#দেবতাখুমের_গল্পঃ
"দেবতাখুম" যেনো এখন হালের ক্রেজ। হুট করে যেনো নতুন করে সবাই দেবতাখুম কে আবিষ্কার এর নেশায় নেমেছে। আর নামবেই না কেনো! মোটামুটি অল্প ট্রেকিং এ ভালো কিছুর অভিজ্ঞতা কে না চায় !

ছবিঃ এক পলকে দেবতাখুম
তো দেবতাখুম নিয়ে ২/৩ টা পোষ্ট চোখে পড়েছিল। তার মানে এটা এখনও বিশুদ্ধ এবং নামযাদা টুরিষ্ট দিয়ে জঘন্য হয়ে যায়নি। বড় ভাই সাথে সাথেই রাজি হয়ে গেলেন, রাত্রের মধ্যে প্লান প্রস্তুত হয়ে গেলো আমাদের

ছবিঃ কুমিল্লায় হোটেল বিরতি
মঙ্গলবার রাত্রে ১১.১৫ তে কমলাপুর থেকে আমরা যাত্রা শুরু করি। এর মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম এর সড়কপথের বিশাল জ্যাম এ পড়ে ভোর ৬টায় আসি কুমিল্লা। যেখানে ভোরে আমাদের বান্দরবান থাকার কথা ছিলো

ছবিঃ লিরাগাঁও আর্মি ক্যাম্প
লিরাগাঁও আর্মি ক্যাম্পে অনুমতি মিললেও, মিললো না ক্যাম্পিং এর পার্মিশন। পরে উনারা বললো, শীলবাঁধা থাকতে হলে অবশ্যই থানা থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে যেতে হবে। পরে স্থানীয় এক ভাইয়ের সাহায্যে আমাদের পার্মিশন মিলে। আমরাই একমাত্র ক্যাম্পিং করার অনুমতি পাই সেদিন

ছবিঃ ট্রেকিং শুরু এখানে থেকে
এরপর মিনিট ১০ গাড়িতে এসে একটা ব্রীজের সামনে নামিয়ে দেয়। এখানে থেকে ট্রেকিং করে যেতে হবে শীলবাঁধা পাড়া। মাত্র ৩০মিনিটের ট্রেকিং পথ শীলবাঁধা পাড়া। তবে উঁচু পাহাড় খানিকটা অস্বস্তিতে ফেলে দিবে। এখানে খেয়াল করলাম পাহাড়গুলো জুম চাষের জন্য পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক পাহাড়ে বড় গাছ গুলোও কেটে ফেলা হয়েছে। না জানি কবে পাহাড় ধ্বসে সব ভেঙে পড়ে

ছবিঃ পাহাড় পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
যাই হোক শীলবাঁধা পাড়ার শুরুতেই হলুদ-লাল-গোলাপী রঙের পাহাড়ী ফুল আমাদের শুভেচ্ছা জানায়। যখন ঢাল বেয়ে পাড়াও উঠলাম, তখন চোখ জুড়িয়ে গেলো। ছোট্ট একটা পাড়া, কিন্তু কত্ত ছিমছাম। ছবির মতো গোছানো, বাড়ি গুলোর উপরে লম্বা নারিকের গাছগুলো এই পাড়ায় যেনো আলাদা মুগ্ধতা যোগ করেছে। যেহেতু সময় কম, আমরা ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়েই চলে যাই দেবতাখুমের উদ্দেশ্যে।

ছবিঃ শীলবাঁধা পাড়ার সৌন্দর্যে মুগ্ধ আমি
এই পাড়া থেকে মাত্র মিনিট ২০-৩০ হাঁটলেই দেবতাখুমের খুমের দেখা পাওা যাবে। এই সীজনে পানির স্রোত অল্প থাকায় স্বচ্ছ পানির দেকখা মিললো। দেবতাখুম আসার পথে ছোট্ট পাথুরে ঝিরি অতিক্রম করেই আমরা ভেলার দেখা পাই

ছবিঃ অপার সৌন্দর্যে মহিমান্বিত দেবতাখুম
দেবতাখুম নিয়ে অনেক মিথ আছে, অনেকে বলে আগে এখানে দেবতা ছিলো, মানুষ ডুব দিলে পাওা যেতোনা আর।তাই পূজা দিয়ে তাকে বশ করা হয়। আবার অনেকে বলে শাপ ছিলো বড়। তবে আর যাই হোক, এখানে কখনো পানি শুকায় না। বড় বড় মাছ আছে নাকি অনেক। আর পানির গভীরতাও অনেক বেশী। সাঁতার না জানলে কোনোভাবেই নামা উচিত না পানিতে

ছবিঃ আমাদের ক্যাম্পসাইট
এরপর আমরা পাড়ায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খাই সন্ধ্যায়। এরপর পাড়ার পাহাড়ের নিচে ঝিরির পাশেই প্রস্তুতি নেই ক্যাম্পিং এর। তাবু করে ফেলি। আকাশ ভরার তারার নিচে আমরা প্রস্তুতি নিতে থাকি রাতের খাবারের। নিজেরাই রান্না করি রাত্রে। প্রচুর ঝালে মাখানো আলুভর্তা আর মুরগীর মাংস মুখে লেগে আছে। অপরিচিত ১০টা মুখ খুব সহজেই যেনো আপন হয়ে যায়। আমরা প্রায় সারারাত গান-আড্ডা দিয়ে জেগে থাকি। মাথার উপর আকাশ ভরা তারা, ঝিরি কলকলানি শব্দ, আর পাখির ডাক আমাকে মোহে ফেলে দেয়। রাতের আরেকটা আকর্ষন ছিলো ঝিরিতে চিংড়ি মাছ ধরা। রাত্রে মাছগুলো তীরের পানিতে আসে। এই সুযোগ মিস করিনাই

ছবিঃ ফেরার পথে। আহারে, কবে যাবো আবারো পাহাড়ে ...
বিঃদ্রঃ শীলবাঁধা থাকতে হলে অবশ্যই থানা থেকে লিখিত অনুমতি নিয়ে যেতে হবে
এখনও অনেক পরিষ্কার শীলবাধা পাড়া আর দেবতাখুম। আমরা কোনো প্রকার প্লাষ্টিক পাইনি, আর নিজেরা ফেলেও আসিনি। দয়া করে কেও খাবারের প্যাকেট, পলিথিন, প্লাষ্টিক ফেলে এসে একেও জঘন্য বানিয়ে ফেলবেন না। মনে রাখবেন এটা শুধু আমাদের দেখার অধিকার আছে, এমন না। আমাদের ভবিষ্যতের জন্যও রেখে যেতে হবে
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১৯ রাত ১:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




