আমি জানি গায়ে পড়ে কারো উপদেশ ভালো লাগে না তারপরও লিখলাম কারন তোমাদের জন্য ভাববার কেউ নেই ......
যাদের চাচা/মামা নাই নিদেন পক্ষে রাজনৈতিক মামু ও নাই তাদের জন্যই শুধুমাত্র আমার পর্বগুলি। আশাকরি অন্যদের পড়ার দরকার নাই........... (পড়লেও ক্ষতি নেই তবে লাভ ও নেই)।
আগের পর্বগুলোতে সিভি রাইটিং এর ক্ষেত্রে বেসিক কিছু দিকনির্দেশনা ও ইন্টারভিউ ফেইস করার পূর্ববর্তী টিপস্ নিয়ে লিখেছিলাম। এ পর্বে কিভাবে ইন্টারভিউ ফেইস করবে বা ইন্টারভিউ চলাকালীন তুমি কি করবে তার প্রয়োজনীয় টিপস্ নিয়ে আসলাম... যা হয়তো তোমাদের কাজে লাগলে ও লাগতে পারে।
১) ইন্টারভিউ চলাকালীন সবচেয়ে বেশী যেটা দরকার তা হলো আত্ববিশ্বাস। কখনই আত্ববিশ্বাস হারাবে না। শত শত চাকরীপ্রার্থীর মধ্যে তুমি যদি সিলেক্ট হও সেটা তোমার নিজস্ব গুনেই...আর তাই তোমার নিজস্ব গুন ফুটিয়ে তোলার প্রথম পদক্ষেপ আত্ববিশ্বাস...... তাই নয় কি !!!!
২) কখনই নার্ভাস হবে না। নার্ভাস হবার মানে তুমি নিজেই হেরে যাওয়া। সবসময় বিশ্বাস রাখবে যে তুমি যা জানো তা এ বোর্ড মেম্বার থেকে কোন অংশে কম নয়। নিজের জানাটুকুকে মেলে ধরবা আর সব কিছুই যে তোমাকে জানতে হবে তা ও ঠিক নয়..... তাই কোন প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে ভদ্র ভাবেই স্বীকার করে নিবা, নার্ভাস হবা না কিছুতেই.....। আর নার্ভসনেস অনেকটা সংক্রামক, একবার পেয়ে বসলেই তা আর ছেড়ে যেতে চায় না।
৩) অযথা তর্ক করবে না বা নিজেকে খুব জ্ঞানী ভেবে জ্ঞান জাহির করার চেস্টা করবে না। মনে রেখ বোর্ডে যারা বসে আছে তারা কিন্তু অনেক জেনেই আজ চেয়ারের বিপরীত পাশে। আই অযথা তর্ক না করে যতটুকু জানো তা স্বীকার করে নিবা আর নিজের কোন ভুল হলে তা সহজে স্বীকার করে নিবা।
৪) নিজেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার চেস্টা করো... তাই বলে এমন কোন হাস্যকর কাজ করে বসো না যাতে তোমাকে ক্লাউনের মতো মনে হয়। এখানে আলাদা বলতে বোঝাচ্ছি নিজেকে সুন্দরভাবে, মার্জিতভাবে উপস্থাপন করা।
৫) স্মার্টনেসের কোন বিকল্প নেই। রাম ছাগল টাইপ ভাব নিয়ে যাবে না। মনে রেখ স্মার্টরাই পৃথিবী জয় করে। তবে স্মাটনেসের সংজ্ঞা আমার কাছে একটু ভিন্ন... যেমন যেখানে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু এক্সপ্রেস করাই স্মাটনেস।
৬) এ চাকরী না হলে আমি মরে যাবো.... এধরনের চিন্তা মাথায়ই আনবে না। চাকরী না হলে না হবে... বিকল্প চিন্তা করবে........। এ ধরনের চিন্তা নিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে যাবা না তাহলে কিন্তু তোমাকে নার্ভাসনেস পেয়ে বসবে।
৭) বোর্ড মেম্বাররা যদি ইংরেজীতে কথা বলে তবে তুমি অবশ্যই ইংরেজীতেই উত্তর দিবে। কিন্তু তোমার ইংরেজী যদি খুব খারাপ হয় তাহলে আগেই স্বীকার করে বাংলায় উত্তর দিবা। তাই বলে ভুলভাল ইংরেজী বলে নিজেকে হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করবা না।
৮) কিছু ভুল উত্তর দিলে যদি বোর্ড তোমাকে ধরিয়ে দেয় তাহলে সহজে স্বীকার করে নিবা আর যদি বোর্ড কিছু না বলে তাহলে এড়িয়ে যাও।
৯) যদি এমন কোন প্রশ্ন উত্তর তোমার জানা না থাকে তাহলে সহজেই স্বীকার করে নিবা, নার্ভাস হবা না। সবাইকে সব কিছুই যে জানতে হবে এমন নয় কিন্তু।
১০) আগের লিখায় তোমাদের ড্রেস কোড উল্লেখ করেছি এবং আবারো বলছি অড লুকিং কোন ড্রেস পরে যাবা না। তুমি অভ্যস্থ না হলেও শুধুমাত্র ইর্ন্টাভিউ এর খাতিরে অফিসিয়াল ড্রেস পড়ে যাবা। তবে ড্রেসকোড অর্গানিজেশান টু অর্গানিজেশান ভেরি করে। যেমন কমার্শিয়ার অর্গানিজেশান হাইলি ড্রেস মানে স্যুটেড বুটেড পছন্দ করে সেখানে এনজিও বা ডেভলাপিং অর্গানিজেশান ড্রেস নিয়ে মাথা ঘামায় না।
১১) অবশ্যই মোবাইল বন্ধ করে যাবা। এমনকি ব্রাইবেট করে ও যাবা না। জাস্ট সুইস অফ্ । তুমি এমন কোন ভিআইপি না যে ৩০ মিনিট মোবাইল অফ থাকলে দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবা।
১২) অনেক হাত নিয়ে খুব বিব্রত অবস্থায় থাকে, কোথায় রাখবে ভেবে পায় না। সাধারনভাবে তুমি টেবিলের উপর হাত রাখলে খুব ভালো হয়তো দেখায় না তাই সোজা হয়ে বসে কোলের উপরই রাখো হাতটা। তবে তুমি যেভাবে কম্ফোর্ট ফিল করো সেভাবেই রাখবা।
১৩) হাসি খুশি থাকার চেস্টা করবা। মুখ গম্ভীর যেন পৃথিবী শাসনের ভার তুমি বইছো এমন ভাব ধরে থাকবা না। যতটুকু লাইভলি থাকা যায় ততটুকু থাকবা। তাই বলে বোকার মতো সারাক্ষন হাসি দিয়েও থাকবা না।
১৪) আবার ডিজুস স্টাইলে ও থাকবা না। এমন ভাব নিবা না যে টেবিলের ওপারে যারা বসে আছে সব রাম ছাগল আর তুমিই সবজান্তা শমসের । হাহাহাহা
১৫) আগের পর্বে বলেছি প্রয়োজনীয় কাগজ যদি চায় তা সঙ্গে নিবা। যদি দেখ কোন কাগজ তোমার সাথে নেই তাহলে তা আগেই সরি বলে তা উল্লেখ করবা। সাধারনত কিছুই দেখতে চায় না তারপর ও যদি চায় তাহলে তা আগে থেকেই সিরিয়াল অনুসারে সাজিয়ে রাখবা ও দেখাবা।
১৬) ভালো কথা হাতে পানি রাখবা। অনেকের নার্ভাসনেস থেকে পানি পিপাসা পায় তাই বোর্ডে ঢুকার আগে এক ঢোক পানি খেয়ে নিবা। তাই বলে এমন পানি খাবা না যে বার বার টয়লেটে দৈাড়াতে হয়।
সবার শেষ কথা হতাশ হবা না বা নার্ভাস হবা না কিছুতেই আর আত্ববিস্বাস হারাবা না। জয় তোমার হবেই শুধু দরকার একটু ধৈয্য আর চেস্টা। চাকরীর বাজার এখন খুব কঠিন ও কম্পিটেটিভ। তাই চাকরী করাই যদি তোমার লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে চেস্টা করে যাও। আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকো। একদিন না একদিন সুযোগ তোমার মিলবেই।
তবে আরেকটা কথা, চাকরীর বিকল্প অনেক কিছুই আছে তার চেস্টা করতে পারো যদি চাকরীই তোমার প্রধান উদ্দেশ্য না হয়ে থাকে। পাছে লোকে কিছু বলে বা এ কাজ করলে প্রেস্টিজ যাবে এ ধরনের চিন্তা না করাই ভালো। যাই করো না কেন মনোযোগ দিয়ে, সৎ ভাবে, সিনসিয়ারলি করবা..... সফল তুমি হবেই। জানি সেটা অনেক কঠিন..... বেকার বসে থাকা, সবার কটু কথা, গার্ল ফ্রেন্ড এর বৎসনা, মায়ের কাছে হাত পাতা........ তারপর ও বলবো ধৈর্য্য ধরো, জয় তোমার নিশ্চিত।
আগের পর্ব যদি পড়তে চাও...
বেকার বন্ধুদের জন্য ফ্রি উপদেশ - (ইন্টারভিউ প্রসেস) ........ পর্ব-১০
আর হাঁ, এটাই কিন্তু শেষ পর্ব। আমার ঝুলিতে যতটুকু বিদ্যা ছিল তা শেষ। তারপরও আমি বেকারত্ব নিয়ে সবসময় লিখার চেস্টা করে যাবো । আশা করি সরকার বেকারদের নিয়ে একটু ভাববে .... এদিকে নজর দিবে ও যুগপোযোগী একটি প্রকল্প হাতে নিবে যাতে ওদের কিছুটা হলে ও কস্টটা লাঘব হয়।
আহ্ আমাদের এতো এতো জনসংখ্যা .. এদের যদি একটু কাজে লাগানো যেত তাহলে এত দিনে এ দেশ মালয়শিয়া বা সিঙ্গাপুর হতো.........। অনেক দু:খে কথাটা বললাম।
যে যেখানে যে অবস্থায় থাকেন খুব ভালো থাকেন এ প্রত্যাশায়।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৩