somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান প্রজন্মের ভাবনা

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের বর্তমান প্রজন্ম নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি।।
ভাষা আন্দোলনের পর থেকে ধাপে ধাপে স্বাধীনতা অর্জনের পথগুলি
যে কত বন্ধুর ছিল তার কিছুটা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামান্য দলিলগুলো থেকে পাওয়া যাবে।
বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি স্বাধীন বাংলাদেশ ও স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে অনেক অশ্রু ও রক্তের ইতিহাস রয়েছে।
The Liberation war of Bangladesh and the Current generation
মহান ত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে দিয়ে গেছেন এক লাখ ৮০ হাজারের বেশি মুক্তিযোদ্ধা।
৩০ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং অনেক অনেক মা, বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে
একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র আমরা পেয়েছিলাম।
বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন;
বাংলার শোষিত বঞ্চিত মানুষকে শোষণের হাত থেকে মুক্তি দিয়ে উন্নত জীবন দিতে চেয়েছিলেন।

আমাদের বর্তমান প্রজন্ম মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ট হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছে।
তাদের চোখে অদেখা ছিলো সাধারণ বাঙালির উপর পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর দমন পীড়ন শোষণ নির্যাতন অতঃপর ঐক্যবদ্ধ মুক্তিকামী বাঙালির বলিষ্ঠ প্রতিবাদ আর জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া, ফলাফলে প্রিয় মাতৃভূমিকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা।

আজ হয়তো স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে কেবলই একটা অনুষ্ঠানিকতা মাত্র!
মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট জাতীয় দিবসগুলো দায়সারা ভাবে বা কোন এক ভাবে পালন করেই তারা যেন এই দেশে জন্মাবার দায় এড়াতে চায়। তারপর মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গিয়ে জড়িয়ে পরে জীবনযুদ্ধে, জীবন এভাবেই ছুটে চলছে তিল তিল করে। যারা এই দেশকে জন্ম দিয়েছেন কেবল তারাই জানেন এই দেশকে পৃথিবীর আলোয় আনতে কতটা অবর্ণনীয় কষ্ট তাদের পোহাতে হয়েছে, বর্তমান প্রজন্ম তা সঠিকভাবে জানেনা বলেই কারণে অকারণে দেশকে ছোট করে ফেলে বিশ্বের কাছে। যা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। প্রসব বেদনায় কাতর একজন মা-ই কেবল জানেন একজন সন্তান জন্ম দিতে কতটা ব্যথা-বেদনা সহ্য করতে হয়। অতঃপর ভূমিষ্ট সন্তানের দিকে তাকিয়ে সব যন্ত্রণা হাসি মুখে ভুলে যান এবং সেই সন্তানকে জীবনের চেয়েও ভালোবেসে বুকের মধ্যে সারাজীবন আগলে রাখেন।


কিন্তু আমাদের বর্তমান প্রজন্মের কাছে সেই কষ্টানুভূতি পৌঁছায়নি বলেই ছোট ছোট কারণেই তারা তুচ্ছ তাচ্ছিলো করে ফেলে মহান বিজয় আর স্বাধীনতাকে। তাদের কাছে সেই কষ্টানুভূতি পৌঁছায়নি বলেই এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হতে পেরেনি তারা। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তাদের কাছে পৌঁছায়নি বলেই পূর্বসূরীদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা তাদেরকে নাড়া দেয়না, আমাদের অর্জিত মহান বিজয় তাদেরকে সত্যিকার অর্থে উল্লসিত করেনা, উজ্জীবিত করেনা। শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই নয়, আমাদের নবীন প্রজন্মের অনেকেই জানেনা আমাদের বাংলা সংস্কৃতি। সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবেই এই দেশে জন্মে এই দেশের আলো বাতাস গায়ে মেখে তারা বড় হচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে। তারা জানেনা ষড়ঋতু মানে কী বা কয়টি ঋতু আছে আমাদের, তারা জানেনা বাংলা বারো মাসের নাম, তবুও তারা বিশ্বাস করে তারা বাঙালি, তারা বাংলাদেশি।

নানান ধর্মে যেমন নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত, ঠিক তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও যেন নানান রকম বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে আসছে আর এমনটা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ করে। একটা সময় শুনতাম ব্যক্তির চেয়ে দল বড় আর দলের চেয়ে দেশ বড় কিন্তু সেই প্রবাদটা আজ বড়ই শেকেলে মনে হয়।

বর্তমান প্রজন্ম আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না জানলেও তারা যতটুকু জানে, আর নিশ্চিতভাবে যা জানে সেগুলোর মধ্যে হলো,
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বে প্রায় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের প্রধান ফটকে পৌঁছে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিলো বিজয়ের দিন, সেদিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. এ এ কে নিয়াজী হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন, বাংলাদেশের পক্ষে ভারতের লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পনের নির্দশনপত্র গ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করলেও সারা দেশে পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যায়।

একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ বিশ্বের মাত্রচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এটা আমাদের জন্য কম গর্বের কথা নয়, কম অহংকারের নয়। আর এই গর্ব ও অহংকারের সূচনা হয়েছিলো আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু ৪৯ বছর আগে বিজয় অর্জন করেও কি সত্যিকার অর্থে আমরা বিজয়ী হতে পেরেছি? আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে ঘরে পৌঁছে দিতে? আমাদের বিজয়, আমাদের অহংকার আজ কেবল কাগজে কলমে কিন্তু বাস্তবে নয়। বাস্তবে এখনো আমরা পরাধীন হয়ে আছি ক্ষমতাসীন কয়েক কর্তা ব্যক্তির কাছে। কার কাছে আমরা বিচার প্রার্থনা করবো?

আমরা তাকিয়ে আছি আমাদে প্রজন্মের দিকে । তারা নিজেদের চিনতে পারুক, নিজেদের গর্বের ইতিহাস
জানতে পারুক এবং বাংলার স্বাধীনতা ও বিজয়ের মুল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অগ্রসর হোক।
আমারা মৃত্যুর আগমুহুর্ত পর্যন্ত তাকিয়ে আছি তাদের দিকে !!!!
একদিন আলো আসবেই , আমাদের বাংলাদেশের নিপিড়িত জনতা
একদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয়ের মুলমন্ত্র বাস্তবায়নের আনন্দে হাসবেই!

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×