কর্মমুখরতায় উদ্ভাসিত যার প্রতিটি মুহূর্ত। যিনি শিক্ষকের শিক্ষক, অভিভাবকের অভিভাবক। বহুমুখী কাজে সফল ব্যক্তিত্ব। এক কথায় বলা যায়, বিপুল কর্মগুণের ভান্ডার সমৃদ্ধ একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি আমাদের বাঙালীর দরদি বন্ধু ফাদার মারিনো রিগন। ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইতালির ভেনিসের অদূরে ভিল্লাভের্লা গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। বাবা রিকার্ডো (রিচার্ড) একজন কৃষক ও মা ইতালিয়া মনিকা ছিলেন একজন শিক্ষিকা। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সকলের বড়। মায়ের কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর ১৯৩১ সালে প্রথমে স্কুল জীবন শুরু হয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত নিজ গ্রামের অদূরে একটি শিক্ষা নিকেতনে পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে মিশনারি সংস্থায় যোগদান করেন। এবং সংস্থা পরিচালিত বিভিন্ন বিদ্যা-প্রতিষ্ঠানে ধর্মতত্ত্বসহ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি এ পর্যন্ত অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। কবি জসীম উদ্দিন একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮২, ভেনিসের লায়ন্স ক্লাব পুরস্কার ১৯৮৪, ইতালির রোকা ডি’ওরো গার্ডা পুরস্কার ১৯৯৪, ড. রবার্ট ডব্লিউ পিয়াসের ম্যান অব দ্যা ইয়ার ১৯৯৫, ইতালির অলিম্পিক একাডেমী পুরস্কার ১৯৯৯, ভেচেন্সা নাগরিক সম্মাননা ১৯৯৭, ইতারির মারিয়েলে ভেস্ত্রে পুরস্কার ২০০২, খ্রিস্টীয় যোগাযোগ কেন্দ্র সম্মাননা পদক ২০০৩ ও বাংলাদেশে নাগরিক সম্মাননা ২০০৯। এক সন্ধ্যায় মহম্মদপুর চার্চে তার সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়েছি। ফাদার রিগনের অনেক না বলা কথা বেঙ্গলি টাইমস এর সঙ্গে শেয়ার করেছেন। বেঙ্গলি টাইমস এর পক্ষে আমি তাকে অনেক প্রশ্ন করেছি। তারই কিছু অংশ তুলে ধরলাম।
* ছোটবেলার কোন ঘটনা বলবেন, যা এখনো মনে পড়ে?
- আমার ছোট বেলা কেটেছে একটি অনুন্নত গ্রামে। সেখানে তখনো তেমন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গ্রামে সামান্য বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল। আমরা একান্নবর্তী পরিবার ছিলাম। আমাদের বড়িতে একটি কুকুর ছিল। আমরা যখন টেবিলে খাবার খেতাম তখন কুকুরটি টেবিলের নিচে থাকত। একদিন আমার ছোট ভাই টেবিলের নিচে ঢুকে ঘেউ...ঘেউ করতে লাগল। আবার নিজেই উঠে বলছে আমি কিন্তু ঘেউ..ঘেউ করি না। পরে বাবা এলে ভাই তাকে বলছে, জানো বাবা মা না খুব বোকা। আমি টেবিলের নিচে বসে ঘেউ..ঘেউ করেছি। মা ভেবেছে সত্যি কুকুর ছিল। ওর কথা শুনে আমরা সবাই হেসেছিলাম।
আর একদিনের কথা। আমরা ছোটবেলায় একটি ডোবার কাছে খেলতাম। সেটা ঠিক পুকুর নয়। একদিন স্কুল থেকে ফিরে ওখানে গিয়েছি খেলতে। গিয়ে দেখি কত গুলো ছোট হাঁস সেখানে খেলা করছে। ডোবার পাড়েই ছিল ছোট ছোট পাথর। সেই পাথর দিয়ে হাঁস গুলিকে মারতে আরম্ভ করলাম। কয়েকটা মেরেই ফেললাম। মা বিকালে স্কুল থেকে ফিরে শুনলেন সে কথা। হাঁসগুলো ছিল আমাদের বাড়ির পাশে এক বুড়ির। মা তার কাছে আমার হয়ে ক্ষমা চাইলেন। তিনি মাকে বললেন, ছিঃ ছিঃ একি করছেন। মারিনো এমন কাজ করতে পারে না।
* কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েও মানবতার সেবায় নিজেকে শপে দিলেন কিভাবে?
- কৃষক পরিবারে জন্ম হলেও আমরা ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতি পরিমন্ডলে বড় হয়েছি। আমার বাবা মঞ্চ নাটক করতেন। আমার বাবার সাথে গিয়েছিলাম নাটক দেখতে। সেখানে মঞ্চায়িত হয়েছিল যিশুর জীবনী নিয়ে একটি নাটক। সেই নাটকে বাবা যীশুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এ নাটকে যীশুর কর্মকান্ড দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই। আর তখন থেকেই মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই বড় হয়ে যীশুর মত ধর্ম যাজক হব।
* ধর্ম যাজক হওয়ার পর বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন কি ভাবে?
- আমরা সন্ন্যাসী। আমরা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারি না। কে কোথায় যাব, কোথায় থাকব, এ সবের সিদ্ধান্ত নেন আমাদের ধর্মীয় গুরুজনরা। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এবং এ দেশে আসতে আমি বাধ্য হই।
* বাংলাদেশে এসে ইতালিয় কোন জিনিসগুলোর কথা আপনি বেশি মনে করেন?
- আমাদের দেশে দ্রাক্ষারস(ওয়াইন) ও রুটি খুব বিখ্যাত। ইতালিতে কোন অনুষ্ঠান হলে এটা থাকবেই। তাই প্রথমে বাংলাদেশে এসে এগুলো খুব মিস করেছি। এ ছাড়া ইতালিয়ান আইসক্রিম, পিৎজা তো আছেই।
* পুরহিত হওয়ার আগে আপনার জীবনে কি প্রেম এসেছিল?
- পুরহিত হওয়ার আগে আমার জীবনে এমন একটি মেয়ে পেলাম না যে আমাকে বলেছে, ‘তোর সঙ্গে প্রেম করতে চাই।’ এটা আমার ভাগ্যের দোষ বলা যায়। প্রেম যে একেবারে আসেনি তা বললে ভুল হবে। তবে প্রেম এসেছিল ৮০ বছর বয়সে। এটা ছিল একেবারেই অন্যরকম। মিডিয়াতে সে কথা প্রকাশ করতে চাই না।
* বাংলাদেশে আসার পর বাঙালী মেয়েদের প্রেমে পড়েছেন?
- বাঙালী মেয়েরা অনেক ভাল। তাদের মধ্যে অনেক প্রেম আছে। অনেকেই আমাকে প্রেমের কথা বলেছে।
* বাংলাদেশে শিক্ষাবিস্তর করতে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন?
- শিক্ষা বিস্তারে তেমন কোন প্রতিবন্ধকতার শিকার হইনি। বরং পেয়েছি সহযোগিতা।
* বাংলাদেশের কোন দিকগুলো আপনার ভাল লাগে, কোন দিকগুলো ভাল লাগে না।
- বাংলাদেশের মানুষ অনেক অতিথি পরায়ণ। আর এখানে অনেক শিল্প আছে। মানুষ গান গায়, নাচে এটা আমার খুব ভাল লাগে। তবে কোন মেয়ে যখন কথা বলে আমার মনে হয় অভিনয় করছে। সত্যি নয়। আরো ভাল লাগে বাঙ্গালীরা নাম ধরে ডাকে না। সম্পর্কের সাথে তাদের সম্পর্ক। তারা পরিচয় করায় এটা আমার বাবা, মা ভাই বোন.....। খারাপ লাগে এটাই যখন দেখি পুরুষ মানুষ অন্যায় করেও দোষ নিতে চায় না। এ বিষয়টা আমাকে খুব কষ্ট দেয়।
* বাংলাদেশে সামাজিক জীবনের কোন দিকগুলো আপনার মনে দাগ কেটেছে?
- বাংলাদেশের দরিদ্রতা আমাকে খুব বেশি পিড়া দেয়। যখন প্রথম এদেশে আসি তখন এখানে তেমন ভাল রাস্তা ঘাট ছিল না। চিকিৎসা ব্যবস্থাও ছিল অপ্রতুল। একবার আমি অসুস্থ হয়েছিলাম তখন মংলায় ভাল ডাক্তার ছিল না। চিকিৎসার জন্য খুলনা যেতে হয়েছিল। তখন এই দৈন্যতা আমাকে আরো বেশি পীড়া দিয়েছে।
* বাংলা সাহিত্যের প্রতি ঝুঁকলেন কিভাবে?
- বাংলাদেশে আসার কারণে আমাকে বাংলাভাষা শিখতে হয়েছে। ছোটবেলা থেকে সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল আমার। যেহেতু বাংলাভাষা জানি তাই কাজের ফাঁকে বাংলা বই পড়তাম। রবীন্দ্রনাথের পন্ডিতমশাই আমার প্রথম বাংলা বই পড়া। তখনো ভাল বাংলা বুঝতাম না। তবুও এ বইটি পড়ে বেশ চমৎকৃত হয়েছিলাম। বলা যায়, এই বইটি আমাকে বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগের জন্ম দিয়েছে। তারপর একে একে রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ বই পড়ে ফেলি। যতই তার বই পড়ি ততই যেন তার প্রতি আমার অনুরাগ বেড়ে যায়। রবীন্দ্রনাথের প্রতি এই অনুরাগের ফলে ১৯৬৪ সালে ইতালিয়ান ভাষায় অনুবাদ করি গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ। এবং এটিই প্রথম কোন বাংলা কাব্যগ্রন্থ যা ইতালিয় ভাষায় প্রথম অনুবাদ করা হয়। তাই বইটি ইতালিতে বেশ প্রশংসিত হয়। এর পর একে একে রবীন্দ্রনাথের প্রায় চল্লিশটি বই ইতালিয় ভাষায় অনুবাদ করা হয়। আমার অনূদিত রবীন্দ্রনাথের নৈবেদ্য গ্রন্থ স্প্যানিশ ভাষায় এবং চিত্রা গ্রন্থটি পর্তুগিজ ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
* বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আপনার নিজস্ব ধারণা কি?
- বাংলাদেশে এসে আমি যতটা দিয়েছি, তারচেয়ে বেশিই পেয়েছি। এই পাওয়ার মধ্যে একটি হল বাংলাসাহিত্য। এ সাহিত্যের গভীরে প্রবেশ করে মেধা ও মননে পুষ্ট হয়েছি। তবে সবচেয়ে বেশি তুষ্ট হয়েছি রবীন্দ্র সাহিত্যে। কারণ দুটো- একটা আত্নিক অন্যটি বাহ্যিক। রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য পড়ে আমার মনে হয়েছে তিনি যা কিছু লিখেছেন তা কোন না কোন ভাবে প্রেম সর্ম্পকিত। এ প্রেম কখনো মানবিক কখনো ঐশ্বরিক। যদি কেউ মনে করে সাধারণ নর-নারীর প্রেমের কথা রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন তবে তা-ই। আবার কেউ যদি মনে করে এটি কেবলই ঈশ্বরের বন্দনা স্তুতি তবে তা-ই। রবীন্দ্র রচনাতে আমি এতটাই মগ্ন যে এ যাবত ৪০ টি গ্রন্থ ইতালিয় ভাষায় অনুবাদ করেছি। এ ছাড়াও জসীমউদ্দিন, শরৎ চন্দ্র, লালনের গ্রন্থ অনুবাদ করেছি।
* অনুবাদ করতে কোন বিষয় গুলোর প্রতি নজর রাখতে হয়?
- প্রত্যেক ভাষার এক একটা নিজস্ব ধরন থাকে। আমি বাংলাভাষাকে ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেছি। এখানে খেয়াল রাখতে হয়েছে ইতালীয়দের কল্পনা আর বাঙালীদের কল্পনা এক নয়। মানুষের কল্পনার সঙ্গে ভাষার একটা সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাষা ও সংস্কৃতি সর্ম্পকে ভাল দখল থাকতে হবে। যেমন একটি কবিতা অনুবাদ করতে কবিতার ভাব সঠিক ভাবে উপস্থাপন করতে শিল্পমান, কবিত্ব বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
*চিকিৎসা বিষয়ে আপনি অনেক অবদান রেখেছেন। এ বিষয়ে একটু বলবেন?
- সেন্ট পল্স হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন রেভা. ফাদার ফ্রান্সিস তোমাজেল্লী। কিন্তু হাসপাতালটি সম্পন্ন হওয়ার আগেই তিনি বদলি হয়ে যান অন্যত্র। আমি যখন শেলাবুনিয়ায় আসি তখন এ হাসপাতালের দায়িত্ব নেই। আমি আসার পর এখানে নতুন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। অপারেশন থিয়েটার সমৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়াও হাসপাতালের বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডাক্তারদের আবাসন ব্যবস্তাও উন্নত করা হয়েছে।
* আপনি বাস্তুহারাদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করেছেন। এ সর্ম্পকে একটু বলবেন?
- সব অঞ্চলেই কিছু লোক থাকে যারা সহায় সম্বলহীন। একেবারে নিঃস্ব বাস্তুভিটে পর্যন্ত থাকে না। এ সব মানুষদের জন্য আবাসন প্রকল্পের আওতায় জায়গা কিনে পরিবার প্রতি ৫/১০ কাঠা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। যাদের এই জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাদের অনেককেই জমির মূল্য দিতে হয়নি। আবার অনেককে জায়গার সঙ্গে ঘরও তৈরি করে দিয়েছেন । বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তাদের জন্য বিশেষ আবাসন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এ সকল মহিলাদের জন্য আর.সি.সি. পিলার দিয়ে টিনের ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পুরুষের পাশাপাশি মহিলাদের উপার্জনক্ষম করার জন্য সেলাইকেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
* আপনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এ সময় আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলবেন?
- ১৯৭১ সালে আমি গোপালগঞ্জের বানিয়ারচরে ছিলাম। আমি দেখেছি এ সময় বাংলাদেশের মানুষের ওপর পাকিস্তানী হানাদারদের অমানুষিক নির্যাতন। ৩ এপ্রিলের কথা। খুলনা থেকে লঞ্চযোগে প্রাণভয়ে শরণার্থীরা এদিকে আসছিল। কিন্তু এ লঞ্চে কোন পতাকা ছিলনা। এ কারণে ছাত্র-জনতা চিৎকার করে ভৎসর্না জানাচ্ছিল। তখন আমরা স্থানীয় যোগেশের দোকান থেকে একটি পতাকা কিনে লঞ্চে পাঠাই। পরের দিন আমাদের জাভেরিয়ান ফাদার মারিও ভেরনেসি যশোহরে দুজন পকাসেনার হাতে শহীদ হন। এ ভাবে অনেক দিন কেটে গেল। নানা সমস্যা, ভয়, অস্থিরতা কাটিয়ে অবশেষে এল ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ। বিকালে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি বাহিনী আত্নসমপর্ণ করার মাধ্যমে বিজয় ঘোষিত হয়। ১৭ তারিখ সকালে মুক্তিবাহিনীর একটি লঞ্চ নদী পথে টেকের হাট তেতেক গোপালগঞ্জে যাচ্ছিল লঞ্চে পত্ পত্ করে উড়ছিল স্বাধীনদেশের পতাকা। আমাদের নদী ঘাটে বাধা লঞ্চের গুটানো পতাকা মেলে দিলাম মুক্ত আকাশে। আর লঞ্চটির নাম দিলাম মুক্তবাংলা। বিকালে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল আমাদের মাঠে মিলিত হল। তারা সারিবদ্ধ হয়ে কুচকাওয়াজ, ফাঁকা গুলি করে বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করল। মাঠে সে দিন শত শত লোক সমাবেত হল। তারা আমাকে কিছু বলতে বলল। আমি সেদিন কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার সেই লাইন আবৃত্তি করলাম ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির।’ সে দিন থেকে সার্ববৌম রাষ্ট্রে বানিয়ারচর ধর্মপল্লীতে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করলাম।
* শুনেছি আপনি পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে অনেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার সঙ্গে কাটানো কোন গুরুত্বপূর্ন মূহুর্তের কথা বলবেন?
- আমি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে দেখা করতে প্রায়ই তার বাড়িতে যেতাম। তিনি ছিলেন অনেকটা খামখেয়ালি মানুষ। একদিন হঠাৎ তিনি আমাকে বললেন, ফাদার আপনি কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন? কামাল হোসেন তখন ফরেন মিনিস্টার ছিলেন। তার সঙ্গে দেখা করলাম। আরেক দিন জসিম উদ্দিন বললেন, চলেন শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করে আসি। আমিও রাজি হলাম। যেতে যেতে উনি বললেন পাঁচ মিনিটের বেশি সময় দেবেন না শেখ মুজিব। আমি বললাম এতেই হবে। আমরা গণভবনে গেলাম। শেখ মুজিব সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাদের ভিতরে ডাকলেন। গিয়ে দেখি পুলিশ নেই, শুধু আমরা তিন জন। আমি তাঁকে বললাম, আপনি এখানে আছেন কিন্তু কোন পুলিশ পাহারা নেই। যে কোন সময় বিপদ আসতে পারে। আপনাকে কে রক্ষা করবে? উত্তরে তিনি বললেন, আমি প্রস্তুত। যদি আমাকে মারতে চায় বুক পেতে দেব। আমি বাংলা স্বাধীন করেছি ব্যস্। আমার কোন আফসোস নাই, মরলে মরব। সেদিন আমরা প্রায় এক ঘন্টা গল্প করলাম। তার সঙ্গে ছবি তুললাম।
* মৃত্যুর পর আপনি কোথায় থাকতে চান?
-আমার হার্ট অপারেশন হয়েছে। চিকিৎসার জন্য আমাকে ইতালিতে নেয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ছেড়ে যাবার সময় আমার আত্নীয়-স্বজন ও ডাক্তারকে বলেছিলাম, আমার কোন দুর্ঘটনা হলে আপনারা আমার লাশ বাংলাদেশে পাঠাবেন। বাংলাদেশের মাটিতেই আমার কবর হবে। তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়ে তবে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম।
সূত্র-
বেঙ্গলি টাইম...কানাডার বাংলা সাপ্তাহিক
www.thebengalitimes.com
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ৩:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



