somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্রেইন ড্রেন

০৮ ই অক্টোবর, ২০০৮ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তখন সন্ধ্যা নামছিল।
ঠিক তখনই একটি ছেলে আমার ঘরে এল।
আমি যে পরিবারের সঙ্গে থাকি ছেলেটি তাদের আত্মীয়। শ্যামলা মতন। শুকনো। ঢ্যাঙ্গা। মাথায় ছোট ছোট করে ছাঁটা চুল। ঢাকায় বছর খানেক ধরে ‌'ল' পড়ছে। যমুনার পশ্চিম পাড়ে বাড়ি; এনায়েৎপুরের কাছে, বেলকুচি, না কোথায় যেন।
ছেলেটাকে আমি বসতে বললাম। ও বসল। অতি বিনয়ী ছেলে। টিউব লাইটের আলোয় আমার বইয়ে ভরতি ঘরটায় চোখ বুলিয়ে একটু পর বলল, আমারও অনেক কিছু জানার ইচ্ছা হয় ভাই।
আমি হেসে বললাম, কি জানার ইচ্ছা হয়?
কত কিছু। এই ধরেন ইতিহাস।
বললাম, ইতিহাস তো বেশ বিশাল ব্যাপার-ঠিক কোন্ ইতিহাস তুমি জানতে চাও?
রোমান। ছেলেটি চটপট উত্তর দিল।
রোমান?
হ্যাঁ। রোমান। ছেলেটি মাথা নেড়ে বলল।
ঠিক রোমান ইতিহাস কেন? অন্য ইতিহাস নয় কেন? হেসে জিজ্ঞেস বললাম।
আমার প্রশ্ন শুনে ছেলেটি মুখচোখ পাল্টে গেল। বলল, বলেন কী! রোমানরা ... কত কিছু করছে তারা। আজও আমরা রোমান ল পড়ি।
শহরে কেন এসেছ? আমি সামান্য বিরক্ত হয়ে প্রসঙ্গ পাল্টালাম।
ও থতমত খেয়ে বলল, কেন-পড়াশোনা করতে।
কেন? গ্রামে কি সমস্যা? যমুনায় ঘরবাড়ি ভাঙ্গছে যে শহরে আরছ?
না।
তা হইলে?
ছেলেটি করুন স্বরে বলল, আমাদের অবস্থা বিশেষ ভালো না ভাই। সব শুনলে বুঝতেন।
আমি বললাম, এই দেশের এইটটি পারসেন্ট মানুষের অবস্থা বিশেষ ভালো না। তা তোমাগো নিজেদের যৎসামান্য হইলেও জমিজমা আছে?
আছে।
নিজেদের ঘর?
হ।
খাট-পালং?
চৌকি আছে।
ভালো। উঠান?
হ।
পুকুর?
হ। শরিকের।
অসুবিধা নাই। গাছগাছালি?
আছে।
কি গাছ?
এই ধরেন আম-জাম-নাড়িকেল। তারপরে খাল পাড়ে গাব গাছও আছে। আর একটা লটকন গাছও আছে। ছেলেটি বেশ সাবলীল ভঙ্গিতে বলল।
শুনে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। তারপর বললাম, দেখ হাবিব, আমি তোমাকে ইর্ষা করি।
ক্যান?
গ্রামে তোমার জমিজিরাত আছে বইলা। দুপুরবেলা নিরিবিলি পুকুরপাড়ে বইসা থাকার জন্য মাঝে মাঝে আমার মনটা কী রকম যে করে...আমার এই ২২ তলা ফ্ল্যাটবাড়ি ভালো লাগে না। মনে হয় জাহাজের খোলের মরধ্যে আছি।
বলেন কী!
হ। তোমার শহরে আসার কোনও দরকার ছিল না হাবিব। রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জাইনাও তোমার কুনো লাভ নাই। রোমান সম্রাট তো আর তোমার সম্রাট না।
ঠিক বলছেন। হাবিব মাথা নাড়ে।
যাও, এখন গ্রামে ফিরা যাও। দেখ ওইখানকার মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখিগুলান কি কইরা আরও ভালো থাকতে পারে। তুমি ভাগ্যবান যে তোমার সামান্য হইলেও জমিজমা, ঘরদোর, উঠান-পুকুর, গাছগাছালি আছে। ওইটাই তোমার জগৎ, তোমার পৃথিবী; ওই জগৎটাকে সুন্দর করার জন্য ওই জগৎটা পরিবর্তন কর। যাতে তোমার গ্রামের মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখি আরও ভালো থাকতে পারে। তুমি রোমানদের ল পড়তে ঢাকায় আরস। কেন? কী দরকার?যাও, গ্রামে ফিরা যাও। দেখ ওইখানকার মানুষজন, গাছপালা, পশুপাখি কি কইরা আরও ভালো থাকতে পারে। যাও, গ্রামে ফিরা যাও। তোমার পুকুর আছে, উঠান আছে, নাড়িকেল গাছ আছে। এখানে থাইকা কী লাভ? সেই দিন রাত্রে জেনারেটর বন্ধ ...লিফটে আটকাইয়া মরতে নিছিলাম।
আমার কথা শুনে ছেলেটার মুখে ছায়া ঘনালো। ও অস্বস্তি বোধ করে। কথা আর জমে না। জানি জমবে না। আমি ওর স্বপ্নে আঘাত করেছি। ও এখন থেকে আমাকে এড়িয়ে যাবে। ও জানে- কেবল পাড়ভাঙ্গা লোকজনই শহরে আসে না; অনেক স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনও আসে।
একটা সময় ছুতো করে উঠে চলে যায় ছেলেটি।
আর আমি ভাবতে থাকি-কী আশ্চর্য! আজও আমাদের রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জানতে হয়। নদীতে ঘরবাড়ি না-ভাঙ্গলেও গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসতে হয়!কী আশ্চর্য! এভাবে ব্রেইন ড্রেন হয়ে যায়। গ্রামের উন্নতি হয় না। মেধাবীরা শহরে। গ্রামের মেধাবীরা সঠিক দিকনির্দেশনা পায় না। তবু শহরে যেতে হয়। ব্যাপারটা মনস্ত্বাত্তিক? আমাদের আজও রোমান সম্রাটদের সম্বন্ধে জানতে হয়।
আজও এই একুশ শতকেও পশ্চিমা রোমান শাসনের প্রভাব টের পেয়ে আমি শিউড়ে উঠি।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৪
১১টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×