somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দর্শনের রাজা: ইমানুয়েল কান্ট

৩১ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমার বই পড়ার অভ্যাস । বহির্মুখী জীবনে যা কিছুই করি না কেন ? বই পড়া আমি কখোনো ছাড়িনি। কাগজের ঠোঙ্গা থেকে মোটা মোটা বিশ্বকোষের ভলিউম । বই পড়ার ক্ষেত্রে আমার কোন রুচি বোধ নেই। বহু মতাদর্শের সাথে পরিচিত হওয়ার কারনে কোন বিষয়েই আমি গোলক ধাঁধায় নিমজ্জিত হই নাই। তবে কিছুটা হলেও আমার চিন্তা ভাবনায় দার্শনিক ইমানুয়েল কান্টের দর্শন প্রভাব আছে বলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয়।
ইমানুয়েল কান্ট (১৭২৪-১৮০৪)
ইমানুয়েল কান্ট ১৭২৪ সালের ২২ এপ্রিল প্রুশিয়ার কোনিগসবার্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা আনা রেজিনা প্রুশিয়ার নাগরিক হলেও, তার বাবা গ্রেগর কান্ট ছিলেন জার্মান অধিবাসী। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের ৯ সন্তানের ৪র্থ জন। খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার পর তার নামের পাশে ইমানুয়েল শব্দটি যোগ হয়। তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাইবেল এবং ল্যাটিন দিয়ে। পারিবারিক কঠোর বিধিনিষেধ এবং ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে বড় হতে থাকা কান্ট খ্রিস্টধর্মের একজন কঠোর বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। তবে বয়স এবং জ্ঞানের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে তিনি সংশয়বাদী হতে থাকেন এবং এক সময় ধর্মকর্মের প্রতি সম্পূর্ণ বীতশ্রদ্ধ হয়ে ওঠেন।
গৃহী মানুষ হিসেবে ইমানুয়েল কান্টের নাম আছে। প্রচলিত আছে যে, তিনি তার বাড়ি থেকে কখনো ১৬ কিলোমিটারের অধিক দূরে গমন করেননি! যদিও তথ্যটি ভুল, তথাপি তার জীবন কেটে গিয়েছিল কোনিগসবার্গ শহরেই! কদাচিৎ শহরের বাইরে গেছেন জরুরি প্রয়োজনে। ফ্রিডেসিয়ানাম কলেজে পড়ালেখা শেষ করে ১৭৪০ সালে ভর্তি হন কোনিগসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি দর্শনের ছাত্র হন, পড়তে শুরু করেন লেবিনিজ এবং ক্রিশ্চিয়ান উলফের দর্শন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা শেষ করে প্রাথমিকভাবে গৃহশিক্ষক হয়ে জীবিকার্জন করতেন কান্ট। পরবর্তীতে কোনিগসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক পদে যোগ দেন তিনি। প্রাথমিকভাবে তিনি বিজ্ঞান নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন। ‘জেনারেল হিস্ট্রি অব নেচার’, ‘আপন নিউটনিয়ান প্রিন্সিপালস’ এবং ‘জেনারাল নেচারাল হিস্ট্রি অ্যান্ড সেলেশ্চিয়াল বডিজ’- এই তিনটি বই তিনি ১৭০-৫৫ সালের মধ্যে প্রকাশ করেন।
দর্শনে তার প্রথম পদক্ষেপ ‘ফলস সাটলটি অব দ্য ফোর সিলোজিস্টিক ফিগারস’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৭৬০ সালে। এরপর আর কখনোই দর্শনের বাইরে পা রাখেননি কান্ট। ২ বছর পর প্রকাশিত হয়, সম্ভবত তার জীবনের সবচেয়ে বিতর্কিত গ্রন্থ ‘দ্য অনলি পসিবল আর্গুম্যান্ট ইন সাপোর্ট অব আ ডেমনস্ট্রেশন অব একজিস্ট্যান্স অব দ্য গড’। এই বইয়ে তিনি ধর্মের উপর যুক্তির প্রাধান্য স্থাপন করে সমালোচনার শিকার হন। আবার দর্শনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব খুঁজে প্রশংসিতও হন। এরই মাধ্যমে তিনি দার্শনিক হিসেবে অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন এবং নিজের স্থান অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। তবে ১৭৬০ সালেই হঠাৎ তার কলম নীরব হয়ে যায়। এই নীরবতা ভাঙতে সময় নেয় ২১ বছর!
কলম নীরব হলেও, তার ভাবনার চাকা ঠিকই সচল ছিল। দীর্ঘ ২১ বছরের চিন্তার প্রতিফলন তিনি ঘটিয়েছিলেন ১৭৮১ সালে প্রকাশিত তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ ‘ক্রিটিক অব পিওর রিজন’-এ। এটি প্রকাশের সাথে সাথেই তার নাম উঠে যায় সর্বকালের সেরাদের তালিকায়। এরপর একে একে প্রকাশ করেন ‘গ্রাউন্ডওয়ার্ক অব মেটাফিজিক্স’, ‘ক্রিটিক অব প্র্যাক্টিক্যাল রিজন’, ‘মেটাফিজিক্যাল ফাউন্ডেশন অব ন্যাচারাল সায়েন্স’, ‘ক্রিটিক অব জাজমেন্ট’, ‘রিলিজিয়ন উইদিন দ্য বাউন্ডস অব বেয়ার রিজন’ সহ অমর সব দর্শনের বই। ১৮০২ সালে লিখতে শুরু করেন ‘ওপাস পোস্টুমাম’ নামক একটি গ্রন্থ যা আর শেষ করে যেতে পারেননি। ১৮০৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি, ৮০ বছর বয়সে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি কোনোদিন বিয়ে করেননি। সমগ্র জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন জ্ঞানচর্চায় আর ভাবনায়। তার সে সব ভাবনা আজ দর্শনের অমূল্য সম্পদ, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের পাথেয়।

ফিচার ছবি: justillon.de
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
১৪টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×