আপনার কি কখন মনে হয়েছে আপনি একা ? নিজেকে মনে হয়েছে সবার থেকে, সব কিছু থেকে গুটিয়ে ফেলতে? মনটা ভরে উঠেছে হতাশায়, জীবনটাকে অসহনীয় আর দীর্ঘ মনে হয়েছে। শুধু মনে হয়েছে কেন আপনার উপর এতো চাপ, কেন আপনাকে এতো দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। এর কোন একটা যদি আপনার অবস্থার সাথে মিলে যায়, তবে আপনি একা নন। আপনার মত আরও অনেক মানুষ একই রকম অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়। এখন দেখা যাক, ইসলাম ধর্মে এ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।
পবিত্র কোরান শরীফে সুরা আল বাকারায় (২:১৫৫) বলা হয়েছে, “আমি তোমাদের অবশ্যই আতংক, ক্ষুধা, সম্পদ, ও ফসল দিয়ে পরীক্ষা করবো।” এখানে আরও বলা হয়েছে, যারা ধৈর্য নিয়ে খারাপ সময় মোকাবেলা করে এবং বলে, “আমরা আল্লাহ কাছ থেকে এসেছি আর তার কাছেই আমরা ফিরে যাব ; তাদের জন্য সুখবর রয়েছে।” আবার সুরা আম মাইদায় বলা হচ্ছে (৫:৬), “আল্লাহ তোমাদের ভারাক্রান্ত করতে চান না; বরং তোমাদের বিশুদ্ধ করে, তার নেয়ামত তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ থাক।” সুরা আল মু মিনুন এ বলা হচ্ছে, কোন আত্মাকে তার ক্ষমতার বেশী, পরীক্ষায় করা হয় না। সুরা আল হাদীদ সহ একাধিক সুরায় বলা আছে, পৃথিবীর এই ক্ষণস্থায়ী জীবন হল একটা মরীচিকা। সাথে সাথে সুরা ইউসুফে (১২:৮৭) বলা হয়েছে, কখনই আল্লাহ’র ক্ষমা সম্পর্কে আশা ছেড়ে দিও না।” সুরা আত তালাক-এ (৬৫:৭) বলা হচ্ছে, “শিগ্রই কষ্টের পরে, আল্লাহ, জীবন সহজ করে দিবেন।” এবং , সুরা আল আন আম (৬:৫৯)–এ আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেছেন, তার ইচ্ছা ছাড়া গাছের পাতা পর্যন্ত পড়ে না।
উপরের কথাগুলোকে আমাদের জীবনের সাথে মিলিয়ে ভাবলে, বিষয়টা অনেকটা এমন দাঁড়ায়ঃ আমাদের প্রত্যেককেই মহান আল্লাহ তা’লা পরীক্ষা করেন। আমরা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ি । এই বিপর্যয় আল্লাহ তরফ থেকেই আসে। কারণ তার ইচ্ছা ছাড়া কোন পাতা পর্যন্ত পড়ে না। এই পরীক্ষার মধ্যে আমরা যখন পড়ি, আমাদেরকে ধৈর্য আর বিশ্বাস অবিচল রাখার জন্যে বলা হয়েছে। মহান সৃষ্টি কর্তা শিগ্রই আমাদের এ অবস্থার অবসান করবেন। আমরা সামাল দিতে পারব না, এমন কোন পরীক্ষায় আল্লাহ আমাদের ফেলেন না। বরং, আমরা আতঙ্কিত হয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলি। নিজেকে, অন্যদেরকে, সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করি। কেউ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, কেউ বা বিপথে চলে যায়, আত্ম ধ্বংসকারী কাজ করে। এমনকি জীবন নিয়ে ক্লান্ত হয়ে আত্মহত্যার কথা চিন্তা ভাবনা পর্যন্ত করে। জয় হয় শয়তানের কু মন্ত্রনার। আমারা আল্লাহ’র নির্দেশিত পথ থেকে দূরে সরে যাই।
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর প্রত্যেকটা ঘটনার সমাপ্তি আছে। এখন যা বর্তমান, পরের মুহূর্তেই তা অতীত। মরুভুমিতে মরীচিকা দেখার মত। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করেন, যাতে তিনি তার নেয়ামত কোন কার্পণ্য ছাড়াই আমাদের দিতে পারেন।
কিছু মানুষ বিপর্যয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে অস্থির হয়ে পড়েন। ভাবতে থাকেন, আর কত পরীক্ষা! এর শেষ কোথায়!! এই কথার উত্তরে বলা যায়, আল্লাহ যাকে বেশী ভালোবাসেন; তাকে হয়তো পরীক্ষাও বেশী করেন। সফলভাবে পরীক্ষা দিতে পারলে, আল্লাহ তা’লা বেহেস্তের অঙ্গীকার করেই রেখেছেন।
শেষে এই কথা বলি, ইহকাল এবং পরকাল নিয়ে আমাদের সম্পূর্ণ জীবন। আমরা আমাদের কিছু কাজের ফল ইহকালে না পেলেও, আল্লাহ’র রহমতে, পরকালে অবশ্যই পাব। আল্লাহ’কে পরম বিশ্বাসে ডাকলে, আল্লাহ প্রত্যেকের ডাকে সাড়া দেন। তবে তার “সাড়া” আমরা এখন অনেকে বুঝতে পারি না। কিন্তু আমাদের শেষ বিচারের দিন যখন এই “সাড়া” র সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন হবে, তখন আমরা তার উপকার পাব, ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনের দরজা প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্য সব সময় খোলা
সংগ্রিহিত