মোবাইল ফোন কেনার কথা ভাবছেন। তবে বেসিক কিছু কথাবার্তা জানা থাকা দরকার আপনার।
(টেকিরা দূরে থাকতে পারেন, এই পোস্ট আমজনতার)।
ফোন বলতেই এখন স্মার্টফোনই বুঝি আমরা। এককালে PDA ফোন খুব জনপ্রিয় ছিলো। শুধু টুকটাক অফিস ফাইল ম্যানেজমেন্ট, নোটপ্যাড, শিডুলার আর এলার্ম ট্যালার্ম ছিলো। কালে কালে ফোন হয়ে গেছে পিসি। এখন মেইলিং, ডাউলোডিং সবই করা যায়। সেদিন দেখলাম এক ছেলে এসাইনমেন্ট করে জমা দিয়েছে তাও স্মার্ট ফোনে এডিট করে। যাই হোক কাজের কথায় আসি,
স্মার্টফোন যদি কিনতে চান, ঢাকার বাজারে এখন যে ধরনের অপারেটিং সিস্টেম ওয়ালা ফোন আপনি বেশী পাবেন,
১)এন্ড্রয়েড
২)আইওএস
৩)উইনডোজ
৪)ফায়ারফক্স
৫)সিম্বিয়ান
৬) ব্ল্যাকবেরী ইত্যাদি।
এক এক করে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। প্রথমেই,
এন্ড্রয়েডঃ শুধু বাংলাদেশ না, বিশ্বের সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত মোবাইল ওপারেটিং সিস্টেম এর নাম এন্ড্রয়েড। এটার মালিক গুগল। তবে আরো প্রায় ১৮ টা বড় বড় কোম্পানি যৌথভাবে এর আর এন্ড ডি করে থাকে। এটা মূলত লিনাক্স বেজড ওপেন সোর্স সফটওয়ার সিস্টেম। তার মানে যে কোন সফটওয়ার ডেভেলপার টুকটাক লিনাক্স কার্নেল এবং জাভা জ্ঞ্যান থাকলেই এন্ড্রয়েড সফটওয়ার তৈরী করতে পারবে। সেটা জমা দিয়ে গুগল যদি এপ্রুভ করে তবেই সেটা প্লে স্টোরে আসবে। প্লে স্টোর হলো এন্ড্রয়েডের এপ্লিকেশান স্টোর। এখান থেকে যেকোন ধরনের এপ্লিকেশান নামিয়ে নিয়ে কাজ করা যায়। ফটো এডিট থেকে শুরু করে ফিটনেস মিটার পর্যন্ত এখানে আছে। এটার কথা এত বেশী বলার কারন হচ্ছে এই প্লে স্টোরই অন্য সব ওএস থেকে এন্ড্রয়েডকে আলাদা করে ফেলেছে। নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। আপনি হয়তো যে এপ্লিকেশানটা এতদিন প্লে স্টোর থেকে নামিয়ে এন্ড্রয়েডে ফ্রী ব্যবহার করেছেন তা উইন্ডোজ বা আইওএস এ আপনাকে কিনে ব্যবহার করতে হবে। তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্ব পর্যন্ত তাই এন্ড্রয়েডের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। এ বিষয়ে আরো ডিটেইলস অন্যদিন পোস্টাবো।
এন্ড্রয়েডের আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার কারনে বিশ্বে প্রায় নামী দামী সব মোবাইল কোম্পানি এই অপারেটিং সিস্টেম সহ সেট তৈরি এবং বাজারজাত করে থাকে। বাংলাদেশে এন্ড্রয়েড মার্কেট দখল করে রাখা কিছু ব্র্যান্ডের নাম,
১)স্যামসাং
২)সনি
৩)এইচটিসি
৪)হুয়াঊয়ে
৫)এলজি
৬)জিওনি
৭)অপো
৮)মাইক্রোম্যাক্স
৯)ওয়ালটন
১০)সিম্ফোনী
এই ব্র্যান্ডগুলোর অনেকগুলোর আবার শো রূম আছে দেশে। ডীলার আছে বাকিদের। শেষের দুটো ব্র্যান্ড বাংলাদেশের।
ডিলার নাই কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাবসা করছে এমন কিছু ব্র্যান্ড,
১)শাওমি
২)ওয়ান প্লাস
৩)মেইজু
৪)লেনোভো
ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে এ যাবত পর্যন্ত পোস্টে উল্লেখ করা সবগুলো কোম্পানির এশিয়ান জোনে সাপ্লাই ফ্যাক্টরী চায়নাতে। তবে শেষের চারটা এবং উপরের জিওনী, অপো, হুয়াউয়ে কে চাইনিজ কোম্পানি বলা হয় শুধু সোল মালিকানা চায়নায় থাকার কারনে।
যেহেতু স্যামসাং এর রিপোর্ট নিয়েই এই পোস্টের অবতারনা আজ শুধু স্যামসাং নিয়েই আলোচনা করবো।
বাংলাদেশে স্যামসাং দুইভাবেই আসে।
১)শুল্ক দিয়ে
২)শুল্ক ফাঁকি দিয়ে
সাধারনত স্যামসাং ক্যাফে তে যে সেটগুলো আসে সব শুল্ক দিয়ে আসে কিংবা তার ডীলারশীপ আছে। এদের থেকে সেট কিনলে আপনি ওয়ার্যান্টি সাপোর্ট পাবেন অন্তত ২ বছর এর। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে দেখবেন শো রূমের বাইরেই স্যামসাং এর একই সেট বেঁচা হচ্ছে এর থেকে অন্তত ১৫-২০০০০ টাকা কম দামে।
তার মানে কি সেগুলো নকল?
আমার প্রাথমিক অবজার্ভেশান হচ্ছে, সেগুলো নকল না। দুটো কারনে দাম কম রাখতে পারে।
১)শুল্ক ফাঁকি দেয়ার কারনে
২)বেসিক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ফেল হবার কারনে
প্রথমটা সবাই বুঝি। আগে লাগেজ পার্টি একটি দুটি করে সেট প্রতিবার ব্যাগের চিপায় চাপায় নিয়ে আসতো।চার্জার আলাদা ব্যাগে। হেডফোন পকেটে। দেশে এসে অন্য কোন প্যাকেটে ভরে সেগুলো বেঁচা হতো। সে যুগেই মানুষ মেড ইন নোকিয়া না কিনে সেই লাগেজ পার্টির মেড ইন ফিনল্যান্ড নোকিয়া কিনতো। সেটা নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করবো।
যাই হোক, বেসিক কোয়ালিটি কন্ট্রোল ফেল হউয়া সেট নিয়েই কিছু কথা বলি। স্যামসাং, এলজি, সনি এই কোম্পানিগুলো খুবই কোয়ালিটি সচেতন। দেখা গেলো ১২০ লুমেন আলো আসার কথা ডিস্প্লে তে, আসছে ১১৫ লুমেন। প্রাথমিকভাবে তারা চেষ্টা করবে এটা বাড়াতে। যদি না পারে তবে কোয়ালিটি ফেল দিবে। দুটো কাজ করতে পারবে এক্ষেত্রে,
পুনরায় রি-এসেম্বল করা,
অথবা
লট ধরে বেঁচে দেয়া।
অনেকটা আমাদের দেশের গার্মেন্টের লট ব্যাবসার মত। লটে হয়তো এক বা দুটো কাপড়ে সমস্যা থাকে। বাকি সব ভালো কাপড়। বংগে সেল হয়। আমরা হয়তো দশ ভাগের এক ভাগ দাম দিয়ে কিনি। কোয়ালিটি সেম এজ দ্য ব্র্যান্ড।
এই ফুল লট কিনে সাপ্লায়াররা কোয়ালিটি ফেলড গুলো আলাদা করে লোকালি বেচে। বাকিগুলো সাপ্লাই দেয়। একদম লট ধরেই। শুল্ক ফাঁকি দিয়েই এগুলোও দেশে ঢুকে।
বাংলাদেশে কিছু সিন্ডিকেট আছে। তারা বেশ কিছু দোকানে এগুলো সাপ্লাই দেয় অনেক কম মূল্যে। স্মার্টফোন ক্যাফে থেকে প্রায় ৪০ পার্সেন্ট কম মূল্যে।
এরকম টপ দুটো দোকান আছে যারা কোয়ালিটি স্যামসাং পন্য বিক্রয় করে,
১) গ্যাজেট এন্ড গিয়ার
২) সেলফোন বিডি
এছাড়াও লাইভওয়ার নামে একটা দোকান পেয়েছি যারা কোয়ালিটি পন্য বিক্রয় করে।
এর বাইরে আপনি স্যামসাং ক্যাফে থেকে যেকোন ফোন কিনতে পারবেন। তবে অবশ্যই ১৫-২০ ভাগ বেশী দাম দিয়ে। বিনিময়ে দিচ্ছে দু বছরের ওয়ারান্টি। (ওয়ারান্টি ব্যাপারটাই ভুয়া, এটা নিয়ে আরেকদিন লিখবো), যদি ওয়ারান্টি চান তবে সেলফোন বিডি এক বছরের ওয়ারান্টি দিচ্ছে। আর গ্যাজেট এন্ড গিয়ার ৪৮ ঘন্টার মাঝে সমস্যা হলে ফুল রিপ্লেস দেয়।
এই তিনটি দোকান থেকে নকল হবার চান্স নেই। কারন আপনি IMEI নাম্বার মিলিয়ে নিতে পারবেন। বা সেন্সর টেস্ট সহ সব টেস্ট করে নিতে পারবেন। ওয়ারান্টি সাপোর্ট থাকায় কিছুটা নিশ্চিন্ত আপনি এখান থেকেও। মূলত এরা স্যামসাং চায়না, এবং স্যামসাং ভিয়েতনামের প্রোডাক্ট সেল করে থাকে। স্যামসাং ভিয়েতনামের প্রোডাক্ট কোন কারন ছাড়াই স্যামসাং চায়না ফ্যাক্টরী থেকে ভালো।
স্মার্টফোন ক্যাফে তে স্যামসাং চায়না ছাড়া আর কোন প্রোডাক্ট আসে না। তবে কোয়ালিটি ১০০% এনসিউরড। এবং দামও দিচ্ছেন আপনি অনেক বেশী।
যদি একদম রিক্স নিতে না চান, স্মার্টফোন ক্যাফে একটা সেফ অপশন।
ওদিকে সেলফোন বিডি একটা সেফ অপশান বাট দাম কম। বাট,
গ্যাজেট এন্ড গিয়ার মূলত একটা সেফার অপশান, বিকজ অফ দেয়ার ব্র্যান্ড ভ্যালু। (তাদের বেশ কিছু দুর্নাম আছে সেটা নিয়েও আরেকদিন লিখবো।)
সহজ কথা, আপনি যদি স্যামসাং এর ফ্ল্যাগশীপ পন্য স্যামসাং ক্যাফে থেকে নিতে চান তবে ২০০০০ টাকা বেশী দিয়ে নিতে পারেন।
সবশেষে ছোট্ট একটা ট্রিক্স, এখন মূলত স্যামসাং এর A3,A5,A7,E5 এর জয়জয়কার। তবে লেটেস্ট আসা এই সব সেট এর থেকে আগের যেকোন ফ্ল্যাগশীপ ফোন কেনা ভালো। হয়তো আগের মডেল বলে নাক কুঁচকাবেন।
কিন্তু, ফ্ল্যাগশীপ ইজ ফ্ল্যাগশীপ।
(পরবর্তী পোস্টে থাকছে ক্লোন স্মার্টফোন নিয়ে কিছু প্যাঁচাল, স্টে টিউনড)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯