কয়েক দিন আগে দেশে বাবার সাথে কথা হচ্ছিলো। জানতে চাচ্ছিলেন অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনকার কোভিড ভ্যাক্সিন বাদ দিয়ে বাংলাদেশ কেন ভারতের সিরাম ইনস্টিউটের ভ্যাক্সিন আনছে। বাংলাদেশের কোন মিডিয়া-পত্রিকাতে এই বিষয়টি নিয়ে কেউ লেখেনি। বিষয়টি নিয়ে ভ্রান্তি দূর করতে এই লেখা।
অক্সফোর্ড ভ্যাক্সিন এর মূল ফর্মূলাটি উদ্ভোধন করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। এস্ট্রাজেনকার সহায়তায়। এস্ট্রাজেনকা সিরাম ইনস্টিউটকে এই ভ্যাক্সিন তৈরি করার লাইসেন্স বিক্রি করেছে। ভ্যাক্সিন তৈরির মূল এই "সিড" (যেটা থেকে অনান্য ভ্যাক্সিনের মূল উপদান তৈরি করা হবে) সিরাম ইনস্টিউটকে দিয়েছে এস্ট্রাজেনকা। এই একই ভ্যাক্সিনের বিশ্বব্যাপী ফেজ ১-২-৩ এর ট্রায়াল করেছে এস্ট্রাজেনকা। ভারতে মাত্র ১৬০০ লোকের উপর এই ফেজ ৩ ট্রায়াল করে সিরাম ইনস্টিউট। ভারতের ট্রায়াল এবং ইউকে, ব্রাজিলের ট্রায়ালের ডাটার উপর নির্ভর করে গত সপ্তাহে সিরাম ইনস্টিউট এই টীকা জরুরী ব্যাবহারের অনুমতি চেয়েছে (Emergency Use Authorization)। এই জরুরী ব্যবহারের সময় টীকা কারা পাবে এটার বিশ্বব্যাপী একটা গাইডলাইন আছে। এই টিকা দু'টো ডোজ (শট) নিতে। প্রথমটি নেয়ার ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় বুষ্টার ডোজ। সিরাম ইনস্টিউট ভারত সরকারের জন্য প্রতি ডোজ ৩ ইউএসডলার করে ধরেছে। সুতরাং দুই ডোজ টীকার সরকারী দাম পড়বে ৬ ডলার (বাংলাদেশের ৫১০ টাকার মত)। যেহেতু বেক্সিমকো বাংলাদেশের সোল ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে এই টীকা আনার চুক্তি করেছে, এরা বাংলাদেশ সরকারকে প্রতি ডোজ ৪২৫ টাকা করে বিক্রি করবে, দুই ডোজের দাম নিবে ৮৫০ টাকা।
এই টীকার ফেজ ৩ ট্রায়ালে কিছু গোলমাল করে ফেলা হয়েছে। নানান ভুলের কারণে এদের টীকার কার্যকরী ডোজ কতটুকু এটা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে। এর কার্যকারীতা ৬২-৯০% এর মত বিশাল পরিধির মধ্যে পড়ে গেছে এবং এরা নিজেরাও পুরোপুরি নিশ্চিত নয় কোন ডোজে কার্যকারিতা বেশি হবে। এস্ট্রাজেনকা নতুন করে ট্রায়াল শুরু করবে এই মাসে, রাশিয়ার গামালয়া ইনস্টিউটের সাথে (রাশিয়ার স্পুতনিক -৫ টীকাও একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে)। এই ট্রায়ালের আগেই এখন ভারতে, এবং সামনের দিকে বাংলাদেশে এই টীকা দেয়া শুরু করা হবে। বাংলাদেশ সরকার যে আজগুবি টীকা দেয়ার তালিকা করেছে, সে তালিয়া ধরে বয়স্ক, বৃদ্ধ এদের বাদ দিয়ে টীকা পাবে সাংবাদিক, পুলিশ এরা। অল্প-বয়স্ক, যাদের ইমিউন সিস্টেম বেশি কার্যকর, তাদেরকে এই টীকা প্রথমে দিয়ে টীকা যেমন একদিকে নষ্ট হবে, এর কার্যকারিতা ইত্যাদি বিষয়ে কোন কিছুই ঠিকমত জানা যাবে না
প্রশ্ন আসতে পারে এস্ট্রাজেনকার ভ্যাক্সিন কেন সরাসরি বাংলাদেশ আনছে না। কারণ হচ্ছে ওরা যে ভ্যাক্সিন এখন বানাচ্ছে সেগুলো ইউকে সহ অনান্য দেশ আগেই কিনে নিয়েছে। কোভ্যাক্স এবং গ্যাভি এলায়েন্স (গরীব দেশগুলোতে ভ্যাক্সিন দেয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ) এরা এস্ট্রাজেনকা থেকে বিপুল পরিমাণে ভ্যাক্সিন কিনবে (সেটা সিরাম ইনস্টিউটেও তৈরি হতে পারে, অনান্য দেশেও)। সেখান থেকে ভ্যাক্সিন পেতে অনেক সময় লাগবে বাংলাদেশের।
এই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ৫ কোটির মত লোককে ভ্যাক্সিন দিতে পারবে (যদি না বাংলাদেশ এর মধ্যে চীন বা রাশিয়া থেকে আরো ভ্যাক্সিন কিনতে পারে)। এর সবটাই হবে এস্ট্রাজেনকার ভ্যাক্সিন (বা ভারতে তৈরি হওয়া কোভিশিল্ড ভ্যাক্সিন)। বাংলাদেশের প্রায় ১৫ কোটি প্রাপ্তবয়স্কের সবাইকে টীকা দিতে দিতে ২০২৩ সাল শেষ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং সবাই সর্তক থাকুন, মাস্ক পরুন, এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় চলুন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৭:৩৪