ছবি - Ittefaq.com
ভালবাসা কি?
ভালবাসা (চার অক্ষরের ছোট একটি বাক্য) যার আবেদন আমাদের মানব জীবনে সীমাহীন !!! এ এক অদৃশ্য কিন্তু অনুভবের বিষয় নিয়েই সারা দুনিয়া আবর্তিত এবং সারা দুনিয়া টিকেই আছে ভালবাসার কল্যাণে।আর তাইতো ভালবাসার রকম এবং সংজ্ঞা একেকজনের কাছে রকম। অনেকেই বলেন ভালোবাসার কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই।সাধারণতঃ ভালোবাসা হলো আবেগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ এমন একটা অনুভুতি, যা ভালোবাসার মানুষটির কাছে সহজে প্রকাশ করা যায় না। ভালবাসা হতে পারে প্রেমিকার সঙ্গে, প্রকৃতির সঙ্গে, কিংবা স্রষ্টার সঙ্গে। ভালোবাসা হৃদয়ের একটি অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব করা।ভালোবাসা মানে কমিটমেন্ট। ভালবাসা মানে হলো - একজনের কাছে আরেকজনের দায়বদ্ধতা।
ভালবাসা মানে হল - কখনও প্রিয় মানুষটির প্রতি অশুভ আচরণ না করা,তার ক্ষতি না চাওয়া। সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকা। সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়ার নামই ভালোবাসা।ভালোবাসা মনের একটি অনুভূতি। এ অনুভূতিটাও কেউ দেখতে পায় না, অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ভালোবাসা শুধু মানুষে মানুষে নয়। সব জীব ও জড়ের প্রতিও হতে পারে। ভালোবাসা হবে নিখুঁত, যেখানে থাকবে সম্মানবোধ।শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধের নামই ভালোবাসা। মুখে মুখে বুলি আওড়িয়ে বলা যায় ভালোবাসি, ভালোবাসি। কিন্তু তা ঠিক তখনই প্রমাণিত হবে যখন সম্পর্কের মাঝে কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে। কেউ কাউকে ছেড়ে যাবে না। মরে যাওয়া ভিন্ন কথা। কিন্তু সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে থাকার নাম ভালোবাসা।
দেশের নন্দিত অভিনেতা-নির্মাতা ও লেখক আফজাল হোসেনের ৩০তম বিবাহবার্ষিকী পূর্ণ হয়েছে। স্ত্রী তাজীন হালিম মনা ও দুই সন্তানকে নিয়ে সুখেই কাটছে এই অভিনেতার দিনকাল। বিশেষ এই দিনে স্ত্রী ও সংসার জীবনের কথা এবং তার ভালবাসা ভক্ত-শুভাকাঙক্ষীদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন আফজাল হোসেন।সংসার জীবনের তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে সামাজিক মাধ্যমে স্ত্রীকে বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আফজাল হোসেন। সঙ্গে জানিয়েছেন দু’জনের দাম্পত্য জীবনের মধুর সম্পর্কের কথা।যদিও তার পুরো লেখার কোথাও একবারও ভালবাসার কথা নেই বা এভাবেও বলা হয়নি যে "আমি তোমাকে ভালবাসি" তারপরেও পুরো লেখায় জুড়ে রয়েছে অদৃশ্য-অব্যক্ত ভালবাসার ছোয়া,যা যে কারোরই মন ছুয়ে যাবে এবং ভাবতে বাধ্য করবে যে,দেখানোর-প্রচারের(show off) এই সময়ে-যুগে এই ভাবে কিছু না বলে না দেখিয়ে এইভাবে নিরবে নিভৃতে এভাবেও ভালবাসা যায়!!!! ভালবাসা আসলেই বলে বা দেখিয়ে হয়না বা প্রমাণ করা যায়না।তা শুধু অনুভবের জিনিষ।
বিবাহবার্ষিকীতে স্ত্রীকে নিয়ে লেখা আফজাল হোসেনের পুরো লেখাটি তুলে ধরা হলো-
ছবি - Ittefaq.com
"তিরিশ বছর হয়ে গেল একসাথে আছি। যথার্থ শোনায় - তার সংসারে তার সাথে বাস করি বললে"। তিরিশ বছর কেটেছে একসাথে। আমাদের সন্তানদের জন্মতারিখ বলতে পারবো - কার কত বয়স হলো বলতে গেলে হিসাবে বসতে হবে। তার চেয়ে সহজ মনাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়া। আরাফ ও বউ দেশের বাইরে থাকে - মনা তাদের প্রায় রোজকার খবর বলতে পারবে। ঈমানের স্কুলের বেতন কতো, আমার জানা নেই। আমি জানি না মাসের বাজার খরচ, চালের দাম, লবণ কত টাকা কেজি। জানা নেই রান্নাঘরের চুলো জ্বলছে না, বেসিনে পানি আটকে গেছে বা ঘরে বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যা হলে কোনটার জন্য কাকে ফোন করতে হবে।এখন আমার ব্লাডপ্রেসার কত থাকে। সকালে কী কী ওষুধ খেতে হয় বা রাতে কী কী খাই, সবই জানে সে। আমি জানি না, আম্মাকেও এখন প্রতিদিন কতগুলো ওষুধ খেতে হয়, ডাক্তার কোনটা নতুন যোগ করেছে। কোন কোনটা শেষ হওয়ার পথে। মাসে গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল কত আসে, গাড়ির সার্ভিসিং কবে, কবে আজিমপুর গোরস্থানে পাপা, মায়ের কবরের দেখভাল করার মানুষটাকে টাকা পাঠাতে হবে, সবই তার মনে-মাথায় সাজানো।
ছবি - Ittefaq.com
আব্বার মৃত্যুবার্ষিকী অমুক তারিখে, পারুলিয়ায় কিছু করা হবে নাকি মিরপুরের এতিমখানায়- মাথায় থাকে। শিশুকালে আরাফকে কোলে নিয়ে ঘুরতো বা তার সাথে খেলতো যে মেয়েটা, তার এখন দুটো বাচ্চা, থাকে সিলেটে। একদিন হয়তো তার সংসারের এক অসুবিধার কথা বলেছিল- মনার মাথায় আছে। সমস্যা আছে না গেছে খোঁজ নেয়। যা করতে পারে করে। অবাক হই, এত কিছু একটা মাথায় থাকে কীভাবে! দুপুরে ঈমান খেতে চেয়েছে কাও পাট খাই, তার রেসিপি পড়তে পড়তে মনার মনে হয়ে যায় আরিমা, পরিবারের সবচেয়ে ছোটজন (বোনের মেয়ে) খানিক আগে একটা ছবি এঁকে পাঠিয়েছে- মামনা দিস ইজ ফর ইউ। কেমন হয়েছে বা খুশি হয়েছি, জানানো হয়নি তাকে। নির্ভানা, আমাদের আম্মু (ছোটো ভাইয়ের মেয়ে) ইদানিং খুব আগ্রহে উৎসাহে কেক পেস্ট্রি বানায়, তার এক দুশ্চিন্তা- কেকের ভিতরটা কেন তত নরম থাকছে না। তা নিয়ে আম্মুর সঙ্গে কথা হওয়া দরকার। শীলা, ছোটো ভাইয়ের স্ত্রীর শরীর ভালো নেই। এটাও জানে, একজনও সাহায্যকারী নেই রুমার বাসায়। এ রকম অজস্র দুশ্চিন্তা, সমস্যা ও সমাধানের চেষ্টা মগজে বয়ে সে হাসিমুখে ঠাণ্ডা মাথায় চলতে ফিরতে পারে।
ছবি - Ittefaq.com
এমন বলেই সাহায্যকর্মী সরবরাহকারী, ইন্টারনেট ও পেস্টকন্ট্রোল কর্মী, ট্রেডমিল মেকানিক, দরজি, মাংস বিক্রেতা, মুদি দোকানি, সোফা মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি ইত্যাদি নানা পরিচয়ের মানুষেরা পছন্দ করে ম্যাডাম, আপাকে। এতকিছু বলার পর মনে হতেই পারে, আমি তাহলে একটা অযথা লোক। যুক্তি খাটালে অন্য মানেও পাওয়া যেতে পারে। জীবনে ভালো কিছু করেছি। মনা, সেই পুণ্যেরই ফল।
অনেক বছর ছবি আঁকিনি। আঁকাআঁকিতে আবার ফিরতে পারবো, মনে হতো না। মনার বিশ্বাস অটুট ছিল, পারবো। বছরের পর বছর আমাদের পুরো বাড়ির সব ঘরের দেয়াল সে ফাঁকা রেখে দেয়। বলেছিল, ফাঁকাই থাকুক। নিজের আঁকা ছবি ঝোলানোর আগে কারও ছবি দিয়ে ঘর সাজানো যাবে না। সেই নিঃশব্দ জোর খাটানোর ফলাফল, এখন ঘরের দেয়াল ফাঁকা নেই।
জগৎ ও জীবন শেখার জন্য। রোজ আমি তার কাছ থেকে শিখি। ঘরের ধুলো পরিষ্কার আর জলরঙে ছবি আঁকা- দুটোতেই নিবেদন লাগে। একইরকম মনোযোগ, নিষ্ঠা লাগে। একশ রকম ঘটনার মধ্যে থেকেও নিজের জলরংয়ের ছবি কীভাবে আরও ভালো করা যায়- সে জন্য মনা যখন ইউটিউবে বিশ্বখ্যাত জলরং শিল্পীদের অনুশীলন দেখে, যেভাবে দেখে অবাক হই। ভাবি, নিজে শিল্পী হতে চেয়েছি, তবে এতটা মনোযোগী কি কখনো হতে পেরেছি?
সৃষ্টিকর্তা আমাদের ভালো রেখেছেন, রাখবেন- এই আশা। আরও আশা, আমরা উভয়ের জন্য উভয়েই যেন আরও কিছুকাল সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। শুভ বিবাহবার্ষিকী মনা।
যেখানে বর্তমানে মানুষ খোলামনে কেউ কারো প্রশংসা করতেই চায়না , চায়না কারো সাথে দীর্ঘ দিন সুখ-দুখের ভাগাভাগী করে জীবন অতিবাহিত করতে তা সে স্বামী- স্ত্রী কিংবা যে কোন সম্পর্কই হোক।আর ভালবাসা নিয়ে,ভালবাসাকে দেখানোর জন্য মানুষ কত কিছুই করে সেখানে ভালবাসা নিয়ে একটি কথা না বলে,এমন সহজ-সরল ও অনাড়ম্ভর ভাবে ও যে কারো প্রতি এত ভালবাসা প্রকাশ করা যায় তা এ লেখা না পড়লে বুঝাই যেতনা। আর এই লেখা আমারও এতটা ভাললেগেছে যে,পড়ার পর অনেকটা সময় ভাল লাগায় বুদ হয়ে থেকেছি।আর এই ভাললাগাই সামুতে সবার সাথে শেয়ার করার জন্যই এই পোস্ট।
আফজাল স্যার - তাজীন হালিম মনা ম্যাডামের সুখী-সুন্দর ও সাফল্যময় দাম্পত্য জীবনের পাশাপাশি তাদের সু-স্বাস্থ্য ও দীৃর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনার সাথে সাথে দুনিয়ার সকল স্বামী- স্ত্রী'র জীবন যেন এরকম সহজ-সরল ও অনাড়ম্ভর ও ভালবাসায় ভরে উঠে এটাই চাওয়া।আর এই চাওয়া পূরণ খুব কঠিন কিছু বলে মনে হয়না। শুধুমাত্র একটু ত্যাগ-সহযোগীতা, সহমর্মিতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধই আমাদের সকলের পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনকে সুখ-সাফল্য ও ভালবাসায় ভরিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট ।এভাবেই হয়ত আমাদেরও অন্তর থেকে বেরিয়ে আসবে এমন আকুতি,"হে দয়াময় আমরাও যেন উভয়ের জন্য উভয়েই আরও কিছুকাল বেঁচে থাকতে পারি"।
তথ্যসূত্র - ইত্তেফাক (১১/০৮/২০২১)
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০২৩ বিকাল ৫:১৯