ছবিটা দেখার পর আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলাম, যা দেখছি তা কি সত্য?
এক সময়ের দোর্দন্ড প্রতাপশালী, হাজার কোটির নীচের তার নামের সাথে যায় না সে কি না একটা লুঙ্গি পড়ে মাটিয়ে বসে আছে আর দুই টাকার কোস্টগার্ড তার হাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে পাহাড়া দিচ্ছে। যাকে দেখা মাত্রই স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উঠে দাঁড়িয়ে সন্মান করতো আজ তাকে এরকম অপমান অপদস্থের মাঝে যেতে হচ্ছে।
পাশের ব্যাক্তিটি যার হাক ডাকে সব ক্রিমিনাল জড়ো হয়ে যেত, কাউকে ফাঁসি, কাউকে যাবজ্জীবন সে মূহুর্তে দেয়ার ক্ষমতা রাখতো আজ সামান্য এক সিপাহী তার কোমড়ে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাচ্ছে।
অথচ এ দুই ব্যাক্তি চাইলেই দেশের দু'জন সম্মানিত ব্যাক্তি হতে পারতো। কিন্তু লোভের কাছে তারা হার মানলো। এই যে হাজার কোটি টাকা তারা আয় করেছে এবং সে টাকা দিয়ে তাদের বউ ছেলে মেয়ে আত্বীয়-স্বজন আনন্দ ফূর্তি করেছে আর তার বিনিময়ে তারা কি পেয়েছে?
টাকার জোরে কিছুদিন হয়তো সন্মান ছিনিয়ে নিয়েছে কিন্তু হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে কোমড়ে দড়ি পড়ার অসন্মান কি তারা ফিরিয়ে আনতে পারবে?
একটা মানুষের জীবনে কত টাকা প্রয়োজন? আমি চুরি ডাকাতি করে আমার সন্তানরা আয়েসী জীবন ভোগ করবে তাতে আমার লাভটা কি হবে?? ধরা না পরলে ভালো কথা কিন্তু ধরা পরলে?? তবে অন্যায় যে করে সে একদিন না একদিন ধরা খাবেই!! তারপর আমি জেলে পঁচবো, মানুষের লাথি খাবো অথবা জনরোষে পড়ে মারা পড়বো!! আমার লাভ টা কি হবে? আমার স্ত্রী সন্তানরা কি আমার হয়ে জেল খাটবে নাকি ফাঁসিতে ঝুলবে??
ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা সে নিজাম ডাকাতের গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। গল্পটা এমন, সারাটা জীবন ডাকাতি ও খুন করে একবার একজন জ্ঞানী মানুষকে মারতে চাইলে উনি একটা প্রশ্ন করেন নিজাম ডাকাতকে।
বলেন, এই যে তুমি এতো পাপ করছো তা কার জন্য করছো?
নিজাম ডাকাত উত্তর দেয়, আমার পরিবারের জন্য?
জ্ঞানী মানুষটি আবার প্রশ্ন করেন, তাদের জন্য এতো অন্যায় করছো, তারা কি তোমার পাপের ভাগীদার হবে?
নিজাম ডাকাত পরিবারের কাছে প্রশ্ন রাখার পর কেউই রাজি হয়নি তার পাপের ভাগীদার হতে।
এরপর সেই নিজাম ডাকাত সব পাপ কাজ ছেড়ে নিজাম আউলিয়া হয়ে যায়।
এখন আমাদের সে সব নিজাম ডাকাতদের কাছে প্রশ্ন যদি করি,
আপনাদের এক জীবনে কত টাকা লাগে?
এই যে এতো এতো অন্যায় করেছেন এ জীবনে তা কাদের জন্য করেছেন? তারা কি এখন আপনার সে পাপের ভাগীদার হবে?
দেশের মানুষ না খেয়ে মরে আর আপনারা দুবাই এর সবচেয়ে দামী রিসোর্টে ফূর্তি করেছেন, একবারও কি মনে পড়েনি কাদের রক্তের উপর ফূর্তি করেছেন?
এক জীবনে একজন মানুষের কত অর্থ সম্পদের প্রয়োজন হয়?
স্ত্রী সন্তান নিয়ে বারান্দায় বসে এক কাপ চা খেতে খেতে যে আনন্দ তা কি কোনদিন বুঝতে পেরেছেন?
অথচ এ নিজাম ডাকাতরা পারতো দেশের জন্য কিছু করতে, দেশকে হাজার বছর এগিয়ে নিতে, মানুষের ভালোবাসা পেতে, শান্তিতে পরিবার সন্তান নিয়ে আনন্দে ভালোবাসায় জড়িয়ে থাকতে!!!
যাহোক, এবারের এ গণজোয়ারে যদি কিছুটা টনক নড়ে এ সমস্ত নিজাম ডাকাতদের।
ভবিষ্যতে যারাই ক্ষমতায় থাকবে তারা কোন অন্যায় করার আগে যেন এরকম দড়ি বাঁধা লুঙ্গি পড়া চেহারাগুলো মনে করে............. সেই আশায় দিন গুনছি।
সোহানী
আগষ্ট ১৩, ২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০২৪ সকাল ৯:১২