somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সোহানী
হাজার হাজার অসাধারন লেখক+ব্লগারের মাঝে আমি এক ক্ষুদ্র ব্লগার। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া লেখালেখির গুণটা চালিয়ে যাচ্ছি ব্লগ লিখে। যখন যা দেখি, যা মনে দাগ কাটে তা লিখি এই ব্লগে। আমার ফেসবুক এড্রেস: https://www.facebook.com/sohani2018/

একজন ভয়ংকর চাইল্ড সিরিয়াল কিলার: লুসি লেটভি

৩১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১৫ এর জুন মাস। চেস্টার হসপিটাল, বৃটেনে মাত্রই জন্ম নেয়া সুস্থ্য সবল শিশুটির মৃত্যু হয় রাতে নার্সের তত্ত্বাবধানে । শিশুটির মৃত্যুতে ডাক্তার যথেস্ট অবাক হয় কারন সুস্থ্য শিশুটি এমন কোন জটিল অবস্থায় ছিল না। মৃত্যর পরে দেখা যায় শিশুটির চামড়ার রং ছিল অস্বাভাবিক। ঠিক এর কিছুদিন পরে আরেকটি শিশুর মৃত্যু হয় একইভাবে। এবার ডাক্তারের টনক নড়ে ও কিছুটা ইনভেস্টিগেশান করে দেখতে পায় যে দুটি শিশুর মৃত্যু হয় ২৫ বছরের সুন্দরী নার্স লুসি লেটভি তত্ত্বাবধানে। শিশু ডাক্তার তাঁর সন্দেহের কথা হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে জানান। কিন্তু হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট ডাক্তার এর কথা পাত্তাতো দেইনি উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে নারীকর্মী হয়রানীর অভিযোগ আনে।

২০১৫ জুন থেকে ২০১৬ জুন পর্যন্ত ৮ টি শিশুর মৃত্যু হয় ও আরো ১৫ টি শিশু প্রায় মৃত্যুর অবস্থায় পৈাছে। এতো এতো মৃত্যুর ঘটনা এবং আরো কয়েকজন সহকর্মীর অভিযোগের পরও লুসি লেটভিকে দায়িত্ব থেকে সরানো হয়নি। যদিও সব অভিযোগের পর হসপিটাল কর্তৃপক্ষ নিজেদের মাঝে কিছু সিটিং মিটিং ও ইনভেস্টিগেশান করে। কিন্তু কোথাও লুসি লেটভির বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি বা অভিযোগ আনা হয়নি। এমন কি তাকে শিশু বিভাগ থেকে অন্যত্র সরানোর প্রয়োজনও মনে করেনি কর্তৃপক্ষ। অথচ প্রতিটি মৃত্যৃর সময় সে সেখানে উপস্থিত ছিল বলে প্রমানিত হয়।

২০১৬ জুন মাসে শিশু মৃত্যুর বাৎসরিক রিপোর্টের পর এতো শিশু মৃত্যুর পরিসংখ্যান দেখে দা রয়েল কলেজ অব পেডিয়েট্রেশান এন্ড চাইল্ড হেল্থ হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে এতো শিশুর মৃত্যুর কারন অনুসন্ধান করতে বলে। সে অনুসন্ধানে ও কর্তৃপক্ষ লেটভির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনেনি। আবারো সে জুন মাসেই নিওনেটোলজি বিভাগের প্রধান লুসি লেটভির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনে ও তাকে সেখান থেকে সরাতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে। কিন্তু কর্তৃপক্ষক এতোটাই লুসি লেটভির গুনমুগ্ধ ছিল যে তাকে সেখান থেকে সরানোর অনুরোধ নাকচ করে দেয়। শুধু তাই নয়, দা রয়েল কলেজ অব পেডিয়েট্রেশান এন্ড চাইল্ড হেল্থ ইনডিপেনডেন্ট রিভিউ করে, সেখানেও লেটভির বিরুদ্ধে কোন সম্পৃক্ততা পায়নি।

অবশেষে অনেক অভিযোগ টভিযোগের পর সেপ্টেম্বর ২০১৬ তে হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে লুসি লেটভিকে শিশু বিভাগ থেকে সরিয়ে এডমিনিস্ট্রেশানে ট্রান্সফার করে। এ ট্রান্সফার এর পর লুসি লেটভি মারাত্বক ক্ষেপে যায় এবং সেই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনে। অতপর: হসপিটাল ডিরেক্টর সাহেব অভিযোগকারী ডাক্তার এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়া বোম হোন। তিনি লুসি লেটভির বাসায় যাইয়া তাহার বাবা-মায়ের সহিত দেখা করিয়া হাতে পায়ে ধরিয়া ক্ষমা চান (একটু বেশী বেশী বল্লাম)। আর ডাক্তার সাহেবকে কান ধরে মুচলেকো দিতে বলেন। অতপর: ডাক্তার বেচারা চাকরী হারানোর ভয়ে মাপ চাহিয়া লুসি লেটভিকে পত্র লিখেন। শুধু তাই নয়, লুসিকে প্রমোশন সহ মাস্টার্সে পড়ার জন্য যাবতীয় সহযোগীতার প্রস্তাব দেন ডিরেক্টর সাহেব।

যেহেতু লুসি লেটভি আবারো হসপিটালে জয়েন করেছে তাই বিভিন্ন কনসালটেন্ট পুলিশ ইনভেস্টিগেশান এর জন্য ডিরেক্টর সাহেবকে অনুরোধ করেন। ডিরেক্টর সাহেব হয়তো লুসি লেটভিকে বেশী বেশী খুশী করতে পুলিশ ইনভেস্টিগেশান এ রাজি হয়।

জুলাই ০৩, ২০১৮ তে লুসির বিরুদ্ধে প্রথম চার্জ গঠন করে পুলিশ। এরপর নভেম্বর ১১, ২০২০ সাল পর্যন্ত লুসির বিরুদ্ধে চোর পুলিশ খেলা চলে। একবার তাকে ধরে আরেকবার তাকে ছাড়ে, আবার ধরে আবার ছাড়ে। এরকম করিতে করিতে নভেম্বর ২০২০ এ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হয় যে প্রায় ২২টা হত্যা বা এটেমপ্ট টু মার্ডোরের সাথে জড়িত। অবশেষে, মাত্রই দিন দশেক আগে এই আগষ্ট ২১, ২০২৩ এ লুসিকে সব শিশুর হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে ও যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়। যদিও প্রথমিকভাবে ২২টি শিশুর হত্যার অভিযোগ আনা হয় কিন্তু আরো মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। যেখানে প্রথম নার্স হিসেবে ট্রেনিং শুরু করে সেখানেও দুটি শিশু মারা যায় লুসির উপস্থিতিতে। আরো অনেক ইনভেস্টিগেশান চলছে এ নিয়ে ব্রিটেনে।

এখন প্রশ্ন, কেন এমন একটি ২৩-২৪ বছরের সুন্দরী যুবতী এরকম ভয়ংকর শিশু হত্যাকারী হয়ে উঠেছিল। আর সব সিরিয়াল কিলারের মতো সেও হয়তো আনন্দ পেতো। এমন কি তার মাঝে কোনরুপ কোন অনুশোচনা বা দু:খ ছিল না। তবে লুসি লেটভির ক্ষেত্রে আরেকটি কারন যোগ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়, সেটি হলো পরকীয়া। সে হসপিটালের একজন বিবাহিত ডাক্তারের প্রেমে পড়েছিল সে। প্রতিটি শিশুর মৃত্যুর আগে অথবা পরে সেই ডাক্তারের সাথে টেক্সট বিনিময় করতো সে। শিশুদেরকে অসুস্থ্য বানিয়ে সে ডাক্তারকে কল দিতো। পুরো ট্রায়াল চলাকালীন সে কোন কান্নাও করেনি শুধুমাত্র একবার ছাড়া। যখন সেই পরকীয়া প্রেমিক ডাক্তার তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় তখন সে কান্নায় ভেঙ্গে পরে।

কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিল, এতো এতো অভিযোগের পরও কেন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা গ্রহনতো দূরে থাক উল্টো সে অভিযোগকারী ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল। উত্তরটা কেন যেন একটু উঁকি দিচ্ছে যখন ইউটিউব ভিডিওতে সে ডাক্তারের সাক্ষাতকার দেখলাম। বলাবাহুল্য, সে ডাক্তার একজন ব্রাউন স্ক্রিন ও লুসি লেটভি .............. হায়রে দুনিয়া!!!!!

সোহানী
আগষ্ট ২০২৩

চাইলে ভিডিওটা দেখতে পারেন।
Lucy Letby: A timeline of the most prolific child killer in modern Britain - BBC Newsnight
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২৩ সকাল ১১:০২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×