মনটা ভীষনরকম খারাপ। গত বছরই দু'জন খুব কাছের বন্ধুকে চির বিদায় দিয়েছি। তাদের মৃত্যুটা কষ্টের ছিল কিন্তু কিছুটা প্রস্তুতি পর্ব ছিল কারন তারা যে অসুখে ভুগছিল তার থেকে ফিরে আসা সত্যিই কঠিন ছিল। তাই শকিং এর মাত্রাটা সহনীয় ছিল বলা যায়। কিন্তু এবারের বন্ধুর মৃত্যুটা ভীষন রকমের শকিং ছিল। যতটুকু দেখেছি সে বরাবরেই যথেস্ট এ্যাক্টিভ ছিল ও আমাদের সব প্রোগ্রামগুলোতে এ্যাটেন্ড করতো। প্রফেশনাল জীবনে বলা যায় বেশ সাক্সেস ছিল। কারন একজন ডক্টরেট প্রফেসর ও Financial Reporting Council (FRC) এর চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে সফল বলতেই পারি। এবং সে সুস্থ্য ছিল বলেই জানতাম। কিন্তু হঠাৎ করে সামান্য হার্ট ইস্যু থেকে ক'দিনের মাঝেই একবারে চলে যাওয়াটা বড্ড হতবাক করেছে।
নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম কেন সে এরকমভাবে হঠাৎ চলে গেল? সে কি একটুও টের পায়নি যে ভীতরে ভীতরে সে ক্ষয়ে যাচ্ছে?
উত্তরটা হলো, আমরা সংসার বা ক্যারিয়ার নিয়ে এতো বেশী ব্যাস্ত থাকি যে অন্য কিছুর দিকে মনোযোগ দেবার মতো সময় থাকে না। এবং এটি আমাদের দেশের প্রতিটা মানুষের জন্য সত্য সেটা পুরুষ কিংবা নারী। আমরা সংসারের সবার দিকে নজর রাখি, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, বাবা-মা..... কে কি খেলো, কি করলো, কি করবে? কিন্তু নিজের যত্ন নিতে জানি না। নিজে কিভাবে ভালো থাকবো তার কথা কখনোই চিন্তা করি না।
আমি নিজেও এর বাইরে না। জীবনভর শুধু চিন্তা করেছি আমার স্বামী-সন্তান কিভাবে ভালো থাকবে, আমার মা-বাবাকে কিভাবে ভালো রাখবো, আমার ভাই-বোনদের জন্য কিভাবে একটু কিছু করবো, আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব........... সবার জন্য চিন্তা ছিল। কিন্তু কখনই চিন্তা করিনি নিজে কিভাবে ভালো থাকবো, কিভাবে নিজের যত্ন নিবো।
তবে কঠিন সত্যটা আমি শিখেছি কানাডায় এসে। আমার দেখা প্রায় প্রতিটা কানাডিয়ানই সবার আগে নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে, কেরিয়ার নিয়ে ভাবে, ভবিষ্যত রিটায়ারমেন্ট নিয়ে প্লান করে। তারা ছেলে-মেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মায়ের বা সংসারের চিন্তা অবশ্যই করে কিন্তু সেটার নিজের প্রয়োজনকে বাদ দিয়ে নয়, নিজের কেরিয়ার ধ্বংস করে নয়। তারা মারাত্বক রকমের সেল্ফ কনসাস।
তারা জিমে যায়, দেশ-বিদেশে ঘুরতে যায়, ক্লাবে যায়, সর্ট-লং ট্রিপে যায়, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কটেজে যায়, বারবিকিউ করে, কনসার্টে যায়, স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যায়............... হাজার রকমের আনন্দ খুঁজে বেড়ায়। বছরের ভ্যাকেশান লিভ, পার্সোনাল লিভ কোনটাই বাকি রাখে না।
ঠিক আমার সে বন্ধুটির কথাই ভাবছি। সে কি কখনো এরকম ছুটি কাটিয়েছে? নিজের আনন্দের জন্য সময় বের করেছে? তার হার্ট, কিডনি, লাংকস সুস্থ্য রাখার কথা একবারও ভেবেছে? হয়তো কখনই তা চিন্তা করেনি, শুধু দৈাড়েছে আর দৈাড়েছে। একবার কেরিয়ার, একবার স্ত্রী, একবার সন্তান, একবার ভাই-বোন..........। তারপর একদিন দেখলো সব শেষ, ফেরার কোনই পথ নেই।
তাই সময় থাকতে নিজের দিকে তাকাতে হবে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে, নিজের ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে। দিন শেষে আপনার ভালো-মন্দ থাকার দায়িত্ব আপনার, আর কারো নয় কিছুতেই। আপনি চলে গেলেন তো, সবাই কিছুদিন শোক পালন করবে, তারপর? সবই আগের মতই চলবে, কেউই কারো জন্য ঠেকে না।
ভালো থাকিস ওপারে বন্ধু।
সোহানী
জুন ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২৪ রাত ২:২৫