গোলাম আযম ক্ষণে ক্ষণে জানতে চাইছেন শাহবাগে কি পরিমাণ লোক হচ্ছে। বেশি লোকের কথা শুনলে মুখটা কালো করে বিছানায় বসে পড়েন, চোখে মুখে হতাশার রেখা ফুটে ওঠে, মুখটা ভার করে চিন্তা করেন। শাহবাগ আন্দোলনের শুরুর পর থেকে দৈনিক পত্রিকার জন্য অধীর অপেক্ষা করেন। পত্রিকা আসে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। প্রিজন সেলে পত্রিকা আসতে বেশ দেরি হয়, পত্রিকা আসতে দেরি হলে বারবার জানতে চান কখন পত্রিকা আসবে। ইদানীং কখনও কখনও মাঝরাতে জেগে ওঠেন, রুমের ভেতর পায়চারি করেন। খুব ভোরে উঠে ফজরের নামাজ আদায় করেন, কোরআন তেলাওয়াত করে খানিকটা সময় পায়চারি করে আবার বিছানায় যান। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। একটু সুযোগ পেলে নার্স ও নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে আলাপ জমান, বাড়ি-ঘরের কথা জানতে চান। বেতনের টাকায় সংসার চলে কিনা জানতে চান। সকলকে নামাজ পড়তে বলেন। একজন নিরাপত্তা কর্মী সূত্রে জানা গেছে, প্রিজন সেলে আসার প্রথম দিকে তার মনটা ভাল ছিলো না, মাঝখানে খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন। হাসিখুশি থাকতেন। শাহবাগের গণজোয়ার শুরুর পর থেকে আবার সব কিছু বদলে যায়। এখন বেশির ভাগ সময় তাকে বিমর্ষ দেখা যায়, চিন্তিত দেখা যায়। ওই নিরাপত্তা কর্মী সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগের সমাবেশের পরদিন পত্রিকার প্রথম পাতা জুড়ে সমাবেশের ছবি দেখে তিনি জানতে চান, আসলে কত লোক হয়েছিল? নিরাপত্তা কর্মী জানায়, লাখ লাখ। আর কোন কথা না বলে ভেতরে চলে যান তিনি ।
এভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে দিবানিশি কাটছে মানবতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের থিঙ্ক ট্যাংক খ্যাত অধ্যাপক গোলাম আযমের। তিনি আছেন বিএসএমএমইউ’র প্রিজন সেলের তেতলায়। প্রিজন সেলের ওই ভবন শাহবাগ স্কয়ার লাগোয়া হওয়ায় শাহবাগ গণজোয়ারের আন্দোলনকারীদের বক্তৃতা ও স্লোগান বেশ স্পষ্ট শোনা যায়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে প্রিজন সেলে বসবাস করছেন তিনি। নিরাপত্তার দায়িত্ব দেখভাল করছেন কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, এখানে গোলাম আযমের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে পুলিশ, আনসার, আনসার ব্যাটালিয়ান এবং সিভিল পোশাকে র্যাব। কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে প্রিজন সেলকে ঘিরে।
মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যক্ষ ডা. এবিএম আবদুল্লাহর অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন তিনি। সূত্রমতে বড় ধরনের কোন রোগ নেই তার, ৯০ বছর বয়সেও ডায়াবেটিস নেই, হার্টের অবস্থা ভাল। তার প্রধান রোগ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা এবং সামপ্রতিক সময়ে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দুশ্চিন্তা ও ঘুম কম হওয়া। হাসপাতালের খাবারই দেয়া হচ্ছে তাকে, বাসা থেকে খাবার সরবরাহের অনুমতি মিলেনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে খাবার দেয়া হলেও তা সরবরাহ করা হয় গোলাম আযমের ইচ্ছা অনুসারে। হাসপাতালের খাদ্য বিভাগের লোকেরা প্রতিদিন তার কাছ থেকে খাদ্য তালিকা নিয়ে এসে সেটা চিকিৎসককে দিয়ে অনুমোদন করিয়ে নেন। গত এক সপ্তাহে গোলাম আযমকে সরবরাহ করা খাদ্য তালিকায় দেখা গেছে, তাকে খাবার দেয়া হয় সকাল ৭টায় পাউরুটি, ডিম ও একটি কলা। চায়ের পাতা ও চিনি। সকাল ৯টায় মুরগির স্যুপ ও খিচুড়ি। দুপুর ১টার মধ্যে দেয়া হয় কখনও পোলাওর চালের কখনও বাসমতি চালের ভাত, সবজি, ছোট মাছ বা তার চাহিদা অনুসারে রুই মাছের তরকারি, পাতলা ডাল। রাতের বেলা দেয়া হয় পোলাও চালের ভাত, মুরগির মাংস, সবজি, পাতলা ডাল। পত্রিকা দেয়া হয় একটি। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সকাল বেলা ওই পত্রিকাটি পাঠানো হয়।
সুত্রঃ http://hello-today.com/ht/75746#.USHVAGdjF-s