somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

কানাডায় গাড়ি এক্সিডেন্ট ও একজন বাবা কুমার বিশ্বজিত

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কানাডার এক্সিডেন্ট খুব কমন একটি বিষয়। ওয়েদার যেমন দায়ী তেমনি যেমন তেমন ভাবে গাড়ি চালনাও এর জন্য দায়ী। কিন্তু সব ছাড়িয়ে গত তিনদিন আগের এক্সিডেন্ট এর ঘটনাটি মারাত্বক নাড়া দিয়েছে এখানকার সবাইকে। দু'জনই ঘটনাস্থলে, একজন তার কিছুক্ষন পর মারা যায় ও বাকিজন এখনো আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে। ২০-২১ বছরের চার তরুন-তরুনীর এমন মর্মান্তিক পরিনতি কোনভাবেই যেন মানতে পারছে না কেউই। পুরো কানাডা জুড়ে চলছে বিতর্ক এ এক্সিডেন্টকে ঘিরে। একপক্ষ গাড়ি চালক কুমার বিশ্বজিতের ছেলে নিবির কুমারকে দায়ী করছে, আরেকপক্ষ বিষয়টি স্বাভাবিক এক্সিডেন্ট হিসেবে নিচ্ছে।

এতো তর্ক বিতর্কের কারন, এ পুরো এক্সিডেন্টটিতে অনেকগুলো বিষয় চলে এসেছে। আমি আমার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা দেবার চেস্টা করছি। যেমন:

১) ড্রাইভিং এর নিয়ম না মেনে নিবির হাইওয়ের মতো রাস্তায় হাইস্পিডে গাড়ি চালাচ্ছিল। বিশেষকরে রেম্পে সবসময়ই ৪০-৬০ স্পিড রাখতে হয় সেখানে নাকি ১৪০ স্পিডে ছিল গাড়িটি। যার কারনে নিয়ন্ত্রন রাখতে পারেনি ও দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে আগুন ধরে যায়।

২) যতটুকু জেনেছি নিবির এর আগেও বেশ বড় এক্সিডেন্ট করেছে। যার কারনে তার লাইসেন্স বা গাড়ি কেনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। বাবা কুমার বিশ্বজিত অন্য কোনভাবে ছেলের জন্য গাড়ি কেনার ব্যবস্থা করেন কিছুদিন আগে। তাই অনেকে স্পয়েল্ড সেলিব্রেটি কিডস্ হিসেবে বাবা-মাকেও দায়ী করছে। বাংলাদেশ থেকে যেসব বাচ্চারা আসে তারা ধনী পরিবার থেকে আসে তারা দেশে থাকতেই নিয়ম না মানার মাঝে বড় হয় এবং কানাডায় এসেও অব্যাহত রাখে অনেকেই।

এরকম অনেকগুলো পয়েন্টই উঠে এসেছে কিন্তু সবগুলো নিয়ে আসছি না লিখাটা বড় হয়ে যাবে। আপাতত: এ কয়টা পয়েন্ট নিয়েই কথা বলি।

১) কানাডার ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নিয়ম কানুন: কানাডার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া খুব কঠিন কিছু নয়। তিন ধাপে পরীক্ষা দিয়ে সহজেই ফুল লাইসেন্স পেতে পারে ১৬ বছরের উপরে যে কেউই। কিন্তু কঠিন কাজ হলো নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো। এখানে প্রতিটি রাস্তায় স্পিড লিমিট করে দেয়া, রেড লাইট ক্যামেরা দেয়া, হাইওয়ে/রেম্প/লোকাল সবকিছুর স্পিড এর ভিন্নতা দেয়া। কেউ যদি তা না মানে তাহলে সে এক্সিডেন্ট করবেই। যা হয়েছে এদের ক্ষেত্রে।

এই রাস্তায় আমি প্রায়ই ড্রাইভ করি। বিশেষকরে হাইওয়েতে কোনভাবেই ফাজলামো করা যায় না। সামান্য ভুলেই এক্সিডেন্ট হয়। সেখানে রেম্পে ১৪০ স্পিড মানে মারাত্বক বিপদজনক। আর এ রাস্তায় কার রেসিং করা রীতিমত পাগলের কাজ।


২) কানাডায় যদি একবার কেউ নিজের দোষে মানে নিয়ম না মানার কারনে এক্সিডেন্ট করে তাহলে তার খবর হয়ে যায়। লাইসেন্স বাতিল, ইন্সুরেন্স বাতিল, জরিমানা, ডিমেরিটস পয়েন্ট সহ অনেক ধরনের পানিশমেন্ট আছে। একবার যদি লাইসেন্স বা ইন্সুরেন্স বাতিল হয় তা ফিরে পাওয়া অনেক কঠিন। আর এ বিষয়গুলো মানা হয় সেফটির জন্য্। এখানে শুধু ড্রাইভারের সেফটিই নয়, আশে পাশের সবার সেফটি বিষয়ও জড়িত। যেমন সেদিন যদি নিবিরের পিছনে বা সামনে কোন গাড়ি থাকতো তাহলে সে গাড়িও এক্সিডেন্ট করতো। হতাহতের সংখ্যা আরো বেশী হতো।

কানাডায় বড় হওয়া বাচ্চারা এ নিয়ম নীতির বিষয়গুলো খুব ভালো করেই জানে ও বুঝে ও মানে। কারন তাদেরকে স্কুল থেকেই তাদের মগজে গেঁথে দেয়া হয়। তাদের পরিবারও বিষয়গুলো জানে বলে বাচ্চাদের আবদার রাখতে অন্যায় কিছু করে না। চাইলেই ছেলেকে গাড়ি কিনে দেয় না বা ছেলে-মেয়েও তা চায় না। নিজের ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করে। আর সর্বোপরি আইনের প্রতি, নিয়ম নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রাখে সবাই। বাতিল লাইসেন্স এর উপর বাবা-মা ছেলেকে অন্তত গাড়ি কিনে দেয় না।

যদি সত্যিই বাবা কুমার বিশ্বজিত ছেলের লাইসেন্স বাতিলের বা আগের এক্সিডেন্ট এর খবর জানার পরও ছেলের জন্য গাড়ি কেনার ব্যবস্থা করেছে তাহলে তাকে আমি দোষী বলবো। স্পয়েল্ড সেলিব্রেটি কিডস্ হিসেবে ট্রিট করবো।

কানাডার বাচ্চাদেরকে দেখি ১৬ বছর হলেই নিজেই কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নিজের খরচ, কলেজ ফি নিজেই জোগাড় করে। খুব কমই বাবা-মা থেকে টাকা পয়সা নেয়। আমার ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, আমি একটা পয়সাও ছেলেকে দেইনি। উল্টো ছেলে আমার বাজার করে দেয় মাঝে মাঝে। আমাদের দেশের বড়লোক বাচ্চাদের মতো বাবা-মায়ের পয়সায় ফুটানী করে না। বাবার পয়সা খরচ করে বলেই এদের জীবনের প্রতি মায়া থাকে না, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না।

এ ঘটনা আমাদের দেশের ধনী বাবা-মাদের জন্য একটা উদাহরন হয়ে থাকবে। যারা সন্তানদেরকে আতি আদরে নষ্ট করছে তাদের জন্য একটা শিক্ষা হয়ে থাকবে।

সব শেষে অনেক অনেক কষ্ট লাগছে বাচ্চাগুলোর জন্য। আর নিবির বেঁচে বাবা-মায়ের মাঝে ফিরে আসুক এ প্রার্থনা থাকলো।

পরিশেষে প্রিয় আসমা আহমেদ মাসুদের একটি চমৎকার ইন্টারভিউ এড করলাম। উনার সাথে আমি পুরোপুরি একমত।

আসমা আপুর সাক্ষাতকার


সোহানী
ফেব্রুয়ারী ২০২৩
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪৭
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×