এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব পগার পার.... এইসব নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের কাম নাই। আসেন মাথা ঠান্ডা করতে একটু ঘুইরা বেড়াই কানাডার কিছু প্রাচীন শহরে....।
সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি: ছবি বাঁকাত্যাড়া কহিয়া লজ্জা দিবেন না। ইহা নাকি আমার সিগনেচার ... বাণীতে মিরোরডল
আচ্ছা Fall Season এর বাংলা কি? শরৎ নাকি হেমন্ত!!! আচ্ছা যাই হোক, এ ফল সিজন আমার অসম্ভব প্রিয়। বিশেষ করে কানাডায়, কারন, না শীত না গরম। শান্তিতে ঘুরাফিরা করা যায়। গায়ে বস্তা পড়ে ঘুরতে যেমন হয় না তেমনি কাপড়-চোপড় ছাড়াও চলতে হয় না। তারচেয়েও আসল কারনটা হলো, ফল সিজন মানেই চারপাশে হলুদ, লাল, কমলা, গোলাপী রঙ এর পাতার ছড়াছড়ি। মনে হয় যেন রুপকথার এক রাজ্য। এ সময়ে প্রায় প্রতিদিন আমি বিকেলে অফিস থেকে সর্টকাট পথে বাসায় না এসে ঘুর পথে বনের মাঝে ড্রাইভ করে বাসায় ফিরি। সে যে এক অদ্ভুত দৃশ্য চারপাশে ঠিক একটা স্বপ্নের রাজ্যে।
কানাডার বেশীরভাগ ছুটি-ছাটাগুলো খুব দারুন। নির্দিস্ট তারিখ না, নির্দিস্ট দিন হিসেবে ছুটি। যেমন, অক্টোবরের প্রথম সোমবার অমুকডে এর ছুটি, মার্চের শুক্রবার আরেক ডে ছুটি।। আর প্রায় সব ছুটিছাটাগুলো সোমবার কিংবা শুক্রবারেই থাকে। যার কারনে শনি-রবি মিলে লম্বা ছুটি যা আমরা লং উইকেন্ড বলি। এমনই এক লং উইকেন্ড, সাথে বাড়তি কিছু ছুটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম কানাডার ফ্রেন্স সিটিগুলোতে ফল কালার দেখেতে।
আপনারা হয়তো জানেন যে কানাডায় দু'টো অফিসিয়াল ভাষা, ইংরেজি আর ফ্রেন্স। সব প্রভিন্সগুলোতে ইংরেজিই প্রধান ভাষা আর ফ্রেন্স হালকা পাতলা চললেও একমাত্র কুইবেক প্রভিন্সে পুরোপুরি ফ্রেন্স চলে, ইংরেজি খুবই কম। এমন কি রাস্তাঘাটের সাইন থেকে শুরু করে সাইনবোর্ডগুলোও ফ্রেন্স এ লিখা। যার কারনে আমার মতো মূর্খদের জন্য কুইবেক প্রভিন্স ঘুরতে যাওয়া মানে মাথায় বিপদ ডাকা। কিন্তু আমার দুই ছেলে-মেয়ে যেহেতু ফ্রেন্স এর অআকখ জানে। তাই তাদের উপর ভরসা করে বিসমিল্লাহ্ বলে বেড়িয়ে পড়লাম ফ্রেন্স সিটি সহ আরো কিছু পুরোনো শহর দেখতে।
প্রথম পর্ব
কিংস্টন সিটি: কানাডার প্রথম রাজধানী
কানাডার প্রথম রাজধানী। তাই কানাডার আদি সভ্যতার নির্দশন দেখতে চাইলে চলে আসতে হবে কিংস্টন সিটিতে। সেন্ট লরেন্স নদীর তীরে এ শহরকে ঘিরে আছে অনেক ইতিহাস। ইউরোপীয়ানরা কানাডায় এসে প্রথমেই এ শহরে বসবাস শুরু করে। তাই কানাডার সভ্যতার গোড়াপত্তন শুরু হয় এ শহর থেকে। পুরোনো সব দালানকোঠা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী এ শহর জুড়ে। কুইন্স ইউনিভার্সিটি, রয়েল মিলিটারী কলেজ, ফোর্ট দূর্গ, থাউজেন্ড আইল্যান্ড টাওয়ার সহ দেখার মতো অনেক অনেক কিছুই আছে এ শহরে। এ পুরোনো দালান-কোঠা দেখতে দেখতে শহরটাতে হাঁটলেই সময় কেটে যায় দ্রুত।
এটা খুব ভালো লেগেছে, পুরোনো দিনের গাড়ির মিটার। কয়েন ফেলে তবেই টিকেট প্রিন্ট করতে হয়।
তবে সব ছাড়িয়ে আমার ভালোলাগে এ শহরের পাশে সেন্ট লরেন্স নদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য দ্বীপ। যাকে থাউজেন্ড আইল্যান্ড বলে। যদিও হাজার হাজার দ্বীপ আছে কিন্তু সরকারী হিসাব মতে ছোট বড় মিলে মোট ১৮৬৪ টি দ্বীপ এ মূহুর্তে রেজিস্ট্রেশান করা। কারন জোয়ার ভাটার সাথে সাথে এ দ্বীপের সংখ্যা বাড়ে কমে। হিসাবটা এরকম, ২ বর্গমিটার এলাকা এবং একটি গাছ থাকলে তাকে দ্বীপের মর্যাদা দেয়া হবে। এ দ্বীপগুলোর কিছু কানাডার মালিকানা, কিছু আমেরিকার। দুই থেকে চার ঘন্টার বোট ক্রুজে ঘুরে বেড়ায়ে যাবতীয় দ্বীপগুলো দেখা যায়। অনেক যুদ্ধের ইতিহাস এ নদীকে ঘিরে। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় নদীর নীচের যুদ্ধের সময় ধ্বংস হওয়া সিপরেকগুলো এখনো একই অবস্থায় আছে। কানাডা বা আমেরিকা দু'পাশ থেকেই লোকজন ঘুরতে আসে এ থাউজেন্ড আইল্যান্ড এর সৈান্দর্য্য দেখতে। বিশেষকরে ফল সিজনে, হলুদ, লাল গাছের পাতার মাঝে মাঝে দ্বীপ ও এর উপর ছোট ছোট ঘর বাড়ি দেখা, এক কথায় অবিশ্বাস্য আকর্ষনীয়।
তবে এ থাউজেন্ড আইল্যান্ড এর সবচেয়ে আকর্ষন হলো বোল্ট ক্যাসেল বা Boldt Castle। জর্জ বোল্টের জীবনের গল্প যেন রোমিও এন্ড জুলিয়েটের গল্প। গল্প চলুন বোল্ট প্রাসাদের সে গল্প একটু জেনে নেই।
১৮৫১ জার্মানে জন্ম নেয়া জর্জ বোল্ট ভাগ্য ফেরাতে আমেরিকায় আসেন মাত্র ১৩ বছর বয়সে। কর্পদশূণ্য জর্জ সম্পূর্ণ নিজের চেস্টায় খুব অল্প বয়সেই হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়েন ১৬ বছরের লুইসের, বোল্ট তখন ২৫ বছর। তার পরের বছরই বিয়ে করেন তারা। তারপর দু'জনের চেস্টাতেই তাদের ব্যবসায় সফলতা আসে। থাউজেন্ড আইল্যান্ডে লুইস সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতো সামারে। তাই প্রতি বছরেই দ্বীপে আসতো পুরো পরিবার কিছুদিন সময় কাটাতে। স্ত্রীর ভালোলাগাকে সন্মান জানিয়ে তার সারপ্রাইজ দিবে বলে ১৮৯৫ তে বোল্ট এ দ্বীপটি কিনে নেন। সে অনুযায়ী ১৮৯৯ সালে প্রাসাদের কাজ শুরু করেন, পরিকল্পনা ছিল ৫ বছরে প্রাসাদটি তৈরীর কাজ শেষ হবে। সে হিসেবে আইল্যান্ডটি ১৯০৪ এ ভ্যালেন্টাইন ডে যা স্ত্রীর জন্মদিনও অর্থ্যাৎ ফেব্রুয়ারীর ১৪ তারিখে দিন নির্ধারন করেন উপহার দেবার। কিন্তু সব কল্পনকে হার মানিয়ে ১৯০৪ এর জানুয়ারীতে ভ্যালেন্টাইন ডে র ক'দিন আগেই স্ত্রী মারা যান। সাথে সাথেই এক টেলিগ্রাম বার্তায় প্রাসাদের সব কাজ বন্ধ রাখেন বোল্ট। ১৯১৬ সালের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কখনো ফিরে আসেননি সে দ্বীপে বা কাজ ও করাননি আর। অসামপ্ত এ কাজটি পড়ে ছিল বছরের পর বছর। ১৯৭৭ Thousand Island Bridge Authority সেটি কিনে নেয় ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তারপর। এটি আমেরিকার মালিকানা তাই কানাডা থেকে দেখতে চাইলে অবশ্যই পার্সপোর্ট দেখিয়ে সেখানে ঢুকতে হবে।
তবে কথা হলো আপনিও ইচ্ছে করলেই সেখানে একটা দ্বীপ কিনতে পারেন। দাম খুব বেশী না, ছোটখাট একটার দাম ২/৩ মিলিয়ন ডলার। তবে চাইলে সেখানে কিছু রেস্টহাউজ আছে তাতে রাত কাটাতে পারেন। যাকগা, আদার ব্যাপারীর জাহাজের খোঁজ খবরের দরকার নাই। আর থাউজেন্ড আইল্যান্ড এর প্যানারমা ভিউ দেখার জন্য কানাডা আমেরিকার বর্ডারে আছে একটা টাওয়ার, প্রায় ৪০০ মিটার উঁচু। এ টাওয়ার থেকে এ নজরে পুরো দ্বীপের রাজ্য দেখা যায়।
আম্রিকা বর্ডারের চেকপোস্টে............
সারাদিন পুরো শহর টইটই করে ঘুরে বেড়ায়ে, বেশ ক'টা মিউজিয়াম ঘুরে ছবি টবি তুলে আমরা চলে গেলাম রাজধানী অটোয়াতে।
আপাতত: এতটুকুই, তবে বেশী দূরে যাবেন না। নেক্সট পর্বে আপনাদেরকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবো রাজধানী শহর অটোয়াতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০২৪ রাত ৩:০৫