somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

করোনা ও ডক্টর Li Wenliang - একজন সত্যিকারের হিরোর গল্প

২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জানি না এখনকার পোলাপান দি এক্স ফাইল সিরিয়ালটার নাম শুনেছে কিনা। আমরা যখন ইউনিভার্সিটিকে পড়তাম তখন দি এক্স ফাইল সিরিয়ালটা বিটিভিতে চলতো। তখনতো আর শত শত চ্যানেল ছিল না তাই ওই এক বিটিভি ই ভরসা ছিল। আমরা হলে পাগলের মতো ওটা দেখতাম। শুক্রবার রাত সাড়ে দশটায় মনে হয়ে দেখাতো। যা বলছিলাম, দি এক্স ফাইল সিরিয়াল হলো প্যারানরমাল জগত নিয়ে গল্প। সেরকম একটা সিরিজে একবার দেখেছিলাম একটা অদ্ভুত রোগ ছড়িয়ে পড়েছে শহরে। এ রোগে আক্রান্ত হলে সে হিংস্র হয়ে যায় আর খুন করে আপনজনকে। কিন্তু কোন সিমটম থাকে না শরীরে কিংবা বাইরে থেকেও বোঝা যায় না যে সে আক্রান্ত। এভাবে পুরো শহর নিস্তব্ধ হয়ে যায়, আতংক ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। কেউই কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না, সবাই সবার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। কেউই জানে না কে সে রোগের শিকার।

এখন ঠিক যেন সেই এক্স ফাইল এর স্যুটিং চলছে সারা পৃথিবীতে। কেউই কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না! কে তার শরীরে এ জীবাণু বহন করছে সে নিজেই জানে না যতক্ষন না কোন সিমটম দেখা দিচ্ছে। এবং সিমটম ছাড়া বা সম্পূর্ণ সুস্থ্য শরীরেও এ জীবাণু বহন করা সম্ভব। এবং সে সুস্থ্য ব্যাক্তিটি অনায়েসে অন্য রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তিকে সহজেই করোনা ট্রান্সমিট করতে পারে। যা তার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে সহজেই। সমস্ত পৃথিবী থমকে গেছে। একবিংশ শতাব্দীতে এতো এতো বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে ও এরকম মহামারি আমাদের জীবনকে থমকে দিয়েছে।

গত ডিসেম্বরে Wuhan hospital এর ডক্টর Li Wenliang এর কাছে ৭ জন লোকাল সীফুড মার্কেটের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগী আসে। যাদের সবার একই সিমটম ছিল। তাদের সিমটম দেখে উনিই সম্ভাব্য আউটব্রেক হতে পারে বলে ধারনা করেন। এরপর তাঁর মেডিকেল স্কুল এ্যালাইমনি গ্রুপে Chinese messaging app WeChat এর মাধ্যমে সবাইকে জানান। এবং এটি ব্যাপক আকারে শেয়ার হবার পর চাইনীজ সরকার লী কে আটক করে এবং মিথ্যা খবর ছাপানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করে। তাঁকে মুচলেকা দিয়ে খবরটি উইড্রো করতে বলে ও ভবিষ্যতের জন্য হুশিয়ার করে। তখন কেউই জানতো না এটি কিভাবে ছড়ায় বা এর প্রতিষেধক কি? তারপরের ইতিহাস সবারই জানা কিন্তু বাচঁতে পারেননি ডক্টর Li Wenliang। ২১ জানুয়ারীতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৭ই ফেব্রুয়ারীতে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।............ স্যালুট তোমাকে!

সমাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র যাই বলা হোক চাইনীজ সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এ খবর প্রথমেই বিশ্ববাসীকে জানতে দেয়নি। কিন্তু যখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায় ও লোকজন মৃত্যুভয়ে পালাতে তখন থাকে চাইনীজ সরকার লকডাউন এর ঘোষনা দেয়। কিন্তু ততদিনে যা হবার তা হয়ে গেছে। যারা পালিয়ে Wuhan ছেড়েছে তারা রোগটি ছড়িয়ে দেয় সারা বিশ্বে। আজ যদি চাইনীজ সরকার প্রথমেই ডক্টর Li Wenliang এর কথা শুনে তাঁকে নিয়ন্ত্রন না করে রোগ নিয়ন্ত্রনে এগিয়ে আসতো তাহলে হয়তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।

ঠিক একইভাবে সে ভুল করে ইতালি। হয়তো চীন থেকে পালিয়ে আসা অনেক ইতালীয় চাইনীজরা সহজেই ছড়িয়ে দেয় পুরো ইতালীতে। যেহেতু চাইনীজ খবর খুব একটা বাইরে আসে না তাই ইতালি সম্পূর্নভাবে বিষয়টির গুড়ুত্ব উপলব্ধি করতে ব্যার্থ হয়। আর সে ভুলের মাশুল দিচ্ছে হাজার হাজার নাগরিক। এখন দেখতে পাই লাশ দাফনের গাড়ির মিছিল।

সেই একই ভুলও আমরা করেছি এবং করছি। কিন্তু কেন আমরা সে একই ভুল করেছি?? গত জানুয়ারীর আউটব্রেক আমরা মার্চে এসেও কেন গুড়ুত্ব দেইনি? হয়তো এর কারন হতে পারে ১৭ই মার্চে পূর্ব ঘোষিত মুজিব শত বার্ষিকী পালনে ঝামেলা হতে পারে এই ভেবে। কারন মুজিব শত বার্ষিকী পালনের মাধ্যমে নেতারা কে কত চামচামী করতে পারে তার প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদেরকে বঞ্চিত করতে চায়নি (মন্ত্রীদের বক্তব্য শুনে তাই মনে হচ্ছে)। আবার হতে পারে যাদের এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় তারা হয়তো জিপিএ ফাইভের ছাত্র-ছাত্রী (কারন তারা এর গুড়ুত্ব অনুধাবন করতেই ব্যার্থ হয়)। কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে এই খারাপ নিউজটা দিয়ে কেউই নিজের মাথাটা গিলোটিনে আনতে চায়নি।

আমি আশ্চর্য্য হই এই ভেবে যে একটি দেশের ক্ষমতার চেয়ারে বসা একটি লোকও কি জানে না এ রোগের টেস্ট করার জন্য কিছু কিট লাগে, যারা সেবা দিবে তাদের নিজেদের প্রটেকশান লাগে, যেহেতু শ্বাসকষ্টজনিত রোগ তাই তারজন্য অক্সিজেন লাগে, সবার মাক্স লাগে, গ্লাভস্ লাগে...................। হায়রে দেশ!!!

এমন কি আমরা এতোটাই গরীব যে ২৫০০ টাকার ডাক্তার/নার্সদের জন্য বিশেষ পোষাক কেনার ও সামর্থ্য রাখি না। এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তারদেরকে নাকি নির্দেশ দেয়া হয়েছে নিজেদের ড্রেস কেনার জন্য। এখন একজন ডাক্তার/নার্স নিজকে বাচাঁনোর জন্য পিপিই কিনতে বাধ্য হচ্ছে। তারা সেবা ও করবে, নিজেদেরকে ঝুঁকিতেও ফেলবে আবার নিজের টাকায় পিপিই ও কিনবে............. হায় সেলুকাস কি বিচিত্র এ দেশ!

তবে যাই হোক, আমরা এখন বিপদ মাথায় নিয়ে আছি। এ বিপদ থেকে কিভাবে পরিত্রান পাবো তার পথ আমাদেরকে ভাবতে হবে। আমার আগের লিখায় কানাডার উদাহরন টেনে ছিলাম। আবারো বলি, প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো শুধু একা নয় তার সাথে এগিয়ে এসেছে বিরোধী দল ও ব্যবসায়ীরা। মদ নয় তৈরী হচ্ছে হ্যান্ডস্যানিটাইজার, অন্য পণ্য নয় তৈরী হচ্ছে হ্যান্ডস গ্লাভস্ , পিপিই.................। এ পথ ধরে আমরা কি কিছু করতে পারি না!

- আমরা কি কাজে লাগাতে পারি না আমাদের গার্মেন্টস্ ফ্যাক্টরীগুলোকে বা অন্যান্য ফ্যাক্টরীগুলোকে? দ্রুত তৈরী করতে পারি দেশীয় উপায়ে পিপিই কিংবা গ্লাভস্ ?
- একটা ফান্ড কি তৈরী করতে পারি না গরীব অসহায় মানুষগুলোর জন্য যাদের কাজ নেইতো ঘরে খাবার নেই?
- রেশন বা এ ধরনের সাহায্য কি চালু করতে পারি না?
- সকল ব্যবসায়ী বা রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা কি কন্ট্রিবিউট করতে পারে না যাতে কোনরকমে খেয়ে বেচেঁ যায় ওই রিক্সাওয়ালা/ দিনমজুর?


সবার শেষ কথা যে যেভাবে পারেন সাবধান থাকেন।
-সেরকম কোন উপসর্গ দেখা দিলে প্লিজ নিজেকেই নিজে বন্দী করে ফেলুন। (কোয়ারাইন্টেন শব্দটা মানে আমাদের দেশের সব শ্রেণীর মানুষ না ও বুঝতে পারে)। আপনার একটু সাবধানতার জন্য হয়তো বাচঁতে সাহায্য করবে আপনার প্রাণপ্রিয় বাবা-মাকে, আপনার সন্তানকে।
-কিছুদিনের জন্য আড্ডা, দাওয়াত, মসজিদে নামাজ পড়া, ওয়াজ মাহফিলে যোগদান বন্ধ রাখি। (আখেরাতের কাজ কিছুদিন ঘরে করলে এমন কিছু কি ক্ষতি হবে?)

শেষ খবর হলো, ধর্ষনের অভিযোগে অভিযুক্ত পরিচালক হার্ভে উইনেস্টাইন ও করোনায় আক্রান্ত। জেলে থেকেও রক্ষা হয়নি তার।

ভালো থাকুন সবাই আর, ড: এম এ আলী, আহমেদ জী এস, খায়রুল আহসান,শের শায়রী, সোনাবীজ অথবা ধুলোবালিছাই, চাঁদগাজি, নূর মোহাম্মদ নূরু ভাইরা যারা নিজেদেরকে সিনিয়র হিসেবে ভাবতে ভালোবাসে। আপনারা আরেকটু বেশী সাবধানে থাকবেন। নিজেকে বন্দী রাখুন আর নতুন নতুন লিখা লিখুন।

আমি সবসময়ই বিশ্বাস রাখি আর সব কিছুর মতো আমরা অবশ্যই এ ভাইরাসকে রুখে দিতে পারবো, শুধু সময়ের অপেক্ষা।


সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:১৪
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

আমরা সবাই জানি, ইরানের সাথে ইজরায়েলের সম্পর্ক সাপে নেউলে বললেও কম বলা হবে। ইরান ইজরায়েলকে দুচোখে দেখতে পারেনা, এবং ওর ক্ষমতা থাকলে সে আজই এর অস্তিত্ব বিলীন করে দেয়।
ইজরায়েল ভাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নগ্ন রাজা কর্তৃক LGBTQ নামক লজ্জা নিবারনকারী গাছের পাতা আবিষ্কার

লিখেছেন মুহাম্মদ মামুনূর রশীদ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪০

LGBTQ কমিউনিটি নিয়ে বা এর নরমালাইজেশনের বিরুদ্ধে শোরগোল যারা তুলছেন, তারা যে হিপোক্রেট নন, তার কি নিশ্চয়তা? কয়েক দশক ধরে গোটা সমাজটাই তো অধঃপতনে। পরিস্থিতি এখন এরকম যে "সর্বাঙ্গে ব্যথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×