somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

জীবন যেখানে যেমন: এবারের পর্ব: আমার রান্নাবান্না..............

১৩ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার মা কোনকালেই আমাদেরকে দিয়ে রান্নাবান্না করানো নিয়ে খুব একটা উৎসাহ দিতেন না। তারপরও মাঝে সাঝে যখন বাকি তিনবোন বিশেষ করে মেঝআপা এটা সেটা রান্নার ট্রায়াল দিতো তখনো আমি আশেপাশে ভিড়তাম না, এক'শ হাত দূরে থাকতাম তার থেকে। সবাই হেল্পের জন্য ডাকাডাকি করলে বলতাম, চাকরী করে প্রথমই একটা বাবুর্চি রাখবো তাই রান্না নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই আমার।

যাহোক, নিজের সংসারে আসার পর প্রথম থেকেই কাজের এ্যাসিসটেন্টরাই ছিল আমার ভরসা। ওরা যাই খেতে দিতো তাতেই আমি মহা খুশি হয়ে যেতাম। কখনোই ওদের রান্না নিয়ে বাজার নিয়ে কমপ্লেইন করি নাই। কারন কি রান্না হবে, কিসের সাথে কি দিয়ে রান্না হবে তা আমার কাছে অংকের চেয়ে জটিল মনে হতো। রসুন যখন বাটা হতো তখন আমি ঘর থেকে পারলে বের হয়ে যেতাম কারন এর গন্ধ আমি সহ্য করতে পারতাম না, পিয়াজ কাটা ছিল পৃথিবীর জটিল কাজের একটা, কাঁচা মাছ মুরগী দেখলে গা গুলায়ে আসতো। তাই এগুলো থেকে যথা সম্ভব দূরে থাকতাম।

অনেকেই কথায় কথায় কাজের মেয়েদের নিয়ে কমপ্লেইন করতো, ওদের অপচয় নিয়ে কথা বলতো কিন্তু আমি এ জীবনে কখনো তা করি নাই। ওরা কি অপচয় করলো, নাকি সব ফেলে দিলো তা নিয়ে কখনই মাথা ব্যাথা করি না। ওরা যে আমাকে খেতে দিচ্ছে এবং আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে হচ্ছে না এটাই ছিল আমার জন্য বিশাল ব্যাপার। অনেকে শখের বসে এটা সেটা রান্না করে আমি তা কখনই তার ট্রাই করি নাই। বাসার দাওয়াত এর বড় অংশই সামাল দিতো কেউ না কেউ, হয় মা না হয় শাশুড়ি না হয় মামী কিংবা এক আপা ছিলেন আমার যিনি সবসময়ই আমার প্রয়োজনে ছুটে আসতেন। আমি শুধু আশে পাশে ঘুরাঘুরি করতাম, এটা সেটায় হাত লাগাতাম কিন্তু কোন রান্নার দায়িত্ব নেই নাই কখনই।

কিন্তু হায়, জীবনের সব রান্না না করার পাপের প্রায়শ্চিত্ত শুরু করলাম বিদেশে আসার পর, প্রায় মাথা খারাপ অবস্থা হয়ে গেল। এখানে এসে বুঝে গেলাম নিজেকেই বাজার করতে হবে, ধোয়াধুয়ি নিজেকেই করতে হবে, বাটাবাটি কাটাকাটি নিজেকেই করতে হবে, রান্না বান্না নিজেকেই করতে হবে সাথে ঘরদোর পরিস্কার, গোছানো, বাথরুম পরিস্কার ফ্রি........। আর চাকরী, পড়াশোনা, বাচ্চাদের টেককেয়ার সবতো আছেই!!!

এ অবস্থায় মা'ই ছিলেন এ সময়ের ত্রানকর্তা। চুলায় ভাত বসিয়ে মাকে প্রায় দশবার ফোন দিতাম।

মা, দুই পট চাল দিয়েছি, কতটুকু পানি দিবো?
ভাত যে ফুটেছে তা কিভাবে বুঝবো?
একটা ভাত চেক করলেই কি বুঝবো সবগুলো ভাত হয়েছে?
সব্জী কিভাবে কাটবো, ক'বার ধুবো, কিভাবে রান্না করবো? তেল কতটুকু, মরিচ কতটুকু, রসুন কতটুকু, লবন কতটুকু........?

মা আমার অবস্থা জানে তাই এখানে আসার সময় মাংসে দেয়ার মতো সব মসলাই গুড়ো করে প্যাকেট করে দিয়েছিলেন। সাথে মিজারিং স্পুন। তাই মাংস রান্না নিয়ে বরং কম ঝামেলা হলো। এক কেজি মাংসে সব কিছু এক চামচ করে দিবো আর আদা দুই চামচ, ব্যাস হয়ে গেল মাংস রান্না।

যেহেতু জীবনের প্রথম রান্নাবান্না তাই পানিতে এরকম একটানা কাজ করে হাতের বারোটা বেজে গেল। সুন্দর করে নিলপালিশ দেয়া মেনিকিউর করা সব নখের চৈাদ্দটা বেজে গেল। নখ সব ভেঙ্গে গেল, আঙ্গুলের চামড়া ছিলে একাকার, দা বটি ছুরিতে হাত কেটে দফারফা, আগুন তেলে হাত পুড়ে ছ্যাড়াব্যাড়া। আর সব মিলিয়ে আমার পাগল হবার অবস্থা, জীবন পুরোপুরি তেজপাতা। এসব দেখে বান্ধবী তানিয়া বুদ্ধি দিলো হাতে লং গ্লাভস্ পড়তে, ধোয়াধুয়ি থেকে বাচঁতে ওয়ানটাইম গ্লাস প্লেট কিনে এনে দিলো আর বাজার থেকে ও সব মসলা পেস্ট কিনে এনে দিলো।

এবং ধীরে ধীরে এ জীবনের সাথে মানিয়ে চলার চেস্টা করতে লাগলাম এবং বুঝতে পারলাম কাজটা যতটা কঠিন মনে করেছিলাম ততটা কঠিন না। একটু সাবধান হলেই হাতপা ঠিক রেখেই রান্না শেষ করতে পারবো। আর তাই সাহস করে স্বল্প পরিসরে এটা সেটা রান্নার এক্সপেরিমেন্ট শুরু করলাম। এবং আমার রান্নার একমাত্র টেস্টার সবসময়ই আমার ছেলে। ও খেয়ে বলে খারাপ না মা। ওর উৎসাহে মাস ছয়েক এর মাথায় মেয়ের জন্মদিন সাহস করে আশেপাশের ক'জনকে দাওয়াত দিয়েই ফেল্লাম। গরু, মুরগী, সব্জী নিজে করার প্লান করলেও পাশের এক ভাবীকে অনুরোধ বরলাম বিরিয়ানিটা করা দেখিয়ে দিতে। কারন এটা আমি এখনো পারি না। যাইহোক সব কিছু রেডি করে যখন উনাকে ডাকলাম তখন উনি জানালো যে উনি পারবেন না করে দিতে। মাথায় মোটামুটি বাজ পড়লো।

যাহোক এরপর থেকে শুরু করলাম রান্না শেখার এ্যাকশান। কি এমন কঠিন কাজ যে পারবো না, নিজেকে প্রবোধ দিলাম। তারপর ইউটিউব ঘেটে ঘেটে শুরু করলাম বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট....., কেক, মিস্টি, বিরিয়ানী, কাচ্চি, চিকেন মঞ্চুরী, বারবিকিউ.......... । যথারীতি টেস্টার আমার ছেলে। এভাবে এক সময় বুঝে গেলাম রান্না অংকের মতো জটিল বিষয় হলেও যথাযথ মিক্সারটাই হলো আসল। মিক্সার আর সাথে কনফিডেন্স। ব্যাস তৈরী হয়ে যাবে যেকোন কিছু। তাই ভয়টাও ধীরে ধীরে কমতে লাগলো।

আমি এখনো নিজেকে মাস্টারসেফ বলার মতো অবস্থা মোটেও না কিন্তু আমার মতো যারা রান্নাকে ভয় পান তাদেরকে সাহস দিচ্ছি, বিষয়টা যতটা জটিল শোনায় ততটা জটিল নয় কিন্তু! ওই যে বল্লাম মিক্সার আর সাথে কনফিডেন্স ....... কিছু একটা তৈরী হবেই।


উৎসর্গ: লিখাটা লিখেছি বর্তমানের অস্ট্রেলিয়া মাস্টারসেফ প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডে আসা সেকেন্ড জেনারেশান বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ান মেয়ে কিশোয়ার চৈাধুরীকে দেখে। কি আবেগ নিয়ে প্রতিটা পর্বের রান্না সে করছে এবং বারবার দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার চেস্টা করেছে প্রতিটি রান্নায় তা দেখে নিজেরেই আবেগ ধরে রাখতে পারিনি। আমরা কিছু পারি বা না পারি কিন্তু দেশের প্রতি বিশাল আবেগ ধরে রাখি সর্বত্র।

We proud of you Kishwar....

আগের পর্ব যদি পড়তে চান......
জীবন যেখানে যেমন................ এক টুকরো পথের জীবন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২১ সকাল ৯:৩৭
৩৮টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×