somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

২৫ মার্চ ১৯৭১: একটি গণহত্যার কালো রাত

২৫ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মহাকালের স্বাভাবিকতায় প্রতিবছরের ন্যায় আবারো ফিরে এসেছে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার স্মৃতিবিজড়িত ২৫শে মার্চ।
১৯৭১এর ২৫শে মার্চের রাতের বীভৎসতা এতটাই নির্মম যে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞের অতীত সব রেকর্ডকে
ছাপিয়ে এটি হয়ে উঠেছে বিশ্বের ভয়ালতম গণহত্যার রাত।

‘অপারেশন সার্চলাইটের’ নামে পাকিস্থানি বাহিনীর অতর্কিত সেই হামলায় মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে সমগ্র ঢাকা শহর। পৃথিবীবাসী অবাক হয়ে দেখেছে ধর্মের নামে বর্বর হানাদার বাহিনী কিভাবে একরাতে প্রায় অর্ধলক্ষ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ-এর প্রতিবেদক সাইমন ড্রিং-এর বর্ণনায় জানা যায়, ২৫ মার্চ ৭১-এ রাত দশটার দিকে শুরু হয় সেই পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ। যদিও পরিকল্পনা অনুযায়ী জিরো আওয়ার বা আক্রমণের নির্ধারিত সময় ছিল রাত একটা।

মধ্যরাতে ঢাকার পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশলাইন, নীলক্ষেত এলাকায় আক্রমণ চালায় হানাদাররা। ঢাকার ইপিআর সদর দপ্তর পিলখানার বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করে এবং ইপিআর দফতরের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা দখল করে নেয় ২২তম বেলুচ রেজিমেন্ট।

অন্যদিকে ১৮ নং পাঞ্জাব, ৩২ নং পাঞ্জাব ও ২২ নং বেলুচ রেজিমেন্ট ট্যাংক ও মর্টার হামলায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। হানাদার বাহিনীর মেশিনগানের গুলি, ট্যাংক-মর্টারের গোলা আর আগুনের লেলিহান শিখায় নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ঘটে নৃশংসতম হত্যার সব থেকে বড় ঘটনাটি। হত্যাযজ্ঞ চলে রাত থেকে সকাল পর্যন্ত।

ভয়াবহ এই রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।অন্যদিকে ঐ রাতেই জহুরুল হক হলের প্রায় ২০০ ছাত্রকে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যাকরে পাকবাহিনী। এই জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে প্রতিটি ছাত্রাবাসে, বাদ যায়নি রোকেয়া হল। আর্চার কে ব্লাড এর বই ‘The cruel birth of Bangladesh’ থেকে জানা যায়, ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং ছাত্রীরা আগুন থেকে বাঁচতে হলের বাইরে আসা শুরু করলে পাকবাহিনী তাদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সাথে আর্মি ইউনিট ৮৮ এর কথোপকথন থেকে জানা যায়, আনুমানিক ৩০০ জন ছাত্রীকে সে রাতে হত্যা করা হয়।

রাজারবাগে গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুনে ভস্মীভূত করা হয় পুলিশ সদর দফতর। বাংলা মায়ের ১১শ পুলিশ সন্তানের রক্ত ঝরিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, সমগ্র ব্যারাক গুঁড়িয়ে দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সবকিছু।

মধ্যরাতেই ঢাকা তখন লাশের শহর। দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর বর্বরোচিত হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পাকিস্থানি সামরিক জান্তা। পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেই রয়েছে। পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল তাতে বলা হয়- ‘১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

একাত্তরের এই ভয়াল রাতে চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার জন্য উন্মাতাল লাখো বাঙালির রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার সোঁদা মাটি। সমগ্র ঢাকা শহর যেন লাশের স্তূপ, ঘুমন্ত শিশু মায়ের কোলেই গুলিবিদ্ধ হয়েছে, নববধূ, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার রক্তে কালঙ্কিত হয়েছিল মানব সভ্যতার হাজার বছরের গৌরবময় ইতিহাস। এই রাতে একদিকে যেমন রচিত হয়েছে বিশ্বের জঘন্যতম গণহত্যার ইতিহাস অন্যদিকে এই রাত প্রত্যক্ষ করেছে ‘বাংলাদেশ’ নামে একটি রাষ্ট্রের জন্মমুহূর্তটি।

চারিদিকে রক্ত আর রক্ত, শহীদদের সারি সারি লাশ। মধ্যরাতে পরিচালিত হয় পাকবাহিনীর স্পর্শকাতর অভিযান ‘অপারেশন বিগবার্ড’।

ইতিহাসের জঘন্যতম এই গণহত্যার রাতে, নিরস্ত্র বাঙালির রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে পাকবাহিনী যখন মৃত্যুর মিছিলকে শত থেকে হাজার আর হাজার থেকে লাখে রূপান্তর করছিল, ঠিক তখনি একটি স্বাধীনতার ঘোষণা বাঙালি জাতিকে দিয়েছিল জনযুদ্ধের নির্দেশনা। আর এই যুদ্ধের মাধ্যমেই ৯ মাস পর বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন একটি দেশ- ‘বাংলাদেশ’।

সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:০৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×