somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিসঃ মৃত্যু যাকে দিয়েছে অমরত্ব।

০২ রা নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রহসনের বিচারে
সক্রেটিস এর মৃত্যু হয়েছে ঠিকই,
কিন্তু মৃত্যু তাকে মারতে পারেনি
বরং দিয়েছে অমরত্ব।
সক্রেটিসের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে। নিয়ম অনুযায়ী ঠিক সন্ধ্যায় পরিবারের সবাই ও তার একান্ত শিষ্যরা তার চারপাশ ঘিরে আছেন। প্রধান কারারক্ষী কারাগারের অন্ধকার ঘরে এসে শেষ বিদায় নিয়ে গেলেন। তার চোখেও অশ্রু টলমল করছে। হায়, কি অদ্ভুত শাস্তি, যে মরবে সে ধীর, স্থির, শান্ত। আর যে মারবে তার চোখে জল, কারাগার প্রধান বললেন, এথেন্সের হে মহান সন্তান, আপনি আমায় অভিশাপ দেবেন না। আমি দায়িত্ব পালন করছি মাত্র। কারাগারে এত বছর কাজ করতে গিয়ে, সাহসী, সৎ ও জ্ঞানী আর কাউকে আমি আপনার মতো দেখি নি। মৃত্যুর ঠিক আগে সক্রেটিস চলে যেতে বললেন, তার পরিবারের নারী ও শিশুদের। সক্রেটিস সুন্দর পোষাক পরলেন, শিষ্যরা সবাই কাঁদছে কিন্তু তিনি যেনো বেপরোয়া। মৃত্যুতে কি কিছুই যায়-আসেনা তার ?
তিনি চাইলেই মৃত্যু দন্ডটা এড়িয়ে যেতে পারতেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, তরুণ দের বিপথগামী হতে উৎসাহ প্রদান এবং দেবতাদের প্রতি ভিন্নমত প্রকাশ। নিয়ম অনুযায়ী খোলা মাঠে তার বিচার বসেছিলো। বিচারক ছিলেন, সমাজের ৫০০ জন জ্ঞানী মানুষ। তাদের অনেকেই ছিলেন গ্রীসের রাজার একান্ত অনুগত। সক্রেটিসের মেধা ও বিশেষত তরুণ দের কাছে তার জনপ্রিয়তার প্রতি জ্বলন ছিলো তাদের। সক্রেটিস কে খতম করার এমন সুযোগ তারা ছাড়বে কেনো ? সক্রেটিস তবুও হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন। কিন্তু কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েও বিচারকদের নিয়ে উপহাস করতে ভুললেন না। ফলাফল, হ্যামলক বিষপানে মৃত্যু।
মৃত্যুর আগে তিনি এক মাস কারাগারে বন্দী ছিলেন। এমনই নিয়ম ছিলো। কারারক্ষীরাও তাঁর জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে গেল এই এক মাসে। তারা তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করতে চাইলো। সক্রেটিস, বিনয়ের সাথে না করে দিলেন। বললেন, আজ পালিয়ে গেলে ইতিহাস আমায় কাপুরুষ ভাববে।
তিনি পৌরুষের সাথে মৃত্যুকে অপমানের জীবনের চাইতে শ্রেষ্ঠ বলে মানলেন। ঐ সন্ধ্যায় প্রধান কারারক্ষী চলে যাওয়ার পর, পেয়ালা ভর্তি হ্যামলকের বিষ হাতে জল্লাদ এলো। সক্রেটিস জল্লাদকে বললেন, আমার চাইতে তুমি ভালো জানো, আমায় বলে দাও, কি করতে হবে।
জল্লাদ জানালো, পেয়ালার পুরোটা বিষ পান করতে হবে, এক ফোঁটাও নষ্ট করা যাবে না। সক্রেটিস বললেন, তবে তাই হোক। তিক্ত বিষের পুরো পেয়ালা তিনি পান করে ফেললেন। চারপাশে বসে থাকা শিষ্যরা চিৎকার করে কাঁদছেন। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। তখন জল্লাদ আরও কঠোর নির্দেশটি দিলো। বললো, নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে এখন কিছুক্ষণ পায়চারি করতে হবে, যাতে বিষের প্রভাব পুরোটা শরীরে দ্রুত ছড়িয়ে পরতে পারে। হায় হায় করে উঠলেন সবাই। শুধু ম্লান হাসলেন সক্রেটিস। বললেন, আজীবন আইন মেনেছি , মৃত্যুতে আইন ভাঙবো কেন ?
দূর্বল পায়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটলেন কিছুক্ষন, যতক্ষণ তার শক্তিতে কুলোয়। এরপর বিছানায় এলিয়ে পড়লেন। শিষ্যদের বললেন, তোমরা উচ্চস্বরে কেঁদো না, আমায় শান্তিতে মরতে দাও। জল্লাদের পাষাণ মনেও তখন শ্রদ্ধার ভাব, বিনয়ে আর লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো সে। চাদর দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নিলেন সক্রেটিস। একবার চাদরটা সরালেন। একজন শিষ্যকে ডেকে বললেন, প্রতিবেশীর কাছ থেকে একটা মুরগী ধার করেছিলাম আমি,ওটা ফেরত দিয়ে দিও। এই ছিল তার শেষ কথা। ক্ষনিক পরেই অনিশ্চিত যাত্রায় চলে গেলেন মহাজ্ঞানী সক্রেটিস।
সক্রেটিসই পৃথিবীর প্রথম দার্শনিক, চিন্তাবিদ প্রকৃত পক্ষে যাকে তার চিন্তা দর্শনের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তার নশ্বর দেহের শেষ হলেও চিন্তার শেষ হয়নি। প্রহসনের বিচারে সক্রেটিস এর মৃত্যু হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মৃত্যু তাকে মারতে পারেনি বরং দিয়েছে অমরত্ব। তিনি অনন্ত কাল জ্ঞানের আলো দিয়ে শিষ্যদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। সত্য প্রকাশে যারাই লড়াই করবে, তাদের কাছে ৭১বছর বয়সে মৃত ''সক্রেটিস'' উৎসাহের এক নাম হয়েই থাকবে।
তার শিষ্য প্লেটো, প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটলের মধ্য দিয়ে সেই চিন্তার এক নতুন জগৎ সৃষ্টি হলো, যা মানুষকে উত্তেজিত করেছে আজকের পৃথিবীতে। তার শিষ্যদের মাঝে সেরা ছিলেন প্লেটো। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের এই ঘটনা গুলো প্লেটো লিখে রেখে গেছেন।
প্লেটোর শিষ্য ছিলেন মহাজ্ঞানী এ্যারিষ্টটল, সর্ব কালের জ্ঞানী মানুষের উপরের সারির একজন। আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেটের নাম আমরা সবাই জানি।এই বিশ্বজয়ী আলেকজান্ডারের শিক্ষক ছিলেন এ্যারিষ্টটল।
তথ্য ও ছবি ঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×