somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘বাংলাদেশে অপহরণে জড়িত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা’

২১ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই খবর প্রকাশের পর আল জাজিরা বাংলাদেশে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। সরিয়ে দেয়া হচ্ছে অনলাইন পোর্টাল গুলোর খবরের লিংক।

সামরিক গোয়েন্দা বাহিনী ব্যবহার করে বাংলাদেশে অপহরণ আর নির্যাতনের ঘটনা পরিচালনা করছেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী। ব্যবসায় বনিবনা না হবার জেরে তিন ব্যবসায়ীকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট এবং প্রভাবশালী এই উপদেষ্টার বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-জাজিরার এক বিস্ফোরক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর উপর তারিক আহমদের কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয় জেনারেল সিদ্দিকীকে।তিনি (শেখ হাসিনার) খুব ঘনিষ্টজন। তার ভাইয়ের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার। তার ভাতিজি হলেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকী।”
এতে বলা হয়, “জেনারেল সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে অপহরণের এই অভিযোগ এনেছেন তারি এক সময়ের ব্যবসায়িক অংশীদার কর্ণেল শহীদ উদ্দীন খান। তিনি বর্তমানে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে রয়েছেন।”
খানের ভাষ্যমতে জানুয়ারি মাসে ঢাকায় তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তিন কর্মচারীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
নিখোঁজ হওয়া এই তিন জনের পরিবারের সদস্যরা আল-জাজিরাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন ১২ সপ্তাহ আগে যখন তাদের অপহরণ করা হয় তখন থেকে তাদের কোনো খোঁজ বা হদিস পাননি তারা। অপহরণের যে দাবি খান করেছেন তার তথ্য-প্রমাণাদি আল-জাজিরার হাতে রয়েছে। আর এসব প্রমাণ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করে।
খান জানান নয় মাস আগেও অপহরণ হওয়া এই তিনজনসহ আরেকজনকে ঢাকার অফিস থেকে তোলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডিজিএফআই-এর এখানে গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হয়। শাহীন সিদ্দিকীর (নিরাপত্তা উপদেষ্টার স্ত্রী) সঙ্গে খানের যৌথ মালিকানার একটি কোম্পানিতে ব্যবসায়িক বিষয়ে বনিবনা না হওয়ার একদিন পরই এ ঘটনা ঘটে। শাহীন সিদ্দিকী প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামের ঐ কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
২০০৯ সালে চালু হওয়া এ কোম্পানিটি জমি-জমা সংক্রান্ত একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিলো। কোম্পানিটির রেজিস্ট্রেশন দেখা যায় শুধু জেনারেল সিদ্দিকীর স্ত্রী এটির পরিচালক ছিলেননা বরং তার ভাই জামাল শাফি (২০১২ পর্যন্ত) এবং মেয়ে নোরিন তাসমিয়া ও বুশরাও এর পরিচালক ছিলেন। খান ছিলেন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আর তার স্ত্রী এবং দুই সন্তান ছিলেন এর পরিচালক।
খান বলেন, “তিনি (শাহীন সিদ্দিকী) চাইতেন না আমার সঙ্গে ব্যবসা করার কোন প্রমাণ থাকুক।”
“তারা মনে করতেন এই সরকার (শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার) হয়তো পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর যদি সরকার বদল হয় তাহলে আমি তাকে বিপদে ফেলবো।”
২০১৭ সালের জুন মাসে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করার জন্য যুক্তরাজ্যে উড়াল দেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা। সেখানে তিনি খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং খুব দ্রুত কোম্পানিটি বন্ধ করে দেবার কথা বলেন।
খান বলেন সাক্ষাতকালে নিরাপত্তা উপদেষ্টা তাকে এই বলে তাকে সতর্ক করে দেন যে তাঁর স্ত্রী খুবই হিংস্র প্রকৃতির। তাই যত দ্রুত সম্ভব কোম্পানিটি যেন বন্ধ করে দেয়া হয়।
খান চাইছিলেন নিয়ম মেনেই কোম্পানিটি বন্ধ করতে কিন্তু এর পর যা ঘটে সেটা ছিলো আর ভয়াবহ কিছু। ২০১৮ সালের এপ্রিলে প্রচ্ছায়া বন্ধ হবার পরদিন খানের তিন কর্মকর্তার কাছ থেকে অঙ্গীকারনামা গ্রহণ করা হয়। সিদ্দিকীর স্ত্রী এই বলে সতর্ক করেন যে তিনি তাদের অফিসে গিয়ে দেখে আসবেন।
শাহীন সিদ্দিকী এরপর অফিসে যাননি। কিন্তু কর্মকর্তারা জানান, অবসরপ্রাপ্ত দুই জন সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে অফিসে ডজন খানেক লোক প্রবেশ করে। তারা প্রচ্ছায়া অফিসে হার্ডডিস্ক, অর্থনৈতিক কাগজ পত্রাদি এবং খানের ব্যবসায়িক অন্যান্য দলিলও সঙ্গে করে নিয়ে যায়।
প্রতিবদেনে বলা হয়, “কর্মকর্তাদের দেয়া ভাষ্য থেকেই বুঝা যায় কিভাবে ঐ দলটির দ্বারা অফিস তছনছ করা হয়, তারা ক্যাবিনেটের তালা ভাঙ্গে, ২৭ টি বক্সে করে মালামাল নিয়ে যায় এবং সিসি টিভি ক্যামেরাগুলো সরিয়ে দেয়।”
অপহৃত চারজনই জানান তাদরকে জেনারেল সিদ্দিকীর সরকারি বাস ভবনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই জব্দ করা মালামাল নামানো হয়।
তারা জানান তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় ডিজিএফআই এর সদরদপ্তরে। তখন তাদের চোখ বাঁধা ছিলো এবং খানের ব্যবসা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।দুই জন জানান তাদের মৃত্যুর ভয় দেখানো হয়। ধরে নেবার ৪৮ ঘন্টা পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।
গত এপ্রিল মাসে অপহৃত জহিরুল হক খন্দকার, খোরশেদ আলম পাটওয়ারি এবং সৈয়দ আকিদুল আলীকে আবারো গুম করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আল-জাজিরাকে জানান, ১৩ জানুয়ারি খোরশেদ এবং আকিদুলকে আকিদুলের বাড়ি থেকে ২০ জনের একটি দল এসে তোলে নিয়ে যায়। এসময় তাদের সঙ্গে অস্ত্র ছিলো এবং তারা ছিলো কালাে পোশাকধারী, যেমনটা র‍্যাব পরিধান করে থাকে। অপহরণকারিদের আরেকটি গাড়িতেই জহিরুলকে দেখা গিয়েছিলো।
অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সন্ধান জানার চেষ্টা করা হলেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো তারা এখন নিজেদের জীবন নিয়ে শংকায় পড়েছে। খান বলছেন তার পরিবারের সদস্য এবং কর্মচারী এখন হয়রানি এবং ভীতির মুখোমুখি।
দ্বিতীয়বার অপহরণের কয়েকদিন পরই খানের বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ এবং তার বিরুদ্ধে সরকার এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ আনে। খান, তার পরিবার এবং গুম হওয়া তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে মামলাও করা হয়েছে।এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন খান।
খানের পক্ষে তার এক বৃটিশ আইনজীবি এক অভিযোগের মাধ্যমে জেনারেল সিদ্দিকী, তার স্ত্রী এবং গোয়েন্দা বাহিনীর বিরুদ্ধে আইন ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেবার কয়েক সপ্তাহ পরই এসব অভিযানের ঘটনা ঘটলো।
আল-জাজিরার কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে ডিজিএফআই খানের বক্তব্য এবং এসব ঘটনায় তাদের কোনো সম্পৃক্ততার বিষয় দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে।
ডিজিএফআই অভিযোগ করে বলেছে, সাবেক এই কর্ণেল তার কর্মকর্তাদের লুকিয়ে যাবার নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের কিছু জিজ্ঞাসা না করতে পারে।
সংস্থাটি আরো অভিযোগ করে বলেছে, খান বিতর্কিত কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত যেটি সেনাবাহিনীর পরিবেশ নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে সম্পত্তি আত্মসাতের বিষয়টিও রয়েছে।
এর সবগুলো অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন খান।
আল-জাজিরার তদন্ত শাখার পক্ষ থেকে জেনারেল সিদ্দিকী এবং তার স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তারা কোনো সাড়া দেননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “বেআইনী এবং গোপন বন্দিশালায় আটকের বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার বাংলাদেশকে তাগিদ দিয়ে আসছে, আর তাতে ব্যর্থ হওয়ার নিন্দা জানাচ্ছে সংস্থাগুলো। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ঘটনার শিকার হচ্ছে বিরোধীদলের সদস্যরা। যাদের অনেকেরই গুম হবার পর আর দেখা মেলেনা।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্যমতে ২০১৬ সালে ৯০ জন লোককে অপহরণ করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। গুম হওয়াদের মধ্য থেকে পরে ২১ জনের লাশ পাওয়া যায়। মানবাধিকার গবেষকরা গুমের জন্য যে কয়টি রাষ্ট্রীয় সংস্থাকে দায়ী করছেন তার মধ্যে ডিজিএফআইও রয়েছে।
শেখ হাসিনার সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় অপহরণের এসব ঘটনায় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আহবানকে নাকোচ করে দিয়ে আসছেন। কিন্তু জেনারেল সিদ্দিকী সঙ্গে তার ঠিকই ঘনিষ্টতা বজায় রয়েছে। অথচ তিনিই রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দাসংস্থাগুলোকে কল-কাঠি নাড়ছেন।”
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×