প্রতিটি শিশুই কাঁদা মাটির মতো তাই ওদেরকে যদি উপযুক্ত শিক্ষা এখনই না দেই তাহলে তাদের ভবিষ্যত এ তার উফেক্ট পড়বে।। আর ওদের ভবিষ্যত খারাপ তো আমরা ধ্বংসের কিনারায়............
প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে সত্য বলাকে অনেক অনেক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এবং মিথ্যে বলাকে সবচেয়ে বড় পাপ বলা হয়েছে। এমন ও বলা হয় মিথ্যাই সকল পাপের শুরু। দুনিয়ার যত খুন খারাবি, চুরি ডাকাতি, ঘুষ বাটপারি.... সব কিছুর শুরুই হয় মিথ্যা দিয়ে। তাই মিথ্যে না বলা ও সত্য বলার অভ্যাস গডে তুলতে হবে।
সন্তানকে ছোটবেলা থেকে সততা, সত্যবাদিতা শেখানো বাবা-মায়ের দায়িত্বের মধ্যে একটি। কারন পরিবার থেকেই শিশুর বেড়ে উঠা, শিশুর অ্ভ্যাস গড়ে উঠা। ভালো অভ্যাসগুলো ছোটবেলা থেকে শিশুর মাঝে তৈরি করতে না পারলে ছোট ছোট ভুলগুলোই শিশুর পরবর্তী জীবনে বড় কোন ভুলের কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে বা বড় কোন অপরাধের শুরু হতে পারে।
তিন/চার বছর বয়স থেকে শিশুরা মিথ্যে বলে। তবে সেটা যতনা মিথ্যে তার থেকে তার মনের কল্পনা বেশী। যেমন, আপনার শিশু হয়তো আপনার কাছ থেকে কোন খেলনা আব্দার করছে আর আপনি দিতে রাজি না। তাই সেটা সে আদায় করার জন্য কোন বন্ধুর উদাহরন টানলো। দেখা গেল সেটা পুরোটাই মিথ্যে। কাজেই মিথ্যে আর কল্পনার মধ্যে পার্থ্যক্য থাকবে। তাই বলে মিথ্যে কল্পনা ও গ্রহন যোগ্য নয় কারন তা থেকে ও সে মিথ্যে বলতে অভ্যস্থ হয়ে উঠে।
আবার অনেক সময় আপনার মারের ভয়ে বা আত্মরক্ষার কৈাশল হেসেবে মিথ্যে বলে সেটা ও ঠিক নয়। আপনার চেস্টায় শিশুরা সত্যবাদী যুধিস্ঠর হয়ে উঠবে তা যেমন ঠিক নয় তেমনি আপনি যদি এ সত্য বলা অভ্যাসের দিকে নজর না দেন তাহলে দেখা যাবে সে অবলীলায় মিথ্যে বলছে। তা কোনক্রমেই ঠিক নয়।
কি করে শিশুর মাঝে সততা, সত্যবাদিতার মতো গুণগুলো তৈরি করতে পারেন.... সে বিষয়ে কিছু উপায় নিয়ে আসলাম যা আপনার কাজে লাগতে পারে.......
১। সত্য, মিথ্যে এবং কল্পনার পার্থক্য শিশুকে ধরিয়ে দেন। কাছের মানুষ হিসেবে আপনি খুব সহজেই তা ধরতে পারবেন এবং সুন্দরভাবে তাকে মিথ্যের খারাপ দিক বা সত্য বলায় সাহসী করে তুলেন। সবসময় সত্য বলার উৎসাহ দিন তা যতই অপ্রিয় হোক না কেন।
২। শিশুকে কখনো সরাসরি এ কথাটি বলবেন না যে “তুমি মিথ্যেবাদী”। শিশুদের কিন্তু মান অপমান বোধ অনেক বেশী, এতে করে সে অপমানিত বোধ করে জেদের বশে বারবার একই ভুল করতে পারে। তাকে খুব শান্তভাবে আদর করে বুঝিয়ে বলুন যে সে যা করছে তা ঠিক করছে না কিংবা তাকে সত্য বলার পরিবেশ তৈরি করে দিন যাতে সে নির্ভয়ে সত্য বলতে পারে।
৩। যখন আপনি জানতে বা বুঝতে পারেন যে আপনার সন্তান মিথ্যে কথা বলছে তখন কথা ঘুরিয়ে না বলে সরাসরি কথা বলুন। এক কথা বারবার জানতে চেয়ে কিংবা শিশুর সত্যি বলার পরেও তাকে বারবার জেরা করলে আপনার সন্তানের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হবে।
৪। শিশু কেন মিথ্যা বলছে তার কারন খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনারই। সে কি কারণে বা কোন ভয়ে মিথ্যা বলছে তা তার কাছ থেকে বন্ধু সুলভ ভাবে জেনে নিতে চেষ্টা করুন। তাকে অভয় দিন যে মিথ্যা বলার কারন বলে দিলে তার কোন রকম শাস্তি হবে না। এতে করে আপনিও জেনে নিতে পারবেন কি কারনে আপনার সন্তান মিথ্যা কথা বলছে এবং এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
৫। সত্য বলাকে সবসময়ই ভালো চোখে দেখুন, উৎসাহিত করুন। এতে শিশু মিথ্যা বলতে আগ্রহী হবে না। আদর ভালোবাসা প্রিয় হয় বলে সহজেই তাদের সত্য বলার দিকে আকৃষ্ট করা যেতে পারে। এছাড়া ও সত্য বলার জন্য পুরস্কৃত করুন। এতে সে উৎসাহিত হবে সত্য বলার জন্য। তবে অবশ্যই মিথ্যা বলার জন্য খুব ছোট হলে ও পানিশমেন্ট দিন (কথাটা খারাপ শুনালে ও)। যাতে সে অন্যায়টা ধরতে পারে। যেমন আমি আমার শিশুকে মিথ্যে বললে একটা খেলনা বা ঘুরতে যাওয়ার কমিটমেন্ট ক্যান্সেল করি। যাতে ভবিষ্যতে সে অপরাধ না করে।
৬। সন্তানকে বুঝিয়ে দিন মিথ্যা কখনো কাউকে কোন বিপদ থেকে বাঁচাতে পারেনা। বরং বড় কোন বিপদের দিকে ঠেলে দেয়। তাই বারবার যখনই সুযোগ পান শিশুকে বিভিন্ন কৌশলে ব্যাপারটি বুঝিয়ে দিন। এ ক্ষেত্রে কাউন্সিলিং খুবই দরকারী। মিথ্যেকে মিথ্যে বলা শিখবে।
৭। মিথ্যে ছোট আর বড় হোক তা মিথ্যেই থেকে যায়। ছোট ভুল ভেবে সন্তানের কোন রকমের মিথ্যাকেই প্রশ্রয় দেবেন না। এতে সে ভাববে মিথ্যা বলা এমন কোন দোষের কিছু নয় আর ভবিষ্যতে আরও বড় মিথ্যা বলতে সাহস পাবে।
৮। যথা সম্ভব সন্তানের সাথে মিথ্যে বলবেন না। এমন কি তার সামনে অন্য কারো কাছেই না। অনেকে মোবাইলে অবলিলায় মিথ্যে বলে শিশুর সামনে, তারা ভাবে শিশুরা হয়তো বুঝে না। সেটা খুবই ভুল ধারনা, শিশুদের অবজারবেশন পাওয়ার খুবই তীব্র, অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই। তাই সবার আগে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিন। আপনার সত্য বলার অভ্যাস ও চর্চা কখনই বিফলে যাবে না। আমি আপনি যদি আমাদের সন্তানের দিকে এখনই নজর দিই তবে ওরাই এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে কারন ওরাইতো আমাদের ভবিষ্যত।
সবাই অনেক অনেক ভালো থাকেন। শুভ ব্লগিং.............
বি:দ্র: লিখাটির আইডিয়া আমি ফেইসবুকের একটি লিখা থেকে পেয়েছি। যেহেতু লেখকের নাম ছিল না তাতে তাই নাম উল্লেখ করতে পারলাম না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭