somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

" মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - স্রষ্টা কি উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে মানুষ সৃষ্টি করছেন অথবা কেন এবং কি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে স্রষ্টা মানুষ সৃষ্টি করছেন ? (মানব জীবন - ৮)।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবি - learnengeasy.wordpress.com

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠজীব।। প্রাণী জগতের মধ্যে সর্বগুণে গুণান্বিত মানুষ।তাকে দেয়া হয়েছে চিন্তা করার ও স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা। এই প্রেক্ষাপটে মানুষকে অবশ্যই তার জীবনের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জানা উচিত।মানব জীবনের আসল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে সঙ্গত কারণেই কয়েকটি বিষয় সামনে এসে যায়। যথাক্রমে -

১। মানুষ কি বা তার অবস্থান কোথায়?
২। মানব জীবন বলতে কি বোঝায়?
৩। মানব জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যই বা কি?

লক্ষ্য হচেছ মানুষের জীবনের গতই নির্ধারন।লক্ষ্যহীন মানুষের জীবনে কোন সাফল্য আশা করা যায়না।সকল ধর্মেই বলা হয়েছে মানুষকে এক বিশেষ মর্যাদা দান করে পৃথিবীতে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।মানুষের উচিত স্রষ্টার সেই উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানা এবং সেই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সেই লক্ষ্যে তার জীবনকে পরিচালনা করা।মানুষ আজ ভূগর্ভ থেকে শুরু করে সৌরজগত সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে নিত্য-নতুন বস্তু আবিস্কার করে চলেছে। আবিস্কার করে চলেছে অচেনা-অজানা অনেক কিছুই। অসংখ্য-অগণিত বিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণে যদিও মানুষ কল্যাণ জনক হাজারো বিষয় জানতে পেরেছে, চিনতে পেরেছে, আবিস্কার করতে পেরেছে। তবে একটা কথা সত্যি - মানুষ নিজের সম্পর্কে খুবই কম জানে।মানুষ আজো জানতে পারেনি যে, মানব সত্তা কি?এ দুনিয়ায় কেন তার আগমন?


ছবি - learningkiduniya.blogspot.com

সাধারন ভাবে আমরা দেখি, মানুষ তার পুরো জীবন পার্থিব ধন-সম্পদ তথা দুনিয়াবী সুখ-সাফল্যের জন্য অধিক পরিমাণে চেষ্টা করে। মানুষ তার সারা জীবন পার্থিব সুখ, জীবন জীবিকা নিয়ে সবসময় উদ্বেগ-দুশ্চিন্তায় ভূগে।অথচ পবিত্র কোরআন আল্লাহ বলেছেন "আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।আর তিনি প্রত্যেকের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র সম্বন্ধে জ্ঞান রাখেন,সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লাওহে মাহ্ফুযে লিপিবদ্ধ) রয়েছে"। (সুরা হুদ,আয়াত - ৬)।

এ দুনিয়ায় দেখা যায়,পুরুষদের মহিলাদের প্রতি আসক্তি,মহিলাদের পুরুষদের প্রতি আসক্তি অথবা নর-নারী নির্বিশেষে অর্থের প্রতি আসক্তি, সামাজিক পদ মর্যাদার প্রতি আসক্তি, অথবা মানুষ আশা করে সুন্দর সুখী জীবন ও একটি ভাল বাড়ী-গাড়ির । আর তাই মানুষ এগুলো পাওয়ার জন্যে কাজ করে, কারন এগুলোর প্রতি তারা প্রবল আসক্তি অনুভব করে।নর-নারী নির্বিশেষে চায় তাদের পড়া-শোনা শেষ করতে অথবা তাদের কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে অথবা একটি ভাল সম্পর্কের সুত্রপাত করতে , যা নর-নারী সারা জীবন প্রত্যাশা করে। এ সবগুলো বিষয় সবসময় দুনিয়ায় বিদ্যমান আছে,সবসময় ছিল এবং থাকবে।এসবই বৈষয়িক বিষয় বা দুনিয়ার বিষয়।প্রকৃতপক্ষে এই জীবন শুধুমাত্র বাস্তব কিছু অর্জন করার জন্যই নয় অথবা শুধু শারীরিক সুখ অর্জনের জন্যও নয়। এই জীবন হচ্ছে সঠিক লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্পর্কে। সঠিক লক্ষ্যবস্তু পাওয়া যায়, যখন আপনি জীবন যাপন করেন শুধুমাত্র আপনার নিজের অবস্থাকে ভাল করার জন্যই নয় বরং আপনার চারপাশের সবকিছু ভাল করার উদ্দেশ্যে। তাই ইসলাম মানে হচ্ছে নিজের ইচ্ছেগুলোকে সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার নিকট সমর্পন করা, যেন আপনি-আমি নিজেকে চিরস্থায়ী সুখের জন্য প্রস্তুত করতে পারি


ছবি - segerios.com

মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য- কি হওয়া উচিত -

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ট জীব ।কাজেই সৃষ্টিকর্তা আমাদের কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়া সৃষ্টি করেছেন ,এটা সাধারন দৃষ্টিভংগিতেও মেনে নেয়া যায়না, ধর্মীয় দৃষ্টিতে ত নয়ই।ধর্মীয় দৃষ্টিতে "মুমিন জীবনের প্রতিটি আমল, প্রতিটি কাজ, প্রতিটি চিন্তা-চেতনা, প্রতিটি চেষ্টা, সাধনা, প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসও প্রতিটি চলাফেরার পেছনে আল্লাহপাকের সন্তোষ অর্জনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। কেননা, আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত তাঁর বান্দাহদেরকে কেবলমাত্র তাঁরই এবাদত বন্দেগি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে,"আর আমি জ্বিন ও মানুষকে কেবলমাত্র এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমার ইবাদত বন্দেগি করবে"।" (সূরা: যারিয়াত, আয়াত - ৫৬)।

যদি আমরা ধর্মীয় দিককে পুরোপুরি নাও অনুসরন করি, তারপরেও মানব জীবনের কিছু সাধারন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবশ্যই আছে ।আর সেগুলি এক একজনের দৃষ্টিভংগীতে একেক রকম হতে পারে।তারপরেও ধর্মের বাইরেও মানব জীবনের যে কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আছে সেগুলি মোটামুটি -

ধর্ম পালন - ধর্মীয় বিধি নিষেধ মেনে চলা। এখানে ‘ধর্ম’ মানে ‘রিলিজিয়ন’ নয়। এই ধর্ম অর্থ, কিছু নৈতিক কর্তব্য পালন করা। যেমন, সমাজের প্রতি কর্তব্য, পরিবারের প্রতি কর্তব্য, মানবের প্রতি কর্তব্য। এই কর্তব্য পালনই ‘ধর্ম পালন’।।আর এসব কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে ই মানুষ মুলত: ধর্ম ও পালন করে থাকে।

অর্থ উপার্জন - ‘অর্থ বলতে এখানে সম্পদকেই বোঝানো হয়েছে। ধর্ম বিত্ত বা সম্পদ আহরণকে কোনও খারাপ চেখে দেখেনা। বরং জীবন ধারণ ও জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় বিত্ত বা সম্পদ কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সকল ধর্মেই । কিন্তু সেই আহরণের পন্থা যেন কখনওই অসৎ না হয়। ধর্ম ও অর্থের মধ্য সংঘাত বাধলে ধর্মকেই প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে।আর মানুষ যখন তার জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ উপার্জন করে তখন তাকে সকল ধর্মেই সাধ্য অনুপাতে দান সাদকা করতে বলা হয়েছে .যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাই এর প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট হয়, আল্লাহপাক তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো অসুবিধা বা বিপদ দূর করে দেয়, আল্লাহপাক এর বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তার কষ্ট ও বিপদের অংশ বিশেষ দূর করে দেবেন।

কাম নিয়ন্ত্রণ - ‘কাম’-এর স্বরূপ নির্ধারণ করা আজ খুবই কঠিন। তবু এ কথা বোঝা যায়, ‘কাম’ মানে কখনওই যৌনতা নয়। কাম বলতে এখানে পার্থিব জীবনের ‘সুখ’ কে বোঝানো হয়েছে। যৌনসুখও তার মধ্যে একটি। তবে ব্যাপক অর্থে কাম বলতে এখানে সাংস্কৃতিক কর্ম, ক্রীড়া, সৃজনশীল কাজ, সবকিছুকেই বোঝায়। আর এসব কাজ কর্মের মাধ্যমে মানুষে মানুষে সমাজিক সম্পর্ক গড়ে উঠে ।মানুষ একে অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হ্য় এবং ভাল কাজের আগ্রহ তৈরী হয়।

মানষিক প্রশান্তি বা মোক্ষ লাভ - ‘মোক্ষ’ শব্দের অর্থ ‘মুক্তি’। কামনা-বাসনা ও ভোগ-লালসার কারণে জীব কর্মবন্ধনে আবদ্ধ হয়।কর্ম-পদগুলের কারণেই জীবের বদ্ধাবস্থা লাভ হয়। এই বদ্ধাবস্থায় আত্মার স্বরূপ আবৃত থাকে। সুতরাং এই বদ্ধাবস্থা থেকে মুক্তি তথা পদগুলের বিযুক্তিই হচ্ছে মোক্ষ।চিত্ত শুদ্ধির দ্বারা ত্রিরত্ন অর্থাৎ সম্যক্ দর্শন, সম্যক্ জ্ঞান ও সম্যক্ চরিত্রের মাধ্যমে আত্মার মোক্ষপ্রাপ্তি বা মানষিক প্রশান্তি লাভ হয়। এরূপ অবস্থায় আত্মা তার স্বরূপে অধিষ্ঠিত হয় অর্থাৎ অনন্ত জ্ঞান, অনন্ত শক্তি, অনন্ত দর্শন ও অনন্ত আনন্দ লাভ করে এবং সঞ্চিত ও সঞ্চীয়মান কর্ম-পদগুল বন্ধন বিচ্ছিন্ন করে। এই ‘পদগুল’ বন্ধন বিচ্ছিন্ন করার সাধনাই হলো মোক্ষসাধনা এবং ‘পদগুল’ বন্ধন-মোচনই মুক্তি। মোক্ষ প্রাপ্ত আত্মা অনাবিল ও অনন্ত সুখের অধিকারী হয়। তাই‘মোক্ষ’-কেই জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে বর্ণনা করেছেন শাস্ত্র-প্রণেতারা।

সকল ধর্মেই জীবনের কিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারিত আছে । আমরা যদি ধর্ম নাও মানি তারপরেও আমাদের মানব জীবন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিহীন নয়। মানুষ হিসাবে আমাদের সকলের ই কিছু কিছু সামাজিক ,নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে । আর এসব কিছুর মূলে আছে মানব সেবা। আমাদের প্রত্যেকের সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী যথাযথ ভাবে সেসকল দায়িত্ব পালন করা উচিত।

এবার আসুন দেখি, ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ?


ছবি - islamweb.net

ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

দুনিয়াতে মানুষের আগমন ও জীবনের লক্ষ্য হলো আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধানের বাস্তবায়ন তথা তাঁর ইবাদত-বন্দেগি করা। আল্লাহ তাআলা কুরআনে মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুষ্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেন-

" আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদাত করবে।"(সুরা যারিয়াত,আয়াত ৫৬)।এই আয়াতে আল্লাহ তাঁর বিধিগত (শরয়ী) ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন, যা তিনি ভালবাসেন ও চান। আর তা হল, সমস্ত মানুষ ও জ্বিন কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং আনুগত্যও শুধু তাঁরই করবে। এর সম্পর্ক যদি তাঁর সৃষ্টিগত ইচ্ছার সাথে হত, তবে কোন মানুষ ও জ্বিন আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিমুখতা অবলম্বন করার কোন ক্ষমতাই রাখত না। অর্থাৎ, এই আয়াতে সকল মানুষ ও জ্বিনকে জীবনের সেই উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করানো হয়েছে, যেটাকে তারা ভুলে গেলে পরকালে কঠোরভাবে জিজ্ঞাসিত হবে এবং এই পরীক্ষায় তারা অসফল গণ্য হবে, যাতে মহান আল্লাহ তাদেরকে ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন।

মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগি করা। আর ইবাদত হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশিত পথে ও মতে জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ নির্দেশিত পথে জীবন পরিচালনাই হলো মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য আর নির্দেশ পালনের আমল হলো ইবাদত।
আরবি "ইবাদত" শব্দটি "আব্‌দ" শব্দ হতে এসেছে। আর "আব্‌দ" অর্থ হলো দাস বা গোলাম। সুতরাং ‘লিয়া’বুদুন তথা ইবাদত’ মানে হলো- আল্লাহর গোলামি বা বন্দেগি করা। আর দুনিয়াতে যে ব্যক্তি আল্লাহর গোলামি করবে, ওই ব্যক্তিই সফলকাম।


কখনও বলা হয়, মানব জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে সুখ লাভ করা অর্থাৎ যতটা সময় একজন মানুষ বেঁচে থাকবে সে সুখে-শান্তিতে জীবন কাটাবে।প্রকৃতি ও স্রষ্টার কল্যাণ উপভোগ করবে। প্রকৃতি বা অন্যান্য প্রাণীর ক্ষতি থেকে কম দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করবে । একেই বিবেচনা করা হয় সুখ হিসাবে। অর্থাৎ সর্বোচ্চ পরিমাণ ‘সুখ’ আর সর্বনিম্ন পরিমাণ দুঃখ-বেদনা-ই হলো সুখ।আবার এটাও বলা হয়, নবী-রাসূলদেরও পাঠানো হয়েছে যাতে মানুষের পক্ষে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ সুখ অর্জন ও ন্যূনতম দুঃখ-কষ্ট পাওয়া সম্ভব হয় । যদি নবী-রাসূলগণ পরকালের পরিচয় দিয়ে থাকেন তা হবে এ জীবনেরই ধারাবাহিকতা । অন্য কথায় যেহেতু মানব-সুখের পথ দেখানো হয়েছে এবং তা অনুসরণের পরিণামরূপে পুরস্কারও প্রয়োজন, আবার এর বিপরীতে শাস্তির ও বিধান থাকা প্রয়োজন, তাই এ পৃথিবীতেই এ শাস্তি ও পুরস্কারের মডেল উপস্থাপিত হয়েছে ।


ছবি - beautifulislam.net

কিন্তু আমরা পবিত্র কুরআনে এরকম কোনো কথা দেখতে পাই না । সেখানে জ্বীন ও মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্য রূপে বলা হয়েছে আললাহর উপাসনা করা।এ প্রসংগে আল কুরআনে আললাহ পাক বলেন,"আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি"। (সূরা যারিয়াত - আয়াত - ৫৬)।ইবাদাত বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল এবং বিশ্বাস নির্ভর করে সত্যের ওপর । ইসলাম মানবজাতিকে জ্ঞান, ন্যায়বিচার, প্রেম ও সৌন্দর্যের প্রতি আহ্বান জানায় ।


ছবি -insidearabia.com

ইসলাম অনুযায়ী মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে স্রষ্টার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে- তাঁর নৈকট্য লাভের জন্য এবং তাঁকে চেনার জন্য।এর সবকিছুই তাকে ক্ষমতাবান করে । তবে জ্ঞান বা ক্ষমতা যেমন, তেমনি আত্মশুদ্ধিও চূড়ান্ত লক্ষ্য নয় ।আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন হচ্ছে সকল কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য, চূড়ান্ত নিয়ত। আমরা যখন আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকামের জ্ঞান অর্জনের নিয়ত করেছি, ইসলামী চেতনা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানার নিয়ত করেছি তখন থেকেই আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের মূল লক্ষ্য।

আল্লাহ পাক মানুষকে যে মর্যাদা দান করেছেন, যে গুণ ও যোগ্যতা দান করেছেন তা তাৎপর্যহীন নয়। সেই গুণ ও যোগ্যতার সাথে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্যও দিয়েছেন, যা তাকে পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করলে তার আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া যথার্থ হবে। মর্যাদা স্থায়ী হবে। অন্যথায় সে এই মর্যাদা হারাবে। শুধু মর্যাদাই হারাবে না শাস্তিরও মুখোমুখি হবে।

তো এই মানুষ, যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলআমীন সর্বোত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছেন, সেই মানুষ যদি আল্লাহকে না চেনে, তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য না বোঝে, কিংবা বুঝে-শুনেও আল্লাহ পাকের নাফরমানী করে তাহলে তার পরিণাম কী হবে? এর পরের আয়াতেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করে দিয়েছেন-"আমি তো সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে,অতঃপর আমি তাকে হীনতার সবচেয়ে নিম্নস্তরে ফিরিয়ে দিয়েছি।"।(সূরা ত্বীন,আয়াত - ৪-৫) ।

(এ আয়াতে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ্ তা'আলা মানুষকে দৈহিক অবয়ব এবং আকার-আকৃতি ও আচার-ব্যবহার ও মানুষ্যত্বের মাধ্যমে অন্যান্য সব প্রাণী অপেক্ষা সুন্দরতম করেছেন।আকার আকৃতির বাইরেও আল্লাহ তা'আলা তাকে জ্ঞানী, শক্তিবান, বক্তা, শ্রোতা, স্রষ্টা, কুশলী এবং প্রজ্ঞাবান করেছেন। পরে মানুষের স্থবিরতা ও অন্তিম আয়ুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। যে সময়ে যুবক অবস্থা ও শক্তিমত্তার পর বার্ধক্য ও দুর্বলতা এসে পড়ে। আর তখন মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি ও বোধশক্তি শিশুদের মত হয়ে যায়। কেউ কেউ এখানে সেই হীনতার অর্থ গ্রহণ করেছেন যাতে মানুষ পতিত হয়ে অতিরিক্ত নীচতা এবং সাপ-বিছা থেকেও বেশী নিকৃষ্ট হয়ে যায়। আবার কেউ বলেন, এ আয়াত দ্বারা সেই লাঞ্ছনাকর আযাবকে বোঝানো হয়েছে যা জাহান্নামে কাফেরদের জন্য অপেক্ষা করছে। অর্থাৎ, মানুষ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য না করে নিজেকে ‘আহ্সানি তাকবীম’-এর উচ্চ মর্যাদা থেকে জাহান্নামের নিম্নদেশে ঠেলে দেয়)।

ইসলামের শিক্ষা, কুরআন মাজীদে বারবার এই বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-আল্লাহ পাক তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় এনেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না।’কুরআন ও সুন্নাহ এজন্যই এসেছে যে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সন্ধান দান করবে।কুরআন নাযিল হয়েছে কেন? মানুষকে সরল পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য।


ছবি - facebook.com

কুরআন মাজীেদ যেরকম সূরাতুল ফাতিহায় আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমের-সরল-সঠিক পথের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে সেই সরল পথের উপর কারা ছিলেন তাদের বাস্তব উদাহরণও আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে একজন মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথে চলতে হবে। যারা সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী, দ্বীনের ধারক-বাহক, উলামা- মাশায়েখ তাদের পথে চলতে হবে। তাহলে আমাদের জীবন সফল হবে।


ছবি - quranerkotha.com

মনে হচ্ছে এটা উপলব্ধি করা খুব কঠিন । স্রষ্টার উপাসনায় লাভ কী? এতে তাঁর (স্রষ্টার) কিছু যায়-আসে না । মানুষেরই বা এতে কী লাভ? তবে সৃষ্টির লক্ষ্য হিসাবে পবিত্র কুরআনে এ বিষয়টিকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরা হয়েছে ।

মানুষের পরবর্তী জীবন এ জীবনের মতো অতটা গুরুত্ববহ নয় - এমন ধারণার বিপক্ষে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,"তোমরা কি ধরে নিয়েছ যে, কষ্ট না করে এমনিতেই তোমরা জান্নাতে চলে যাবে"?(সুরা আল-বাক্বারাহ - ২১৪)। পবিত্র কুরআনে আরো বলা হয়েছে "এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের"।(সুরা বাকারা ,আয়াত - ১৫৫ )।

আর এ সব আয়াতে প্রমাণ মেলে এ দুনিয়ায় সবকিছু প্রজ্ঞাপূর্ণভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং মানুষের বা মানব জীবনের জন্য সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে যা শুধুমাত্র স্রষ্টার ইবাদত ।


চলবে -
===========================================================

পূর্ববর্তী পোস্ট -

মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link


উৎসর্গ - এ পর্বটি ব্লগার "চাঁদগাজী এবং রাজিব নূর" ভাইকে উৎসর্গকৃত। মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার এবং সকল ধর্মীয় বিধিবিধান মেনে চলার তওফিক দান করুন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ১১:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×