলি উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা দম্ভভরে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কোনো রকম সংঘাত হলে ইসরায়েলের জন্য ‘সৈন্য প্রত্যাহারের সীমারেখা হবে কায়রো।’ আর আরবরা হামলা করলে এমন পাল্টা জবাব দেওয়া হবে যে তাদের কাছে ‘১৯৬৭ সালের পরাজয়ের স্মৃতিটাই বরং সুখকর মনে হবে।’
প্রথম আলো ও অন্যান্য পত্রিকা থেকে সংগৃহিতঃ
৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় বা রাতে আক্রমণ হতে পারে বলে আগেই আভাস দিয়েছিলেন ইসরায়েলি গোয়েন্দা ও গুপ্তচরেরা। তবে ৬ অক্টোবর দুপুরে (দিনটা হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে ছিল ১০ রমজান) যখন মিসরীয় সেনাবাহিনী সুয়েজ খাল পেরিয়ে অধিকৃত সিনাই উপদ্বীপে ঢুকে পড়ে, তখন ইসরায়েলি বাহিনী ছিল অনেকটাই অপ্রস্তুত। অপর সীমান্ত গোলান মালভূমিতে সিরিয়ার সেনারাও হামলা চালায়। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে মিসরের কাছ থেকে সিনাই ও সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান দখলে নিয়েছিল ইসরায়েল। মিসর ও সিরিয়ার আক্রমণ শুরুর পর ৬ অক্টোবর রাতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে দায়ানকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, আরবরা এবার ‘ইহুদিদের শেষ করার জন্য ইসরায়েল দখল করে নিতে চাচ্ছে।’
অবশ্য মিসর–সিরিয়ার হামলার প্রাথমিক ধকল কাটিয়ে উঠতে ইসরায়েলের বেশি দিন লাগেনি। ১০ অক্টোবর সিরীয় বাহিনীকে গোলান থেকে হটিয়ে দিয়ে তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে পাল্টা হামলা চালায়। তবে মিসরীয় বাহিনীর সঙ্গে পেরে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয় ইসরায়েলের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ইসরায়েলকে সামরিক সহযোগিতা বাড়াতে থাকেন। অন্যদিকে সিরিয়া ও মিসর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে কিছু যুদ্ধসামগ্রীর জোগান পেয়েছিল। ১৫ অক্টোবর ইসরায়েলের প্রবল পাল্টা আক্রমণে মিসরীয় বাহিনী পিছু হটতে থাকে। এদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ২৪ অক্টোবর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করে, যদিও ২৬ অক্টোবর মিসর সীমান্তে সংঘাত থেমে যায়।
ইয়ম কিপুর যুদ্ধের সময় তেল উৎপাদনকারী আরব দেশগুলো একযোগে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ৭০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ইসরায়েলকে সহযোগিতা করায় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও নেদারল্যান্ডসে তেল সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়। বিশ্বজুড়ে এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তা শেষ পর্যন্ত বড় নিয়ামক হয়ে উঠতে পারেনি।
১৯৭৩ সালের যুদ্ধ শেষে হিসাব-নিকাশে ইসরায়েল জয়ী হলেও দেশটির ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা ছিল ১৯৬৭ সালের তুলনায় অনেক বেশি। তিন হাজার ইসরায়েলি সেনা প্রাণ হারিয়েছিল। জনসাধারণ মনস্তাত্ত্বিকভাবে অনেকটা ভেঙে পড়েছিল। তাঁদের প্রচণ্ড ক্ষোভ জন্মেছিল সরকার ও প্রতিরক্ষাবাহিনীর ওপর। ফলে গোল্ডা মেয়ারকে যুদ্ধ শেষের আট মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।

প্রথমআলো ও অন্যান্য পত্রিকা থেকে সংগৃহিত
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




