somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপলব্ধি - ২

১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এ পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষ সুখী হতে চায় । এখন প্রশ্ন হল - সুখী হওয়ার কি সত্যিই সর্বজনীন কোনো উপায় আছে? মানুষ ভাবে যে, সুখী হওয়ার জন্য এক ধরনের লক্ষ্য এবং অনেক উপকরন ও সামর্থ্য থাকা প্রয়োজন । আর সুখের উপলব্ধি বা মূল্যায়ন একেক জনের কাছে একেকরকম। সাধারণত, অসুখী মানুষেরা তাঁদের জীবনের সুখ বা লক্ষ্য নিয়ে বেশি সচেতন থাকে আবার কম থাকার পরেও অনেকে বেশ সুখী হয়। আবার অনেকে আছেন ,তাদের জীবনে অনেক কিছু থাকার পরেও জীবনে আরও ভালো কিছু পেতে তাঁরা উদগ্রীব থাকেন। আবার এদের মাঝে অনেকে আছেন যারা জীবনের মানে খুজে বেড়ান সুখের নয়। তবে এটাও ঠিক যে,জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়া ও সুখী হওয়ার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।সাধারনভাবে এও মনে করা হয় যে,কর্মময় জীবনই সুখী হওয়ার সবচেয়ে মোক্ষম উপায়।সুখী হওয়ার জন্য ভালো পারিপার্শ্বিক অবস্থা নয়, ভালো মানুষ এবং তৃপ্ত জীবন দরকার। যার জন্য জরুরী মানুষের সুখী হওয়ার উপায় উপলব্ধি করা বা জানা। আর তাই যেসব মানুষের উপলব্ধি করার ক্ষমতা বেশী সেসব মানুষেরা অপেক্ষাকৃত জ্ঞানী হন এবং তাই তারা বেশি সুখী হয়।

মানুষের অল্প সময়ের এক জীবন। এই অল্প সময়ের জীবন সুখী, সুন্দর ও সফল করার জন্য বা ভাল ভাবে বেঁচে থাকার জন্য কি খুব বেশী কিছু প্রয়োজন হয় ? আমার মনে হয় তা নয়। কিছু অভ্যাস এবং আচরনের মাধ্যমে আমরা খুব সহজেই সুখী হতে পারি বা ভাল ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। মানুষের জীবনে সুখী হওয়ার জন্য যে সব জিনিষ সহায়ক ভুমিকা পালন করতে পারে সে গুলো এরকম ও হতে পারে বা আমরা এভাবেও যদি দেখি তাহলে হয়ত সুখী হতে খুব বেশী কষ্ট করতে হবেনা -

১। সর্বদা আপনি-আমি যা পেয়েছি তার হিসাব করি।অর্থ্যাৎ এক জীবনে আমি -আপনি কি কি পেয়েছি তার হিসাব করুন।দেখবেন জীবনে পাওয়ার হিসাব কম নয়।আর না পাওয়ার হতাশা বা তার হিসাব থেকে দূরে থাকুন।আপনি আমি সুস্থ্য আছি -শুধু এটাই পজেটিভলি দেখলে দেখা যাবে স্রষ্টার কাছ থেকে এবং জীবনে আমরা কত কিছু পেয়েছি।

২।কিছু জিনিষ বা আচরন মানুষকে অসুস্থ করে তোলে।যেমন - ভবিষ্যতের উদ্বেগ,অতিরিক্ত চিন্তা , অতিরিক্ত কথা,অতিরিক্ত ঘুম, অতিরিক্ত খাওয়া ,অতিরিক্ত আশা এবং মেলামেশা ( বিশেষ ক্ষেত্রে) ।তাই সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত আশা-কাজ-আচরন পরিহার করতে হবে বা করা উচিত।

৩।দুশ্চিন্তা পরিহার করে রাতে চমতকার একটি ঘুম দিতে হবে।রাতে ভাল ঘুম হলে নিজের শরীর, স্বাস্থ্য ও মন সুস্থ্য ও সতেজ থাকবে এবং নিজেকে সজীব ও সুখী লাগবে।

৪।মনকে বিক্ষিপ্ত অবস্থা থেকে সরিয়ে মনোযোগী করুন অর্থ্যাৎ সবসময় ইতিবাচক ও শান্ত থাকুন।শান্ত মন আপনাকে -আমাকে সঠিক পথ ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।



৫। জীবন অনেক ছোট ও কঠিন।জীবনের জটিলতায় এবং নানা প্রয়োজনে আমাদের আপনজনদের সাথে থাকার সুযোগ আরও সীমিত।আর করোনা কালে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি ।তাই যে সব মানুষকে পছন্দ করেন সে সব মানুষের সাথে বেশী বেশী সময় কাটান।এতে শরীর ভাল থাকবে এবং মনও আনন্দে থাকবে।আর আনন্দপূর্ণ মন জীবনে সুখ- শান্তি আনয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে



৬।স্মার্টফোন, ট্যাবের মতো ইলেকট্রনিক যন্ত্র রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তুললে ঘুম ও স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়ে।রাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে ঘুম নষ্ট হয়।রাতে মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে বার্তা পাঠানো, ফেসবুক চ্যাটিং কিংবা অনলাইনে ব্রাউজ করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।আর তারফলে স্মার্টফোন স্ক্রিন থেকে নির্গত কৃত্রিম নীল আলো ঘুমের চক্র নষ্ট করে দেয় এবং স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।চোখের রেটিনার ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাতে চোখের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ঘুমাতে যাবার আগে স্মার্টফোন, ট্যাবের মত ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করা থেকে দূরে থাকুন এবং সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন ফেসবুক,ইন্টারনেট থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন এবং কম ব্যবহার করুন।



৭।কিছু জিনিষ মানুষের জীবনে খুব দরকার যা মানুষকে তার মানষিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে । যেমন - ধার্মিকতা ( যে যেই ধর্মের অনুসারীই হোক ধর্ম মেনে চলা উচিত) ,ধর্মানুরাগ,দানশীলতা, বিশ্বস্ততা এবং অন্যের প্রতি সহায়তা বা সাহায্য করা । আমাদের প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সাধ্য অনুসারে এগুলো পালনের চেষ্টা করা উচিত।

৮।কিছু কাজ বা অভ্যাস মানুষের ত্যাগ বা পরিহার করা উচিত কারন এগুলি মানুষকে শারিরীক ও মানুষিক ভাবে অসুস্থ করে তোলে । যেমন - রাতে দেরী করে ঘুমানো এবং সকালে দেরী করে ঘুম থেকে উঠা,নিয়মিত প্রার্থনা / নামাজ না পড়া,অলসতা,বিশ্বাসঘাতকতা-অসাধুতা ইত্যাদি।তাই এগুলো আমাদের সকলকে এগুলো যথাসাধ্য পরিত্যাগ করা উচিত।



৯।কিছু কাজ বা অভ্যাস মানুষের প্রতিদিন পালন করা উচিত । যেমন -নিয়মিত প্রার্থনা - নামাজ পড়া / গভীর রাতে নামাজ পড়া এবং স্রষ্টাকে বেশী বেশী স্মরণ করা ,রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো এবং সকালে তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠা,অলসতা পরিহার করা,নিয়মিত দান সাদকা করা এবং বেশী বেশী তওবা করা বা আল্লাহর কাছে অনুতাপ করা।আর এসব অভ্যাস মানুষের জীবন জীবিকা সহজ করে তোলে।

১০।মানুষের জীবনে সুস্থ্যতাই সবচেয়ে বড় নেয়ামত এবং সুখের । আপনি-আমি যে সুস্থ্য আছি তার জন্য প্রতিনিয়ত স্রষ্টার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। তার পরেও জীবনের নানা জটিলতায় যখন মানষিক শান্তি কমে যায় তখন যদি আমরা আমাদের আশে পাশের অসুস্থ্য মানুষের দিকে তাকাই তাহলে আমাদের মনের অশান্তি কমে যাবে।আর তার জন্য দূরে যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা যে কোন হাসপাতালের জরুরী বিভাগ-বার্ন ইউনিট-মরচুয়ারী (লাশঘর) মিলে এক ঘন্টা কাটিয়ে আসলে মনের সকল অশান্তি চলে যাবে । কারন সেখানে মানুষের যে কষ্ট-যন্ত্রণাদায়ক-অসহায় অবস্থা চোখে পড়বে তা আমাদের দৃষ্টিভংগি পালটে দিবে এবং জীবন সম্পর্ক আপনাকে নতুন ভাবে চিন্তা বা উপলব্ধি করতে বাধ্য করবে।

সবশেষে, মানুষের জীবনে নিজের ইচছাশক্তি ও কিছু বিষয় ও নিয়ম অনুশীলন করলেই সহজেই সুখী হওয়া যায়।আর নিয়ম-কানুন ও অনুশাসন না মেনে নিজের ইচছামত চললে মানুষের একজীবনে সুখ অধরাই থেকে যায় বা যাবে।আর এসকল ছোটখাট বিষয়গুলি অনুসরনই হতে পারে আপনার-আমার জীবনে সুখের নিয়ামক।আর সুখ হল মানুষের মনের একটি পজেটিভ অবস্থা।তাই সবসময় মনকে বুঝুন এবং মনের কথা শুনতে চেষ্টা করুন ।
==================================================================
পূববর্তী পোস্ট -

উপলব্ধি - ১ - Click This Link

ছবি - গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৫:০০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×